| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একসময় মানচিত্রে মিষ্টি নামের সব নদী দেখে ভাবতাম—
এরা নিশ্চয়ই সুমিষ্ট স্বাদ বয়ে নিয়ে চলে।
একদিন এইসব গোমতী, বুড়িগঙ্গা, বংশী, সুরমা, আড়িয়াল খাঁ—
সবাইকে তুলে এনে জমিয়ে রাখব বুকশেলফে, ডায়েরির ঠান্ডা ভাঁজে, কোন নীল পোস্টকার্ডে।
তারপর আরও পরে, যখন পদ্মার শ্বাস, মেঘনার গর্জন, কর্ণফুলীর পাহাড়ি ঢলের সামনে দাঁড়ালাম,
মনে হয়েছিল—
বাঁধ দিয়ে বেঁধে রাখব ওদের উত্তাল স্রোত,
বশ মানাবো।
শিশুর মতো রং-পেন্সিলে কাটাকুটি করে ঘুরিয়ে দেব অন্য দিকে।
কিন্তু নদী তো নদীই, সে কখনো বাঁধ মানে না;
মরে যাবে, তবু বাঁধের সাথে আপোষ করবে না!
জলের স্বভাব হলো চলা।
এখন আমি আর কিছু বদলাতে চাই না।
ঢেউ এলে তাতে নিজেকে ভাসিয়ে দিই।
যেদিকে যায় লক্ষীন্দরের ভেলা, কী বা যায় আসে তাতে!
পিতা বলতেন— “শক্ত স্রোতের সাথে কখনো যুদ্ধ করো না।”
আমি ক্রমশ পিতার মতো হয়ে উঠছি।
এলভিস প্রিসলি বুনো স্রোত, জোয়ান বায়েজের নীল বিষন্নতা,
জ্যাকসনের মুনওয়াকে বুদ হয়ে থেকে
হঠাৎ খেয়াল করলাম—
আজকাল অজান্তেই স্ক্রল করতে করতে থেমে যাই হেমন্ত, সতীনাথের কাছে।
“ওই আকাশে প্রদীপ তারায় জ্বেলো না”— বলা মাত্রই
একটা সুতীব্র বিরহ বুক চিরে নেমে আসে।
স্বপ্নে গড়া স্কাইস্ক্র্যাপারগুলো কুয়াশায় ঢেকে যায়,
ঝিঝি পোকার ডাকা সন্ধেবেলা সন্ধ্যামালতী ফুলের নিচে
ঘন হয়ে নামে এক ধরনের মেলানকোলিয়া—
সাথে অস্পষ্ট, অশরীরির মতো চেতনা পাশে এসে বসে।
বুঝতে পারি, আমি সত্যিই ক্রমশ আমার পিতার মতো হয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলতেন— “গানের কথায় নয়, সুরে এক অসংগায়িত বেদনা থাকে।
সেই বেদনায়ই অমৃত লুকোনো থাকে।”
আমি এখন শুধু সেই বেদনার বোধ বুঝতে পারি।
বুঝেছি অমৃত সাগর মন্থন করে কিছুই পান নি তারা।
তাই আর আর অমৃত খুঁজিনা।
সুরম্য বিপণীর বুকভরা পণ্যসম্ভারে ঢুকে একসময় চোখ ছানাবড়া হয়ে যেত।
ভাবতাম— কী ছেড়ে কী নেই!
ফগ, ওয়াইল্ডস্টোনের জাদুকরী গন্ধের মতো সৌরমণ্ডলে ছড়িয়ে যেতে চাইতাম।
কল্পনায় উঁকি দিত নীল আর্মস্ট্রং, তেরেসকোভা।
কিন্তু ইদানীং কাঁচা ধানের গন্ধ পেলেই চেতনা আন্দোলিত হয়।
মনে হয়— পূর্ণিমা রাতে বিলে পানির ওপর মাছের ঝটপটানি শুনি।
ভাবি— চন্দ্রাভিযানের চেয়ে পিতামহের বর্শা হাতে মাছ শিকার কম রোমাঞ্চকর ছিল না।
শিরদাঁড়া শক্ত হয়ে যায়,
বেয়ে নামে শিকারীর সাহস।
মনে হতে থাকে— আমি আমার পিতা ও পিতামহদের মতো হয়ে উঠছি।
শুনে হয়তো লাকাঁ হাসবেন,
পুরো শরীর দুলিয়ে বলবেন—
“The unconscious is the discourse of the Other.”
তোমার অবচেতনে তো “তুমি” নেই;
আছেন তোমার পিতা, মাতা, পিতামহ, পিতামহী— সমগ্র পূর্বপুরুষ, তাদের অতীত।
আমি বিগত প্রজন্মের সমগ্র ভার নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,
যেন এটলাস পৃথিবীর ভার ঘাড়ে তুলে দাঁড়ায়।
বিন্দু বিন্দু ঘাম কপাল থেকে চুইয়ে পড়ে শরীরের ওপর।
পিতা শেখাতেন— “এই চুইয়ে পড়া ঘামের নামই জীবন।”
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:১৫
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমি আমার পিতা ও পিতামহদের মতো হয়ে উঠছি।
...............................................................................
মানুষ ক্রমশ তার DNA এর দিকেই হেটেঁ যায় ।
অনুকথা ভালো লেগেছে ।