নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা মনে আসে তাই লিখি।

স্বর্ণবন্ধন

একজন শখের লেখক। তাই সাহিত্যগত কোন ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

স্বর্ণবন্ধন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুম পাড়ানিয়া

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০


তোমাকে ঘুম পাড়াতে আসি
সে অনেক দূরপথ ঘুরে,
পাহাড়, নদী, উপত্যকা পেরিয়ে আসি।
মশারির মতো আগলে নিতে,
রঙিন চাদরের মতো বিছিয়ে দিই নিজেকে।
কখনো শিমুল-তুলোর বালিশ হই,
নির্ঘুম জেগে তোমার চোখে
ঘুমপরীদের ডাকি—
তবু তুমি জেগে থাকো।

শহর ঘুমায়, গ্রাম ঘুমায়,
ঘুমায় রাজনীতি, ঘুমায় অর্থনীতি।
একসময় জোনাকিরাও ঘুমিয়ে পড়ে।
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের মতো
তোমার কুঞ্চিত চুলে হাত বুলাই।

নিঃশ্বাসে নিরক্ষীয় বনাঞ্চলের
শোঁ শোঁ শব্দ শুনে মনে হয়—
কত হাজার বছর ধরে ঘুমাচ্ছ,
রাক্ষসপুরীর সেই হতভাগ্য রাজকন্যা।
কিন্তু তুমি তো চোখ বুজে জেগে থাকো।

তোমাকে ঘুম পাড়াতে আসি—
শিকারের স্লোগান ছেড়ে,
রক্তে দ্রোহের আগুন ছাইচাপা দিয়ে।
আমার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে আসি,
সিংহের কণ্ঠে বসিয়ে নেই
আহ্লাদী দোয়েলের শিস।

সব কাজ ছেড়ে পিঠে হাত বুলাই
ঘণ্টার পর ঘণ্টা,
মিনিটের পর মিনিট।
আমার বেঁকে আসে শিরদাঁড়া,
তবু তোমাকে ঘুম পাড়াতে পারি না আর।

এতটা অসাধ্য টেনে আনা
চিরচেনা ঘুমকে—
অবাধ্য তোমার মস্তিষ্কের নিউরন,
ব্যর্থ সমস্ত সেডেটিভ।

রজনীগন্ধা এনে রাখি ফুলদানিতে,
উঠোনে লাগাই কামিনীর ঝাড়,
জানালার পাশে নিশীথের হাসনাহেনা।
তবু তুমি তামাকের পোড়া গন্ধ পাও,
ঘর-পোড়া গন্ধ পাও।
চোখ বন্ধ করেই চিৎকার দিয়ে বলো—
“সিঁদুরে মেঘ!”

তোমাকে ঘুম পাড়াব বলে
নাবিকের কাজে ইস্তফা দিয়ে
ফিরে এলাম ঝোপঝাড়ে।
দুই পা ক্ষতবিক্ষত, শ্বাসমূল অবধি—
এতটা দূরে হেঁটে এলাম।
সৈনিকের অস্ত্র ছেড়ে
হাতে তুলে নিলাম কোদাল।

ভয় পেয়ো না, খুলে রেখেছি শিরস্ত্রাণ,
ফেলে এসেছি কামান, মেশিনগান।
আমার শরীরে এখন আউশ-আমন ধানের
কাঁচা-পাকা মিষ্টি গন্ধ,
পোশাকে লেপ্টে আছে কচি লাউডগা শাক।

তোমার পছন্দের ঘ্রাণ মেখেছি
প্রিয় পাখিদের এনেছি ডেকে—
ময়না, শালিক, টিয়া, বসন্তবৌরি।
তবু টর্নেডোর মতো কেন জেগে আছো?
চোখ বোজো।

এবার তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো।
চোখের তারায় রেখেছ যে ঝিল—
তার আন্দোলিত প্রবাহকে শান্ত করো।

জানি, আমি থাকি বা না থাকি,
তোমার চোখে ঘুম আসবে না,
ঝিলের ঢেউও অনন্তবৃত্তের মতো থামবে না।

পারব না জেনেও বারবার আসব,
হাজার কিলোমিটার হেঁটে আসব।
সাইকেলে, ট্রেনে, জাহাজে চেপে আসব।
পাহাড়, মরু, বন-বনানী কয়েকশবার পাড়ি দেব,
না ঘুমালেও
তোমার মাথায় হাত বুলাব।

তোমার নিঃশ্বাসের শব্দে শান্তি পাই।
মনে হয়, প্রশান্ত সাগরে ডুব দেওয়া
এক নীল তিমি আমি।
তোমার শরীরের ঘ্রাণে আসক্ত হই—
যেভাবে পাড় মাতাল রাতের শহর জুড়ে
খুঁজে বেড়ায় এক ফোঁটা হুইস্কি।
তুমি ঘুমাতে পারো না, তবু।

হয়তো তোমার নিয়তিতে লেখা আছে
ইনসমনিয়া।
কোনো মহাজাগতিক ভিলেনের হাতে ঘুরছে নাটাই,
অদৃষ্ট আমাকে বানিয়েছে
ঘুমের ব্যর্থ বণিক।
জানি, করবে না কাজ এই ওষুধে,
তবু সেধে যাই।

এভাবেই কেটে যাবে
বাংলা, ইংরেজি আর আরবি বছর।
পাশাপাশি শুয়ে দু’জনে দেখে যাব—
মিছিল করে আসা
দীর্ঘ, ক্লান্ত সব ভোর।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.