![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ কে ঘৃনা করার অপরাধে অতীতে কাউকে কখনো মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়নি। কিন্তু মানুষ কে ভালবাসার অপরাধে অতীতে অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হয়তো হবে !!
মধ্যবয়স্ক মানুষটি অফিস থেকে বের হয়েছেন প্রায় ৫০ মিনিট আগে।
মিরপুরের দিকে বাসা তাঁর। ৪ বছর বয়সী মেয়ে বাবার অপেক্ষায় বসে আছে সন্ধ্যা থেকে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে গুলশান ২ নাম্বার মোড়ের চারমাথা ছোটাছুটি করেছেন মানুষটি - মিরপুরের একটা বাস ধরার জন্য। একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার দরকার তাঁর। ডান হাতের মুঠিতে শক্ত করে ধরা প্যাকেটটি সামলে রেখে দু'বার বাসের হাতল ধরার চেষ্টা করলেন তিনি। ভিড়ের চাপে হাতল ছেড়ে দিতে হলো।
বাস-সিএনজি-ট্যাক্সি কিছু একটা হলেই হয় তাঁর। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার এক ফাঁকে প্যাকেটের ভেতর একবার উঁকি মেরে দেখলেন। মাসের খরচ বাঁচিয়ে মেয়ের জন্য তুলতুলে একটি পুতুল কিনেছেন তিনি।
তাঁর মেয়ের অসম্ভব পুতুলের শখ। মেয়েকে দামী পুতুল কিনে দেবার সামর্থ্য নেই তাঁর। বেচারী সব সময় প্লাষ্টিকের পুতুল দিয়েই খেলে। দোকানের হাল-ফ্যাশনের দামী পুতুলগুলো মধ্যবিত্তের টানাটানির সংসারের জন্য অপেক্ষা করে না।
আজকে বেতন হয়েছে। প্রতিটি টাকা হিসেব করে খরচ করতে হয় তাঁদের। তারপরেও সাহস করে ২৩০০ টাকা দিয়ে গোলাপী পুতুলটি কিনে ফেলেছেন তিনি মেয়ের জন্য। তাঁর ৪ বছরের রাজকন্যার জন্মদিন যে আজ!
মানুষটির রীতিমত কান্না পাচ্ছে। আজকেই কেন গাড়ির এত আকাল পড়তে হবে! বিরক্ত হয়ে মোড় থেকে কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। সাদা রংয়ের মাইক্রো দাঁড়িয়ে আছে একটি। এই সময়টায় বেসরকারী অফিসগুলোর ডিউটি ফেরত গাড়িগুলোর ড্রাইভাররা ছোটখাটো প্রাইভেট ট্রিপ মারে। এক্সট্রা দু'পয়সা পকেটে যায় বেচারাদের।
প্রায় ভর্তি মাইক্রোবাসটি ছাড়ল বলে। মিরপুর বলতেই লাফ দিয়ে উঠে পড়লেন তিনি। দশ-বিশ টাকা বেশি গেলেও যাক। রাজকন্যার জন্মদিনে পাশে থাকার আনন্দের কাছে অতিরিক্ত এই দশ-বিশ টাকা অতি তুচ্ছ।
...মানুষটিকে রাত এগারোটার দিকে বনানী-মিরপুর ফ্লাইওভার সংলগ্ন মাটিকাটা এলাকা থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় জনগণ! প্রাইভেট মাইক্রোবাসে যাত্রীর ছদ্মবেশে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের পাল্লায় পড়ে মাসের বেতনের টাকা থেকে শুরু করে মোবাইল, মানিব্যাগ, টিফিন ক্যারিয়ার-সবকিছু হারিয়ে প্রায় অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে ছিলেন তিনি।
ধরাধরি করে হাসপাতালে নেয়ার জন্য যখন রিক্সায় তোলা হচ্ছে তাঁকে, ডান হাতের মুঠিতে তুলতুলে নরম গোলাপী পুতুলটির প্যাকেট তখনও শক্ত করে ধরা।
শুধু প্যাকেটের গায়ে ছোপ ছোপ লাল রং - মানুষটির শরীরের রক্ত!
============
.
পরিশিষ্টঃ উপরের ঘটনাটি গল্প না। শতভাগ সত্য ঘটনা। পরিচিত এক সহকর্মীর সাথেই হয়েছে গত ৩ তারিখ।
আপনাদের সবার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ - দয়া করে এই জাতীয় ভুল করবেন না। ঢাকা শহরে এই মুহুর্তে বেশ কয়েকটি রুটে বেসরকারী অফিসগুলোর গাড়ি এবং 'প্রায় ভরে যাওয়া' যাত্রীর ছদ্মবেশে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী/ডাকাত দল সক্রিয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের অফিস ফেরত ক্লান্ত, অবসন্ন মানুষজন এদের টার্গেট। ভুল করেও এই 'ভাড়া মাইক্রো-কার' এর ফাঁদে পা দিবেন না।
নিজের কথা না ভেবে অন্তত পরিবারের সদস্যদের কথা ভেবে হলেও এড়িয়ে চলুন এই গাড়িগুলো। প্রয়োজন হলে ১ ঘন্টা পরে বাসায় ফিরুন। এই জাতীয় দুর্ঘটনার কথা আমরা প্রায়শই শুনি, পেপারে দেখতে পাই। তারপরেও কেন জানি না - খুব একটা গা দেই না আমরা।
বিশ্বাস করুন - মধ্যরাতে রক্তাক্ত অবস্থায় কোন হাসপাতালে খুঁজে পাবার চেয়ে প্রিয় মানুষটিকে ১ ঘন্টা পরে নিজের বাসার দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখার আনন্দ কোটি গুন বেশী।
২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১৪
ফিলিংস বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
পথহারা নাবিক বলেছেন: দুঃখজনক!!