![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পরিষ্কার উজ্জ্বল আকাশ।রাস্তায় গণার কয়েকটা গাড়ি।মানুষজন নেই বললেই চলে।খালি গায়ের একটি ছেলে তার ছোট ভাইয়ের হাত ধরে রাস্তার কিনারা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।তার গায়ের রঙ কালো;সমস্ত শরীরে বালি লেগে আছে।বয়স ৯-১০ হবে।সে তার ছোট ভাইকে নিয়ে রাস্তার পাশে বোতল কুড়াচ্ছে।শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে নির্ভীক চিত্তে এই হরতালের দিনেও সে বোতল কুড়াতে বেরিয়ে পড়েছে।কারন,কেউ তাদেরকে খাবার মুখে তুলে দেয় না।তাদের নিজের খাবারের ব্যাবস্থা নিজেদেরকেই করতে হয়।
হঠাৎ রাস্তায় কিসের একটি শোরগোল শুনা গেল।সামনে একটি ব্যানার ধরে অসংখ্য মানুষের ঢল এগিয়ে আসছে।কারো হাতে স্ট্যাম্প, কারও হাত খালি।কালো খালি গা ওয়ালা ছেলেটা তার ছোট ভাইকে নিয়ে হা করে মিছিলের দিকে তাকিয়ে উদাস হয়ে গেল।হঠাৎ ঠুস করে কিসের শব্দ হল।শব্দটি ছিল ককটেলের।ছেলেটির উদাস ভাব কেটে গেল।উভয় পক্ষের সংঘর্ষ চলছে।কিন্তু এ-কি!তার ছোট ভাই কোথায়!সে রতন;রতন বলে চিৎকার করতে লাগল।এই ভিড়ের মধ্যে নিজের জীবনের পরোয়া না করে তার ভাইকে খুজতে লাগল।অবশেষে সে রতনকে দেখতে পেল।রতন রাস্তার মাঝখানে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।সে কাতরাচ্ছে।রতনের এই অবস্থা দেখে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়াটাই স্বাভাবিক।সে ফোঁপাতে-ফোঁপাতে রতনকে রাস্তা থেকে তুলে দৌড়াতে লাগল।মাথায় চিন্তা আর চোখে মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে দৌড়াচ্ছে।তার সমস্ত শক্তি দিয়ে হাসপাতালে পৌছানোর চেষ্টা করছে।
কালো ছেলেটি হাপাতে হাপাতে হাসপাতালে ঢুকল।রতন তার ভাইকে কিছু বলার চেষ্টা করছে,কিন্তু সে যেন কথা বলার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।কালো ছেলেটি রিসিপশানিস্টকে বলল,"আপা,আপনে আমার ভাইডারে বাচান"
রিসিপশানিস্ট মেঝে দেখিয়ে বলল,"ঐ জায়গায় তোমার ভাইকে রাখ।
ছেলেটি রতনকে মেঝেতে রাখল।একজন ইন্টার্নি ডাক্তার রতনকে দেক?এ বলল,"তোমার ভাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ।এক্ষুণি অপারেশন থিয়েটারে নিতে হবে।কিন্তু তার জন্য ২৫ হাজার টাকা লাগবে।নইলে আমাদের কিছু করার নেই।"
কালো ছেলেটি তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগল এত টাকা সে কোথায় পাবে?এমঅঅন সময় একজন ডাক্তার দুতলা থেকে নামছিলেন।কালো ছেলেটি দৌড়ে গিয়ে তার পা ধরে চিৎকার করে বলতে লাগল,"ডাক্তার সাব,আমার ভাইডারে বাচান।"
ডাক্তার বিরক্তির দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকালেন।কিন্তু দাড়োয়ান দৌটে এল।সে কালো ছেলেটিকে তার হাতের এক ঝটকায় সরিয়ে নিল।ডাক্তার নি:শব্দে হাসপাতেল হতে বেরিয়ে গেলেন।সে নিস্তব্দ হয়ে তাকিয়ে ডাক্তারের চলে যাওয়া দেখল।তার চোখে জল।কিন্তু কে দাম দিবে তার এই জলের!
সে তার সমস্ত চেষ্টায় পরাস্ত হয়ে তার ভাই রতনের কাছে গেল।রতনও রক্তাক্ত অবস্থায় উপরের দিকে নিস্তব্ধে তাকিয়ে আছে।তার হৃদস্পন্দন থেমে গেল।কালো ছেলেটি রতনকে বলল,"রতনরে!তোর লাইগা কিছু করতে পারলাম না।আমারে ক্ষমা কইরা দিস"
কিন্তু রতন তার ভাইয়ের কথার জবাব দিল না।কালো ছেলেটি চিৎকার করে কেঁদে উঠল।পৃথীবির এই লীলাখেলা দেখে আজ সত্যিই সে মুগ্ধ।তার ভাইকে সে বাঁচাতে পারল না শুধুমাত্র টাকার জন্য।সে আজও ভাবতে পারে না যে,তার ভাইয়ের মূল্য কি এই ২৫ হাজার টাকার সমান!সে উদাস মনে ভাবতে লাগল,"এই কি সেই সোনার বাংলা!যেই সোনার বাংলা তৈরিতে ১৯৭১ এ আমাদের লক্ষ-লক্ষ মানুশের জীবন দিতে হয়েছে।কিন্তু আজও কি আমরা সেই সোনার বাংলা গড়তে পেরেছি?আজও রতন তার জীবন উৎসর্গ করল।কিন্তু এতে কি মানুষের মনে একটু সহানুভূতি ঢুকবে?কালো ছেলেটি এসব ভাবতে ভাবতে জোরে একটা নি:শবাস ফেলল।
এর পরের অংশ আমি জানি না।সে হয়তো আজো ক্ষমা করতে পারেনি নিষ্ঠুত এই পৃথীবিকে।হয়তো রতনের স্মৃতি নিয়ে সারাদিন সেই রাস্তার আশে পাশে ঘুর ঘুর করে।রাস্তাটি আজও আগের মতোই আছে।আজও এই রাস্তায় মিছিল বের হয়।কিন্তু নেই শুধু রতন..........।
©somewhere in net ltd.