![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঠাকুমা'র ঝুলির সেই বন্দিনী রাজকন্যার গল্প আমরা সবাই জানি। সেই যে- যাকে বন্দী করে রেখেছিলো এক ভয়াল দৈত্য। দৈত্যটাকে মোকাবেলা করা কিন্তু অত সহজ নয়- তার প্রাণভোমরা যে রয়ে গেছে দীঘির পানির গভীরে এক রুপার কৌটায়! সাহসী এক রাজকুমার তরবারীর কোপে সে ভোমরার মাথা কেটে ফেলতে পারলে তবেই মারা যাবে সে দুষ্টু দৈত্য। বন্দিনী রাজকন্যার দুঃখের দিন শেষ হয়ে আসবে; রাজকুমারের সাথে হবে তার মধুর মিলন....
আমার হঠাত মনে হোল- দৈত্য যদি প্রাণভোমরাটাকে কৌটায় ভরে যেখানে সেখানে না লুকিয়ে আমাদের বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে রাখতো, তাহলে রাজকুমারের জন্য পুরো ব্যাপারটা অত সহজ হত না। লম্বা মানুষ বেকুব শ্রেণির হয় বলেই হয়তো দৈত্যের মাথায় এ চিন্তাটা আসে নি। যাই হোক- কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে নেই- রুপার কৌটা বুড়িগঙ্গায় লুকিয়ে রাখলে রাজকুমারের জন্য দৈত্যকে মেরে ফেলা আসলেই কতটা কঠিন হোত!
* ঢাকা এয়ারপোর্টে রাজকুমারের পংখীরাজ ল্যান্ড করার সাথে সাথেই কাস্টমস প্রথমে ঘোড়াটাকে জব্দ করতো। ট্যাক্স না দিয়ে পংখীরাজ সাথে করে নিয়ে আসায় রাজকুমারকে বিশাল অংকের এক জরিমানা করা হোত।
* জরিমানা হিসেবে রাজকুমার এক থলি স্বর্ণমুদ্রা দিলে সেটাকেও ক্রোক করা হোত। পরদিন রাজকুমার আর তার ঘোড়াকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে সংবাদপত্রে খবর বের হোত- 'হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবারো স্বর্ণ-উদ্ধার। পাচারকারী ও তার সঙ্গী ঘোড়া আটক।'
* নানা কাহিনী করে কাস্টমসের ধাক্কা কোনরকমে উতরে গিয়ে এবার ইমিগ্রেশনে এসে আটকে যেত রাজকুমার। ইমিগ্রেশন অফিসার এবং রাজকুমারের সংক্ষিপ্ত কথোপকথন পাঠকের সুবিধার্থে নিচে দেয়া হোলঃ
ইমিগ্রেশন অফিসারঃ 'প্লিজ ডিসক্লোজ ইওর আইডেন্টিটি; হু আর ইউ এন্ড হোয়ার আর ইউ ফ্রম? মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি-হোয়াট ইজ দ্য পারপাস অফ ইওর ভিজিট?'
রাজকুমারঃ "জনাব, আমি ডালিম কুমার। এক বদমাশ দৈত্যর প্রাণ ভোমরা উদ্ধার করে দৈত্যটাকে শায়েস্তা করতেই আমি এখানে এসেছি। আমার অন্য কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই।"
ইমিগ্রেশন অফিসারঃ 'আপনার কাছ থেকে যে আরব ঘোড়াটি এবং তিন থলি স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা কি? ঘোড়া পাচারকারী কোন চক্রের সাথে কি আপনার কোন সম্পৃক্ততা আছে?'
রাজকুমারঃ 'জ্বি না। জনাব! আপনার প্রশ্ন-উত্তর শেষ হলে আমাকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। বদমাইশ দৈত্যটার হাত থেকে তাড়াতাড়ি রাজকুমারীকে উদ্ধার করতে হবে...'
ইমিগ্রেশন অফিসারঃ(অত্যন্ত ঠান্ডা গলায়) 'এখনো সময় আছে, নিজেই খোলাখুলি সবকিছু স্বীকার করে নিন। পরে পুলিশ ঘোড়াটাকে রিমান্ডে নেয়ার পর ঘোড়া নিজেই যখন স্বীকারোক্তি দেবে যে- আপনি তাকে পাচার করছিলেন- তখন কিন্তু আরো বড় বিপদে পড়ে যাবেন....'
রাজকুমার, ইমিগ্রেশন অফিসারের এই কথা শুনে এতো অবাক হোল যে বলার নয়! বিড়বিড় করে অন্য ভাষায় কিছু একটা বললো যেটা ঠিক বোঝা গেলো না।
ইমিগ্রেশন অফিসার কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে রাজকুমারের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বললেনঃ 'আমাদের ইন্টিলিজেন্স খোজ নেবে- আপনি ভোমরা স্থলবন্দর কিংবা সাতক্ষীরা এলাকার বর্ডার সংলগ্ন অঞ্চলে কোন ধরণের চোরাচালান কিংবা পাচারের সাথে জড়িত আছেন কি না। সাথে এটাও খতিয়ে দেখা হবে- ডালিমের বিচি ফেলে দিয়ে তার ভেতর ইয়াবা বহনের কোন কৌশল কিংবা এ ধরণের কিছুর সাথে আপনার কোন যোগসাজশ আছে কি না। ততদিন আপনি না চাইলেও আপনাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারীতেই আটক থাকতে হবে...'
(যাই হোক, রাজকুমার কিভাবে উদ্ধার পেতো সেটা আরেক গল্প। দৈত্য বধের কাহিনীর সাথে অপ্রাসংগিক হওয়ায় সেদিকে আর গেলাম না। তবে এটুকু বলে রাখা ভালো যে- ঐ বিপদ থেকে উদ্ধারের পর একটা কেন- একশটা দৈত্যের মোকাবেলা করাকেও রাজকুমারের কাছে পানিভাত বলে মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু ছিলো না।)
*মুক্তি পাওয়ার পর রাজকুমার প্রথম বিপদে পড়তো সদরঘাটের উদ্দেশ্যে যে সিএনজিটা ঠিক করেছিলো- সেটাতে উঠে। এবারের বিপদের ধরণ অনেকটা এরকমঃ রাজকুমার যেহেতু কখনো মোবাইল ফোন আগে দেখেনি, তাই সে ব্যাপারটা সম্পর্কে কিছুই জানতো না। সুতরাং ঐ সিএনজির চালক, ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস খ্যাত ভীন ডিজেলের ওস্তাদ, গতিদানব খালেদ মাহমুদ সুজনের ডিজিটাল কোচ, অটরিক্সা প্রেমী, মিটার বিদ্বেষী, বিশিষ্ট এক্রোব্যাট, সর্বোপরি যানজটে নাকাল ঢাকবাসীর জীবন ব্রডব্যান্ড গতিতে গতিময় করার প্রতিজ্ঞায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জনাব রতন মিয়া- সিএনজি চালানো রত অবস্থায় যখন মোবাইলে কথা বলা শুরু করতো, তখনই আসলে বিপত্তি দেখা দিতো; রাজকুমার মনে করতো আশেপাশে যেহেতু কেউ নেই, ড্রাইভার বোধহয় তার সাথেই কথা বলছে-
রতন ড্রাইভারঃ "মাল এখন কার কাছে কইলি?"
রাজকুমারঃ "জনাব, এয়ারপোর্টেই সব রেখে দিয়েছে।"
রতন ড্রাইভারঃ "হায় হায়! মাল তুই হোসেনের কাছে দিতে গেলি কেন? ঐ শালা তো বিরাট বদমাইশ; শিউর মালে নয়-ছয় করবো।"
রাজকুমার (অত্যন্ত দুঃখিত স্বরে)ঃ "কি আর করা, ভাই! কপালের লিখন।"
রতন ড্রাইভারঃ "তুই আসলেই একটা বোকা*দা। খাড়া, আমি দেখতাছি কি করা যায়।"
রাজকুমার অত্যন্ত আশান্বিত স্বরেঃ "বড় খুশি হইলাম জনাব! মুদ্রা গুলা না হইলেও ঘোড়াটা যদি অন্ততঃ... (রাজকুমারের কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে আসে)। আমার বড় আদরের পংখীরাজ।"
রতন ড্রাইভার ফোন নামিয়ে রেখে মহাবিরক্ত গলায় বললেন- "ফোনে কথা কওয়ার সময় কি চিল্লা-ফাল্লা শুরু করছেন! এখন কন- সমস্যা কি! সদরঘাট যাইবেন ত, আরাম কইরা চেগায়া বয়া থাকেন; জায়গামত নিয়া নামায়া দিমু! যত্তোসব...."
(এনিওয়ে, ড্রাইভার রতন কিন্তু তার কথা রাখতে পারতেন না। কারণ, সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি থাকায় মগবাজারের কাছাকাছি এসে সিএনজির ক্রিটিক্যাল জায়গায় পানি ঢুকে সেটা বিকল হয়ে যেতো। বাধ্য হয়ে রাজকুমারকে সেখানেই সিএনজি থেকে নেমে অন্য ব্যাবস্থা দেখতে হোত)
* মগবাজার থেকে মালিবাগ পৌছার পর রাজকুমারের ধারণা হোত তিনি নিশ্চই বুড়িগঙ্গা নদীর কাছাকাছি পৌছে গেছেন। যেদিকে তাকানো যায়- শুধু পানি আর পানি! শান্তিনগর পৌছে তো রাজকুমার ধরেই নিলেন যে এটাই বুড়িগঙ্গা নদী (রতন ড্রাইভারও রাজকুমারকে সিএনজি থেকে নামিয়ে দেবার সময় বলেছিলো অবশ্য যে বুড়িগঙ্গা আর খুব বেশি দূরে নয়!)
* আর দেরি না করে দৈত্যের প্রাণভোমরা যে রূপোর কৌটায় লুকিয়ে আছে- রাজকুমার শান্তিনগরের পানিতে তাকে খুজে বেড়ানো শুরু করতেন। তাকে ঘিরে উতসুক জনতার ভীড় জমে যেতো এবং একটু পর পর তাদের নানা ধরণের প্রশ্ন/ উপদেশ/ মন্তব্য শোনা যেতে থাকতো-
'ভাই কি মাছ ধরতেছেন?'
'ভাই, পাঞ্জাবী-পায়জামা বদলায়া লুঙ্গী কাছা দিয়া আসেন।'
'হালায় মনে হয় পাগল।'
* নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে রাজকুমার বিধ্বস্ত অবস্থায় শেষ মেষ বুড়িগঙ্গার তীরে পৌছাতো (মাঝে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটে নি দেখেই সেগুলো বলে আর সময় নষ্ট করলাম না)। সবুজাভ কালো, ময়লা জলে ডুব দিয়ে রুপোর কৌটা তো দূরের কথা- চোখে অন্ধকার ছাড়া আর কিছু দেখতে পেতো না।
* প্রায় এক দিন ধরে নানাভাবে, বহু চেষ্টা করেও সারা গায়ে প্রবল চুলকানি আর বীট লবণের চিরস্থায়ী গন্ধ ছাড়া রাজকুমার যখন কিছুই অর্জন করতে পারতো না, তখন বুড়িগঙ্গা থেকে উঠে শরীরের নানা জায়গা চুলকাতে চুলকাতে সে হুংকার দিয়ে বলতো-
"গুষ্টি কিলাই রাজকুমারীর...."
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১
পুলহ বলেছেন: ধন্যবাদ কি করি আজ ভেবে না পাই! আপনার ছড়া পড়ে মনে হচ্ছিলো লেখাটার নাম পরিবর্তন করে "রাজপুত্তুরের কলিকালের বিড়ম্বনা" ধরণের কিছু একটা রাখি
ভালো থাকবেন !
২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৮
নীল সঞ্চিতা বলেছেন: হা হা হা...
মজার লেখা।
পড়ে ভাল লাগল। শুভ সকাল।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩২
পুলহ বলেছেন: শুভ সকাল নীল সঞ্চিতা! পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন !
৩| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১
খায়রুল আহসান বলেছেন: চেষ্টা ভালোই করেছেন। দুটি উক্তি দারূণ লাগলোঃ
'হালায় মনে হয় পাগল।' -- আর ...
"গুষ্টি কিলাই রাজকুমারীর...." --
১৬ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২১
পুলহ বলেছেন: হা হা হা, ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য!
হালকা মেজাজের একটা পোস্ট আর কি...
শুভকামনা জানবেন খায়রুল আহসান
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: হা হা হা....বেশ বলেছো
লিখলে দারুন পোষ্টখানা;
ঠাকূমার রাজপুত্তুরের
কলিকালের বিড়ম্বনা।
সেকাল আর নেই আজ
বদলেছে জামানা;
এ কালের প্রিন্সেরা
লুটে সব খাজানা!!!