![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডক্টর আহসান একজন নিউরোলজিস্ট, আমার ছোটবেলাকার বন্ধু। ওর কাছ থেকেই মিসেস শায়লার ঘটনাটা শুনি আমি ......
এম্নিতে ভদ্রমহিলা নাকি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। শারীরিকভাবেও বেশ সুস্থও আছেন এখনো। আমাদের দেশের মেয়েরা যেখানে ৪০/৪৫ এ-ই ডায়বেটিস, হার্টের রোগ, কিডনী জটিলতাসহ নানা ধরণের সমস্যায় ভোগা শুরু করেন- সেখানে মিসেস শায়লা ব্যতিক্রম। উনার এক হাঁটু ব্যথা ছাড়া ছাড়া বলার মত তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অসুখ নেই। ৬২ বছর বয়স্ক এক মহিলার জন্য এটা বড় রকমের এক এচিভমেন্টই বলা যায়।
উনারই সমস্যা নাকি শুরু হয়েছিলো শ্রাবণের এক রাতে। মিসেস শায়লা যাত্রাবাড়িতে থাকতেন। ভদ্রমহিলার স্বামী মারা গেছে আজ থেকে আরো বছর পাঁচেক আগেই। ছেলেমেয়ে বলতে শুধু মাজেদ আর মালিহা। মালিহার বিয়ে হয়ে গেছিলো ততদিনে। যাত্রাবাড়ির বাসায় শুধু উনি আর উনার ছেলে মাজেদ- এই দু'টি প্রাণী। একটা ছুটা বুয়া আসতো অবশ্য সকালে। এসে ঝড়ের বেগে সব রান্না করে দিয়ে চলে যেতো আবার। সেদিক থেকে চিন্তা করলে স্বামীহারা মিসেস শায়লাকে সারাটা সময় প্রায় একা একাই বাসায় থাকতে হতো বলা যায়। তাঁর উপর ছেলেটা ছিলো বাউন্ডুলে টাইপ। চায়ের স্টল, ফার্মেসী কিংবা গলির মাথায়া আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে তার প্রায় দিনই রাত দশটা......
সেদিন সারাটা সকাল রোদ ছিলো, সন্ধ্যার পর পর মেঘ করে এলো। কিছু বোঝার আগেই হুড়মুড় করে বৃষ্টি। মিসেস শায়লা তাড়াতাড়ি নিজেই কষ্ট-মষ্ট করে দরজা জানলা আটকালেন। যে-ই না উনি সোফায় এসে বসেছেন, ঠিক তখনই কারেন্ট চলে গেলো হঠাত।
মানুষ ঘুটঘুটে অন্ধকারে থাকতে পারে না, শায়লাও পারলেন না। কোনমতে হাতড়ে হাতড়ে মোবাইল খুঁজে নিয়ে আলো জ্বালালেন। মাজেদ যেনো কিভাবে মোবাইল থেকে টর্চ লাইট জ্বালায়, জিনিসটা একদিন শিখে নিতে হবে ওর কাছে থেকে। যদিও আজকাল কারেন্ট খুব একটা যায় না, কিন্তু যেদিন যাবে- সেদিন যেনো আজকের মত সমস্যায় না পড়েন।
মোবাইলের অতটুকু আলো অন্ধকার দূর করতে পারলো না ঠিক, কিন্তু হালকা স্বস্তি এনে দিলো। ঠিক তখনই তিনি পাশের রুম থেকে গোঙ্গানোর শব্দটা শুনতে পেলেন। যেনো বয়স্ক কোনো বৃদ্ধা কঠিন অসুখে পড়ে মোটা গলায় কাতরাচ্ছে। তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে মাজেদকে ফোন দিয়ে দেন তখনই-
"মাজেদ তুই কোথায়?"
"আমি ফার্মেসিতে আটকা পড়ছি। বৃষ্টি একটু কমলেই চইলা আসবো। কেন?"
"আমার রুম থেকে কে যেনো গোঙ্গানোর মত শব্দ করছে। তুই তাড়াতাড়ি আয় বাবা, খুব ভয় লাগছে আমার।"
"উহ, যত্তসব ফালতু কথা! কে আসবে তোমার রুমে !! আচ্ছা, ভয় পায়ো না, আমি আসতেছি।"
"তুই কথা বলতে বলতে আয়। আমি এখন ফোন রাখতে পারবো না।"
"আরে আজব, বৃষ্টিতে ভিজলে ফোন নষ্ট হয়া যাবে না ! স্রেফ পাঁচ মিনিট লাগবে আমার......"- বলে নিজে থেকেই ফোন কেটে দৌড় লাগালো মাজেদ। তাঁর কপালেও চিন্তার এলোমেলো ভাঁজ - কে ঢুকবে শায়লার রুমে ! তা-ও আবার এতো রাতে। জোর করে সে চিন্তাটা মাথা থেকে সরায়। সে-ও কি তার মায়ের মত আজব চিন্তা করা শুরু করেছে !
মাজেদ অবশ্য বাসায় ফিরতে ফিরতে কারেন্টই চলে এলো। ততক্ষণে মিসেস শায়লার অবস্থা কাহিল ! দরদর করে ঘামছিলেন উনি। মাজেদ ফুল স্পিডে ঘরের সবগুলো ফ্যান ছেড়ে দিলো। গ্লাস ভর্তি পানি এনে রাখলো মায়ের সামনে।
"আহা মা, ভুল শুনছো তুমি। কে না কে শব্দ করছে, তুমি ভাবছো পাশের রুম থেইকা শব্দ আসতেছে। এই যে- আমি নিজেই তো গিয়া তোমার রুম ঘুইরা আসলাম। কই, কিছুই তো শুনলাম না !"
"না শুনিস, আমি আর ঐ রুমে একলা ঘুমাতে পারবো না। তুই কাল থেকে নাজমা বুয়াকে বল আমার সাথে এসে থাকতে। টাকা ওকে বাড়িয়ে দিবো কিছু..."
"আচ্ছা ঠিক আছে। বলবো। তুমি এখন শান্ত হও ! "
পরদিন থেকে নাজমা বুয়াকে বলা হলো রাতে এসে মিসেস শায়লার সঙ্গে থাকতে। কিন্তু সে ব্যবস্থাও দীর্ঘস্থায়ী হলো না। এক সপ্তাহ পর, গভীর রাতে নাজমা নিজেও ভয় পেলেন। এটা একরকমের অবিশ্বাস্য, কারণ একবার ঘুমালে নাজমা বুয়ার কোন হুশ থাকতো না। সেখানে মধ্যরাতে তিনি গোঙ্গানোর শব্দ শুনে জেগে যাবেন- এটা অসম্ভব! কিন্তু সেই অসম্ভব ঘটনাটাই ঘটলো একদিন। মাজেদের ঘুম ভাংলো নাজমা বুয়ার চিৎকার চেচামেচি শুনে......
"ভাই গো, শয়তান আছে এই আয়নার ভিত্রে। আমি নিজে দেখছি ! আমার দিকে চাইয়া ছিলো ....."
সঙ্গত কারণেই সে রাতে আর কারো ঘুম হলো না।
এরপরের দিনই মাজেদ তাঁর মা'কে নিয়ে আহসানের কাছে এসেছিলো। আহসান কিছু ওষুধ লিখে দিলো, সাথে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সাথেও যোগাযোগ করতে বললো। এরপরের অংশটুকু আহসানের জবানিতেই শোনা যাক-
"আমি এক মাস পর মিসেস শায়লাকে আসতে বলেছিলাম আবার। মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম- আমার দেয়া ওষুধগুলো খেয়ে আর সাইকিয়াট্রিস্টের কাউন্সেলিং এ সমস্যা কেটে যাবে উনার, কিন্তু ঘটলো উল্টোটা। এখন নাকি প্রায় রাতেই আয়নায় বীভৎস এক মহিলাকে দেখতে পান উনি । মিসেস শায়লা নিজেই বললেন- মহিলাকে দেখে অর্ধগলিত লাশের মত লাগে তাঁর কাছে। সেটার এক চোখ নাকি পোকায় খাওয়া। মুখ থেকে আবছা আবছা শুষ্ক নাড়িভুড়ি বের হয়ে ঝুলে থাকে...... সব মিলে খুব কদাকার একটা চিত্র। স্বস্তির বিষয় একটাই- সে নাকি কারো কোন ক্ষতি করে নি এখন পর্যন্ত।
আমি মাজেদকে জিজ্ঞেস করলামঃ "সাইকিয়াট্রিস্ট কি বলেছে !"
মাজেদ প্রশ্নটা শুনে একটু ইতস্তত করতে লাগলো। তারপর গলা খাকারি দিয়ে বললোঃ "উনি বলেছেন- আয়নায় মা নিজেই নিজেকে দেখে ভয় পাচ্ছেন আসলে। উনার যুক্তি হলো- মা যেহেতু যৌবনে অসম্ভব সুন্দরী একজন মহিলা ছিলেন, তাই এই লোলচর্মসার বৃদ্ধাকে তিনি নিজের সত্তা বলে গ্রহণ করতে পারেন নি আজো। অন্ধ প্রত্যাখ্যান, বাস্তবতাকে অস্বীকার কিংবা নতুন কোন রিয়েলিটি নির্মাণ করতে হলে মা'র এমন একটা শত্রুর প্রয়োজন ছিলো- যার উপর কি না সবটুকু দোষ চাপিয়ে দেয়া যায়।"
"আই সি ! আপনারা উনাকে বলেন নি- নাজমা বুয়াও যে আয়নায় কিছু একটা দেখেছিলো...?"
"জ্বি বলেছি। উনি বললেন- সেটাও নাকি হতে পারে। ইনডিউসড ইল্যুশন না কি যেন বলে ওটাকে !"
"ঠিক আছে। তাহলে তো সমস্যা মিটেই গেলো। কি বলেন !"
মাজেদ একটু হাসলো এ বেলা, তারপর নীচু গলায় বললো- "সাইকিয়াট্রিস্টদের কাছে বোধহয় সব কিছুরই উত্তর থাকে, তাই না ! আমরা কিন্তু এ বাসায় এসেছি কেবল বছরখানেক হলো। এর আগে অন্য বাসাতে ছিলাম। ওখানে কিন্তু এ ধরণের কোন অভিজ্ঞতা হয় নি আমাদের। অথচ তখনো আমার মা ছিলেন বুড়ো......"
"তাহলে আমার সাজেশন থাকবে- এই বাসাটাও আপনারা চেঞ্জ করে ফেলেন...... আফটার অল- মনের স্যাটিসফ্যাকশন বড় স্যাটিসফ্যাকশন !"
-এটুকু বলে আহসান থামলো। তারপর শুকনো হেসে আবার বললো- "যদিও পরে আর ওরা বাসাটা পাল্টানোর সুযোগ পায় নি। এর আগেই বড় ধরণের একটা বিপর্যয় ঘটে যায় মিসেস শায়লার সংসারে। মাজেদ পুলিশের কাছে ধরা খায় !"
"বিস্তারিত বল !"
কোন একটা কারণে মাজেদ নাকি পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলো শেষের দিকে। শুনেছিলাম সে-ও নাকি আয়নায় আজেবাজে কি কি জানি দেখতো ! ঐ বাসা ছেড়ে যাওয়ার ঠিক এক দিন আগে সে উষ্কুখুষ্কু চেহারা নিয়ে যাত্রাবাড়ি থানায় আত্মসমর্পণ করে। মাজেদ দাবী করলো- তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা মেয়েকে নাকি রেপ করেছিলো বাসাটায়। মিসেস শায়লা তখন মালিহার কাছে বেড়াতে গেছেন, ২/৪ দিন থেকে আসবেন। এই সুযোগেই মাতাল ৫ বন্ধু সারারাত ধরে একটা মেয়ের ওপর নির্যাতন চালালো। যতক্ষণে ওদের হুশ ফেরত এসেছে, ততক্ষণে মেয়েটা আর নেই। নিজেরাই নাকি তখন লাশ খন্ডখন্ড করে নদীতে ফেলে দিয়ে এলো। খারাপ পাড়ার খারাপ একটা মেয়ে, তাই ওর হারিয়ে যাওয়াতে হৈ চৈ-ও হয় নি খুব একটা। মাজেদ নিজে থেকে আত্মসমর্পন না করলে কেউ হয়তো জানতোই না !
আমি আমার শুকনো ঠোঁট জিব দিয়ে ভিজিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- "এরপর?"
"এরপর আর কি ! গল্প শেষ !"
"আশ্চর্য, মাজেদ কেন আত্মসমর্পন করলো? এর সাথে আয়নার ভৌতিক প্রতিবিম্বেরই বা সম্পর্ক কি?-এগুলো জানতে হবে না!"
"দেখ, এরপর আর মিসেস শায়লা আমার চেম্বারে আসেন নি। মাজেদ আর ওর বন্ধুরা তো জেলেই। তবে আমার নিজস্ব একটা হাইপোথিসিস আছে। আমার কাছে মনে হয়- মিসেস শায়লা কোনভাবে মাজেদের সেই কুকর্মের কথা আঁচ করতে পেরেছিলেন। ছেলের এমন অধঃপতন হয়তো তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি। তাই ভয়ের ছোট্ট একটা বীজ খুব কৌশলে তিনি মাজেদের মনে ঢুকিয়ে দেন। হয়তো চেয়েছিলেন ছেলে তার কাজের জন্য কঠিন সাজা পাক। ওদিকে মাজেদ যেহেতু তীব্র ইনসিকিউরিটি আর অপরাধবোধে ভুগছিলো- তাই সেই চারা থেকে গাছ গজাতে খুব একটা বেশি সময় লাগে নি। আফটার অল- ইনসিকিউরিটি খুব বাজে একটা জিনিস !"
"তার মানে আয়নার প্রতিবিম্ব, বৃদ্ধার গোঙ্গানো- এগুলো সবই ভুয়া !"
"অবশ্যই ভুয়া ! তুই এপ্লাইড ফিজিক্সের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হয়েও এগুলো বিশ্বাস করিস নাকি !"
আমি জবাব দিলাম না, ততক্ষণে ভয় পাওয়ার বদলে সেই দুর্ভাগা মেয়েটার জন্য আমার খারাপ লাগতে শুরু করেছে। আমি আহসানকে বলতে পারতাম- মাই ফ্রেন্ড- আধুনিক পদার্থবিদ্যা ভৌতিক গল্পের চেয়েও অনেক আজগুবি আজগুবি কথা বলে আসলে। বলতে পারতাম- কোয়ান্টাম ফিজিক্সের জগত আমাদের সো কল্ড অশরীরী জগতের চেয়েও অনেক বেশি ব্যাখ্যাতীত !
আমি কিছু বললাম না- শুধু বেচারি মেয়েটার কথা চিন্তা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম চুপচাপ !
***
(সমাপ্ত)
১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৯
পুলহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা জানবেন !
২| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম লাইনেই গন্ডোগোল। ভদ্র মহিলা বুদ্ধিমতী হবেন। বুদ্ধিমান নন।
১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০০
পুলহ বলেছেন: আচ্ছা
৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৩
স্থিতধী বলেছেন: গল্পের প্লট ভালোই লাগলো।
১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০০
পুলহ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ !
৪| ০৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১০
নীল আকাশ বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে।
০৬ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩৮
পুলহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ !
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: দারুণ উপস্থাপন