![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
ঝিলনদি গ্রামের শাজাহান ওঝা খুব বিখ্যাত লোক। মানুষ বলে- শংখচূড় থেকে শুরু করে এমন কোনো সাপ নেই, যার বিষ লোকটা নামাতে পারে না। এমনও কিংবদন্তী আছে- সাপে কাটা বালকের দিকে ওঝা একনজর তাকানো মাত্র রোগি অর্ধেক ভালো হয়ে গেছিলো ইত্যাদি।
আজকাল যেখানে কবিরাজ, ঝাড়ফুঁক এদের দাপট কমতির দিকে, সেখানে শাজাহান ওঝা বেশ ভালো আছে। ওঝাগিরি করেই ঝিলনদি গ্রামে টিনের ঘর তুলেছে সে। বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছে বেশ উঁচু সমাজে। এভাবে চললে ছোট মেয়েটাকেও ভালোয় ভালোয় পার করে দিতে পারবে। এই মেয়েটা ওঝার বড় আদরের......
তবে ভাদ্র মাসের এক দুপুরেই সব কেমন ওলট-পালট হয়ে গেলো। ওঝার ছোট মেয়েটার নাম ছিলো পারুল। বান্ধবীদের সাথে মিলে মেয়েটা লুকোচুরি খেলছিলো একদিন। ভগ্ন জমিদার বাড়িটাতে গিয়ে লুকালো। তখনই পারুলকে সাপে কাটলো আঁতকা। ভয়ানক গোখরো। ঠিক সময় বিষ না নামালে নিশ্চিত মৃত্যু।
গ্রামবাসীর বিস্ফোরিত চোখের সামনে দোর্দন্ড প্রতাপশালী শাজাহান ওঝা তার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলো সেদিন......
***
২
বাঘের জন্য মেয়ে খোঁজা হচ্ছে। পাত্রের শুধু একটাই ডিমান্ড- মেয়ে স্লিম ফিগারের হতে হবে......
কিন্তু সমস্যা হলো স্লিম ফিগারের মেয়ে পাওয়া নিয়ে। বাঘ আজ এই ঘটকের কাছে যায়, কাল ঐ ঘটক ধরে, কিন্তু মেয়ে পছন্দ করতে পারে না। যার ছবিই দেখানো হয়, বাঘ তাছিল্য ভরে ঠোঁট উল্টে বলে- "আরো স্লিম ফিগার নাই?"
শেষমেষ বাঘ গাধার কাছে গেলো। ঘটক হিসেবে গাধার তেমন সুনাম ছিলো না, কিন্তু কেউই যখন তার স্বপ্নকন্যার সন্ধান দিতে পারছে না, তখন কি আর করবে ! গাধা সব শুনে টুনে বললো- "এটা কোনো ব্যাপারই না !"
এর কয়দিন পর গাধা একটা মেয়ে বাইম মাছ ধরে আনলো। আনন্দিত গলায় বাঘকে বললো- "এই ফিগারে চলবে? স্লিম আছে !"
***
৩
সূর্যের খুব অহংকার ছিলো তার রূপ নিয়ে। নিজের গুণকীর্তন করতে করতেই জীবন কাটতো তার। প্রতিদিন সকালে পূর্ব দিক থেকে ওঠার পর সে গর্বভরে বলতো- "আমার আলো ছাড়া পৃথিবী অচল। একদিন আমি না জাগলেই সারা দুনিয়া ঢেকে যেতো শীত আর অন্ধকারে। গাছপালা তো বটেই, মানুষের মত উন্নত একটা প্রাণীরও আমাকে ছাড়া চলে না। আমার আলো না থাকলে মানুষ কি পরিমাণ অসহায় হয়ে যেতো, সেটা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছো......"
একজন অন্ধ সেদিন গাছতলায় বসে সূর্যের কথাগুলো শুনছিলো। এক পর্যায়ে শুধু মুচকি হেসে উঠে গেলো !
***
৪
সত্যি বলতে রেহনুমাকে যে আমি কত ভালোবাসি, সেটা বিদেশ আসার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারি নি......
বাপ-দাদার জমি বিক্রি করে আজ থেকে দশ বছর আগে জেদ্দা চলে এসেছিলাম। এখানে ছোট্ট একটা মুদি দোকান চালাই। দেশেরই কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিকের সাথে ঘর ভাড়া করে থাকি। সঞ্চয় যা হয়, তাতে চলে যায় বেশ। এরই মধ্যে গ্রামে একটা ঘর তুলেছি, সাথে মাসে মাসে টাকা পাঠানো তো আছেই......
কষ্ট শুধু একটাই, আর তা হলো- পরিবার থেকে দীর্ঘকালীন বিচ্ছেদ। আমরা যারা এখানে ছোটখাটো চাকরি করি, তাদের দেশে যাওয়াটা খুব কষ্ট আসলে। সহজে ছুটি মেলে না। রেহনুমাকে যে এখানে এনে রাখবো, সেই সামর্থ্যও নেই আমার। তাছাড়া বাড়িতে বৃদ্ধ মা আছে, রেহনুমা এখানে চলে আসলে মার সাথে থাকবে কে? সব মিলে, আমাদের মত প্রবাসীদের অবস্থা হয় সে-ই নাবিকের মত, যে কি না প্রতিনিয়ত অব্যাহতি চায় নীল দরিয়ার থেকে। মধ্যপ্রাচ্যে বসেও যার মনের নোঙ্গর পরে থাকে সারেং বাড়ির ঘরে......
এসব মনে হলেই আগে সৈকতে চলে যেতাম। আমার এখান থেকে সৈকত কাছেই। প্রায়ই বিকেলে গিয়ে বসে থাকতাম ওখানে। রেহনুমার কথা ভাবতাম। প্রতিবার ছুটি থেকে ফেরত আসার সময় মেয়েটা যে আমার দিকে চোখভর্তি পানি নিয়ে তাকাতো, সেই মুখটা মনে পরতো খুব...... মায় মায়া, চিকন আমপাতার মত মুখ !
এ সৈকতেই আমার এক আরব কবির সাথে পরিচয় হয়েছিলো। কিছুটা ভবঘুরে ধাঁচের লোক, সম্ভবত প্রাচীন আরবের যাযাবর সত্তা তার রক্তে রয়ে গেছে এখনো। আমার গল্প বলেছিলাম তাঁকে। প্রিয়জন রেখে দূরে থাকা, প্রতিবার বিদায় নিয়ে আসার সময় কলিজা ছেড়া কষ্ট, প্রতিবার দেশে গিয়ে নতুন করে তাঁকে পাওয়া- এ স.....ব। আহামরি কিছু না যদিও, আমার মত প্রতিটা প্রবাসীরই জীবনের গল্প এগুলো। তারপরো সে মনোযোগ দিয়ে শুনলো।
একদিন তিনি নিজে থেকেই সৈকতে আমাকে খুঁজে বের করেছিলেন। বললেন- "বন্ধু ! তোমার জন্য একটা কবিতা লিখে এনেছিঃ
"দূরত্বকে অবহেলা কোরো না কখনো
কেননা সমুদ্র আকাশকে
ছুঁতে পারে কেবল অসীম দূরত্বেই
কখনো কি ভেবে দেখেছো
নক্ষত্রেরা কেনো এতো সুন্দর ?
আমি বলি- সেটা তাদের আলোকবর্ষী দূরত্বেরই কারণে......"
আমি কবির কথা শুনে চমকে উঠলাম। মনে হলো- সত্যিই আমি বুঝি রেহনুমাকে আরো আপন করে পেয়েছি এখানে। দূর দিগন্তে আকাশকে যেমন করে পায় সমুদ্র, অথবা রাতের আকাশ তারায় তারায় ঐশ্বর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে যেভাবে !
আমি আমার কবি বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
***
(সমাপ্ত)
২৩ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১০
পুলহ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২০ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:২১
কুশন বলেছেন: দুই নম্বর অনুগল্পটা বেশি ভালো লেগেছে।
২৩ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১০
পুলহ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
৩| ২০ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২১
ইসিয়াক বলেছেন: সবগুলো অনু গল্পই সুন্দর। আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে ১ নম্বর আর ৪ নম্বরটা।
২৩ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১১
পুলহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ
৪| ২১ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:০৯
আমি তুমি আমরা বলেছেন: ১,২,৪-অসাধারণ হয়েছে। ওঝার ভন্ডামী, গাধার গাধামী আর অসহায় প্রবাসী স্বামীর আকুলতা-ভাল লেগেছে। আপনি আরেকটু নিয়মিত হলেই পারেন। আপনার অনুগল্পগুলো খুব মিস করি।
ভাল থাকুন। শুভকামনা রইল।
২৩ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১১
পুলহ বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা। পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন
৫| ২২ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:১৬
উম্মে সায়মা বলেছেন: ৪ নং এর কবিতাটা খুব সুন্দর আর সবগুলো গল্পই ভালো লেগেছে। শুভ কামনা।
২৩ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১২
পুলহ বলেছেন: ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: চারটা গল্পই চমৎকার।