নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাগাড়ের তেলাপোকা চলল সমুদ্র দেখতে

জাফর সাদিক রুমী

.........।

জাফর সাদিক রুমী › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেভাবে ফিরে এসেছিলাম মৃত্যুর মুখ থেকে ; পর্ব ১

২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:১১

জীবনে কমপক্ষে পাঁচবার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি । প্রত্যেকটা ঘটনাই ছিল রীতিমতো রোমহর্ষক এবং অবিশ্বাস্য। সর্বশেষ ঘটনায় ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে গেল আমার বাস, মারা গেল আমার পাশের যাত্রী সহ তিনজন। ধ্বংসস্তুপ থেকে হেঁটে হেঁটে বের হলাম আমি।



২০০৯ সাল, কোরবান ঈদের ২ দিন পরের ঘটনা। ইদ উপলক্ষ্যে বাড়ীতে ছিলাম, চট্টগ্রামে। একটা কল এলো ১২১ নাম্বার থেকে। আজব ব্যাপার, যে নাম্বারে সারাদিন কল করে লাইন পাওয়া যায় না সেই নাম্বার থেকে কল ! রিসিভ করলাম কলটা । কলটা ছিল গ্রামীনফোন থেকে । ক'দিন আগে অ্যাপ্লাই করেছিলাম একটা চাকরির জন্য । পরদিন সেটারই ইন্টারভিউ, ঢাকায় যেতে হবে । দুপুরে কল পেলাম, সাথে সাথেই ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। দামপাড়া বাস কাউন্টারে এসে দেখি টিকেট সংকট । ভাগ্য ভালই বলতে হবে, ইউনিক পরিবহনের শেষ বাসে একটা টিকেট পেয়ে গেলাম , সামনের দিকেই, B4 । সাধারণত এত সামনে আমি বসি না, ডানপাশটাও এড়িয়ে চলি। কিন্তু কী আর করা ?



সীটে বসতে না বসতেই পেছন সীটের লোকটা আমাকে ডেকে অনুরোধ করল তার সাথে আমার সীট বদলে নিতে। আমার পাশের সীট-টায় তার বন্ধু বসেছে, দু'জন একসাথে গল্প করে করে যেতে চায়। খুশীমনেই সীট-টা ছেড়ে দিলাম।



গাড়ী ছাড়ল রাত ১২ টার দিকে । আকাশের চাঁদটা ছিল দেখার মত । আকাশের চাঁদ দেখতে দেখতেই যাত্রা শুরু হল ।হাইওয়েতে রাতের গাড়ী এমনিতেই একটু স্পিডে চল। শহর পেরুনোর আগেই এই গাড়ীটা স্পিডে চলতে শুরু করল। একই সময়ে ছেড়ে আসা সৌদিয়া গাড়ীর সাথে শুরু করল প্রতিযোগীতা।



সিটি গেটের কাছাকাছি একটা ছোট ফ্লাইওভার আছে । উপরে ঢাকা- চট্টগ্রাম হাইওয়ে, নিচে ঢাকা- বন্দর কার্গো ট্রেন লাইন । ফ্লাইওভারের নিচে ঢাকা - চট্টগ্রাম হাইওয়ের পুরনো রাস্তাটা এখনো আছে । প্রতিযোগীতায় জেতার জন্য কীনা কে জানে, আমাদের ইউনিক গাড়ীর ইউনিক ড্রাইভার উপর দিয়ে না গিয়ে নিচ দিয়ে যাবার প্লান করল । গাড়ী নেমে গেল নিচের রাস্তায় ।



রাস্তাটা বেশ ভাংগা ছিল । গাড়ীটা কিছুদূর হড়কে হড়কে যাবার পর হঠাৎ থমকে গেল । এমন সময় ডানদিক থেকে মনে হল একটা হেডলাইট এগিয়ে আসছ। ধীরে, ধীরে। । কিসের হেডলাইট? ট্রাকের? তাহলে ডানদিক থেকে কেন, বিপরীত দিক থেকে আসার কথা । আর ট্তারাকের তো হেডলাইট দুইটা । তাহলে কী ???



''শিট''- শেষ মুহূর্তে আমার মুখ থেকে এই কথাটাই বেরিয়ে এল। কারণ হেডলাইটটা ছিল একটা কার্গো ট্রেনের। আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ট্রনটা আছড়ে পড়ল বাসের গায়ে, ভয়ংকর সংঘর্ষের আওয়াজে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার আওয়াজ।



চোখের সামনেই দেখলাম আমার পাশের যাত্রী ছিটকে পড়ল। বাসের মাঝখানের পথটাতে ছিটকে পড়ল আরো কয়েকজন। চারিদিকে চীৎকার , এইসময় কয়েকে মুহূর্তের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম সম্ভবত ।



প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান ফিরল। চোখে সবকিছু কেমন ঝাপসা দেখছিলাম, পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা । তাহলে কী আমার চোখ অন্ধ হয়ে গেছে? কাটা পড়েছে আমার দুই পা?



হাত দিয়ে প্রথমে ডান চোখ ঢাকালাম, তারপরে বামচোখ- নাহ ! সবই দখেতে পাচ্ছি । হাত দিয়ে ধরে দেখলাম পা দু'টো । মনে হল ঠিকই আছ দাঁড়াতে পারব । ততক্ষনে দেখলাম অনেকে নেমে পড়েছে বাস থেকে । দরজা বা জানালা দিয়ে নামার দরকার হয়নি । সংঘর্ষে বাসের সামনের অংশ একে বারে নেই হয়ে গেছে, ঠিক আমার সীটের সমানের অংশ থেকে।



সেদিক দিয়েই সবাই নেমেছে। আমার হাতে একটা ব্যাগ ছিল । ব্যাগটা কাঁধে নিলাম। তারপর জানালা ধরে একটা ধাক্কা দিতেই বাসের ডানপাশটা টিনের পাতের মত উল্টে পড়ে গেল। সেই পাতের উপর দিয়ে হেঁটে নামলাম নিচে । ততক্ষনে আশপাশ থেকে অনেক লোক জড়ো হয়েছে। সবাই ব্যাস্ত মারাত্মক আহতদের নিয়ে।একটা লোককে দেখলাম ছুটছে । জানলাম বাসের ড্রাইভার এই ভদ্রলোক । ছুটে মেইনরোডে যেতেই কোন একটা বাস তাকে তুলে নিল, বাঁচিয়ে দিল জনতার রোষ থেকে। অনেকটা এমনভাবেই দুমড়ে গিয়েছিল বাসটা, সামনের অংশটা বলতে গেলে নেই হয়ে গিয়েছিল



আমার দিকে হঠাৎ করেই এগিয়ে এল জনা কয়েক শুভাকাংখি । বল্ল রাস্তার ওপারেই একটা ফার্মেসী আছে, আমাকে এক্ষুনি সেখানে যেতে হবে। আমার সারা গায়ে রক্মাত,কপাল কেটে গেছে , সেলাই দরকার। আমাকে ধরেতে কেউ এগিয়ে এল না।অবশ্য তার দরকারও ছিল না। নিজে হেঁটেই রাস্তা পেরুলাম। কেউ একজন ফার্মেসীর হাতুড়ে ডাক্টারকে ডেকে তুলেছে । লোকটা আনাড়ি হাতে ছুরি-কাঁচি ধুতে শুরু করেছে। দেখে ভাল লাগল না । জনালাম আমি এখানে সেলাই করাবো না। লোকটা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল, বলল কাছেই আলামিন হসপিটাল, সেখানে যেতে পারি।



হাইওয়ে ধরে একা একা হাঁটতে শুরু করলাম আলামীন হসপিটালের দিকে। একটা সিএনজি দেখে হাত বাড়ালাম । থামল গাড়ীটা, আমার অবস্থা দেখে আর দাঁড়াল না। মনে হয় রক্তে নিজের গাড়ীটা নোংরা করতে চাইল না। আরো কয়েকটা গাড়ী এমনটা করল। এই সময় ছোট্ট একটা হিউম্যান হলার যাচ্ছিল পাশ দিয়ে , থামালাম । আমার অবস্থা দেখে এইটাও কেটে পড়তে চাইছিলো, যাত্রীরাই কেটে পড়তে দিল না। ওঠে পড়লাম গাড়ীতে।



পোঁছে দেখি, আমার আরো কিছু সহজাত্রী আগেই পোঁছে গেছে। কারো দু'টো আংগুল নেই, কারো মাথা থেঁতলে গেছে। আমাকেও শুইয়ে দেয়া হল একটা বেডে । আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করল পকেটে পর্যাপ্ত টাকা আছে কীনা। আমি ওদেরকে নিশ্চিত করেছিলাম, কিন্তু ওরা দীর্ঘক্ষণ দেরী করেছিল এই ব্যাপারটা নিশ্চিত হবার জন্য। ততক্ষনে রক্তপাতে আমি ক্লান্ত।



আমি ফোন করে আমার এক কাজিনকে জানিয়ে দিয়েছিলাম ঘটনা। তার বাসা কাছেই ছিল, সে আসার পরে শুরু হল সেলাই । মোট ২৬ টা সেলাই পড়েছি.২২ টা কপালে, আর বাকী চারটা সেলাই দিয়ে আমার কাগজের মত চীরে যাওয়া ঠোঁট জোড়া লাগানো হল। তবে বলতেই হয়, হাসপতালের মেডিকটা বেশ ভাল মানের সেলাই করেছিল।



সেলাই শেষে বের হয়ে বাসায় যাবার পথে সেই শুভাকাংখিদের দেখলাম বসে আছে হাসপাতালের বারান্দায়। ওদের কাছেই জানলাম, মারা গেছে ৩ জন । বেশ কয়েকজন আহতকে ওরা এখানে নিয়ে এসেছে এখানে। হাঁটতে হাঁটতে ভাইয়াকে বলছিলাম, আহা! কিছু মানুষ আছে এখনো পৃথিবীতে। পেছন থেকে মুচকি হেসে দারোয়ানটা বলল - ওরা পার্সেন্টেজের জন্য বসে আছে, আহতদের চিকিৎসা করে হাসপাতালের যত ইনকাম হবে, তার ভাগ পাবে ওরা।



সত্যি! কী বিচিত্র এই পৃথিবী !

মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: গায়ে কাঁটা দিল

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভয়ংকর! বাকি পর্বগুলা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

৩| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪

চাঁন মিঞা সরদার বলেছেন: ভয়াবহ ঘটনা।
গা শিউরে উঠলো। :-/ :-/ :-/ :-/ :-* :-* :-* :-& :-&

+++++

৪| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪

সঞ্জয় নিপু বলেছেন: মরমান্তিক ব্যপার ।

৫| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: বেশ কিছুদিন আগে মাহমুদুজ্জামান বাবুর(সংগীত শিল্পী) একটি কলাম পড়েছিলাম প্রথম আলোতে। সেখানে তিনি কিভাবে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন, কে তাকে বাঁচাতে আসে, আর কে আসে নি, সেসব লিখেছিলেন। পড়ে শিউরে উঠেছিলাম।

আপনার লেখাটি পড়ে আমার সেই লেখাটির কথা মনে পড়ে গেল। সবচেয়ে কষ্ট লাগে তখন, যখন অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করার চেয়ে তার কাছে টাকা-পয়সা আছে কি না সেটা জানাটা বড় হয়ে যায়।

আপনার জন্য শুভকামনা রইল। আর যেন কখনও আপনাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।।

৬| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪

আরমিন বলেছেন: ভয়ংকর! এরকম ঘটনা যদি আরও থেকে থাকে তাহলে আপনি একজন গিফটেড মানুষ ভাই !

৭| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪

আরমিন বলেছেন: ভয়ংকর! এরকম ঘটনা যদি আরও থেকে থাকে তাহলে আপনি একজন গিফটেড মানুষ ভাই !

৮| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫

তারেক বলেছেন: ড্রাইভার শালারে ধরতে পারলে হইত X( X( X( X(( X(( X(( X((

৯| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬

তোমোদাচি বলেছেন: ডরাইছি!! আপনার সাথে কন গাড়িতে উঠা যাবে না!!! B:-) B:-) B:-)

বাই দ্যা ওয়ে, থ্যাঙ্কস গড !!!

১০| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:২৬

বুঝিনাই বলেছেন: রাখে আল্লাহ মারে কে???পরে ঐ ড্রাইভার রে খুজে বের করে পিটাইলেন না কেন??

১১| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: রাখে আল্লাহ মারে কে?

১২| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২৬

মতামত চাই বলেছেন: সত্যি! কী বিচিত্র এই পৃথিবী !

১৩| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৪৭

মাহতাব সমুদ্র বলেছেন: বাববা!!!

১৪| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

মর্মান্তিক

১৫| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩

মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: ভয়ানক ব্যাপার।

সিনেমা বানিয়ে ফেলেন।

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:১৭

জাফর সাদিক রুমী বলেছেন: আবার সেই ঘটনার মুখোমুখি? অসম্ভব

১৬| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭

শাকিল ১৭০৫ বলেছেন: বেচেছেন তাই তো অনেক বেশী শুকরিয়া জানান মিয়া !

১৭| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৯

অহন_৮০ বলেছেন: ভয়ের ছিল ভাই

১৮| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯

শুঁটকি মাছ বলেছেন: আল্লাহ আপনার সাথে ছিল!!!!!!

১৯| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৪

একজন পথশিশু বলেছেন: আল্লাহ্‌ বাঁচিয়ে দিয়েছে।

২০| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৯

মামুন রশিদ বলেছেন: সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পেরেছেন, শুকরিয়া ।


২১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০২

অনাহূত বলেছেন: কি ভয়ংকর!

২২| ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:০১

ভবঘুরে_পথিক বলেছেন: পড়লাম। কিন্তু মজার একটা ব্যাপার হল গ্রামীণ ফোন চাকরীর ইন্টার্ভিউ এর জন্য ১২১ থেকে কখনও ফোন দেয় না। পরের বার চাপা মারবার সময় ফোন নম্বরটা মনে কইরা ঠিক করে দিয়েন। :-B :-B :-B :-B

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:১৬

জাফর সাদিক রুমী বলেছেন: কেমনে বুঝলেন ১২১ ঠেকে দেয় না? আমি তো সেই কলের সূত্রে ইন্টারভিউ দিয়া ২ বছর চাকরিও কইরা আসলাম :)

২৩| ২৪ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৫২

খেয়া ঘাট বলেছেন: বড়রকমের বিপদ থেকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।

আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করল পকেটে পর্যাপ্ত টাকা আছে কীনা।- কী পিশাচ।

২৪| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০

হাসান মাহবুব বলেছেন: পর্ব-২ কই?

২৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:০২

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।

হে আল্লাহ, আমাদের হেফাজত কর।

রুমি ভাই জিপিতে কোন ডিপার্টমেন্টে ছিলেন??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.