![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাসূল (সঃ) এর নেতৃত্বে মক্কা বিজয়ের পর, মুসলিম খলিফারা ইসলামী বিশ্ব সম্প্রসারনে মনোনিবেশ করলেন। খলিফারা তাদের বীর যোদ্ধাদ্ধের নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনা করলেন। সেরকমই একটি অভিযানে আল্লাহর রাসূলের প্রিয় সাহাবী আমর ইবনুল আস (রাঃ) কে সেনাপতি করে আলেকজান্দ্রিয়ায় পাঠানো হল।
তিনি আলেকজান্দ্রিয়া পৌছেই তৎকালীন নিয়মনুযায়ী আলেকজান্দ্রিয়ার শাসকদের নিকট দূত পাঠালেন। তাঁর দূত এই সংবাদ নিয়ে গেল যে, তোমরা যদি আমাদের শাসন মেনে নাও তবে তোমরা নিরাপদ। আমাদেরকে জিজিয়া কর দিয়ে তোমরা বাস করতে পারবে । এমনকি তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের ধর্মও আগের মতই পালন করতে পারবে। কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ার খৃষ্টান শাসকরা মুসলিমদের এই আহব্বানে সাড়া না দিয়ে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্ততি গ্রহণ করল। এদিয়ে আল্লাহর রাসূলের প্রিয় সাহাবী আমর ইবনুল আস (রাঃ) ও তাঁর বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলেন।
যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। বীর বিক্রমে দু’পক্ষ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল। যদিও আলেকজান্দ্রিয়ার সৈন্যের তুলনায় মুসলিমদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। কিন্তু তারা আল্লাহর উপর ভরসা করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল। সে এক ভয়ানক প্রলয়ংকারী যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় মনে হচ্ছিল মুসলিমরা টিকতে পারবে না। কিন্তু আমর (রাঃ) তাঁর সৈন্যদেরকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে বললেন।
তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ ধব্বনিতে আবারো শত্রু পক্ষের উপর আরো তিব্র বেগে আক্রমন চালালেন। এইবার আলেকজান্দ্রিয়ার খৃষ্টান সৈন্য বাহিনী ধরাশায়ী হতে লাগল। আলেকজান্দ্রিয়ার সৈন্য বাহিনী পাইকারীহারে মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত হতে লাগল। বাদবাকি সৈন্যরা নিজ নিজ জীবন নিয়ে পালাতে লাগল। আর আলেকজান্দ্রিয়া শহরে অরক্ষিত অবস্থায় নিজ নিজ ঘরে দরজা বন্ধ করে মৃত্যুর প্রহর গুনতে লাগল লক্ষাধিক নারী ও শিশু। সেই সাথে ছিল আরো বেশ কিছু খৃষ্টান পাদ্রী।
খৃষ্টান পাদ্রী এবং নারী শিশুরা ভাবতে লাগল আমাদের হয়তো বেঁচে থাকবার আর কোন আশা নেই। তারা কল্পনা করল, তাদের বাহিনীরা পরাজিত জাতির সাথে কিরূপ আচরন করে। তারা পরাজিত বাহিনীর মানুষদেরকে কচুকাটা করত। মুসলিমরাও হয়তো তার ব্যতিক্রম কিছু করবে না।
কিন্তু মুসলিম সৈন্যরা আলেকজান্দ্রিয়া শহরে একটা সংবাদ ঘোষনা করে দিলেন। নারী,শিশু,ধর্ম উপাসক এবং অস্ত্র শস্ত্রে যারা সজ্জিত নয় তারা আমাদের নিকট নিরাপদে থাকবে। তাই তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে না থেকে বাহিরে আসো এবং আমাদের কথা শোন। খৃষ্টান পাদ্রী এবং নারী শিশুরা যখন বাহিরে আসল তখন সেনাপতি আমর ইবনুল আস (রাঃ) তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বললেন।
তিনি বললেন, ‘তোমরা যারা জিজিয়া কর দিয়ে থাকতে চাও তোমরা এই শহরেই থাকতে পারবে। এই শহরে থেকে তোমরা তোমরা তোমাদের বাপ দাদাদের ধর্মও স্বাধীন ভাবেই পালন করতে পারবে। আর তোমরা যারা অন্য দেশে যেতে চাও তাদেরকে আমার সৈন্যরা নিরাপত্তা দিয়ে তোমাদের গন্তব্য স্থলে পৌছে দিবে। তোমরা কি চাও’?
হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর কথাগুলো যেন তাদের কানকেও বিশ্বাস করাতে পারল না। তারা হতভম্ব হয়ে গেল। তাদের জীবনের নিরাপত্তা পেয়ে তারা খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল। তারা জিজিয়া কর দিয়েই বাস করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। এরপর তৎকালীন মুসলিম খলিফা হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) কেই আলেকজান্দ্রিয়ার গভর্নর নিযুক্ত করলেন।
আলেকজান্দ্রিয়ায় খৃষ্টানরা জিজিয়া কর দিয়ে পূর্বের তুলনায় বেশ ভালোই দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু একদিন ঘটল বিপত্তি। কে বা কারা রাতের অন্ধকারে খৃষ্টানদের গীর্জায় প্রবেশ করে, যীশু খৃষ্টের মূর্তির নাক ভেঙ্গে দিয়েছে। তাই খৃষ্টান পাদ্রীরা আমীর আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর দরবারে অভিযোগ নিয়ে গিলেন। ঘটনার বর্ণনা শুনে আমীর আমর ইবনুল আস খুবই ব্যথিত হলেন।
তিনি পাদ্রীদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা কি বিচার পেলে খুশি হবে? পাদ্রীরা পরামর্শ করে বললেন, আমাদের যীশু খৃস্টের মূর্তির যেহেতু নাক ভেঙ্গে দিয়েছো আমরাও তোমাদের রাসূলের মূর্তি তৈরী করে তাঁর নাক মূর্তির নাক ভেঙ্গে দিতে চাই। এই কথা শুনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাগে কোশবদ্ধ তরবারি মুক্ত করে বললেন, খামোশ! আমার রাসূল যে পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন তোমরা কিনা আমার রাসূলকেই সেই পৌত্তলিকতার অংশ বানাতে চাও! কক্ষনো তা হতে দিব না।
এরপর আমর ইবনুল আস কিছুক্ষন ভেবে বললেন, ব্যার্থতা আমার। তাই এর দ্বায়ভার আমাকেই নিতে দাও। কাল জুম্মার পরে ভরা মজলিস এবং খোলা মাঠে তোমরা উপস্থিত হবা। সেখানেই তোমরা আমার ফয়সালা পাবে।
পরের দিন শুক্রবার বাদ জুম্মা খোলামাঠে সবাই উপস্থিত হল। হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) নিজের কোমরের তরবারিটি বের করে পাদ্রীর হাতে দিলেন। বললেন, তোমরা আমার নাক কাটো। পাদ্রীরা হতবাক হয়ে গেল। পাদ্রী যখন নাক কাটার জন্য অস্ত্র উপরে তুলল, ঠিক তখনই ভিড় ঠেলে এক মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এল। সে ভিড় ঢেলে এক সৈন্য এগিয়ে এল। সে বলল, আমিই নাক ভেঙ্গেছি। আমার আমীর নির্দোষ। আপনি আমার নাক কাটুন। এই দৃশ্য দেখে পাদ্রীদের হতভম্ব হবার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছে গেল। সে তরবারি ফেলে দিয়ে বলল, ‘ধর্ম হে রাসূল ধন্য হে আমীর ধন্য মুসলিম জাতি’।
বিধর্মীদের এমন করে সম্মান এবং অধিকার প্রদান করেছে একমাত্র ইসলাম। এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বলেন, 'জেনে রাখো, যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিক বা সংখ্যালঘুকে আঘাত করে বা তাকে অপদস্থ করে অথবা কর্মচারী নিয়োগ করে তার সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দেয়, আমি তার বিরুদ্ধে কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর দরবারে মামলা দায়ের করব ’। (সুনানে আবু দাউদ : ২/৪৩৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, 'যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না; অথচ জান্নাতের সুগন্ধি চল্লিশ বছরের দূরত্বে অবস্থান করেও অনুভব করা যাবে।' (সহিহ বোখারি : ৬/২৫৩৩)
অন্যদিকে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘'তোমার ধর্মের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেনি, তোমার বসতি থেকে তোমাকে উচ্ছেদ করেনি, তাদের প্রতি তোমার দয়ালু হওয়া উচিত এবং তাদের সঙ্গে ন্যায়ানুগ আচরণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় ভালোবাসেন।' (৬০:৮)
এতো বিসদ আলোচনার একটাই উদ্দেশ্য, অমুসলিমদের উপর ইসলামের আচরন তুলে ধরা। শুধু আচরন বললেই ভুল হয়ে যাবে, ইসলাম অমুসলিমদের যে অধিকার দিয়েছে তা অন্যকোন ধর্মেই পাওয়া যায় না। সেই সাথে অমুসলিমদের উপর অন্যায়ভাবে আক্রমন কিংবা অত্যাচার করতেও কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। তাই আমরা একথা জোর দিয়েই বলতে পারি, বাংলাদেশে যারা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে তা আর যাই হোক মুসলিম হতে পারে না।
©somewhere in net ltd.