নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফজিলাতুন্নেছাকে না পাওয়ার ব্যথায় বেদনাভেজা বহিঃপ্রকাশ কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে লিখা কবি নজরুলের একটি চিঠি

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬

১৫ জুলিয়াটোলা স্ট্রীট, কলিকাতা
০৮-০৩-২৮
সন্ধ্যা


প্রিয় মতিহার,
পরশু বিকালে এসেছি কোলকাতা । ওপরে ঠিকানাই আছে । ওর আগেই আসবার কথা ছিল । অসুখ বেড়ে ওঠায় আসতে পারিনি । দু-চারদিন এখানেই আছি । মনটা কেবলই পালাই পালাই করছে । কোথায় যাই, ঠিক করতে পারছিনে । হঠাৎ কোনোদিন এক জায়গায় চলে যাবো । অবশ্য দু-দশদিনের জন্য । যেখানেই যাই, আর কেউ না পাক; তুমি খবর পাবে ।
বন্ধু, তুমি আমার চোখের জলের “মতিহার” । বাদল রাতের বুকের বন্ধু । যেদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে, সেদিন অন্তত তোমার বুক বিঁধে ওঠবে । তোমার ওই ছোট্ট ঘরটিতে শুয়ে, যে ঘরে তুমি আমায় প্রিয়ার মত জড়িয়ে শুয়েছিলে; অন্তত এইটুকু সান্ত্বনা নিয়ে যেতে পারবো । এই কী কম সৌভাগ্য আমার!
কেন এই কথা বলছি, শুনবে? বন্ধু আমি পেয়েছি । যার সাক্ষাৎ আমি নিজেই গুণতে পারবো না! এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু, ফুলের সওদার খরিদদার এরা । এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে ওঠেছে, প্রিয় হয়ে ওঠেনি কেউ । আমার জীবনের সবচেয়ে করুণ পাতাটির লিখা তোমার কাছে লিখে গেলাম । আকাশের সবচেয়ে যে দূরের তারাটির দীপ্তি চোখের জল্পনার মত ঝিলমিল করবে, মনে করো সেই তারাটি আমি । আমার নামেই তার নামকরণ করো । কেমন!
মৃত্যু এত করে মনে করছি কেন, জানো? ওকে আমাকে আজ সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে বলে! মনে হচ্ছে, জীবনে যে আমায় ফিরিয়ে দিলে, মরলে সে আমায় বরণ করে নেবে । সমস্ত বুকটা ব্যথায় দিনরাত টনটন করছে । মনে হচ্ছে, সমস্ত বুকটা যেন ওইখানে এসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে । ওর যদি মুক্তি হয়, বেঁচে যাবো । কিন্তু কী হবে, কে জানে!
তোমার চিঠি পেয়ে অবধি কেবল ভাবছি আর ভাবছি । কতো কথা, কতো কী! তার কী কূল-কিনারা আছে! ভাবছি আমার ব্যথার রক্তকে রঙিন খেলা বলে উপহাস যে করে, তিনি হয়ত দেবতা । আমার ব্যথার অশ্রুর বহু উর্ধ্বে । কিন্তু আমি মাটির নজরুল হলেও সে দেবতার কাছে অশ্রুর অঞ্জলি আর নিয়ে যাবোনা । ফুল ধুলায় ঝরে পড়ে, পায়ে পিষ্ট হয়; তাই বলে কী ফুল এত অনাদরে! ভুল করে সে ফুল যদি কারোর কপোলেতে খসে পড়ে, এবং তিনি যদি সেটাকে উপদ্রপ বলে মনে করেন; তাহলে ফুলের পক্ষে প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে, এক্ষুনি কারো পায়ের তলায় পড়ে আত্মহত্যা করা!
সুন্দরের অবহেলা আমি সইতে পারিনা, বন্ধু! তাই এত জ্বালা! ভিক্ষে যদি কেউ তোমার কাছে চাইতে আসে অদৃষ্টের বিড়ম্বনায়, তাহলে তাকে ভিক্ষে নাই দাও, কুকুর লেলিয়ে দিওনা । আঘাত করবার একটা সীমা আছে । সেটাকে অতিক্রম করলে আঘাত অসুন্দর হয়ে আসে; আর তক্ষুনি তার নাম হয় অবমাননা!
ছেলেবেলা থেকেই পথে পথে মানুষ আমি । যে স্নেহে, যে প্রেমে বুক ভরে ওঠে কানায় কানায়, তা কখনো কোথাও পাইনি ।
এবার চিঠির উত্তর দিতে বড্ড দেরি হয়ে গেলো । না জানি কতো উদ্বিগ্ন হয়েছো! কী করি বন্ধু, শরীরটা এত বেশি বেয়াড়া আর হয়নি কখনো । ওষুধ খেতে প্রবৃত্তি হয় না!
আমায় সবচেয়ে অবাক করে নিষুতি রাতের তারা । তুমি হয়ত অবাক হবে, আমি আকাশের প্রায় সব তারাগুলোকে চিনি । তাদের সত্যিকারের নাম জানিনে, কিন্তু তাদের প্রত্যেকের নামকরণ করেছি আমার ইচ্ছেমত । সেই কতো রকম মিষ্টি মিষ্টি নাম । শুনলে তুমি হাসবে । কোন তারা কোন ঋতুতে কোনদিকে উদয় হয়, সব বলে দিতে পারি ।
জেলের ভিতর যখন সলিডারি সেলে বন্দি ছিলাম, তখন গরমে ঘুম হতো না । সারারাত জেগে কেবল তারার উদয়াস্ত দেখতাম । তাদের গতিপথে আমার চোখের জল বুলিয়ে দিয়ে বলতাম, বন্ধু, ওগো আমার নাম না জানা বন্ধু! আমার এই চোখের জলের বিচ্ছিরি পথটি ধরে তুমি চলে যাও অস্তপারের পাণে, আমি শুধু চুপটি করে দেখি । হাতে থাকতো হাতকড়া! দেয়ালের সঙ্গে বাঁধা চোখের জলের রেখা আঁকাই থাকতো মুখে ।
আচ্ছা বন্ধু, কফোঁটা রক্ত দিয়ে একফোঁটা চোখের জল হয়? তোমাদের বিজ্ঞান বলতে পারে? এখন শুধু কেবলই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে, যার উত্তর নেই, মীমাংসা নেই; সেই সব জিজ্ঞাসা ।
যেদিন আমি ওই দূরের তারার দেশে চলে যাবো; সেদিন তাকে বলো, এই চিঠি রেখে সে যেন দুফোঁটা চোখের অশ্রুর দর্পণ দেয় শুধু আমার নামে । হয়ত আমি সেদিন খুশিতে উল্কা ফুল হয়ে তার নতুন খোঁপায় ঝরে পড়বো । তাকে বলো, বন্ধু । তার কাছে আমার আর চাওয়ার কিছু নেই ।
আমি পেয়েছি, তাকে পেয়েছি । আমার বুকের রক্তে, চোখের জলে । আমি তার উদ্দেশ্যে আমার শান্ত, স্নিগ্ধ অন্তরের পরিপূর্ণ চিত্তের একটি সশ্রদ্ধ নমস্কার রেখে গেলাম । আমি যেন শুনতে পাই, সে আমায় সর্বান্তকরণে ক্ষমা করেছে । ফুলের কাঁটা ভুলে গিয়ে তার উর্ধ্বে ফুলের গন্ধই যেন সে মনে রাখে ।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠে আবার লিখছি । কিন্তু আর লিখতে পারছিনে, ভাই! চোখের জল, কলমের কালি দু-ই শুকিয়ে গেলো । তোমরা কেমন আছো, জানিও । তার কিছু খবর দাওনা কেন? নাকি সে মানা করেছে? ঠিক সময় মতো সে ওষুধ খায় তো? কেবলই কিটসকে স্বপ্ন দেখছি । তার পাশে দাঁড়িয়ে ফেমি ব্রাউন পাথরের মত । ভালোবাসা নাও ।

ইতি
তোমার নজরুল

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রূপক। পোষ্টের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ । ভালো থাকুন নিরন্তর ।

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৫

ধমনী বলেছেন: শিমুল মোস্তফার কণ্ঠে অসাধারণ লাগে এ চিঠিটি। মনে হয় সেদিন মাত্র লেখা।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হুম! ভাষাগুলো দেখেছেন? কী অপূর্ব! এ জন্যই বুঝি চিঠিও সাহিত্য মর্যাদা পায় ।

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২৬

শায়মা বলেছেন: যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই কেনো মনে রাখো তারে??????

এই গানটাও লিখেছিলেন কবি কোন এক বিরহ থেকেই।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গানটা বোধহয় নার্গিসকে নিয়ে লেখা! শুনলে বুকটা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে ।

৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৪৬

গেম চেঞ্জার বলেছেন: ভিক্ষে যদি কেউ তোমার কাছে চাইতে আসে অদৃষ্টের বিড়ম্বনায়, তাহলে তাকে ভিক্ষে নাই দাও, কুকুর লেলিয়ে দিওনা । আঘাত করবার একটা সীমা আছে ।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কী কাব্যিক বর্ণনা!

৫| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১

শায়মা বলেছেন: হ্যাঁ নার্গিসকে নিয়ে লেখা

৬| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর শেয়ার +

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই । হুমায়ুন ফরিদী আমার খুব প্রিয় অভিনেতা ছিলেন ।

৭| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:১২

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
আবৃত্তিটা অসাধারণ লাগে।++++++্

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হুম । উদাস হয়ে যাই ।

৮| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৪:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:


ফজিলাতুন্নেছা কে হন? কুমিল্লায় বিয়ে করে ফেলে আসা মহিলাটি?

কবিকে ভালোবাসেন, তাই চিঠি ভালো লাগছে হয়তো; লেখা অতো ভালো হয়নি।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: -কুমিল্লায় বিয়ে করে রেখে আসা মহিলার নাম ছিল নার্গিস ।
-ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ছাত্রী । নজরুল তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন । কিন্তু তিনি নজরুলের প্রস্তাবে সাড়া দেন্ নি ।
-ভালো লাগা মানুষে মানুষে ভিন্ন হয় । আমার যা ভালো লাগবে, আপনার নাও লাগতে পারে । আবার আপনার যা ভালো লাগবে, আমার ভালো নাও লাগতে পারে । এটাই স্বাভাবিক! হ্যাঁ, নজরুলকে আমার খুব ভালো লাগে বিশেষত তাঁর বৈচিত্রপূর্ণ জীবনের জন্য । এই পত্রের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কিংবা উপমার প্রয়োগ আমাকে মুগ্ধ করেছে । ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.