নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশপ্রেম

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৩

Rafiqul Azam Firoz
আমার এ পোস্টটি দয়া করে সবাই পড়বেন। আমার বিশ্বাস, গর্বে আপনাদের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে।
নজরুল মিন্টো

২০০৭ সাল। আরব আমীরাত আদালত ছয় বাংলাদেশীর শিরচ্ছেদের রায় দিয়েছে। তাদের অপরাধ, তারা এক পাকিস্তানিকে রান্নার বটি দিয়ে দুই টুকরো করে ফেলেছে। খবরটি শুনে অবাকই হলাম! একি করলো এরা! নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন রাখলাম, শেষমেষ বিদেশের মাটিতে বাঙালিরা অপরাধ জগতে জড়িয়ে গেলো তাহলে?
আমার জীবনের প্রায় বারো বছর আমি আমিরাতে কাটিয়েছি। আমার প্রচুর বন্ধু-বান্ধব সেখানে। আমি থাকা অবস্থায় কোন বাংলাদেশীর শিরোচ্ছেদ করা হয়েছে বলে শুনিনি। মধ্যপ্রাচ্যে যত অপরাধ হতো, তার ৯৯ ভাগ অপরাধীি ছিল পাকিস্তানি, সুদানি এবং সোমালিয়রা। এখনও চুরি হলে প্রথম নাম আসে সুদানি এবং সোমালিয়দের। ধর্ষন এবং ড্রাগস এর ঘটনা ঘটলে প্রথম নাম আসে পাকিস্তানিদের। বোঝা যায়, জন্ম থেকে এই জাতিগুলি অপরাধী। বাঙালিরা আরবিদের কাছে 'মিসকিন' জাতি হলেও খুবই বিশ্বস্ত। বাঙালিরা দেশে যাই করুক, বিদেশে সৎ জীবন যাপন করে। বাঙালিরা চুরি করে না, ড্রাগস-এর ব্যবসা করে না, ধর্ষণ, খুন তথা কোন ধরনের অপরাধে জড়িত হয় না। সময়ের আগে বাঙালিরা কর্মস্থলে পৌঁছায়। নিয়োগকর্তাদের মধ্যে বাঙালিরা হচ্ছে প্রথম পছন্দ। অর্থাৎ নাম্বার ওয়ান।

ঘটনার পূর্বাপর: আরবীদের পুরনো একটি বড় বাড়িতে বেশ ক'জন ব্যাচেলর বাঙালি, পাকিস্তানি এবং ভারতীয় কয়েকটি রুম ভাগাভাগি করে বসবাস করে। পেশায় এরা সবাই সাধারণ শ্রমিক। তারা বিভিন্ন কন্ট্রাকটারের অধীনে খুব অল্প বেতনে কাজ করে। ছোট্ট একটা রুমে গাদাগাদি করে থাকে। যেখানে থাকার কথা একজন সেখানে থাকে দশজন। দেশে থাকা পরিবার পরিজনের স্বার্থে এ কষ্টের জীবন তারা এভাবেই মেনে নিয়েছে।
এক শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে দুই বাঙালী রুমমেট রান্নার জন্য তরকারি কুটছিল। রুমের ভেতর ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজছে বাংলা গান। এমন সময় ঐখানে এক পাকিস্তানির আগমন। একথা সেকথা বলার পর এক পর্যায়ে সে কটাক্ষ সূরে বলে, তোমাদের খাওয়া দাওয়া, চলা-ফেরা সব ইণ্ডিয়ানদের মতো। একজন উত্তর দেয়, ইণ্ডিয়ানদের মতো হতে যাবে কেন? আমরা আমাদের মতো করে খাই, আমরা আমাদের স্টাইলে চলি। মুর্খের মতো কথা বলো কেন? পাকিস্তানিটি তখন বলে, 'তোমাদের জন্মটা কি আমার অজানা? ইণ্ডিয়াকে পাকিস্তানিরা .... করেছিল আর তারপরে তোমাদের ঐ তথাকথিত সোনার বাংলার জন্ম'। এক বাঙালি তখন তাকে মুখ সামলে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে। অন্য বাঙালিটি তাকে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলে। পাকিস্তানিটি তখন আরও গলা উঁচিয়ে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে, ৭১ সালে পাকিস্তানীরা ৯৯% বাঙালী নারীকে গর্ভবতী করে এসেছিল; এরপর থেকে বাঙালি একটা কালো, একটা সাদা, যেমনটি তোমরা দুইজন দুই রকম..।' এক বাঙালি আর ধৈর্য রাখতে পারে না। হাতের কাছে থাকা রান্নার বটি দিয়ে এক কোপে পাকিস্তানিটিকে দুই টুকরা করে ফেলে। অর্থাৎ শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যায়। পলকের মধ্যে ঘটে যায় ঘটনা। ছুটে আসে আশে পাশের মানুষ। আসে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হাতকড়া লাগিয়ে ঘরের মধ্যে যে ক'জন ছিল সবাইকে ধরে নিয়ে যায়।

ঘটনার অতঃপর: স্থানীয় মিডিয়ায় ফলাও করে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি প্রকাশ পায়। মুখে মুখেও খবরটি পৌঁছে যায় এক শহর থেকে অন্য শহরে। মামলা ওঠে আদালতে। বাঙালীটি একা খুন করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিলেও তাকে সহযোগিতা করার অপরাধে বাকিদেরও দোষী সাব্যস্থ করে আদালত। আমিরাতের নিয়ম অনুযায়ী হত্যার সাজা হত্যা অর্থাৎ শিরচ্ছেদ। তবে নিহতের নিকটাত্মীয় (স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবা) যদি ক্ষমা করে দেয়, তাহলে সাজা মওকুফ হতে পারে। অথবা যদি আদালত কর্তৃক নির্ধারিত নগদ অর্থদন্ড (Blood Money) পরিশোধ করা যায়, তবে শিরচ্ছেদ রহিত হতে পারে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হলো নিহতের পরিবারের সাথে, কিন্তু লাভ হলো না। তারা কেবল আদালত কর্তৃক নির্ধারিত অর্থদন্ডের পক্ষে অবস্থান নিলো।
দন্ডপ্রাপ্তদের বাড়ি চট্টগ্রামের কোন এক অঁজপাড়াগাঁয়ে। বলতে গেলে সবাই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। কেউ কেউ অতি দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এত টাকা তারা পাবে কোথায়? এদিকে প্রকৃত ঘটনা জানাজানি হওয়ায় ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে আমিরাত প্রবাসী বাঙালীরা। আদালতের রায়ে তাদের রক্ত টগবগ করে ওঠে। আলাপ আলোচনায়, টেলিফোনে-সাক্ষাতে একই কথা- 'খুন করেছে বেশ করেছে। উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে। তার জায়গায় আমরা হলেও একই কাজ করতাম।' আবেগপ্রবণ বাঙালীর অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠে। হত্যাকারী যুবক যে একজন দেশপ্রেমিক, তাতে কারো কোন সন্দেহ নাই। দেশের অপমান সহ্য করতে পারেনি বলেই সে পাকিস্তানিকে হত্যা করেছে। একজন বীর হিসেবে যুবকটি সকল বাংলাদেশির হৃদয়ে স্থান করে নিলো। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে।
জনমত তৈরি হতে বেশি দিন লাগলো না। শুরু হলো প্রচারণা এবং অর্থ সংগ্রহ। দলমত নির্বিশেষে সকল বাঙালী এক কাতারে। এ যুবকদের বাঁচাতেই হবে। জাতির ইজ্জতের প্রশ্ন। অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাঙালীরা আজ পর্যন্ত সম্মিলতভাবে যত কাজে হাত দিয়েছে সবগুলোতে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে এবং এক্ষেত্রেও ব্যর্থ হলো না। চট্টগ্রামের চেম্বার এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও অর্থ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এলেন।
সহযোগিতার জন্য দূতাবাসের ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হলো। খবর চলে গেলো পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় হয়ে সরকারের উচ্চমহলে। ঘটনার বিস্তারিত শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুধাবী পাঠালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমণিকে। কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা হলো। তারা জানালো, যদি নির্দিষ্ট তারিখের আগে উল্লিখিত অর্থ পরিশোধ করা হয় তাহলে দন্ডপ্রাপ্তরা শিরোচ্ছেদ থেকে মুক্তি পেতে পারে। দীপুমণি আলোচনার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন। সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৬ জন বাংলাদেশীকে বাঁচাতে ১১১,৬২৭ ইউরো (প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা) প্রদান করার
জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর আবুধাবীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নির্দিষ্ট তারিখের একদিন আগে উল্লিখিত অর্থ পরিশোধ করলে উক্ত বাংলাদেশী তরুণরা শিরোচ্ছেদ-এর আদেশ থেকে রেহাই পায়।

অবশেষে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে তারা বীরের মর্যাদায় দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। বিভিন্ন শহর থেকে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী দুবাই বিমানবন্দরে ছুটে আসে তাদেরকে একনজর দেখার জন্য। স্থানীয়ভাবে যে অর্থ সংগ্রহ হয়েছিলো তা ঐ ৬ তরুনদের প্রবাসীদের পক্ষ থেকে উপঢৌকন হিসেবে প্রদান করা হয়।

সর্বোপর: এ ঘটনায় পুরো আরব ভূখন্ডে বিরাট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বাঙালীদের এখন চরম ভয় পায় পাকিস্তানিরা। এখন কোন জায়গায় বাঙালীদের পাশে পাকিস্তানিরা বাসাবাড়ি ভাড়া নিতে সাহস পায় না। কর্মক্ষেত্রে বাঙালীদের সাথে কথাবার্তা বলতে এখন তারা হিসাব করে কথা বলে। অন্যদিকে এ ঘটনায় অন্যান্য ভাষাভাষীদের মাঝে বাঙালীরা একটি দেশপ্রেমিক জাতি হিসেবে সম্মান লাভ করে।

পুনশ্চঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে খবরটি জোরালোভাবে প্রকাশ এবং প্রচার লাভ করে। পত্রিকায় আমার লেখাটি পড়ে এক পাঠকবন্ধু রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশানাল (আরএফআই)-এর একটি লিংক পাঠিয়েছেন। আগ্রহী পাঠকরা আরএফআই-এর মূল সংবাদটি দেখার জন্য নীচের লিংকে ক্লিক করুন। http://
www.english.rfi.fr/node/26492 -
Bangladesh pays blood money for release of expatriate workers
english.rfi.fr
9 ঘণ্টা পূর্বে · সম্পাদিত ·

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৮

প্রামানিক বলেছেন: দারুণ একটা ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনা অনেকে জানেই না। ধন্যবাদ

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা আপনাকে ।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪

ডার্ক ম্যান বলেছেন: সেই বীর বাঙ্গালিকে স্যালুট

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সেইসব বীর বাঙালিরা আছে বলেই আমরা এখনো মাথা তুলে সগর্বে বেঁচে আছি । বহির্বিশ্ব আমাদের সৎ ও বিশ্বস্ত হিসেবে সম্মান করে । বিনম্র শ্রদ্ধা তাঁদের প্রতি ।

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৫

আল ইমরান বলেছেন: এই ঘটনা জানতাম না তো।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঘটনাটা নিঃসন্দেহে আমাদের মনের মধ্যে দেশপ্রেমের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে দিয়েছে ।

৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৭

অেসন বলেছেন: এরাই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তা তো বটেই! এঁরাই বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের মুখ উজ্জল করেছে ।

৫| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: এক্কেবারে জায়গামত সাইজ দিছে। এটাই দরকার মাথামোটা রিপুতাড়িত গর্ধম পাকিস্তানীদের জন্য।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: -এরা (পাকিস্তানিরা) কখনোই মানুষ হবেনা । যেমন কুকুর তেমন মুগুর । জন্মের শিক্ষা হয়েছে । এখন নাকি এরা বাঙালিদের খুব ভয় পায় । কাছেও ঘেঁষেনা ।

-বাঙালির বিপদে বাঙালিরা এগিয়ে আসার ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লেগেছে । মিটিং মিছিল করে জনমত তৈরি করেছে, টাকা-পয়সা তুলেছে । সরকারেরও যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল । এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে বাঙালি প্রাণের চেয়েও বেশি জন্মভূমিকে ভালোবাসে । আমরা বাঙালিরা বীরের জাতি । দেশের চেয়ে বড় কিছু নেই ।

৬| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬

জেন রসি বলেছেন: এগুলাকে খুন করাই উত্তম।কারন এরা যুক্তি বুঝবে না! ওই পাকিকে খুন করাটা ঠিকই হইছে!

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কুলাঙ্গার বলে কথা! বাঙালিরা ভাষার জন্য, দেশের জন্য কত আত্মত্যাগ করেছে কিংবা করতে পারে, ওসব এই গণ্ডমূর্খদের মগজে ঢুকবেনা । যেমন কর্ম তেমন ফল ।

৭| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:

সব পাকীই মোটামুটি ষেই রকম বুদ্ধির।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.