নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিরাজ সিকদার

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪১

জন্মঃ অক্টোবর ২৭, ১৯৪৪
ভেদরগঞ্জ, শরিয়তপুর, ব্রিটিশ ভারত ( এখন বাংলাদেশ ) ।
মৃত্যুঃ জানুয়ারি ২, ১৯৭৫ ( ৩০ বছর )
সাভার, ঢাকা , বাংলাদেশ ।
শিক্ষাঃ বি.এসসি. ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঃ প্রকৌশলী
যে জন্য পরিচিতঃ নকশালপন্থী কমিউনিস্ট আন্দোলন, কবি ও বিপ্লবী
[ তথ্যসূত্র প্রয়োজন ]
প্রভাবিত হয়েছেনঃ কার্ল মার্কস, ভ্লাদিমির লেনিন, মাও সে তুং দ্বারা ।
রাজনৈতিক দলঃ পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি ।
ধর্মঃ মানবতা

সিরাজ সিকদার বাংলাদেশের একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা ছিলেন । ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি তিনি সমমনা কয়েকজনকে নিয়ে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য ছিলো পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসন থেকে পূর্ববাংলাকে মুক্ত করে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করা; সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ অভিমূখে যাত্রা করবার লক্ষ্যে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করা । সিরাজ সিকদার গ্রেফতার হন ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি এবং পরদিন ২ জানুয়ারি গভীর রাতে তাঁকে হত্যা করা হয় । হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছর পর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুন এই বিষয়ে আদালতে মামলা করা হয় । সেই মামলা এখনো বিচরাধীন ।
প্রাথমিক জীবনঃ সিরাজ সিকদারের পিতার নাম আবদুর রাজ্জাক সিকদার । ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে সিরাজ সিকদার বরিশাল জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ( বর্তমানে এস.এস. সি ) পাশ করেন । ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে তিনি আই. এস. সি পাশ করেন । ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করেন ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে । ছাত্র অবস্থায় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত থেকে প্রত্যক্ষভাবে ছাত্ররাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন । [২] ১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির কংগ্রেসে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন । ১৯৬৭ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হন । ঐ বছরই তিনি সরকারের নির্সিমাণ (সি অ্যান্ড বি) বিভাগের কনিষ্ঠ প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন । কিন্তু মাত্র তিন মাসের মাথায় সরকারি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে তিনি টেকনাফের ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি বেসরকারী কোম্পানীতে যোগদান করেন ।
শ্রেণিসংগ্রামঃ ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি সিরাজ সিকদার প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে উপস্থিত করেন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের খসড়া থিসিস । এই থিসিসে তিনি পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ বলে অভিহিত করেন । প্রধান দ্বন্দ্ব নির্ধারণ করেন বর্তমান সামাজিক বিকাশের প্রক্রিয়ায় পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানি উপনিবেশবাদীদের জাতীয় দ্বন্দ্ব । থিসিসে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আহ্বান জানানো হয় । থিসিসে আরো বলা হয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ বর্তমান বিশ্ব প্রক্রিয়ার কেন্দ্র । ঘটনাবলি প্রমাণ করেছে যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়ার জনগণের প্রধান শত্রু । এ দ্বন্দ্ব বর্তমান এবং এটিই প্রধান দ্বন্দ্ব । পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিকে ( মস্কোপন্থী ) সংশোধনবাদী পার্টি বলে অভিহিত করে মন্তব্য করা হয়, এই পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সকল মূলতত্ত্বকে সংশোধন করে প্রকৃতপক্ষে শোষক শ্রেণি অর্থাৎ উপনিবেশবাদী , সামন্তবাদী, পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল হয়ে পূর্ব বাংলার শ্রমিক কৃষকদের বিপথে চালিত করছে ।
পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের মূল প্রত্যয় ছিলো জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি ঔপনিশিক শাসনের অবসান ঘটাতে হবে । সেই লক্ষ্যে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হয় । তারপর ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে তিনি ঢাকা শহরে মাও সেতুং গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন । পাকিস্তান সরকার এটি পরবর্তীকালে বন্ধ করে দেয় । মওদুদীর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ তাদের পেছনে প্রথম থেকেই লেগে ছিলো ।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সিরাজ সিকদারের বিপ্লবী পরিষদ বিভিন্ন জেলায় পাকিস্তানী প্রশাসন ও শ্রেণি শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা অপারেশন চালায় । ঐ বছরের ৮ জানুয়ারি তারা ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ জেলা ও ময়মনসিংহে ওড়ায় স্বাধীন পূর্ব বাংলার পতাকা । ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ এই বিপ্লবী পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখে, যা লিফলেট আকারে সারাদেশে প্রচার করা হয় । এর চার নাম্বার দফাটি ছিলো পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে জাতীয় মুক্তি পরিষদ বা জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গঠন করা । সিরাজ সিকদারের একটি কবিতার লাইনঃ ”আর কয়েকটা শত্রু খতম হলেই তো গ্রামগুলো আমাদের; জনগণ যেনো জল, গেরিলারা মাছের মতো সাঁতরায়…/”
আজিজ মেহের বলেনঃ আমি মনে করি, কমরেড সিরাজ সিকদারের একটি বিপ্লবী আকাঙ্খা ছিলো । কথাবার্তা, চলাফেরা– সবকিছুর মধ্যে ছিলো একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার । তরুণ ছাত্রকর্মী, যারা বিপ্লবের জন্য ছিলো ব্যাকুল, তারা সহজেই আকৃষ্ট হয়েছিলো । তারা কয়েকটা গেরিলা গ্রুপ করে, কয়েকটি সরকারি অফিসে বোমাবাজি করে, দেয়াল লিখনে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো । বিশেষ করে সিরাজ সিকদারের থিসিস আকৃষ্ট করেছিলো ছাত্র-তরুণদের ।
মুক্তিযুদ্ধঃ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত ও বুর্জোয়াদের ক্ষুদ্র সংগঠন আওয়ামী লীগ মূল নেতৃত্বে চলে আসে । তবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে । এ সময় আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার ডাক দেয় পাকিস্তানি জান্তা সরকার । তবে সিরাজ সিকদার ও তাঁর সংগঠন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান নেয় পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে । এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে সিরাজ সিকদার শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি খোলা চিঠি লেখেন ।
১ মার্চ, ১৯৭১ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দেন, উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা । পরদিন ২ মার্চ পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন শেখ মুজিবকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানায় । একই সময় সংগঠনটি সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অস্থায়ী বিপ্লবী জোট সরকার গঠন এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিষদ গঠনের অনুরোধ জানায় । তবে মুজিব তখন ব্যস্ত আলাপ-আলোচনায় সমাধান খুঁজতে । চিঠির সংক্ষিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে ছাপা হবে ছোট অক্ষরেঃ
"আপনার ও আপনার পার্টির ছয় দফা সংগ্রামের রক্তাক্ত ইতিহাস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে ছয় দফার অর্থনৈতিক দাবিসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে, পূর্ববাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন, মুক্ত ও স্বাধীন করে । আপনাকে ও আপনার পার্টিকে পূর্ব বাংলার সাত কোটি জনসাধারণ ভোট প্রদান করেছে পূর্ববাংলার উপরস্থ পাকিস্তানের অবাঙালি শাসকগোষ্ঠীর ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের অবসান করে স্বাধীন ও সার্বভৌম পূর্ব বাংলা কায়েম করার জন্য । পূর্ব বাংলার জনগণের এ আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন আপনার প্রতি ও আওয়ামী লীগের প্রতি নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো পেশ করছে :
১. পূর্ব বাংলার নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এবং সংখ্যাগুরু জাতীয় পরিষদের নেতা হিসেবে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করুন ।
২. পূর্ব বাংলার কৃষক-শ্রমিক, প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি-সংবলিত স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ব বাংলার প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী সরকার কায়েম করুন ।
৩. পূর্ব বাংলাব্যাপী এ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানান । এ উদ্দেশ্যে পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিবাহিনী গঠন এবং শহর ও গ্রামে জাতীয় শত্রু খতমের ও তাদের প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের আহ্বান জানান ।
৪. পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার জন্য শ্রমিক-কৃষক এবং প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে 'জাতীয় মুক্তি পরিষদ' বা 'জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট' গঠন করুন ।
৫. প্রকাশ্য ও গোপন, শান্তিপূর্ণ ও সশস্ত্র, সংস্কারবাদী ও বিপ্লবী পদ্ধতিতে সংগ্রাম করার জন্য পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ।" (এরপর ৬ নম্বর পয়েন্টে শ্রমিক আন্দোলনের খোলা চিঠিতে ১৩টি করণীয় নির্ধারণ করে । এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে জমি বণ্টন, শ্রমিকদের শ্রম শোষণ বন্ধ, ভাষাগত, ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘুদের সম-অধিকার দেওয়ার বিধানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা হাজির করে)। তবে শেখ মুজিব ও তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক আন্দোলনের এই খোলা চিঠি আমলে আনেননি । হতে পারে নিরঙ্কুশ ভোটে জয় পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ তখন একলা চলো নীতিতে অটুট ছিলো । মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়ার পর সেই সরকারের প্রতি আরেকটি খোলা চিঠি দেওয়া হয় শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে । সেখানে যুদ্ধের ময়দানে করণীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয় । এবারও প্রবাসী সরকার শ্রমিক আন্দোলনের সেই চিঠিতে কর্ণপাত করেনি । ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যার পর সিরাজ সিকদার বরিশালের পেয়ারা বাগানে ৩০ এপ্রিল তারিখে গড়ে তোলেন জাতীয় মুক্তিবাহিনী । ৩ জুন পার্টির নতুন নাম দেয়া হয় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি । ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে সর্বহারা পার্টি দলের গেরিলাদের নির্দেশ দেয় পাকিস্তানী বাহিনী, ভারতীয় বাহিনী ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে । কারণ, সিরাজ সিকদার পাকিস্তানকে উপনিবেশবাদী, ভারতকে আধিপত্যবাদী এবং আওয়ামী লীগকে ভারত পন্থী আধিপত্যবাদী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন । বরিশাল থেকে শুরু করে দেশের কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চল–বিক্রমপুর, মানিকগঞ্জ জেলা, পাবনা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বহারা পার্টির গেরিলারা পাক-বাহিনীর সঙ্গে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করে । ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সর্বহারা পার্টির বহু সদস্য নিহত হয়েছিলো । ১৯৭১ সালের ১-৩ জুন যুদ্ধের ময়দানে পেয়ারা বাগানে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি তৈরি হয় । বরিশালের পেয়ারা বাগানকে বেছে নেওয়া হয় পার্টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর জন্য । এর আগে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে পার্টিগুলোর নাম সবই মোটামুটি কমিউনিস্ট পার্টি বা এর কাছাকাছি নাম রাখে; কিন্তু সিরাজ সিকদার প্রলেতারিয়েতের বাংলা সর্বহারার নামে নামকরণ করেন পার্টির । সর্বহারা পার্টি গঠনের ওই দিনে বরিশালের পেয়ারা বাগানে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফজলুল হক রানা । কালের কণ্ঠকে তিনি সেদিনের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, 'বরিশালের পেয়ারা বাগানে সেদিন লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল । মনে হয়েছিল, পেয়ারা বাগান যেন কোনো মুক্তাঞ্চল । এখানে নারী-পুরুষ যে এক নতুন পৃথিবীর জন্মের আগে সমবেত হয়েছে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য" । সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টি প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে আশ্রয় দেয় । এ সময় সর্বহারা পার্টি কর্মসূচি হাতে নেয় দেশপ্রেমিক মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে । এ অবস্থা ১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সর্বহারা পার্টি ধরে রাখে । আগস্টের শুরুতে সর্বহারা পার্টির অন্যতম কেন্দ্রীয় সদস্য এবং বর্তমান বাংলাদেশের পতাকার নকশাকার সাইফুল্লাহ আজমীসহ পাঁচজন যোদ্ধাকে সাভারে পাঠানো হয় মুজিববাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে । মুজিব বাহিনী তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে ।
বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী দলের বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টির সব ঐক্য ভেস্তে যায় । তবে এরও আগে ভারতে খুব গোপনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' ( রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং ) এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে মুজিব বাহিনী । মূলত এই বাহিনী গড়েই তোলা হয় যুদ্ধ থেকে কমিউনিস্টদের হটিয়ে দেওয়ার জন্য । [ তথ্যসূত্র প্রয়োজন ]
১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছে মূলত এ দেশের বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টি ও গ্রুপ, যার মধ্যে সর্বহারা পার্টি অন্যতম । বরিশালের বানারীপাড়া অঞ্চলে অবস্থান নেয় শ্রমিক আন্দোলন, ৩০ এপ্রিল গঠন করে জাতীয় মুক্তিবাহিনী, যা দখলমুক্ত করে পেয়ারা বাগানের খানিকটা । এ মুক্তিবাহিনী পরিচালনা করতে সিরাজ সিকদারকে প্রধান করে সর্বোচ্চ সামরিক পরিচালনামণ্ডলী গঠন করা হয় । বরিশালের পেয়ারা বাগান স্বাধীনতা সংগ্রাম চলার সময় প্রথম ঘাঁটি ও মুক্তাঞ্চল । এ বিষয়ে সর্বহারা পার্টির তৎকালীন বৃহত্তর বরিশাল ( বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর) অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক রইসউদ্দিন আরিফ ( পরবর্তী সময়ে সিরাজ সিকদার নিহত হলে অস্থায়ী সর্বোচ্চ বিপ্লবী সংস্থার সভাপতি ) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বরিশালের পেয়ারা বাগান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে প্রথম ঘাঁটি ও মুক্তাঞ্চল । এ অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক বড় অপারেশন চালাতে হয়েছিলো । আবার সর্বহারা পার্টি পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখতো । সর্বহারা পার্টি এ অঞ্চলে অজস্র সফল হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান বাহিনীর ওপর ।' [ তথ্যসূত্র প্রয়োজন ] এছাড়াও ১৯৭০ সালের মে এবং অক্টোবর মাসে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের গেরিলারা ঢাকাস্থ পাকিস্তান কাউন্সিল, বিএনআর ভবন, এবং মার্কিন তথ্য কেন্দ্রে যে বোমা হামলা পরিচালনা করেছিলো, সেটি ছিলো পাকিস্তানি উপনিবেশবাদ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র হামলা ।
বরিশাল অঞ্চলে অসংখ্য সফল হামলা চালিয়ে সর্বহারা পার্টি পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে । তবে স্বাধীনতার যত ইতিহাস লেখা হয়েছে, সেখানে বরিশালে সর্বহারা পার্টির অবদানকে খুব কৌশলে উহ্য রেখেছেন রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ইতিহাসবিদরা ।
ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বহারা পার্টির সতর্কবাণীঃ ১৯৭১-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপে দ্রুত বাংলাদেশ স্বাধীন হয় । ভারতীয় বাহিনীর এই তৎপরতাকে সাদা চোখে দেখেনি সর্বহারা পার্টি । পার্টি মনে করে, পাকিস্তানের উপনিবেশ থেকে দেশ এবার ভারতীয় উপনিবেশের মধ্যে গিয়ে পড়েছে । এ সময় নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নে সর্বহারা পার্টি বাংলাদেশের সরকারের প্রতি একটি খোলা চিঠি লেখে । ওই চিঠিতে বলা হয়, ভারতীয় সৈন্যদের অনতিবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া, যুদ্ধের সৈনিকদের দিয়ে নৌ, আকাশ ও স্থলবাহিনী তৈরি করা, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করা, সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠনসহ ২৭টি দাবি পেশ করা হয় । তবে মুজিব সরকার সর্বহারা পার্টির সেসব দাবির একটিতেও কর্ণপাত করেনি । যদি সে সময় আওয়ামী লীগ বিচক্ষণতার পরিচয় দিতো, তাহলে আজ অবধি যুদ্ধাপরাধের বিচার ঝুলিয়ে রাখতে হতো না ।
একাত্তর এর পরঃ একাত্তর এর পর সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশ হিসেবে উল্লেখ করে "পূর্ব বাংলার বীর জনগণ, আমাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয় নি, পূর্ব বাংলার অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার মহান সংগ্রাম চালিয়ে যান" নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিল হাজির করেন । যেখানে আওয়ামীলীগকে জাতীয় বিশ্বাসঘাতক ও বেঈমান হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে ছয় পাহাড়ের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । ১৬ ডিসেম্বরকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয় । ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ এ এই দিনে দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হলে মাওলানা ভাসানী বিবৃতি দিয়ে তা সমর্থন করেন । দেশব্যাপী গণভিত্তি সম্পন্ন পার্টি গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন । শেখ মুজিবের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণজোয়ার তৈরীতে সক্ষম হলে, পার্টি বিকাশ লাভ করলে সিরাজ সিকদার শেখ মুজিবের ঘুম হারামের কারণ হয়ে দাঁড়ান । দিনে দিনে সিরাজ সিকদার এক জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠতে থাকেন । ছাত্র-তরুণরা দলে দলে তাঁর সংগঠনে যোগ দিয়ে লড়াই জারি রাখেন ।
মৃত্যুঃ কী অবস্থায় সিরাজ সিকদার পুলিশের হাতে শেষ পর্যন্ত আটক হন, এবং ঠিক কখন কোথায়, কীভাবে তাঁকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়; সে সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে । অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলছেনঃ সিরাজ সিকদার ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কাছাকাছি এক এলাকা থেকে ( টেকনাফ ) পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন । জাকারিয়া চৌধুরীর মতে, সিরাজ সিকদারকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ-বাঁধা অবস্থায় ঢাকাস্থ রমনা রেসকোর্সের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসা হয় । তারপর ২ জানুয়ারি ১৯৭৫ গভীর রাতে এক নির্জন রাস্তায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় । শামীম শিকদার (সিরাজের বোন, প্রখ্যাত ভাষ্কর) শেখ মুজিবুর রহমান কে হত্যা চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন ।
অনেকের মতে, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের হালিশহরে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাঁকে গ্রেপ্তার করেন । আবার অন্য তথ্য মতে, উনি চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন । যখন উনি গ্রেফতার হন, গ্রেফতারকারী জানতেন না যে, উনিই সিরাজ শিকদার । ওই দিনই তাঁকে বিমানে ঢাকায় আনা হয় । পরদিন শেরে বাংলা নগর থেকে সাভারে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে হত্যা করে । সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর ১৭ বছর পর ১৯৯২ সালের ৪ জনু সিরাজ সিকদার গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান শেখ মহিউদ্দিন আহমদ ও মহাসচিব নাজমুল ইসলাম সাইদ ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের (সিএমএম) আদালতে মামলা দায়ের করেন । এই মামলার নিষ্পত্তি হয় নি ।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থান ও তৎপরতা যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিপিকারদেরও দেখা গেছে গা বাচিয়ে চলতে । প্রথাগত লাইনের বাইরে তারা হাঁটেননি । যে কারণে বিভিন্ন ইতিহাস বইয়ে সিরাজ শিকদার ও তার বাহিনীর জন্য দুই লাইনের বেশী বরাদ্দ হয় না । লেখা হয়: এ ছাড়া সিরাজ শিকদার ও তার বাহিনী পেয়ারা বাগান অঞ্চলে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন । একটা কারণ হতে পারে স্বাধীনতার পরও তা মানতে সিরাজের অস্বীকৃতি । দেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিজয় দিবসে হরতাল আহবান কিংবা মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে অন্য পিকিংপন্থী কম্যুনিস্টদের আদলেই তার অবস্থান । নির্দিষ্ট করে বললে অক্টোবরে সিরাজ শিকদার নতুন থিসিস দেন এবং আহবান জানান আওয়ামী লীগ, ভারতীয় বাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুগপত লড়াই চালাতে । তাঁর দলের আক্রমণের শিকার হন মুক্তিযোদ্ধারাও । কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টির (এম-এল) তোয়াহা, হক, মতিনদের এই লাইন কিন্তু সিরাজ শুরুতে একদমই নেননি । বরং EBWM-এর প্রথম থিসিসে শেখ মুজিবর রহমানকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে উল্লেখ করে তাঁকে সহায়তা করার সিদ্ধান্তই ছিলো তাঁর । ১ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যথন সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দেন, উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা । পরদিন ২ মার্চ EBWM-এর এক ইশতেহারে শেখ মুজিবকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার আহবান জানান সিরাজ শিকদার । সেখানে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অস্থায়ী বিপ্লবী জোট সরকার গঠন এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিষদ গঠনের অনুরোধ ছিলো । এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সেদিনের পত্রপত্রিকায় গোলাম আযম থেকে শুরু করে সবুর খানসহ শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সব রাজনৈতিক নেতাই ইয়াহিয়াকে অনুরোধ জানান মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে । কিন্তু সিরাজ বুঝেছিলেন, যুদ্ধ ভিন্ন পথ নেই । মুজিব প্রত্যাখ্যান করলেন তাঁর প্রস্তাব ।
এ ক্ষেত্রে এটাও মনে রাখতে হবে, সিরাজ শিকদার তখনও মুজিবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাজনীতিক নন । তার দলও নয় । ৭০ এর সময়কালে আওয়ামী লীগের বেশ কজন উচ্চপর্যায়ের নেতা এবং নির্বাচিত সাংসদ হত্যার জন্য মুজিব খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন চীনাপন্থী কমিউনিস্টদের ওপর । ‘৭১এর জানুয়ারিতে মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাডের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেও বসেন: “এরপর আমার একজন লোক মরবে, আমি ওদের তিনজনকে মারবো ।”
তাছাড়া ভিয়েতনাম স্টাইলে গেরিলা যুদ্ধের পরিকল্পনাটাও পছন্দ ছিলো না তাঁর । ১৯৭০ সালের জুনেই তিনি পরিষ্কার করে দেন তাঁর মনোভাব, যার উল্লেখ রয়েছে মার্কিন দুতাবাস থেকে পাঠানো টেলিগ্রামে । মুজিবের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে লেখা হয়: If the army, civil service, and “vested interest” continued to play this game, threatened Mujib, “I will proclaim independence and call for guerilla action if the army tries to stop me. It is primarily fear of communist exploitation a Vietnam type situation which has kept me patient this long. “ (Source: The American Papers- Secret and Confidential India.Pakistan.Bangladesh Documents 1965-1973, The University Press Limited, p.367)
অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষে এমনিতেও ভিয়েতনাম হওয়া সম্ভব ছিলো না । The scope of Pakistan Army’s military problem can be seen in comparison of Vietnam. There a million man South Vietnamese army plus American troops and massive fire-power must try to control a population of 17 million, many basically sympathetic to the Government. Here only 60,000 West Pakistani troops are trying to control a thoroughly hostile population of 75 million. East Pakistan, moreover, is surrounded on three sides by India, which is giving sanctuaries and supplies to the guerrillas. The Pakistan army’s supply routes from West Pakistan to the East must circumvent by sea and air, 1200 miles of India. Of course, the Mukti Bahini is not Viet-Cong. For one thing the guerrillas are not communists. For another they are not-or not yet-very effective fighters. They have been at it for less than four months. – The Wall Street Journal, July 27, ’71.
সিরাজের এই সহযোগী মনোভাব অবশ্য আগস্ট পর্যন্ত ছিলো ।
পুনশ্চঃ ১
ষাটের দশকের শেষার্ধ । বামপন্থীদের মধ্যে সে সময় দুটো ধারা-রুশ ও চীনাপন্থী । মূলত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যেই তা প্রবল ছিলো । নেতা পর্যায়ে তা ছিলো ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ব্যানারে । কারণ, পাকিস্তানে তখন কম্যুনিস্ট পার্টি ছিলো নিষিদ্ধ, অতএব গোপন । রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে সাংস্কৃতিক চুক্তিতে লেনিন এবং মাও সেতুংয়ের রচনাবলী তখন সহজপ্রাপ্য । সুবাদেই দলের প্রবীন নেতারা বিপাকে । এদের বেশীভাগই স্বদেশী করা আন্দামান ফেরত সন্ত্রাসী । নতুন পড়ুয়ারা বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে তর্ক করে তাদের নাজেহাল করে । রুশপন্থীদের ঝামেলা কম । তারা কর্মীদের নানা ধরণের অসাম্প্রদায়িক গান-বাজনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ত রাখে । তিন জনের সেল পদ্ধতিতে ( যেখানে কর্মীরা একাধিক সেলের সদস্য ) পার্টি ম্যানিফেস্টোর প্রচারণা চলে । সমাজতন্ত্রের পথে শান্তিপূর্ণ রূপান্তরে বার্মা তাদের কাছে মডেল । শৃংখলা ভাঙ্গার সুযোগ তাই নেই । অন্যদিকে চীনাপন্থীরা সোভিয়েত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কে বেশী সাম্রাজ্যবাদী, কাকে শ্রেণিশত্রু ও সংস্কারবাদী ধরা হবে এই নিয়ে বিতর্কে ব্যস্ত । ভিয়েতনাম যুদ্ধে সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ে তাদের মন খারাপ হয় । কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী উন্মেষ তাদের চোখ এড়ায় । ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে গলা মেলায় বটে, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থের পক্ষে তাদের রা সরে না ।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ই তাদের এই রূপটা অবশ্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো । চীন পাকিস্তানের বন্ধু বলে তারা পাকিস্তানের পক্ষে গলা মিলিয়েছে । শোনা যায়, ভাসানী কয় দিনের জন্য নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন পিকিংয়ে (বেইজিং) আইউব খানের জন্য সামরিক সাহায্যের দেনদরবার করতে । যদিও এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি কেউ ।
পুনশ্চঃ ২
মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটমেন্টের সময়ই ভারতীয় সরকারের বিশেষ নির্দেশে যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক থাকতে হয়েছে কম্যুনিস্ট অনুপ্রবেশের ব্যাপারে । মঈদুল হাসান তাঁর মূলধারা ৭১ বইয়ে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন : “তরুণদের ট্রেনিং দেওয়ার ব্যাপারে অবশ্য ভারতীয় প্রশাসনের সকল অংশের সমান উৎসাহ ছিল না । যেমন ট্রেনিং প্রদান এবং বিশেষত ‘এই সব বিদ্রোহী ও বামপন্হীদের’ হাতে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষের আপত্তি প্রথম দিকে ছিলো অতিশয় প্রবল । এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিলো, নক্সালবাদী, নাগা, মিজো প্রভৃতি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের তৎপরতা-হেতু পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতীয় পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা সম্পর্কে এদের উদ্বেগ । বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত অস্ত্র এই সব সন্ত্রাসবাদী বা বিদ্রোহীদের হাতে যে পৌঁছবে না, এ নিশ্চয়তাবোধ গড়ে তুলতে বেশ কিছু সময় লাগে । মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং-এর ব্যাপারে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাতে এই নিশ্চয়তাবোধ ক্রমে গড়ে ওঠে । প্রথম দিকে রিক্রুটিং সীমাবদ্ধ ছিলো কেবল আওয়ামী লীগ দলীয় যুবকদের মধ্যে । পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এ ব্যবস্হা ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীরও মনঃপূত । মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে আগ্রহীদের বিরাট সংখ্যার অনুপাতে ট্রেনিং-এর সুযোগ ছিল নিতান্ত কম । ট্রেনিং-এর আগে পর্যন্ত তরুণদের একত্রিত রাখা এবং তাদের মনোবল ও দৈহিক সুস্হতা বজায় রাখার জন্য সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় ‘যুব শিবির’ ও ‘অভ্যর্থনা শিবির’ স্হাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এই সব শিবিরে ভর্তি করার জন্য যে স্ক্রিনিং পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, তদনুযায়ী ‘বহির্দেশীয় আনুগত্য’ (Extra Territorial Loyalty) থেকে যারা মুক্ত, কেবল সে সব তরুণরাই আওয়ামী পরিষদ সদস্যদের দ্বারা শনাক্তকৃত হবার পর ভর্তির অনুমতি পেতো । পাকিস্তানী রাজনৈতিক পুলিশের এই বহুল ব্যবহৃত শব্দ ধার করে এমন ব্যবস্হা খাড়া করা হয়, যাতে এই সব শিবিরে বামপন্হী কর্মীদের প্রবেশের কোন সুযোগ না ঘটে।”

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫০

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: সিরাজ শিকদার যেই হোক , বেচারা মইরা বি এন পি জামাতিদের বিশাল সুবিধা কইরা দিছে ।কিছু হইলেই সিরাজ শিকদার সিরাজ শিকদার কইরা মুখে ফেনা তুইলা ফেলায় ।

রূপক ভাই, সিরাজ সাহেব কে নিয়ে এত ডিটেলস জানা ছিল না ।পোস্টের জন্য ধন্যবাদ । :)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে উনার একটা উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল । কিন্তু উনার ভুলটা ছিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধেও চলে গিয়েছিলেন, আওয়ামীলীগের অনেক সাংসদকে হত্যা করেছিলেন । নানা কারণে বঙ্গবন্ধু উনার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন । স্বাধীনতার সময় উনার বাহিনীর হাতে অনেক আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন । প্রথম বিজয় দিবসেই হরতাল দিয়ে বসেন । ডাকাতি ও লুটপাটের কথা তো বলাই বাহুল্য । দেশকে অস্থিতিশীল করতে চরমপন্থা অবলম্বন করায় উনাকে মাশুল দিতে হয়েছে ।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫১

গেম চেঞ্জার বলেছেন: দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থান ও তৎপরতা যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিপিকারদেরও দেখা গেছে গা বাচিয়ে চলতে । প্রথাগত লাইনের বাইরে তারা হাঁটেননি । যে কারণে বিভিন্ন ইতিহাস বইয়ে সিরাজ শিকদার ও তার বাহিনীর জন্য দুই লাইনের বেশী বরাদ্দ হয় না । লেখা হয়: এ ছাড়া সিরাজ শিকদার ও তার বাহিনী পেয়ারা বাগান অঞ্চলে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ।

সিরাজ শিকদারকে মূল্যায়ণ তো করা হয়নি উল্টো অবিচার করা হয়েছে। অবিচার ও অন্যায় করা হয়েছে একটি আন্দোলনকে রুদ্ধ করে।



২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কম্যুনিস্টদের, বিশেষ করে চীনাপন্থীদের বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতে পারেননি । বিভিন্ন কারণও ছিল । সিরাজ অবশ্য প্রথমে অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন । কিন্তু পরে চরমপন্থা অবলম্বন করেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করেন । স্বাধীনতার আগে ও পরে অনেক সাংসদকে হত্যা করেন । দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিলেন । আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উনাকে ভুল বিপ্লবী বলা হয়েছে । উনার পথ সঠিক ছিল না । বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপই উনার মৃত্যুর কারণ ছিল ।

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৮

তারছেড়া লিমন বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম আপনার পোষ্টে..............

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো ।

৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৬

প্রামানিক বলেছেন: সিরাজ সিকদার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো। ধন্যবাদ

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা ।

৫| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫২

দীপংকর চন্দ বলেছেন: "পাহাড়ের
ঢাল বেয়ে
নেমে যায়
মুরং মেয়ে
অঙ্গে তার ছোট্ট আবরণী

কী নিটোল স্বাস্থ্যবতী!

কবে তার কাঁধে—
শোভা পাবে
রাইফেল একখানি!"

অনিঃশেষ শুভকামনা।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো ।

৬| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৫২

ইঞ্জিনিয়ার কবির আহমেদ মাধব বলেছেন: আমাদের গ্রামে তার নামে একটা কলেজ আছে। তাকে চিনতাম লিটু শিকদারের চাচা হিসাবে। যাকে কারা যেনো মেরেফেলছে,ডাকাত ছিলো না কি ছিলো, আর আমাদের এলাকায় সর্বহারা পার্টি বলতে বুঝতাম একটা ডাকাত দল।

একদিন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে তার নাম শুনে অবাক হলাম,তাইলে নিশ্চই সে কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো।

বড় ভাই লিটু শিকদারের সাথে রাজনীতি করে তাকেই জিজ্ঞাস করে ছিলাম কে এই সিরাজ শিকদার,খুব একটা সন্তশজনক উত্তর পাইনাই তার থেকে আওয়ামীলিগের দুর্নাম বেশি শুনলাম।

এক দিন আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে শামীম শিকদারের নাম শুনলাম। নামটাই কেমন জানি ছেলে ছেলে ভাব আছে। পরে শুনলাম সে নাকি বেন্সন সিগারেট খায় দিনে কয়েক প্যাকেট আবার বাইক ও চালায়। ছেলে না মেয়ে বুঝা যায় না।

গত উপজেলে নির্বাচনে শিকদার বংশ থেকে নির্বাচন করল সুবর্না শিকদার। আমাদের ম্যাক্সিমাম বুইড়ারা ঐ মহিলারে ভোট দিছে চেহারা দেখে। অনেক সুন্দরী নাকি সে। নির্বাচনের দিন নাকি জিন্স পড়ে নির্বাচনের ডিকলার নিয়ে আসছে সঙ্গপাঙ্গ নিয়া । আওমীলিগ সব ছিনাইয়া নিয়েগেলেও তার জয় ছিনিয়ে নিতে পারে নাই।

এবার আমি ভাবলাম যে বংশের মেয়ে এমন তার বংশ যে ডাকাতের বংশ ছিলো আমি ডেম শিউর..................।

যাহোক সত্য ইতিহাস হয়ত জানলাম,জানলাম সিরাজ শিকদার সম্পর্কে। লেখককে ধন্যবাদ।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সিরাজ শিকদার একটা মিশ্র চরিত্র । মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, আবার আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধাও মেরেছেন । স্বাধীনতার পরে উনি আন্দোলের নামে ডাকাতিও করেছেন । উনার পার্টি ছিল মূর্তিমান ত্রাস ।
হ্যাঁ, উনি রাজনীতিক ছিলেন, তবে ভুল রাজনীতি করেছেন ।
শামিম শিকদার একজন ভাস্কর । উনি সিরাজের বোন । ঢাকার অনেক স্থাপনা উনার করা ।

৭| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:০৮

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আমার কাছে সিরাজ সিকদার সব সময় কিংবদন্তির এক রহস্য মানব।তার সম্পর্কে জানার একটি অদম্য ইচ্ছা সবসময় ছিলো।
আজ ইচ্ছে পূরন হলো।
ধন্যবাদ বন্ধুবর।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো ।

৮| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাংলাদেশের প্রথম ক্রশফায়ার, প্রথম রাজনৈতিক হত্যা সিরাজ শিকদার।
সংসদে শেখ মুজিবের চোখে চোখ রেখে যুক্তিপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর ছিল পরদিন রাতের আধাঁরে গুলিতে!
তারপরদিন জাতীয় সংসদে দাম্ভিক উচ্চারন কোথায় সিরাজ শিকদার! তার সততা মহত্ব আর শ্রেষ্ঠত্বকেই প্রমাণ করে।

যে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনায় ভিন্নমতকে হত্যা করতে হয়, দমন পীড়নে স্তব্দ করে রাখতে চায় তা যে দেউলীয়াত্বে পূর্ন তা যেমন ৭৫এ প্রমাণ হয়েছিল এখনও সেই দেউলীয়াপনারই প্রকাশ চলছে!

সিরাজ শিকদার নিয়ে বিস্তারিত পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ। তথ্যসূত্র হিসাবে অবশ্যই প্রিয়তে।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সিরাজ সিকদারকে বঙ্গভবনে ধরে নেয়া হয়েছিলো । ভাবানুবাদ হয়েছিলো ওখানেই । সিরাজ সিকদার যে পথ বেছে নিয়েছিলেন, যে পরিমাণ অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলেন; তার মৃত্যু অবধারিতই ছিলো । সেক্ষেত্রে তাকে বিচারের আওতায় আনা যেতো, কিন্তু যেভাবে বিনা বিচারে হত্যা করা হলো একটা স্বাধীন দেশে; এটা খুবই দুঃখজনক । এর দায় আওয়ামীলীগকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে ।

সিরাজকে ধরা হয় ১ জানুয়ারি, হত্যা করা হয় ২ জানুয়ারি । আর ঐ বছরের সংসদ চালু হয় ২৫ জানুয়ারি, যেদিন চতুর্থ সংশোধনী আনা হয় । সংসদে শেখ মুজিবের দাম্ভিক উচ্চারণ, 'কোথায় সিরাজ সিকদার?' কতটুকু সত্য বলতে পারছিনা । তবে হ্যাঁ, ঐ দিন পরোক্ষভাবে সিরাজকে উদ্দেশ্য করে একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন ।

৯| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সিরাজ শিকদারের বিপ্লবের পথ বাস্তবসম্মত ছিলনা। উনার মত মহান বোধ অন্তরে ধারন করে বিপ্লবের স্বপ্ন এই উপমহাদেশে পাগলের চিন্তা। দেশের ইতিহাসে সিরাজ শিকদারের নাম প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী হিসেবেই সম্ভবত লেখা থাকবে। আর সত্য হলো এটাই যে সামান্য এক সিরাজ শিকদারের হত্যার দায় আওয়ামী লীগ সরকারকে বহন করতে হবে সারা জীবন।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: 'দেশের ইতিহাসে সিরাজ শিকদারের নাম প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী হিসেবেই সম্ভবত লেখা থাকবে। আর সত্য হলো এটাই যে সামান্য এক সিরাজ শিকদারের হত্যার দায় আওয়ামী লীগ সরকারকে বহন করতে হবে সারা জীবন।' যথার্থই ।

১০| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯

কিরমানী লিটন বলেছেন: গেম চেঞ্জার বলেছেন: দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থান ও তৎপরতা যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিপিকারদেরও দেখা গেছে গা বাচিয়ে চলতে । প্রথাগত লাইনের বাইরে তারা হাঁটেননি । যে কারণে বিভিন্ন ইতিহাস বইয়ে সিরাজ শিকদার ও তার বাহিনীর জন্য দুই লাইনের বেশী বরাদ্দ হয় না । লেখা হয়: এ ছাড়া সিরাজ শিকদার ও তার বাহিনী পেয়ারা বাগান অঞ্চলে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ।

সিরাজ শিকদারকে মূল্যায়ণ তো করা হয়নি উল্টো অবিচার করা হয়েছে। অবিচার ও অন্যায় করা হয়েছে একটি আন্দোলনকে রুদ্ধ করে।

মুগ্ধ ভালোলাগায় স্যালুট আপনাকে !!!

১১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কোথায় সিরাজ সিকদার!

১২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

জেন রসি বলেছেন: ইতিহাসের আলোকে সিরাজ শিকদারকে বিশ্লেষণ করতে হলে অনেক আঙ্গিক থেকেই সেটা করতে হবে। সিরাজ শিকদার যেমন ভুল পথে হেঁটেছিলেন তেমনি বঙ্গবন্ধু নিজেও একাত্তরের পর একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যেমন রক্ষী বাহিনীর অত্যাচারের সাথে তুলনা করলে সিরাজ শিকদারের আদর্শকেই বরং যৌক্তিক পাল্টা জবাব মনে হয়। তাই সিরাজ শিকদার এমন এক বিপ্লবী চরিত্র যাকে এক চোখ বন্ধ রেখে কখনো বিশ্লেষণ করা যাবে না।

১৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


"শ্রেণিসংগ্রামঃ ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি সিরাজ সিকদার প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে উপস্থিত করেন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের খসড়া থিসিস । "

-এটা একটা লেখা ছিল, থিসিস বলছেন কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.