নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যাংক ডাকাতি

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬

( স্মৃতির পাতা হইতে )

অামি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়িতাম, বয়স তেরো কী চৌদ্দ । অামাদের বিদ্যানিকেতনটি অবস্থিত ছিলো প্রত্যন্ত এক গ্রামে, অামাদের বাড়ি হইতে প্রায় দুই-অাড়াই কিলোমিটার দূরে । প্রত্যেহ হাঁটিয়া, লুঙ্গি পরিয়া বিদ্যানিকেতনে যাইতাম ।
একদিন বিদ্যানিকেতনে গিয়া শুনি উথুরা বাজারে ডাকাত ধরা পড়িয়াছে (উথুরা অামাদের ইউনিয়নের নাম, তৎসংলগ্ন বাজারকে উথুরা বাজার বলা হয়)। সহপাঠিদের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্য-উৎফুল্লতা দেখা দিলো । অামি কখনো ডাকাত দেখি নাই, বয়স অল্প- স্বভাবতই অামিও সবার সঙ্গে ডাকাত দেখিতে চলিলাম ।
নারাঙ্গী চৌরাস্তা হইতে নারাঙ্গী বাজার (নারাঙ্গী অামাদের গ্রামের নাম), নারাঙ্গী বাজার হইতে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখিলাম, রাস্তায় একখানি মাইক্রোবাস দাঁড় করানো অাছে । রাস্তা-ঘাট সব বদ্ধ! কোনো প্রকার গাড়ি চলাচল করিতে পারিতেছিলো না ।
মাইক্রোবাসের ভিতরে উঁকি দিয়া তালাবদ্ধ একখানি বৃহৎ ট্রাঙ্ক দেখিলাম, ওইখানেই ছিলো লুন্ঠিত সব টাকা; পাশেই কিছু মিষ্টান্নের প্যাকেট । ডাকাতেরা টাকা লুন্ঠনের খুশিতে বোধহয় মিষ্টান্ন কিনিয়াছিলো । অাফসোস, তাহাদের মিষ্টি খাওয়ার সুযোগ হয় নাই ।
রাস্তার বাম পাশে কয়েকজন পুলিশ গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করিতেছিলেন । একটু সম্মুখে অাগাইলাম । লোকমুখে শুনিলাম, অনন্যেপায় হইয়া বাম পাশের পথটি ধরিয়া ডাকাতেরা পালাইতে চাহিয়াছিলো । কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে পথ শেষ হইয়া গিয়াছে । ওটা যে অসম্পূর্ণ পথ অচেনা ডাকাতেরা কী করিয়া চিনিবে? অতঃপর মাইক্রোবাস হইতে নামিয়া যে যাহার মত দৌড়াইয়া পালাইতেছিলো ।
ইতিমধ্যে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হইয়াছিলো যে, গ্রামে ডাকাত পড়িয়াছে । ঘোষণাটি অতি দ্রুত রাষ্ট্র হইয়া যায় । লোকজন ডাকাতদের কয়েকজনকে ধরিয়া ফেলে । তাহার পরের কাহিনী অত্যন্ত করুণ । লোকজন যাহাদিগকে ধরিয়াছিলো, একজনকেও বাঁচিতে দেয় নাই । বাঁশ দিয়া পিটাইয়া পিটাইয়া হত্যা করে । একজন কর্দমাক্ত ধানখেত ধরিয়া পালাইতেছিলো, লোকজন তাহাকে ধানখেতেই পুঁতিয়া রাখে, একজনের মাথার মগজ গলাইয়া ফেলে, একজনের অন্ডকোষ পিষাইয়া দেয়, একজনের চক্ষু খুলিয়া ফেলে । জনৈক গৃহস্থের অনুকম্পায় একজন অবশ্য বাঁচিয়াছিলো, পুলিশ অাসিয়া পড়ায় অারো একজনকে জেলা পরিষদের এক কক্ষে বন্দি করিয়া রাখা হয় ।
উথুরা বাজারে গিয়া দেখি মৃতদেহগুলো সারি সারি করিয়া ট্রাকে সাজানো হইয়াছে । যেন রক্ত-মাংসের স্তুপ! মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কী করিয়া হয়? লাশগুলোর দিকে চক্ষু বোলাইয়া স্থির থাকিতে পারিলাম না, সঙ্গে সঙ্গেই নামাইয়া রাখিলাম । এমন বিকৃত চেহারা অামি কখনো দেখি নাই ।
ডাকাতেরা ময়মনসিংহ শহরের সোনালি ব্যাংক কর্পোরেট শাখা হইতে এককোটি সত্তর লক্ষ টাকা লুট করিয়া ঢাকা অভিমুখে ফিরিতেছিলো । অকস্মাৎ পুলিশ তাহাদের পিছু নেয় । ত্রিশাল অতিক্রম করিয়া ভরাডোবা অাসিয়া ভরাডোবার ভিতর দিয়া সাগরদীঘির দিকে পালানোর চেষ্টা করিয়াছিলো ডাকাতেরা । উথুরার সন্নিকটে অাসা মাত্রই উত্তেজিত জনতা লাঠিসোটা হস্তে রাস্তায় নামিয়া অাসে, শাল কাষ্ঠ ফেলিয়া রাস্তা অবরোধ করিয়া রাখে ।
অাশ্চর্যের কথা এই, পর্যাপ্ত অস্ত্র বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তাহারা অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করিবার সুযোগ পায় নাই । দৌড়াইয়া পালাইতে গিয়া মার খায় । বিপদে পড়িলে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পায় । তাহারা যদি জনতার সম্মুখে একখানি গ্রেনেড ছুঁড়িয়া মারিতে পারিতো, জনতা প্রাণের ভয়ে দৌড়াইয়া পালাইতো ।
মান-অভিমান ভূলুন্ঠিত হওয়ার ভয়ে হউক, অার থানা-হাজতের ভয়েই হউক; মৃতদেহগুলো শনাক্ত করিতে কাহারো কোন অাত্মীয়-স্বজন থানায় অাসে নাই । ভালুকায় ক্ষীরু নদীর উপর নির্মিত ব্রীজের নিচে ডাকাতদের শবদেহ পুঁতিয়া রাখা হয় । মুর্দাদের মধ্যে দুইজন মন্ত্রীর পুত্রও নাকি ছিলো ।

২৫ কার্তিক ১৪২২ বঙ্গাব্দ
ময়মনসিংহ ।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০২

গেম চেঞ্জার বলেছেন: বিভৎস!! এই মানসিকতা আমি সাপোর্ট করতে পারি না। আমাদের জনতার মধ্যে মানবিক সত্তার অভাব এখনও রয়েছে। কোনভাবেই এইরুপ হত্যা মানা যায় না।

এ.ট. মন্ত্রীর পুত্র বটে কোন মন্ত্রীর জানেন নাকি?

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: 'আমাদের জনতার মধ্যে মানবিক সত্তার অভাব এখনও রয়েছে । কোনভাবেই এইরুপ হত্যা মানা যায় না ।' যথার্থই বলেছেন । এরুপ বীভৎস ঘটনা অহরহ ঘটছে ।

এখন আর মন্ত্রীদের নাম মনে করতে পারছি না । ঘটনাটা অনেক আগের । বিতর্ক এড়াতে রাজনৈতিক আরো কিছু বিষয় বাদ দিয়ে দিয়েছি ।

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩

রাবার বলেছেন: বীভৎস

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বীভৎস বটে! চোর- ডাকাতকে মারতে গিয়ে আমরা ভুলে যাই তারাও মানুষ ।

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮

জুন বলেছেন: এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ঠিক না। যদিও তারা ডাকাত কিন্ত আমাদের নেতারা কি কিছু কম?

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমাদের নেতারা আরো একধাপ এগিয়ে । প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে তারা সদা তৎপর!

৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: রূপক বিধৌত সাধু ,




উপরের মন্তব্যকারীদের সাথে সহমত হলেও একটা কথা মানতে হবে , সাধারন মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে মানুষ এমনই আচরন করতে বাধ্য হয় । এ তাদের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ ।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: 'সাধারন মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে মানুষ এমনই আচরন করতে বাধ্য হয় । এ তাদের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ ।' আপনার কথা হয়ত ঠিক । তবে যাই বলুন, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ঠিক না । রাষ্ট্রীয়ভাবে যে পরিমাণ টাকা-পয়সা লুটপাট হয়, চোর-ডাকাতেরা কি তারচে বেশি লুট করে?

৫| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৫

দীপংকর চন্দ বলেছেন: বিষয়টি মর্মান্তিক!!

সম্ভবত নৈতিকতার অবক্ষয় এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জন্ম নেয় এ ধরনের অসুস্থ ঘটনাগুলো!

সুস্থ হোক সমাজ!

শুভকামনা অনিঃশেষ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৮

প্রামানিক বলেছেন: নিষ্ঠুরদের জবাবে নিষ্ঠুরতা। ডাকাতরাও সুযোগ পেলে নিরীহদের হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না তাই হয়তো গ্রামের মানুষ এমন প্রতিশোধ নিয়েছে। তবে এটা কাম্য নয়।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা!

৭| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৯

আরজু পনি বলেছেন:
সুচনাতে ভালোই লাগিতেছিল...শেষে আসিয়া থমকিয়া গিয়া আর ভাবিতে পারিতেছিলাম না ! :| :||
স্মৃতিচারণ ভালো লাগিল ।

+

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো ।

৮| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: মুর্দাদের মধ্যে দুইজন মন্ত্রীর পুত্রও নাকি ছিলো ।

কাহিনা সবে শুরু হইল , আর আপনি কিনা শেষ করে দিলেন ?? :P

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঘটনা আরও অনেকদূর এগিয়ে ছিলো । চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছিলো ।

৯| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০২

জেন রসি বলেছেন: আসলে আইন কাজ না করলেই মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেয়।

মন্ত্রীর ছেলে?? রহস্যময় ব্যাপার!! ;)

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এই জাতীয় ঘটনা সাধারণ মানুষ ঘটাতে পারেনা । যাদের হাত লম্বা তারাই ঘটায় । জনগণের হাতে না পড়লে হয়ত আইনের ফাঁক ফোঁকরে বের হয়ে আসতো ।

১০| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০২

আব্বাসী মাগ্‌ফুরুল হাসান বলেছেন: এটাই আমাদের সমাজ।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:১২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: X(

১১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৭

মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: কি বলব বুঝতে পারছি না। একবার মনে হয় ঠিক কাজ করা হইছে। আবার মনে হয় এই কাজ কিভাবে করল জনতা!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এ ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে অনেক ঘটেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.