নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
মেয়েটির নাম বিদিশা। প্রাণখোলা, সর্বসংহা, অমায়িক, সদা হাসোজ্জ্বল এক চতুর্দশী তরুণী। সংসারের যত কাজ-কর্ম, সব একাই করে। কখনও কোনো কাজে তাহার বিরক্তি নাই, কাহারও প্রতি কোনো অভিযোগও নাই। তাহার মাতা অবশ্য মাঝেমধ্যে কাজ-কর্মে একটু-আধটু সহযোগিতা করেন।
তাহার বাবা খুচরা ব্যবসায়ী। স্ত্রী, দুই সন্তান লইয়া টানাটানির সংসার। মাতার ইচ্ছায় পুত্রকে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় ভর্তি করাইয়া দিয়াছেন। আদরের মেয়েকে বেশিদূর পড়ানোর মতো সামর্থ নাই, তাই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর পর নানার বাড়ি পাঠাইয়া দিয়াছেন। নানার অবস্থাও খুব বেশি ভালো না! দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন বটে, তেমন সুবিধা করিয়া উঠিতে পারেন নাই- কষ্টেসৃষ্টে মোটামুটি চলে আর কী!
সেইখানে থাকিয়াই বিদিশা পড়ালেখা করে। পড়ালেখায় সে অত্যন্ত মনোযোগী। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। নিজ গাঁয়ের বিদ্যাপীঠে অনুষ্ঠিত যেকোনো পরীক্ষায় সবসময়ই সর্বোচ্চ মার্কস পাইয়া প্রথম হইত। এইখানেও তা-হার ব্যত্যয় হইল না। নবম শ্রেণি হইতে দশম শ্রেণিতে উঠিল প্রথম হইয়া।
শিক্ষকগণ বিদিশার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ইংরেজি ও গণিতে ওর মার্কস ছিল উল্লেখযোগ্য। শিক্ষকগণ আধ-পাগলা ধরনের মানুষ বিদিশার নানাকে চাপাইয়া ধরেন মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য। তিনিও আনন্দে একেবারে আটখানা। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাইলেন।
নির্বাচনি পরীক্ষায়ও প্রথম হইল বিদিশা। সবাই দারুণ খুশি বিদিশার ফলাফলে। কিন্তু গোল বাঁধিল অন্যখানে। এইবারে ফর্ম ফিলআপের টাকা ধার্য করা হইয়াছে চার হাজার দুইশত টাকা। দরিদ্র এই পরিবার কি এত টাকা যোগান দিতে পারিবে?
বিদিশার নানা গেলেন জনৈক শিক্ষকের নিকট এই ব্যাপারে কথা-বার্তা বলিতে । উনি তাঁহার পরিচিত লোক। উদ্দেশ্য, অনুরোধপূর্বক যদি টাকা-পয়সা কিছু কমানো যায়।
অনেক অনুরোধ-উপরোধ করিয়াও টাকা-পয়সা কমানো আর সম্ভবপর হইল না । উল্টা শিক্ষকের সহিত বাকযুদ্ধ বাঁধিয়া গেল । শিক্ষক বলিয়া দিলেন, “এক পয়সাও কম হবে না।”
বিদিশার মা চার হাজার টাকায় পোষ্য ছাগলটি বিক্রয় করিয়া দিলেন। ইহা ছাড়া আর কিছু ছিল না বিক্রয় করিবার মতো। একমাত্র কন্যাকে তো মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতেই হইবে।
নানার সহিত যেহেতু জনৈক শিক্ষকের গন্ডগোল বাঁধিয়া গিয়াছে, বিদিশা নানাকে সঙ্গে লইল না- জনৈকা বান্ধবী নিশিকে লইয়া ফর্ম ফিলআপ করিতে গেল, নিশিও ফর্ম ফিলআপ করিবে।
শিক্ষক মশাই একমনে কাহারও ফর্ম ফিলআপ করিতেছিলেন, বিদিশাকে দেখিয়া বলিলেন, “চার হাজার দুইশত টাকা দাও।”
কিছুক্ষণ পূর্বে একজনের ফর্ম ফিলআপ করানো হইয়াছে মাত্র তিন হাজার টাকায়। এখন তিনি বিদিশার নিকট চাহিতেছেন চার হাজার দুইশত টাকা। বিদিশার নিষ্পাপ মন কিছুই বুঝিতে পারিল না, সে চার হাজার টাকাই দিল। শিক্ষক মশাই ধমকের স্বরে বলিলেন, “আরও দুইশত।”
বিদিশা বলিল, কালকে দুইশত টাকা দিয়ে যাব।”
শিক্ষক মশাই বলিলেন, “বাকি চলবে না। কালকে টাকা নিয়ে এসো । ফর্ম ফিলআপ কালকে হবে।”
নিশি আর টাকা বাহির করিল না । সেও ঐ চার হাজার টাকাই আনিয়াছিল। বুঝিল, বাকি দুইশত টাকা না আনিলে ফর্ম ফিলআপ করানো হইবে না।
জুলিয়া নামের এক মেয়ে ফর্ম ফিলআপ করিল কোনো প্রকার নগদ টাকা-পয়সা ছাড়া। তাহার পিতা ফোন করিয়া বলিয়া দিয়াছেন, “আমি একটু ঝামেলায় আছি, টাকা কয়েকদিন পরে দেব; ফর্ম ফিলআপ করিয়ে দেন।”
যে শিক্ষকের সহিত বিদিশার নানার মনোমালিন্য হইয়াছিল, তিনি নিকটেই বসিয়াছিলেন । তিনি টুঁ শব্দটিও করিলেন না। বিদিশার ক্লাস টিচার অবশ্য বলিতেছিলেন, “ফর্ম ফিলআপ করিয়ে দেন না, বাকি টাকা তো কালকে দেবে বলেছেই।”
“আপনি কী বোঝেন?” ধমক মারিয়া একজন তাহাকে থামাইয়া দিলেন। তিনি আর কিছু বলিতে পারিলেন না। চুপসাইয়া গেলেন।
বিষণ্ণ মনে বিদিশা আর নিশি বাড়ি ফিরিয়া গেল। আরও দুইশত টাকা জোগাড় করিতে পারিলেই কেবল তাহাদের ফর্ম ফিলআপ করানো হইবে, তাহারা আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে পারিবে।
৩ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বঙ্গাব্দ
ভালুকা, ময়মনসিংহ ।
দ্বিপ্রহর
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো ।
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
এটা কি গল্প?
যদি ঘটনা হয়ে থাকে, বিদিশাকে সাহায্য করার চেস্টা করেন; আমিও সাহয্য করবো।
আর ঐ শিক্ষককে সৌদী পাঠাবো উট চরাতে
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সত্য ঘটনা । বিদিশাকে হেল্প করা হয়েছে । ধন্যবাদ ।
৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০২
কিরমানী লিটন বলেছেন: ছুঁয়ে গেলো- ভাষায় ভিভুতি ভূষণের স্বাদ পেলাম,অনবদ্য সুখপাঠ্য - একেবারে মাটির গন্ধ।নির্মম বাস্তবের পটভূমিতে চমৎকার শব্দের বুনন, =গল্পকে আরও প্রানবন্ত করেছে- নান্দনিক..।
অনেক অভিবাদন আর শুভকামনা প্রিয় সাধু'দার জন্য ...
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা ।
৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৩
প্রামানিক বলেছেন: গল্প লেখার ভাব, ভাষা, কাহিনী চমৎকার হয়েছে। খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা ।
৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন নিরন্তর।
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।
৬| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৫
দর্পণ বলেছেন: বিষণ্ণ মনে বিদিশা অার নিশা বাড়ি ফিরিয়া গেলো । অারো দুইশত টাকা যোগাড় করিতে পারিলেই কেবল তাহাদের ফর্ম ফিলঅাপ করানো হইবে, তাহারা অাগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে পারিবে ।
বিদিশা তার জীবনের সকল বাঁধা কাঁটিয়ে উঠুক।
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা ।
৭| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮
সুলতানা রহমান বলেছেন: কত কিছু যে হয় ………হচ্ছে …………
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমরা কয়টারই বা খবর রাখি! ধন্যবাদ ।
৮| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭
গেম চেঞ্জার বলেছেন: স্কুল শিক্ষকগণ মাঝেমধ্যে এইরকম অমানবিক আচরণ করেন। সহজাত মানবিক বোধটুকুও হারিয়ে ফেলেন। এর প্রতিফলন কি সমাজে হয় না??
অবশ্যই হয়। তা নাহলে নষ্ট মানুষদের ভীড় বাড়ছে কেন??
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মানবিকতা ফিরে আসুক । ধন্যবাদ ।
৯| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২০
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: চারিদিকে নষ্টদেরই জয় জয়কার
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নষ্টদের পতন হবেই । ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সাধু ভাষায় লিখিয়াছেন বলিয়া পড়িতে আরাম পাইয়াছি, চলিত ভাষায় গতি আছে বটে, আরাম নাই|
গল্পখানা ভালই লাগিয়াছে, প্যাঁচকোচ নাই| অনবদ্য নহে, তবে পাঠ করিয়া ক্ষতিবৃদ্ধি হইবে না| ভাল থাকিবেন আর আরও ভাল লেখার প্রত্যাশায় থাকিলাম