নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেমের গপ্পোঃ ধীরে ধীরে বায়ু বয়

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭


ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে
"এটা আপনার জন্য।" বাস থেকে নেমে বাসার দিকের গলিতে ঢুকতেই মৃণালের হাতে একটা হলুদ রঙের ফুল গুঁজে দিলো নাহার। মৃণাল ফুলটা নেড়েচেড়ে দেখলো, শুঁকলোও। তেমন গন্ধ পেলো না। জিগ্যেস করলো, "কী ফুল?"
"চিনি না। স্কুল থেকে আসার পথে একটা গাছ থেকে আপনার জন্য ছিঁড়ে আনলাম।" নাহার বললো।

গাঁধা ফুল মনে করেছিলো মৃণাল। গাঁধার রং তো হলুদ হয়। ভালোভাবে দেখলো, ওটা আসলে গাঁধা না। আচ্ছা, যে ফুলই হোক, নাম বিবেচ্য না। "কোন স্ত্রীলোকের কাছ থেকে ফুল উপহার পেয়েছি- এটাই তো বড় কথা। নাম দিয়ে আর কী হবে?
কতকাল হলো কেউ আমাকে ফুল দেয় না, সুখ-দুঃখের কথা বলে না।" শুষ্ক মরুতে যেন হঠাৎ বৃষ্টিপাত হলো। আহা! চোখে আনন্দাশ্রু এসে গেল মৃণালের।

এমন উপহারের জন্য হৃদয় নিংড়ানো ধন্যবাদ দিলো নাহারকে। খুব খুশি যে হয়েছে, এ কথা তো বলাই বাহুল্য। গর্বে বুকটা ফুলে উঠছিলো। জগৎ-সংসারে নিজেকে মহা মূল্যবান কেউ মনে হচ্ছিলো তার। বুঝতে পারছিলো, জগতে তার মতো নরাধমেরও স্বীকৃতি আছে।
মনে মনে বললো, "বেঁচে থাকো বহুকাল।"

নাহার তার সহকর্মী। স্কুলে সম্প্রতি যোগদান করেছে। 'ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য' পড়ায়। ওর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায়। কিন্তু ওদের পরিবার চট্টগ্রামে থাকে। ওর বেড়ে ওঠাও ওখানেই। ওর বাবা ওখানে সরকারি চাকুরি করেন।
ওখান থেকেই গাজীপুরে এসে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলো ও। টিকেও যায়।

নাহারের সাথে কীভাবে যে সখ্য হয়ে যায় মৃণালের কে জানে! সে সচরাচর স্ত্রীলোকদের এড়িয়ে চলে। অথচ ওর ব্যাপারে এর ব্যত্যয় ঘটে। নাহার সারাক্ষণ ওর পাশাপাশি থাকে, সেও ওর পাশাপাশি থাকতে উদগ্রীব থাকে। কী যে একটা অদ্ভূত অনুভূতি কাজ করে।
তাদের মধ্যে চকোলেট বিনিময় হতে থাকে। চিপস কিংবা আইসক্রিমও বাদ যায় না। কে, কী পড়াবে সে বিষয়েও কথা হতে থাকে। দুজনেই একই বিভাগে পড়ায় কী না। পরীক্ষায় কী দেবে, কী দেবে না সে বিষয়েও কথা হয়।

"বিকেলে কী করবেন?" নাহার জিগ্যেস করলো।
কী উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারছিলো না মৃণাল। ও আসলে নিজেও জানে না বিকেলে কী করবে। এ সময়ে সে নির্দিষ্ট কোন কাজ করে না। হয় ঘুমায়, না হয় কোথাও বেড়াতে যায়। ফেসবুকিং করে মাঝেসাঝে। আবার অনেকসময় ছাদে উঠে কফি খায়, বইপত্র পড়ে।

"আপনার বাসার সামনে থাকবো।" মৃণাল বলে উঠলো। নিজের কথায় নিজেই চমকে উঠে। কথাটা কি সেই-ই বললো?

"কী বলছেন?" নাহারের কণ্ঠে বিস্ময়।
"ঠিকই বলছি।" মৃণাল বললো, "চারটার সময় আপনার বাসার সামনে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো।"
নাহারকে ইতস্তত করতে দেখা গেলো। কী বিপদেই না পড়লো বেচারি। বললো, "যদি না আসি?"
"আপনি আসবেন।" মৃণাল বললো।
"তারপরও ধরুন, আমি যদি না আসি?"
"আমি কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।"

এবার নাহারের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিলো। কী বলবে বুঝতে পারছে না। ওর ঠোঁট কাঁপতে থাকে।
"পাগলামো করবেন না। আমার কাজ আছে। রুমমেটকে নিয়ে বাজার করতে বের হবো।" নাহার ধরা কণ্ঠে বললো।
"আপনি যা খুশি করুন, আমি চারটায় আপনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো।"

এই প্রথম কোন নারীর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে মৃণাল। নিজের খামখেয়ালিপনার জন্য লজ্জাও লাগলো খুব। কিন্তু কী আর করার! যেহেতু বলে ফেলেছেই, পাগলামো আর একটু করেই দেখা যাক না।

ভালো শার্ট পরে, মাথার চুল আঁচড়িয়ে, দামী পারফিউম মাখিয়ে বাসা থেকে দৌঁড়ে বেরুলো। হাতে সময় আছে মোটে ১০ মিনিট। অবশ্য গন্তব্যে পৌঁছতে এই সময়ই লাগবে।
বাতাসের বেগে হাঁটা শুরু করলো।

আকাশে মেঘ করেছে। ঘনঘন দেয়া ডাকছে। মৃণাল নাহারের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। কেন জানি মনে হচ্ছিলো সে আসবে না। নাহার হয়তো ভেবেছে মৃণাল দুষ্টুমি করেছে। যাবো না।

মনটা বিষণ খারাপ হলো। ওকে নিয়ে যত কল্পনা করেছে সবই কি তাহলে মিথ্যে হবে? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে পাশের চায়ের দোকানে ঢুকে গেলো। দোকানদারকে কড়া করে একটা আদার চা দিতে বলে উদাসভঙ্গিতে বাইরে তাকিয়ে রইলো। এমন সময় নাহারকে সামনে দিয়ে যেতে দেখা গেলো। মনটা নেচে উঠলো মৃণালের। দৌঁড়ে বাইরে এসে দাঁড়াতেই নাহার বললো, "কোথায় নিয়ে যাবেন?"

চোখ
"আপনার চোখ দুটো খুব সুন্দর।" নাহারের কথায় নড়েচড়ে বসলো মৃণাল।
"সত্যিই?" অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো।
"হ্যাঁ, সত্যিই।" কণ্ঠে গাম্ভীর্য এনে বললো নাহার।

মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ জোড়া দেখে নিলো। আসলেই তো। এতদিন কেনো খেয়াল হয় নি মৃণালের? নাকি চোখ বুজে ছিলো?

আসলে দীর্ঘদিন অযত্নে-অবহেলায় থাকলে নিজের মূল্যবান জিনিসও মৃল্যহীন-অর্থহীন মনে হয়। এই যেমন তার চোখ জোড়া এতদিন কী নিদারুণ অযত্ন-অবহেলায় ছিলো, কখনও কখনও মনে হতো এ চোখ না থাকলেই ভালো হতো।
অথচ আজ যখন কারও প্রশংসা শোনা গেলো, চোখ জোড়া কোহিনূরের মতো দামী মনে হচ্ছে।

জগৎটা খুব সুন্দর মনে হলো। বেঁচে থাকাটাই আনন্দের। যে জীবন একসময় অভিশপ্ত মনে হতো, রাতারাতি সেই জীবনটাই আনন্দের মনে হচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগে।

দুজন পাশাপাশি হাঁটছে। কথাও হচ্ছে টুকটাক। ভালো লাগার কথা, মন্দ লাগার কথা। শিক্ষাজীবনের কথা। বন্ধু-বান্ধবদের কথা।

"আপনার মধ্যে একটা মোহমত্ততা আছে। মানে কাউকে ধরে রাখার ক্ষমতা আছে।" মৃণাল বললো।
ওর কথায় নাহার হাসলো। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।

"চলুন পেঁয়াজু খাই।" নাহার বললো।
"চলুন।" নাহারের কথায় সম্মতি দিয়ে মহাসড়কের পাশের একটা হোটেলে ঢুকে পড়লো দু'জন।
পেঁয়াজু খাচ্ছে আর টুকটাক কথা হচ্ছে।

"ভালো লাগছে না আমার।" নাহার বললো।
"কেনো?"
"এমনিই।"
এবার দুষ্টুমির খেয়াল চাপলো মৃণালের মাথায়। বলে উঠলো, "নিঃসঙ্গ লাগে? আমার এক রুমমেট আছে। ওনার ফোন নাম্বার দিচ্ছি। কথা বলুন। ভালো লাগবে।"

কথাটা একদম ভালো লাগলো না নাহারের। মুখটা কালো হয়ে গেলো। খুব লজ্জা পেল মৃণাল। এ সময়ে এমন কথা না বললেও পারতো সে।

নাহারের কেনো মন খারাপ হলো? ও কি মৃণালকে ভালোবাসে?
নাকি নাহার ভাবলো, ওকে আর পাঁচজন সাধারণ স্ত্রীলোকের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যারা এলোস্রোতে গা ভাসাতেই পছন্দ করে?

ধীরে ধীরে বায়ু বয়
"আপনার হাতটা ধরি?"
চট্টগ্রাম যাবে নাহার। মৃণাল ওর সাথে আছে। ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যাবে।
"ধরুন" মৃণাল বললো।
নাহার শক্ত করে ওর হাত ধরলো।
"আপনার হাত এত শক্ত কেনো?"
"শক্ত কাজকর্ম করি তো তাই হাত শক্ত।" নাহার হেসে হেসে বললো।

মৃণালের একটু অস্বস্তি হচ্ছে। এই প্রথম কোন স্ত্রীলোক ওর হাত ধরেছে এটা একটা কারণ হতে পারে। আরেকটা কারণ হলো, পাশের সিটের এক বয়স্কা মহিলা কেমন শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওদের গিলে খাবে।

নাহারের কোন দিকে খেয়াল নেই। ও পারে তো মৃণালের গায়ের সাথে লেপ্টে পড়ছে। আর দীন-দুনিয়ার যত আলাপ করছে।

১৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
গাজীপুর।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩২

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: ভালো লাগলো ।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:


পোষ্টের শিরোনামে "প্রেম" শব্দটা থাকায়, ধরে নিচ্ছি প্রেমের গল্প পড়লাম

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: খুব বাজে হয়েছে, না? সরাসরি বলে দিলেও পারেন। আমি মাইন্ড করব না। আমার কাছেও খুব ছেলেমানুষী টাইপ মনে হয়েছে। কিছু একটা লিখতে হবে, সেই তাগিদ থেকেই লিখেছিলাম। অত ভাবি নি।

৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


মানুষ কাছাকাছি থাকলে আকর্ষণ অনুভব করে; হৃদয়ে ভালোবাসার উন্মেষ ঘটলে, উহাকে লেখকেরা কিভাবে প্রকাশ করেন, সেটা আমার জানা নেই; ফলে, কিছু বলতে পারছি না।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রকাশটা তো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। মনে হয় লেখকভেদেও ভিন্ন হয়।

৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:১৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: যাক মৃনালের গতি হলো অবশেষ! ;)


অনুভূতির কিছু কিছু প্রকাশ দারুন লেগেছে। যেন চরিত্রে মিশে গেছি -অমন মনে হচ্ছিল :)

+++

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শরৎচন্দ্র বলেছিলেন, জীবনের প্রত্যক্ষ ঘটনাগুলোকে সরাসরি সাহিত্যে রূপ দেওয়া চলে না। প্রয়োজন অনুসারে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে হয়।
আমি সরাসরি তুলে ধরার চেষ্টা করি। কতটুকু যৌক্তিক বুঝে উঠা কঠিন।

৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৯

এম ডি মুসা বলেছেন: ফুল আর প্রেমের কথা শুনলে সকল প্রেমিক এর ভেতরে
অন্যরকম স্বপ্ন জাগায় । ফুল পাওয়ার ব্যাপারে কথা গুলি রম্য চমক গল্প প্রথম বুঝিনি গল্প ধীরে ধীরে গল্প ফিরে পেলাম ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা। ভালোবাসা জানবেন।

৬| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৪

শের শায়রী বলেছেন: মৃনাল আর নাহারের সাথে মিশে গিয়েছিলাম। পোষ্টে ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:১৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক অনেক ভালোবাসা জানবেন।

৭| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১২

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: গল্প লেখার পর শুরু হয় সম্পাদনা এবং রিরাইটিং। আমিতো লেগেই থাকি।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঝামেলার কাজ।

৮| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৫৮

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: গল্পটি আরেকটু ধীরে ধীরে শেষ করলে আরও ভালো হতো। ;)

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পরবর্তীতে বিষয়টা মাথায় রাখব।

৯| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: অন্য রকম ভালো লাগলো।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:১২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আচ্ছা। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.