নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

এল আঁধার ঘিরে (শেষাংশ)

০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৫০


আগের পর্বের লিঙ্ক: Click This Link
সপ্তাহে সাত দিন। প্রতিদিন ছয় ঘন্টা করে। আর যাওয়া আসা এক ঘন্টা।
একমাস চলল অমানুষিক পরিশ্রম। এবার পারিশ্রমিকের অপেক্ষা।

তূর্য ক্লাস করাচ্ছিল। পরিচালক মহাশয় সাড়ে তিন হাজার টাকা তূর্য'র হাতে গুঁজে দিলেন। বললেন, বাকিটা পরে দেবেন।

কথায় বলে "কম শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর"। তূর্য'র পাথর হওয়ার দশা। কোনো কথা বেরোচ্ছে না মুখ থেকে।

সামনে ইদ। পকেটে নেই কানাকড়ি। ধারদেনায় জর্জরিত। এই অবস্থায় সাড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে কী করবে সে?
একটা মেসে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সেখানে থাকা-খাওয়া বাবদই পাঁচ হাজারের ওপর যায়। হাতখরচ বা অসুখবিসুখ বা অন্যান্য খরচ বাবদ কমপক্ষে হাজার তিন যায়।

ছোটন স্যারের কাছ থেকে হাজার পাঁচেক টাকা ধার নেওয়া। ইদের আগে শোধ দেওয়ার কথা। ওনি নিজেও ধার করে টাকা টা তূর্যকে দিয়েছেন।
বান্ধবী রনিয়ার কাছ থেকে হাজার দুই ধার নেওয়া। তাকেও টাকা টা ফেরত দেওয়া প্রয়োজন।
এখন এসব টাকা সে ফেরত দেবে কীভাবে?বাড়ির জন্যও তো কিছু কেনাকাটা প্রয়োজন।

ঘরের ভেতর পায়চারি করছে তূর্য। প্রেশার লো হয়ে গেছে। টেনশন বাড়লে মাঝেমধ্যে এমন হয় তার।
"প্রাণ" এ সপ্তাহখানেক চাকরি করার স্মৃতিটা মনে পড়ল।

মালিবাগ থেকে টানা সাত দিন রামপুরা গিয়েছে। প্রতিদিন ডিউটি ছিল নয় ঘন্টা। যাওয়া আসা বাবদ বা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা সহ সময় গিয়েছে মোট দশ ঘন্টার ওপর।

সাত দিন ডিউটি করার পর চাকরিটা ছেড়ে দেয় সে। শরীর কুলায় নি। আবার বেতনও ছিল মাত্র দশ হাজার।
সাত দিন ডিউটি করায় কানাকড়িও পায় নি সে। পণ্ডশ্রম গেছে।
তূর্য ভাবে এই সাত দিনে সত্তর ঘন্টা অহেতুক ডিউটি না করে ঘুমালেও উপকার হতো। আবার মনকে প্রবোধ দেয় এই বলে যে "টিকে থাকার চেষ্টা তো কম করলাম না"।

বাড়ি থেকে ফোন আসে, "কবে বাড়ি আসবি"?
তূর্য সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি যাবে না। শুধু শুধু খরচ। ইদের সময় ভাড়াও তো বেশি।
কিন্তু যাওয়া ছাড়া উপায় যে নেই। একা একা ঢাকায় থেকেই বা কী করবে?

ট্রেনে যাওয়ার বন্দোবস্ত হলে ভালো হয়। কম পয়সায় যাওয়া যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো, ট্রেনের টিকিট শেষ। অগত্যা বাসে যাওয়াই স্থির।

শেষ ভরসা ছিল টিউশন তিনটে। টিউশন ভাগ্য বরাবরই খুব খারাপ তূর্য'র। কোনো সময়ই সব টিউশন থেকে টাকা পায় না।
ঢাকায় এসেছে ছয় মাস। আগে এলাকায় থেকে টিউশন করত। এখনও অনেকের কাছে টাকা পাওনা।
তূর্য টাকা চাইতে পারে নি, টাকাও উদ্ধার হয় নি। চাইলেও পেত কি না কে জানে।
একবার এলাকায় যাওয়ার পর ছেলেমেয়েরা তাকে কিছু উপহার দিল। খুশি হওয়ার কথা অথচ খুশি হওয়ার সুযোগ কই? তার পাওনা টাকা থেকেই তো উপহার।

যাহোক, ইদের সময় ঘনিয়ে আসে। কবে টিউশনির টাকা হাতে আসবে সে আশায় বসে আছে তূর্য। ইদ তিন তারিখ। হাতে সময় মাত্র দুই দিন।


ইংলিশ ভার্সনের স্টুডেন্টের বাসা থেকে পেল চার হাজার টাকা। সাথে শার্ট এবং প্যান্টের পিস উপহার। মনটা ভরে গেল তূর্য'র। সপ্তাহে পাঁচ দিন করে পড়াতে হয়। রাতের খাবারটাও দেওয়া হয়। মোটামুটি পুষিয়ে যায়।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পড়িয়ে পেল হাজারখানেক। বেশিদিন হয় নি অবশ্য। পনেরোদিন পড়িয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন। আর
মুগদার টিউশনি থেকে এল চার হাজার। সপ্তাহে চার দিন পড়াতে হয়।

১ তারিখ সকালে তূর্য গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সেখানে তার বৃদ্ধ মা-বাবা তার অপেক্ষায় বসে আছে। চিরচেনা গাঁয়ে ফিরে গিয়ে মাটির সোঁদা গন্ধ নিতে মন আনচান করছে তার।


২৬ বৈশাখ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
মালিবাগ, ঢাকা।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১১:০৬

সোনাগাজী বলেছেন:



ফিরে এসেছেন ঢাকায়?

০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১১:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হুম

২| ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১১:১৬

ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: কতো তূর্য ইদের দিন শূন্য পকেটে ১ পেকেট সিগেরেট খেয়ে পার করে দেয় :( শেষটা সুন্দর । টিউশনির ১০ হাজার টাকা না পেলে খারাপ লাগতো।

০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১১:১৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঘটনাবহুল মানবজীবন!

৩| ১০ ই মে, ২০২২ রাত ১২:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: তূর্যদের জন্য শুধু মায়া হয়। কিন্তু ওদের জন্য কখনও কিছু করা হয় না।

১০ ই মে, ২০২২ রাত ৩:৫৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কর্মফল।

৪| ১০ ই মে, ২০২২ রাত ১:৫৭

সোনাগাজী বলেছেন:



আপনি ঢাকায় ফিরে এসে কাজ করছেন?

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:৫১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: টিউশনি তিনটে আছে কিন্তু শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় কোচিং এর চাকরিটা আর নেই।

৫| ১০ ই মে, ২০২২ ভোর ৬:৫২

ইসিয়াক বলেছেন: যাক শেষ পর্যন্ত কিছুটা আলোর মুখ চোখে দেখা গেল।
তূর্যর জন্য শুভকামনা।

# তূর্য তো যাহোক ঈদের আগে টিউশনির টাকা পেল আমি কিন্তু এখনও পাই নি, আর ঈদ? :( । মাসের দশদিন হয়ে গেল। চাইতে গেলে লজ্জা লাগে।

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:৫০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তূর্য তো যাহোক ঈদের আগে টিউশনির টাকা পেল আমি কিন্তু এখনও পাই নি, আর ঈদ? টাকা দেওয়া নিয়ে টালবাহানা মনে হয় প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই চলে আসছে। শেষ নেই কোনো।

৬| ১০ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: জীবন ঘনিষ্ট গল্প!

অসংক্য তূর্য ছড়িয়ে আছে আমাদের আশেপাশে...
শুকনো মূখ, না খেয়েও লজ্জ্বা আর মানবোধের টানাটানিতে খেয়েছি বলা,
নিজের বোহেমিয়ান সময়ের কথা মনে পড়ে যায়!

প্রকৃত উন্নয়ন হতো, যদি সকল তূর্য নিশ্চিন্ত থাকতে পারতো।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, মৌলিক হিসেবে নিশ্চিত থাকতো।
শ্রমের ফলের নিশ্চয়তা নিয়ে টেনশন থাকতো না।
মেধা অনুসারে আপনাতেই পৌঁছে যাবার নিশ্চয়তা থাকতো- দলবাজি, তেলবাজি ছাড়া।

গল্পে +++

১০ ই মে, ২০২২ রাত ১০:২১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রকৃত উন্নয়ন হতো, যদি সকল তূর্য নিশ্চিন্ত থাকতে পারতো।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, মৌলিক হিসেবে নিশ্চিত থাকতো।
শ্রমের ফলের নিশ্চয়তা নিয়ে টেনশন থাকতো না।
মেধা অনুসারে আপনাতেই পৌঁছে যাবার নিশ্চয়তা থাকতো- দলবাজি, তেলবাজি ছাড়া।
সত্যিই তাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.