নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম পড়া প্রেমের উপন্যাস

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৭


গতকাল এক কাজে নীলক্ষেত গেলাম। হঠাৎ মনে হলো আমার ৩য় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রীটার জন্য একটা গল্পের বই কিনি। ওকে একবার বলেছিলাম পরীক্ষায় ভালো করলে বই কিনে দেব। কিন্তু কিনে দেওয়া হয়নি।

কী বই কেনা যায় ভাবছি।

ঈশপ, নাসির উদ্দিন হোজ্জা, না কি গোপাল ভাঁড়?
ও একবার বলেছিল রূপকথার গল্প পছন্দ।

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ”ঠাকুরমার ঝুলি” কিনে ফেললাম। ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিলাম আগে পড়েছে কি না।
ও জানাল, পড়েনি।

আমার বাইরের গল্প পড়া শুরু ৩য় শ্রেণিতেই। তবে ভালো পড়তে পারতাম না। বানান করে পড়তে হতো।
৪র্থ শ্রেণি থেকে ভালোভাবে পড়তে পারি। বছরের শুরুতে যখন নতুন বই দিত, সবার আগে গল্প-কবিতা পড়ে শেষ করতাম।বড়োবোনের বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতাও পড়ে ফেলতাম। পরিচিত কারও গল্পের বই পেলে বলে-কয়ে নিয়ে আসতাম।

এ তো গেল গল্প-কবিতা পড়া। প্রথম উপন্যাস পড়ি ১১ বছর বয়সে। তাও প্রেমের উপন্যাস।

নামটা “প্রথম চাওয়া” (না কি “প্রথম প্রেম” এখন আর মনে নেই)। লেখক মনীন্দ্রনাথ বৈরাগী। বিয়োগান্ত প্রেমের উপন্যাস।

পড়ার পর ছোট্ট বুকে যে হাহাকার জন্মেছিল, একমাস তার রেশ ছিল। জন্মের কান্না কেঁদেছিলাম। এমনকি এই পরিণত বয়সে এসেও যখন কাহিনীটা মনে পড়ে, অস্থির হয়ে যাই। যদিও এসব কাহিনী এখন ডালভাত।

এই বইটাতেই প্রথম রমনাপার্কের নাম পাই। এখন যখন মাঝেমধ্যে রমনাপার্কে যাই, গল্পের কথা মনে পড়ে।
বহু বছর আগে ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে এক প্রেমিক যুগলের এখানে দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু…

প্রেমিকের নাম ছিল মাহিন। নীলা নামের এক মেয়ের সাথে টেলিফোনে প্রেম হয়। তাদের দেখা হওয়ার কথা রমনাপার্কে। পছন্দের জামাও ঠিক করা হয়।

নীলার সাথে মাহিনের দেখা হয় বটে তবে কেউ কারও সাথে কথা বলে না। বরং বিরক্ত হয়। কারণ, তারা দুজন দুজনের পরিচিত। হালকা ঝামেলা হয়েছিল কোন সময়।

মাহিন নীলার কাছে তার নাম বলেছিল আকাশ। উপস্থিত মাহিন-নীলাই যে টেলিফোনে কথা বলা আকাশ আর নীলা; এটা ওদের জানা ছিল না।

যদি জামার দিকে খেয়াল করত দুজন, তাহলে হয়ত চিনতে পারত। কারণ, তারা তো বলে বেরিয়েছিল কে কী রঙের জামা পরবে।
ওদের এই যে দেখেও না চিনতে পারা, বা ভুল বোঝাবুঝি মর্মাহত করেছিল আমাকে।

নীলার বিয়ে ঠিক হয়। মাহিনের ছোটো বোন বিপাশা সম্পর্কের সকলই জানত। সে মাহিনকে বলে নীলাকে নিয়ে পালাতে।
মাহিন তাই করে।

এক ঝড়ো রাতে ওদের প্রথম দেখা হয়। কিন্তু চেহারা ভালো বোঝা যায় না। তবুও বিজলীর আলোয় যতটুকু দেখা যায়, তাতে দুজন তৃপ্ত।

নৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু মাঝ নদীতে এমন ঝড় শুরু হলো, নৌকা তলিয়ে যায়।
দুজনের কেউই ভালোভাবে সাঁতার জানে না।

মাহিন নীলাকে কাঁধে নিয়ে তবুও হাত পা ছুঁড়ে তীরে ভিড়তে চেষ্টা করে। একসময় অবশ্য তীরে আসতে সক্ষম হয়। কিন্তু মাহিন ততক্ষণে জ্ঞান হারায়।

যখন ভোরের আলো ফুটতে থাকে, আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয় নীলা। এ তো মাহিন।

মাহিন যদি বলত সে নীলাকে পছন্দ করে, এত কাহিনী করতে হতো না। মাহিনকে নীলার পরিবার মেনে নিত।

মাহিন বা আকাশ যে নামেই ডাকি না কেন, তার আর জ্ঞান ফেরে না। কেঁদে আকাশ বাতাস এক করে ফেলে নীলা। তার ডাকে লোকজন ছুটে আসে। নিশ্চিত হয় মাহিন আর ধরাধামে নেই।

এখানেই দাফন করা হয় মাহিনকে। জায়গাটার নাম শেরানপুর। নীলা একটা বকুলগাছ লাগায় মাহিনের কবরের উপর। তারপর অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। আর কোনদিন ফিরে আসে না।

খুব সরলভাবে লেখক বর্ণনা করেছেন। তাও হৃদয়বিদারক।

নীলা কোথায় যাবে; এটা ভাবতে ভাবতে নাকের জল, চোখের জল এক করে ফেলি।
বাড়ি যাওয়ার রাস্তা যে বন্ধ হয়ে গেছে তার।

একসময় সেই বকুলের চারা বড়ো হয়। গাছে ফুলও ধরে। কবর ভরে উঠে ফুলে ফুলে।
ছোটো ছেলেমেয়েরা সে ফুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে বিক্রি করে।

লেখক এভাবেই কাহিনী সমাপ্ত করেন। কিন্তু তবুও মনে হয় শেষ হয় না। অচেনা, অদেখা অথবা কল্পিত কোন চরিত্রের জন্য অনেক কষ্ট হয়।









মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২৪

স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: বকুল ফুলের গাছ দেখে একটা বইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। অনেক আগের বই। কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম। বইয়ের নাম বকুলবাসর, লেখক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। ওখানেও এক দম্পতি বকুল ফুলের গাছ লাগায়। যদিও সেভাবে রোমান্টিক উপন্যাস বলা যাবে না, তবে বইটা ভালো। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ভালো লাগে পড়তে।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পড়া হয়নি। পড়তে হবে।

রমনায় অনেক বকুল গাছ। লোকজন কুড়িয়ে মালা গেঁথে বিক্রি করে। কয়েকবার কুড়িয়েছিলাম আমিও।

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আমার প্রথম পড়া উপন্যাস "গভীর গোপন"

০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:১১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: লেখক কে?

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:০৯

জুল ভার্ন বলেছেন: বাহ চমৎকার লিখেছেন!

০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৮

রায়হান চৌঃ বলেছেন: কি জানি ভাই, শরৎচন্দ্রের "দত্তা" এই বুড়ো বয়সে ও মাথা থেকে ফেলতে পারিনি

০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৪৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: "দত্তা" পড়া হয়নি। ভালো হবে অবশ্যই। অল্প বয়সে শরৎচন্দ্রের “দেবদাস” পড়ে অস্থির হয়ে গেছিলাম।

৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৮

রায়হান চৌঃ বলেছেন: "দেবদাস" আমার মনে খুব একটা দাগ ফেলতে পারেনি, তবে শরৎচন্দ্রের "পথের দাবি ও দত্তা" অসাধরণ লিখ, আমার বিশ্বাস এদের প্রতিটি চরিত্র এ জীবনে ভুলতে পারবেন না :)

০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পথের দাবী পড়েছি। দারুণ উপন্যাস। গৃহদাহও ভালো লেগেছে। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে শ্রীকান্ত। চরিত্রহীনও খারাপ না।

৬| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫৩

রানার ব্লগ বলেছেন: আমার প্রথম পড়া প্রেমের উপন্যাসের নাম "মেম সাহেব" নিমাই ভট্টাচার্য এর লেখা !!!

০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বিখ্যাত উপন্যাস দিয়েই আপনার শুরু দেখা যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.