নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবাই আছে নিজ নিজ ধান্দায়

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:০৬


বাসার কাছেই একটা মনিহারি দোকান। কমবয়সী এক ছেলে বসে, মাঝেমধ্যে বসে মধ্য বয়সী এক লোক। একদিন কিছু একটা কিনতে দোকানটায় ঢুকলাম। দোকানে বসা ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক মহিলা বললেন, মামা, কী লাগবে?
আগে কখনও উনাকে দেখিনি। হঠাৎ আমাকে মামা ডাকায় বিরক্ত হলাম। এত বয়স্ক কি আদৌ হয়েছি? বললাম, আমি আপনার কোন কালের মামা?
মহিলা হাসলেন। বললেন, ছেলের বয়সী তো হবেন।
মহিলা আমার চেয়ে ৪-৫ বছরের বড় হতে পারেন বড়জোর। সে হিসেবে আমি উনার ছোট ভাই হতে পারি, ছেলের মতো কীভাবে হই?
যাহোক, বললাম, ছেলের মতো যেহেতু তাহলে বাবা ডাকুন।
তাই বলে সম্বোধন করলেন।
কথাপ্রসঙ্গে উনার ছেলের সম্পর্কে জানতে চাইলাম। উনি জানালেন উনার ছেলে এবার অনার্সে ভর্তি হবে।
আর আমি অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম ১৩ বছর আগে। বুঝতে পারছি না বয়স কি আমার বাড়েনি না কি?
প্রাণ- এ এক সপ্তাহ কাজ করার সময় একদিন এক ছেলে এল। তুমি সম্বোধন করে কথা বলছিল। আমি জানতাম এই ছেলে আমার চেয়ে কমপক্ষে আট বছরের ছোট হবে। তাও ওর কথা শুনছিলাম। আমার এক সহকর্মী বলল, ভাই কিন্তু আমাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড়। অনার্স-মাস্টার্স অনেক আগেই শেষ। ছেলেটা থতমত খেল। বলল, ভাইকে দেখে মনেই হয় না উনি বড়।
একবার এক কোচিং এ ক্লাস নিতে গেলাম। পরিচালনায় থাকা ম্যাডাম তুমি সম্বোধন করে বললেন, পড়াতে পারবে তো? আমি বললাম, ৬ বছর ধরে পড়াচ্ছি। পারার কথা তো। উনি ভাবছিলেন আমি মাত্র অনার্সে পড়ি। প্রসঙ্গত, ওই কোচিং এর বেশিরভাগ শিক্ষকই অনার্স পড়ুয়া ছিলেন।

যাহোক, দোকানের ওই মহিলার সঙ্গে অনেক কথা হলো। আমি কী করি, কোথায় থাকি; এসব আর কী।

অনেকদিন পর ওই দোকানে যেতেই ভদ্রমহিলার সঙ্গে ফের দেখা। চিনতে পারলেন না। আগের কথা মনে করিয়ে দিতেই চিনতে পারলেন। বললেন, উনার ছেলের জন্য যেন একটা-দুটো টিউশনি দেখি।


অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলাম। আমার আগের বাসার বাড়িওয়ালীর সঙ্গে দেখা হলো। অনেক কথাও হলো। আমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে জানতে চাইলেন। বললাম সব। তারপর আমাকে বললেন উনার মেয়ের জন্য যেন ভালো চাকরি দেখি। মজার ব্যাপার হলো, উনার মেয়ে পাশেই এক জায়গায় একটা চাকরি করেন। আমার চেয়ে ৫-৭ হাজার বেশি তার বেতন। বাসায় থেকে-খেয়েও পোষায় না। আমি তাকে কী করে চাকরি দিতে পারি? বললাম না কিছুই।

বাড়িওয়ালী টিউশনি দিতে বললেন। আমি বললাম, কার জন্য?
উনি জানালেন উনার নিজের জন্য।
আমি বুঝতে পারছিলাম না হাসব না কি কাঁদব। ষাটোর্ধ এক নারী, উনি না কি টিউশনি করাবেন। যার আবার ঢাকায় ৩ টা বাড়ি আছে।
উনি জানালেন সময় কাটানোর জন্য টিউশনি দরকার। হালকা হাত-খরচ এলেও মন্দ না। দেখব বলে কেটে পড়লাম।

মহিলার বাসায় কয়েকমাস ছিলাম। সিঙ্গেল একটা রুমে উঠার কথা ছিল আমার। অগ্রিম টাকা দিতে পারিনি বলে অন্য রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছিল।


চাকরি হারানোর পর এমন দুরবস্থা হয়েছিল যে বাড়ি চলে যাব ভাবছিলাম। তারপর ভাবলাম দেখি ঢাকায় কোনোমতে টিকে থাকা যায় কি না। মোড়ে মোড়ে পড়াতে চাই লিখে লিফলেট টাঙালাম। কোনো ফোন পাইনি। তারপর একটা টিউশন মিডিয়ায় যোগাযোগ করি। তারা একটা টিউশনি জুগাড় করে দেয়। মালিবাগ থেকে মুগদায় যেতাম পড়াতে। যাওয়া-আসা ১ ঘন্টা। পড়ানোয় ১ ঘন্টা। মাস শেষে পেতাম ২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০০ চলে যেত ভাড়াতেই।

তারপর একদিন একটা ফোন পেলাম টিউশনির। বেতন নিয়ে কথা হয়নি। মাস শেষে ৪ হাজার টাকা পেলাম। ওই মুহুর্তে ওই টাকাই অনেক। অফিস শেষে এই টিউশনিটা এখনও করাই। তবে আমি যে ঠকে যাচ্ছি তখন না বুঝলেও এখন বুঝি। ইংলিশ ভার্সনের একটা ৩য় শ্রেণির বাচ্চা সপ্তাহে ৬-৭ দিন পড়িয়ে মাস শেষে ৪০০০ পাই। কোনো কোনো মাসে তারও কম। টিউশনিটা দরকার তাই ছাড়তেও পারি না।

ঢাকা শহরে টিউশনি জুগানোও কঠিন, টেকানো তো আরও কঠিন। কত বুয়েট-মেডিক্যাল-ঢাবির শিক্ষার্থী। এদের ভিড়ে অন্যান্য ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সুযোগই পায় না।
আমি যেখানেই যাই, অনেকেই বলে টিউশনি জুগাড় করে দেন। ওদের বলতেও পারি না ঢাকায় চলতে যে খরচ, আমার নিজেরই আরও টিউশনি দরকার।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:২৯

মৌন পাঠক বলেছেন: আমি টিউশনি পাইনি,
টিউশনে যা বেচি
সেই জ্ঞান
আধার পথে হেটেছি
ধান্দা করেছি,
বেচেছি
কামাই করেছি
উড়াইছি
ধরা খাইছি
পলাইছি

এখন এই পথ থেকে অবসরে

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৩২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমি আমার জীবনের মূল্যবান অনেক সময় টিউশনির পেছনে ব্যয় করেছি। একটা-দুটো টিউশনি রেখে ভবিষ্যতের ভাবনা মাথায় রাখা উচিত। টিউশনির ভবিষ্যৎ নেই।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৩৩

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: অনেকের বয়স ঠিক বুঝা যায় না আপনিও হয়তো তেমন। জীবনের প্রতিটি ধাপেই যুদ্ধ, এক যুদ্ধে জয়ী হয়ে সামনে যাবেন সেখানে দেখবেন আরও বড় যুদ্ধ, যুদ্ধ করতে করতেই এগিয়ে যেতে হয়।
শুভ কামনা আপনার জন্য।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৩৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন। আশা করি ভালো আছেন।

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৪৯

কামাল১৮ বলেছেন: মানুষ চিনতে হলে তার মানসিকতা বুঝতে হবে।তবেই প্রকৃত মানষ চেনা যাবে।যেকোন মানুষেরই ব্যবহার ভালো হতে পারে। পুরনো এই সব কথায় অনেক ভুলবাল আছে।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৫১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মানুষ চেনা এত সহজ?

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:১০

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: টিউশনি করাটাই অনেক কষ্টের , এমনিতেই সম্মানি কম আবার বাবা মায়ের অনেক চাহিদা । এইসব এড়িয়ে তবুও করতে হয় এদিকে আমার এক ক্লাসমেট এত এত টিউশনি করায় যে এখন তার একখানা ঝকঝকে বাইক আছে !! আসলে এই টিউশনি জগতে সবার ভাগ্যে ভালো জোটে না !!


আবার দেখেন আমার যে বন্ধুটির এই চট্টগ্রাম শহরে তিনটি বাড়ি আছে সে টিউশনির জন্য ছোঁক ছোঁক করে , আমিও ভাবি ওর টিউশনির কী দরকার ! মানে আমাদের একটা হাতছাড়া হয়ে গেল না !!

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:০১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আবার দেখেন আমার যে বন্ধুটির এই চট্টগ্রাম শহরে তিনটি বাড়ি আছে সে টিউশনির জন্য ছোঁক ছোঁক করে , আমিও ভাবি ওর টিউশনির কী দরকার ! মানে আমাদের একটা হাতছাড়া হয়ে গেল না! আমার এক বন্ধু বড় সরকারি চাকরি করে। প্রাইমেরিতে হলেও করবে না, তবুও প্রাইমেরিতে পরীক্ষা দিল; হলোও। অথচ যোগদান করল না। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় বলতে পারলাম না যোগদান করবে না তো পরীক্ষা দেওয়ার কী দরকার ছিল।

৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৩৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: রূপক বিধৌত সাধু,




পৃথিবীটাই চলছে ধান্ধাবাজীর উপর। নিজ নিজ ধান্ধায় না জড়ালে যে সবার পেছনে পড়ে থাকতে হবে!
জীবনের টুকরো-টাকরা বাস্তবতার সাথে সাথে উদাহরণগুলো সুন্দর হয়েছে ।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:০৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নিজ নিজ ধান্ধায় না জড়ালে যে সবার পেছনে পড়ে থাকতে হবে! শতভাগ সহমত।

৬| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:১৭

বিটপি বলেছেন: টিউশনি কিন্তু মজার একটা কাজ। ভেবে দেখুন, ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে,পরীক্ষায় পাশ করতে হলে আপনাকে তো পড়তেই হয়, সেই পড়া জিনিসই আরেকজনকে শিখিয়ে যদি কিছু ইনকাম হয়, তবে খারাপ কি?

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ২-৩ টা পড়ানো ঠিক আছে। কিন্তু অনেকে দিনরাত টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার বারোটা বাজিয়ে ফেলে। এটা অনুচিত।

৭| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: অতীত ভুলে যাবেন না। এবং মানুষের প্রতি সহনশীল থাকবেন।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমি সবসময়ই সবার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলাম।

৮| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:০২

কিরকুট বলেছেন: আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কি কমেন্ট করবো। নির্বাক থাকাটাই শ্রেয়।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আরে বলে ফেলুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.