নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম

রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কৌশল

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪১

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ: অধিকাংশই বিষ (কীটনাশক) যুক্ত। কারণ কীটনাশক ব্যবহারের পর সবজি সংগ্রহের যে সময় বেধে দেয়া আছে তা কৃষক মেনে চলে না। আবার অজ্ঞতা কারণে ভুল ও নিষিদ্ধ কীটনাশক কৃষক ব্যবহার করে থাকে। কাজেই এভাবে অধিক পরিমাণে বিষযুক্ত সবজি খাওয়ার ফলে আবার নতুন নতুন রোগও সৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে কীট পতঙ্গের আক্রমণের কারণে কৃষক জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকে। জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে প্রধানত আর্থিক ক্ষতি, পরিবেশগত ক্ষতি ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হয়।
বর্তমানে একটি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভস (এস ডি আই) অন্যান্য উন্নয়নশীল কর্মসূচির পাশাপাশি ঢাকার অদুরে ধামরাই উপজেলায় কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়েছিল সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নে। এর সফলতার পর প্রকল্প-২ শুরু হয় ধামরাই উপজেলায়। প্রকল্প ২টিতেই আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকে এস এফ)। এস ডি আই ক্ষতিকর কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ও রোয়াইল- এ দুইটি ক্লাস্টারের ২০০ জন চাষীকে নিয়মত প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এক্ষেত্রে প্রজেক্টের কৃষি সমন্বয়কারী কৃষিবিদ এস এম আওলাদ হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। প্রশিক্ষণের ফলে কৃষকরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। তারা এখন উন্নত কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করাসহ উচ্চ মূল্যে তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা মনে করেন, এই বিষমুক্ত সবজি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা সম্ভব। তাদেরকে এ স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে এস ডি আই। অনেক বেশি প্রতিশ্র“তিশীল ও আধুনিক। বর্তমানে তারা আইপিএম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি জৈব বালাইনাশকের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবজি উৎপাদন করছে।

প্রক্রিয়াটি যেভাবে কাজ করে
পোকার জীবন চক্রে সাধারণত চারটি ধাপ আছে। ১ম ধাপ – পূর্ণাঙ্গ পোকা, ২য় ধাপ – ডিম, ৩য় ধাপ- লার্ভা(কীড়া) ও ৪র্থ ধাপ-পিউপা (পুত্তুলী)। ফসলের ক্ষতির জন্য প্রত্যেকটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধাপগুলোকে সঠিক সময়ে বাধাগ্রস্থ করতে পারলে ফসলের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

১ম ধাপ – পূর্ণাঙ্গ পোকা: পূর্ণাঙ্গ পোকা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য কৃষক জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করে। এর ফলে কিছু পোকা কীটনাশকের ক্রিয়ায় মারা যায়। কিছু সংখ্যক পোকা সহনশীল হওয়ার কারণে কীটনাশক প্রয়োগ করা সত্বেও মারা যায় না। আবার কিছু সংখ্যক পোকা কীটনাশকের গন্ধ বুঝতে পেরে অন্য জমিতে চলে যায়। বিষক্রিয়া শেষ হলে তারা আবার পূর্বের জমিতে ফিরে এসে সবজি র ক্ষতি করে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই এসডিআই-এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকেরা নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে পুর্ণাঙ্গ পুরুষ পোকা ধ্বংস করছে। এতে স্ত্রী পোকার হরমোনের গন্ধ সম্বলিত রাসয়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এর গন্ধেই পুর্ণাঙ্গ পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে পাত্রের মধ্যে আসে ও পাত্রের মধ্যে রাখা সাবান পানিতে পড়ে মারা যায়। প্রতি তিন শতাংশ জমির জন্য একটি সেক্স ফেরোমেন ফাঁদই যথেষ্ঠ। জমিতে প্রতি ১০-১২ মিটার দূরে দূরে বর্গাকারে সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ স্থাপন করতে হয়। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ সবজির বাড়ন্ত অংশ (ফুল,ফল ও ডগা) বরাবর শক্ত ভাবে বেঁধে দেয়া হয়। গাছের উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে ফাঁদের উচ্চতাও বাড়াতে হয়। কুমড়া জাতীয় সবজির প্রধান শত্র“ই হলো মাছি পোকা। লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, ঝিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, উচ্ছে, ধুন্দল ইত্যাদি ফসলের মাছি পোকা দমনে অত্যন্ত কার্যকরী হচ্ছে সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ। এছাড়াও বেগুনের ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা এ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে সফলতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

২য় ধাপ – ডিম: সাধারণত উর্বর ডিম থেকে পোকার কীড়ার জন্ম হয়। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা সাধারণত উদ্ভিদের নিরাপদ স্থানে বিশেষ করে পাতার নিচে ডিম পাড়ে। কিন্তু কৃষক যে কীটনাশক দেয় তা পরিমাণে বেশি হলেও সাধারণত পাতার নিচে পৌঁছায় না। এভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কীটনাশকের মাধ্যমে ডিম ধ্বংস হয় না। আবার কৃষক হাত দিয়ে পাতা সংগ্রহ করে ডিম ধ্বংস করতে চাইলেও তা সকল ক্ষেত্রে সব সময়ই সম্ভব হয় না। ডিম থেকে যে লার্ভা (কীড়া) বের হয় তা ফসলের প্রচুর ক্ষতি করে। কাজেই ডিম ধ্বংস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাইকোগ্রামা একধরনের শত্রু পোকার ডিম ধ্বংসকারী পরজীবী পোকা। এ পোকা জমিতে ছেড়ে দিলে তারা জমি থেকে নিজ উদ্যোগে শত্রু পোকার ডিম খেয়ে সেখানে নিজে ডিম পেড়ে নিজের বংশ বৃদ্ধি করে। ফলে নতুন ভাবে কোন কীড়া জন্মাতে পারে না। এভাবে ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে।

৩য় ধাপ – কীড়া / লার্ভা: ডিম থেকে যে লার্ভা (কীড়া) বের হয় তা ফসলের প্রচুর ক্ষতি করে। ব্রাকন হলো একধরনের শত্রু পোকার কীড়া/ লার্ভা ধ্বংসকারী পরজীবী পোকা যা লার্ভা খেয়ে বেঁচে থাকে। জমিতে ব্রাকন পোকা ছেড়ে দিলে তারা জমি থেকে খুঁজে খুঁজে লার্ভা খেয়ে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।

৪র্থ ধাপ – পুত্তলী: পোকার কীড়া আক্রান্ত সবজি দ্রূত পচে যায় এবং গাছ হতে মাটিতে ঝরে পড়ে। উক্ত সবজিতে লুকিয়ে থাকা পরিপূর্ণ কীড়া অল্প সময়ের মধ্যেই পুত্তুলি ও পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়ে নতুন ভাবে আক্রমণ শুরু করতে পারে। পুত্তলী সাধারণত মাটির নিচে, ফসলের অবশিষ্টাংশের স্তুপের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এদেরকে ধ্বংস করার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ প্রয়োজন। ভালভাবে জমি চাষ দিয়ে রেখে দিলে পাখি পুত্তলী খেয়ে ফেলে। আবার রোদের উচ্চ তাপেও মারা যায়। যেহেতু এ পোকার কীড়াসমূহ মাটির ১০-১২ সেন্টিমিটার গভীরে পুত্তুলিতে পরিণত হয় সেহেতু আক্রান্ত ফল ও ফসলের অবশিস্টাংশ মাটিতে কমপক্ষে ৩০ সেন্টিমিটার গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হয় অথবা হাত বা পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হয়।
সুতরাং এভাবে পোকার বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেমন সম্ভব হয়েছে ঠিক তেমন ভাবে আর্থিক ক্ষতি, পরিবেশগত ক্ষতি ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি থেকে অনেকাংশেই পরিত্রাণ পেয়েছে বলে দাবি করছে এস ডি আই ও পিকে এস এফ। কৃষকদের এসকল কর্মসূচি দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক কৃষকেরা ভিড় জমাচ্ছে ও অভিজ্ঞতা নিচ্ছে। এস ডি আই ও পিকে এস এফ আগামীতে এ প্রকল্পটিকে আরও বৃহৎ আকারে করার পরিকল্পনা করছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.