![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শরীফ ইকবাল রাসেল: নরসিংদীতে দিদার আলমের কোয়েল পাখির খামার এনে দিয়েছে এলাকার শত পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে দিদার আলম শুরু করেন কোয়েল পাখি পালন। ১২ বছরের ব্যবধানে এ খামার দিয়েই তিনি এখন কোটিপতি। শুধু তা-ই নয়, তার এ কোয়েল পাখির খামার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এলাকার শতাধিক পরিবারের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে।
নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার চরনগরদী বাজারের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ছোট্ট একটি গ্রামের নাম পলাশেরচর। এ গ্রামেরই আত্মপ্রত্যয়ী এক যুবকের নাম দিদার আলম। বাড়ির পাশের চরনগরদী বাজারে একটি ওষুধের দোকান, যা দিদার আলম নিজেই পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সেই থেকে দিদার আলম ডাক্তার হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন।
১২ বছর আগের কথা। একসময় কয়েনের (ধাতব মুদ্রা) অভাব দেখা দেয়। ওষুধের দোকানে এ কয়েনের জন্য বেচাকেনায় বিঘ্ন ঘটে। সে সময় দিদারের সঙ্গে পরিচয় হয় নরসিংদী সদর উপজেলার দগরিয়া গ্রামের রিয়াজ নামের এক যুবকের। পরিচয়ের সূত্র ধরে এ সময় রিয়াজের কাছ থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দিদার ভাঙতি কয়েন সংগ্রহ করেন। এভাবেই রিয়াজের সঙ্গে দিদারের সখ্য গড়ে ওঠে। কথা প্রসঙ্গে রিয়াজ দিদারকে জানান, কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করে এ কয়েন পাওয়া যায়। দিদার রিয়াজের কাছ থেকে কোয়েল পালনের নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। মোটামুটি লাভজনক হওয়ায় দিদার আলমের ইচ্ছা জাগে কোয়েল পালনের। এছাড়া দিদার আলমের ছেলে হৃদয় তার মামার বাড়ি শিবপুর থেকে দুটি কোয়েল পাখির বাচ্চা এনে লালন-পালন করতে দেখে আগ্রহটা আরও বেড়ে ওঠে। এরপর সদর উপজেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান এবায়েদ হোসেনের কাছ থেকে মাত্র ৬০০ কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনে সীমিত আকারে পালন শুরু করেন। এ সময় খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তার খামার থেকে আহরিত ডিম এলাকার বেকার যুবকদের মাধ্যমে গ্রামের হাটে-বাজারে বিক্রি শুরু করেন। গুণে, মানে ও পুষ্টিতে ভরপুর এ ডিমের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রথম বছরেই কোয়েল পাখির এই খামার করে ব্যাপক লাভের মুখ দেখেন দিদার। এরপর আস্তে আস্তে সম্প্রসারিত হতে থাকে দিদারের কোয়েল পাখির খামারটি। তার এ খামার এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। এতে আশপাশের লোকজনের মধ্যে কোয়েল পালনের আগ্রহ বাড়ে। পলাশেরচরের লোকনাথ, পারভীন বেগম, শাহিদা বেগম, মাঝেরচর গ্রামের নারগিস বেগম, মান্নান মিয়া, বাড়ারচর গ্রামের কামাল হোসেন, ফিরোজ মিয়াসহ অন্যদের প্রায় ২০ থেকে ২৫টি খামার গড়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দিদার বাচ্চা ফোটানোর জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে একটি যন্ত্র (ইনকিউভেটর) কেনেন। এ যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো শুরু করেন এবং আশপাশের এলাকায় বাচ্চা বিক্রি শুরু করেন। এভাবেই দিন দিন তার এ ব্যবসার প্রসার হতে থাকে।
২০০৭ সালে বার্ডফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে খামারটি একপর্যায়ে ধক্ষংসের উপক্রম হয়। এ অবস্থায় সরকার তাকে ৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। এরপর শুরু হয় নতুন উদ্যমে কোয়েল পালন। সংগ্রহ করেন চারটি বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্র (ইনকিউভেটর), যা দিয়ে একসঙ্গে ২২ হাজার বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব। চারটি মেশিন দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে তিনি সারা দেশে বিক্রি করতে থাকেন। ডিম বিক্রির পাশাপাশি বাচ্চা বিক্রিতেও সাড়া জাগান তিনি।
দিদার আলম জানান, অল্প পুঁজি, কম ঝুঁকি, কম সময় এবং খুব অল্প স্থানেই এ পাখি পালন করা যায়। যেমন ১ বর্গফুট জায়গায় ১টি মুরগি পালন করা যায় আর কোয়েল পাখি পালন করা যায় ৬টি। ঠা-া ছাড়া তেমন কোনো রোগ কোয়েল পাখির বেলায় দেখা যায় না।
একটি পাখি দৈনিক মাত্র ১ টাকা ২০ পয়সার খাবার খায় আর ১টি ডিম বিক্রি হয় ২ টাকায়, পাইকারি হিসেবে। এ হিসাবে কোনো পরিবার যদি মাত্র ২ হাজার কোয়েল পাখি পালন করে, তাহলে সব খরচ বাদ দিয়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা আয় করা সম্ভব।
দিদার আলম কথা প্রসঙ্গে আরও জানান, আমি ১২ বছর ধরে কোয়েল পাখির খামার দিয়ে কোটি টাকা ব্যয় করে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছি। বাড়িটির ছাদেই রয়েছে আমার এ পাখির খামার। আজ আমার একটি খামারেই রয়েছে ১০ হাজারের মতো পাখি। পাশের গ্রামের আরেকটি খামারে রয়েছে আরও ১০ হাজার পাখি। আমার বাড়ির খামার থেকে এখন দৈনিক ৮ থেকে ৯ হাজার ডিম পাওয়া যায়। এ ডিম প্রতিদিনই ২০ থেকে ২৫ জন হকার আমার বাড়ি থেকে নিয়ে সিদ্ধ করে হাটে-বাজারে বিক্রি করেন। অন্য খামারের ডিম দিয়ে আমি বাচ্চা ফোটাই। আমাদের উৎপাদিত কোয়েল পাখির বাচ্চা ৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করে থাকি। এছাড়া একটি বাচ্চা ২ মাস বয়স থেকে ডিম দেয়া শুরু করে একাধারে ডিম দেয় ১৮ মাস পর্যন্ত। এরপর থেকে পাখির বয়স হয়ে গেলে ডিমের পরিমাণ কমতে থাকলে প্রতিটি পাখি পাইকারি দরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে সিলেট এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করে থাকি। আর আমার কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি খামার গড়ে উঠেছে।
দিদার আলমের বাড়ির খামারের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন তার সহধর্মিণী আনোয়ারা খানম ডলি। তার পাশাপাশি খামারের কাজের জন্য আরও প্রায় ৫ থেকে ৭ জন লোক রয়েছেন, যাদের ডলিই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
ডলি জানান, দিদার আলম দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের কাজ করেন, আর আমি নিজেই লোকজন নিয়ে বাড়ির খামারটি পরিচালনা করে থাকি। তিনি আরও বলেন, কোয়েল পাখির উচ্ছিষ্ট বিষ্ঠা যেন এলাকার পরিবেশ নষ্ট না করে, সেজন্য গ্রামীণ শক্তির সহায়তায় বায়োগ্যাসের একটি প্রকল্প তৈরি করেন। এ গ্যাস দিয়েই পরিবারের সব রান্নার কাজ পরিচালনা করা হয়। যার ফলে পরিবেশ অধিদফতর থেকে একাধিক পুরস্কার লাভ করেন দিদার আলম। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রাণিসম্পদ মেলায় একাধিক পুরস্কার লাভ করে এ কোয়েল পালন প্রকল্পটি।
দিদার আলম আরও বলেন, বর্তমানে আমি কোয়েল পাখি, ডিম ও বাচ্চার মূল্য বাবদ ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা বিভিন্ন লোকজনের কাছে পাওনা রয়েছি। খামারের মাধ্যমে সরকার যদি আমাকে সুবিধা দিয়ে বড় ধরনের কোনো ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমি আরও অনেক বড় পরিসরে এ খামারটি পরিচালনার পাশাপাশি বাচ্চা উৎপাদন করে চাহিদা পূরণে চেষ্টা করব। এতে একদিকে বেকার সমস্যা দূর হবে; অন্যদিকে ডিম, পুষ্টি ও মাংসের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দিদার আলমের কাছ কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে তৈরি আরেকটি খামারের মালিক লোকনাথ বলেন, আমরা দেখেছি দিদার এ কোয়েল পাখির খামার করে ব্যাপক উন্নতি করেছে। তাই আমিও চিন্তা করেছি আমার এক ছেলে নরসিংদী সরকারি কলেজে বিএ লেখাপড়া করছে, সে যেন চাকরি বা বিদেশে যাওয়ার চিন্তা না করে। তাকে এ কোয়েল পালনেই নিযুক্ত করব বলে এ খামার তৈরি করেছি। আর এ কোয়েল পালন করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের বেকার সমস্যা দূর করা সম্ভবÑ যার উজ্জ্বল প্রমাণ এ ডাক্তার দিদার আলম। এ বিষয়ে স্থানীয় পলাশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. সুবোধ কুমার দাস বলেন, দিদার ডাক্তারের কোয়েল পাখির খামারটি এলাকায় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেখে এখন এলাকায় কোয়েল পালনের ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আমরা খামারটি নিয়মিত পরিদর্শন করে থাকি।
দিদার আলমের এ কোয়েল পাখির খামার সম্পর্কে নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, আমরা দিদার আলমের কোয়েল পাখির খামার দেখে মুগ্ধ হয়েছি। দিদার অসুস্থ মানুষের সেবাদানের পাশাপাশি এমন একটি সুন্দর প্রকল্প গড়ে দৃষ্টান্ত হয়েছেন। আমরা তার এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিকবার পুরস্কৃত করেছি। তার এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এক সময় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হবেন তিনি।
মূল লেখা: দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, ১৮ মার্চ, ২০১৪
লিংক:লিংক:
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৯
বিষক্ষয় বলেছেন: বাংলাদেশে পোল্ট্রির শিল্পের শুরু হয় গাজিপুরের সাতাইশ গ্রামে একটি প্রকল্প দিয়ে ১৯৮৭/১৯৮৮ এর দিকে ..............এই প্রকল্প অনেকবার দেখতে গিয়েছি
৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০০
স্বপ্নবান বলেছেন: ওনার ফোন নম্বরটা কি পাওয়া যাবে? দিদার আলমের?
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:১৭
রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম বলেছেন: দিদার ভাই, ০১৭১৬২৯৩০০৯
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩
বিষক্ষয় বলেছেন: ভাই বেশি বইলেন না ..................বার্ড ফ্লুর কথা বলে পোল্ট্রির মত শেষ করে দিবে...................