![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইয়াকুব আলী চৌগাছা (যশোর): কঠোর পরিশ্রম করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন যশোরের চৌগাছার জগদীশপুর মিয়া পরিবারের সন্তান তাহাদুদ দস্তগীর। তার মেধা আর শ্রম কাজে লাগিয়ে পেয়ারা, কুল, আম, লিচু চাষ করে তিনি এখন কোটিপতি হয়েছেন।
কৃষক তাহাদুদ দস্তগীরকে অনুসরণ করে ওই গ্রামের মাঠের পর মাঠ পেয়ারা চাষ শুরু হয়েছে। চলতি বছর চৌগাছায় প্রায় এক শ' হেক্টর জমিতে উন্নত থাই সেভেন জাতের পেয়ারার চাষ হয়েছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার জগদীশপুর গ্রামের মিয়া পরিবারের ডাঃ এহিয়া হোসেনের সেজো ছেলে তাহাদুদ দস্তগীর। তার ছোট ভাই ইমদাদুদ দস্তগীর এমু বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব (পুলিশ) কর্মরত আছেন।
তাহাদুদ দস্তগীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেননি। লেখাপড়া শেষ করে মা আর মাটির টানে ফিরেন গ্রামের বাড়ি জগদীশপুরে। তিনি চলতি বছর থাই সেভেন জাতের পেয়ারার চাষ করে ব্যাপক সাফল্যে অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি ৫০ বিঘা জমিতে আম, পাঁচ বিঘায় কুল ও পাঁচ বিঘায় লিচু চাষ করে এ অঞ্চলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সরেজমিন জগদীশপুরের কৃষক তাহাদুদ দস্তগীরের পেয়ারা বাগানে দেখা গেছে, প্রতিটি গাছেই পেয়ারা ঝুলছে। বাগানে ১০ জন শ্রমিক পরিচর্জায় ব্যস্ত সময় পার করছে। চলতি বছর তিনি মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পেয়ারা বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা, আম বিক্রি করে ৩৫ লাখ টাকা, লিচু বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা, কুল বিক্রি করে তিন লাখ টাকা- এ বছর সর্বমোট ৬৩ লাখ টাকা আয় করেছেন। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আর বাজার দর বেশি হলে তার আয় প্রায় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত বলে জানিয়েছেন তাহাদুদ দস্তগীর।
তিনি আরো জানান, পেয়ারা চাষ খুব লাভজনক। অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে পেয়ারা চাষে পরিশ্রম কম, তাই দিন দিন এ অঞ্চলের চাষিরা পেয়ারা চাষে ঝুঁকে পড়ছে।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের এলাকার মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে থাই থ্রি ও থাই সেভেন জাতের পেয়ারার চাষ বেশি হচ্ছে। মূলত এ জাতের পেয়ারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং আকারে বড় হয়। ফাল্গুন চৈত্র মাসে পেয়ারার চারা রোপন করা হয়। এর আগে জমিতে জৈব অথবা রাসায়নিক সার দিয়ে তৈরী করে নিতে হয়। থাই জাতের পেয়ারার চারা প্রথম দিকে আমাদের এলাকায় না পেয়ে এই চারা রাজশাহী থেকে সংগ্রহ করা হত। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে রাহশাহী থেকে আনা চারা লাগিয়ে চাষিরা বেশ অর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তাই নিজেরাই পুরানো গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে সেখান থেকেই চারা তৈরি করা হচ্ছে।
জানা যায়, এক বিঘা জমিতে ২০০-২২০টি চারা লাগাতে হয়। জমিতে চারা রোপনের পর সঠিক পরিচর্যা করলে মাত্র চার মাসের মাথায় গাছে ফুল আসে এবং ফলে ভরে যায়। পোকা মাকড়, পাখির উপদ্রুপ সর্বোপরি আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এক বিঘা জমিতে বছর শেষে তিন থেকে চার লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করা যায়। তাতে খরচ বাদ দিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ হয়। পেয়ারার ভরা মৌসুমে এক কেজি পেয়ারা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। মৌসুম ব্যতিত বছরের প্রায় বার মাসই পেয়ারা উঠানো যায়। এছাড়া লিচু, কুল ও আম চাষ করে এ উপজেলায় সফল চাষী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।
তাহাদুদ দস্তগীরের মত এই গ্রামে আবু সাঈদ মুকুট ১৪ বিঘা, নাজমুল হুদা ১১ বিঘা, জালাল উদ্দিন পাঁচ বিঘা, সাহাবুদ্দিন চার বিঘা জমিতে পেয়ারার চাষ করেছেন। এ ছাড়া উপজেলার স্বরুপপদাহ, বেলেমাঠ, তারনিবাস, টেংগুরপুর, জিওলগাড়ি, বাঘারদাড়ি, আন্দারকোটা, হাজরাখানা, বাটকেমারী, পাতিবিলা গ্রাম এলাকার বিস্তৃর্ণ মাঠে চাষ হচ্ছে উন্নত জাতের এই পেয়ারা। প্রকৃত চাষিদের সাথে সাথে উপজেলার বেকার শিক্ষিত যুবকরাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে এই ভাবে পেয়ারার বাগান গড়ে তুলেছে। তারা এখন বেশ স্বাবলম্বী।
চাষিরা জানান, তাদের উৎপাদিত পেয়ারা বর্তমানে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি করা হচ্ছে। ভরা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এখানে ছুটে আসেন। তারা কখনো বাগান ধরে আবার কখনো পাইকারী হারে পেয়ারা কিনে নিয়ে যায়। এ ছাড়া অনেক সময় চাষিরা পেয়ারা তোলার পর কার্টুন করে পিকআপ অথবা নৈশ কোচের মাধ্যমে ঢাকাতে নিয়ে যায়।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, আমি জগদীশপুর ইউনিয়নের সব চাষিদের তদারকি করে থাকি। বিশেষ করে জগদীশপুর গ্রামের তাহাদুদ দস্তগীরের ফলবাগানসহ অন্যান্য চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করি। তাই এ সাফল্যতা অর্জন হয়েছে বলে মনে করি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, চৌগাছা এলাকায় ব্যাপক ভাবে থাই জাতের পেয়ারারসহ আম, কুল, লিচু চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে এ চাষিরা চাপাইনবাবগজ্ঞকেও হারি মানিয়েছে বলে মনে করি।
সূত্র: দৈনিক নয়া দিগন্ত, ০৯ অক্টোবর, ২০১৫
লিংক:
©somewhere in net ltd.