নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পর্বতের চূড়া বেয়ে উঠে গেছে আমার বৃক্ষের মগডাল

রায়ান নূর

কবি ও কথাসাহিত্যিক

রায়ান নূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহমদ ফারাজ এর কবিতা (Ahmad Faraz's poem in Bengali )

০২ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

পাকিস্তানি উর্দু কবি আহমদ ফারাজ এর কবিতা

ভূমিকা ও অনুবাদ ― রায়ান নূর



কবি পরিচিতিঃ



আহমদ ফারাজ(1931-2008) পাকিস্তানের বিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান কবি ৷ কবিতা-বিচারে তাকে প্রেম ও দ্রোহের কবি বলা যায় ৷ তিনি ব্যাপক নন্দিত ছিলেন তরুন ও জনসাধারণের কাছে ৷

পাকিস্তানী সেনাশাসক জিয়াউল হকের সময় একটি সমালোচনামূলক কবিতা পাঠের জন্য তিনি অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হন এবং পরে ছয় বছরের জন্য নির্বাসনদণ্ড লাভ করেন ৷ এই সময়কালে রচিত ‘মহাসরাহ(প্রতিরোধ)’ তার বিখ্যাত কবিতা (মাসিক উত্তরাধিকার, ফাল্গুনসংখ্যা-2014,বাংলা একাডেমি) ৷ যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন এবং তিনি বাঙালীর পক্ষে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছেন ৷

নিম্নোক্ত কবিতাটির তথ্যসূত্র নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি বই দূর্লভ বলে ৷ তবে দুটি মুশায়রায়(সাহিত্যসভা) তিনি এই কবিতাকে ‘এ্যায়ছা নেহি হুনে দেনা(রুখে দাঁড়াও)’ ও ‘এ্যায় মেরে সারে লোগো (হে আমার দেশবাসী)’ নামে পাঠ করেছেন ৷ প্রথম নামে তিনি কবিতাটির প্রথম দুটি স্তবক বাদ দিয়ে পড়েছেন ৷ দ্বিতীয় নামে এর মূল নির্দেশ করেছেন ‘সিন ছে হাভালি’ কবিতাটি পঠনে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি তার মহাসরাহ(প্রতিরোধ) কবিতার পূর্বে রচিত কবিতা ৷ অনুবাদ সূত্রে বলা যায় এটিই তার সমালোচনামূলক সেই কবিতা যার জন্য তিনি গ্রেফতার ও নির্বাসিত হয়েছিলেন ৷ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হল দর্দে আসব,শবে খুন,বে আওয়াজ গালি কুঁছ মেঁ,নেয়াফত ইত্যাদি ৷ তার মৃত্যুর পর পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে তাকে মরনোত্তর ‘হেলাল-ই-পাকিস্তান’ খেতাব প্রদান করা হয় ৷



রুখে দাঁড়াও

মূলঃ আহমদ ফারাজ

অনুবাদঃ রায়ান নূর





আমার দ্বিতীয় বাহুতে এখন

উন্মুক্ত তরবারী তার

আমার বিবেক তো বিদীর্ণ প্রত্যুষেই!

আমার সিক্ত হৃদয়ে

তাক করা তার বন্দুকের নল

আমার ধমনীর রক্ত নিঃশেষিত প্রত্যুষেই ৷



আগুন দিতে এসেছে সে পুনরায়

আমার পূর্বের সেই গলিতে

আর আমার শহরে বারুদ ঢালছে এখনও ৷

আবারও―

‘তুমি কে?’

‘আমি কে?’ প্রশ্ন করে পুনশ্চঃ

আর চলে সেই পুরনো ‘আমি ও তুমি’ বাহাস !



আমার বস্তিতে জন্মেছে

সে যে আমারই দুশমন,

পোষা শাবকেরা ধমক দেয় তার

ভাঙাচোঙে আমাকে বিড়ালের মতো !

আর

পুরনো কথাগুলো দাউদাউ করে জ্বলে

হৃদয়ে থেকে থেকে পণীর মত

বুকে বিঁধে থাকে যেন এটি আমারই খঞ্জর ৷



আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়ায় তার

দিকপ্রসারী প্রাচীর আর শূন্য ময়দানে

দম্ভ-ধীশক্তি তার হয়েছে ঘাতকের মশাল ,

দেশপ্রেমের বুলি তার এখন ক্ষমতার প্রবচন

খোদার নাম-মুখে করছে সে নিত্য ব্যভিচার ৷



তোমার মতো অনুচর আগেও এসেছিল এখানে

সূর্যোদয়ে এসে সূর্যাস্তে পড়েছিল ফকিরের বেশ,

তুমিও প্রতিজ্ঞাভঙ্গে রাজ্যশাসনে হারিয়েছ বৈধতা

বিবেককে প্রশ্ন করো

আয়নায় দেখো একবার নিজেকে ?



তুমিই,

আমাদের কাছে দুহাতে দোয়া ভিক্ষে করছিলে

দেশে কায়েম করবে রৌদ্রজ্জ্বল শিশিরের রাজত্ব !

চন্দনোষ্ণ-সিংহাসনে বসে দেখুন উন্মাদ

ভুলে গেছে তার সকল অতীত

মর্মরি হাতে জল ঢালছে সে মেহেদীরাঙা আগুনে ৷



হৃদয়রাঙা কাজল-চোখে এখনো শুনি বিরহমাতম

রাতের শাঁখ বাজছে―

এখন শুধু স্বপ্নভঙ্গের বদলা নিতে,

গোলাপি বাসরী-বসন,মোহিনী তনয়ার চেহারা

হায় আজ কত বিবর্ণ হয়েছে !

সেখানে কামানের অগ্নিবাণ পড়েছে স্বাপ্নিক হৃদয়ে ৷



ক্ষণিক আগেই কত ভালোবাসায় সিক্ত ছিল সে

তীক্ষ্ণ বুলেট আর স্ফুরিত আগুন কেড়ে নিলে

কোল থেকে সেই স্নেহের টুকরোটুকু ৷

আজ আর দেরী নয় ! রুখে দাঁড়াও―

হে আমার আপন-শক্তি,আমার জনগন ৷



যখন সকলে আসবে―

দেখবে, তখন কিয়ামত হবে;

আমি আজ আশাহত, হে আমার প্রিয় দেশবাসী ৷

কিছু বাচাল নেতা,কিছু জালেম,কিছু ঘাতক

আমার জনগনকে বিভ্রান্ত করেছে নিয়ত

না !

এমন হতে দেওয়া যাবে না !

এমন হতে দেওয়া হবে না !

রুখে দাঁড়াও―



কবিতাটি দৈনিক সংবাদ 26 ফেব্রুয়ারি 2015 তে প্রকাশিত ৷



রায়ান নূর,

বাংলাভাষা ও সাহিত্য,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৷



মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮

মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার শেয়ার ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.