![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবির সংসার
রায়ান নূর
ঘরের চাল বাড়ন্ত ৷ কবি নওয়াজ সেই বিকালবেলা বসেছে কাগজ কলম হাতে দুইপায়া জীবের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে ৷ তাদের জীবন-যাপন মানুষের মত হতে পারত কিন্তু কেন হলো না? তারা চাইলে নিজেদের মস্তিষ্ক শাণিত করতে পারত কিন্তু কেন পারল না ৷ এসব আজগুবি চিন্তায় রাত আটটা পেরিয়ে দশটায় পৌঁছল ৷
গিন্নী গিয়েছে তার কোন এক বান্ধবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ৷ সেদিকে খেয়াল নেই কবি নওয়াজের ৷ চিন্তার কোন কূল-কিনারা না পেয়ে পশুদের উপর মনুষ্যগুণ আরোপ করে যখন উঠতে যাবে ঠিক তখনোই একটা আইডিয়া মাথায় চেপে বসে ৷ সে কিনা হতে পারত!
নওয়াজ যদি চিত্রশিল্পী হত তবে নিশ্চয়ই তার গিন্নী সবসময় পানির গ্লাস,খাবার,তুলি-কালি নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে থেকে ছবি আঁকা দেখত ৷ তার ছবির কত প্রশংসা করত কেননা তার স্বামী এলাকার একজনই ৷
নওয়াজ যদি বড়লোক হত ৷ মেহেরজান নিশ্চয়ই পানীয়ের সাথে এককাপ হুইস্কি রাখত ৷ বড় মধুর হত তার জীবন ৷ যেকোন সময় প্রয়োজনে একটা মাইক্রোবাস থাকত যাতায়াতে ৷ কত মহামান্য ব্যক্তি তার বাড়িতে ফুলের তোড়া হাতে সম্মোধন করত ৷
নওয়াজের চিত্ত আন্দোলিত হয় এমন ভাবনায় ৷ সে অনেক আশাবাদী, কারণ সে জানে কবিরা কখনো গরীব হয় না;সবই সম্ভব ৷ বড় একটা কাগজ দেয়ালে আঁটকে সে কলম দিয়েই ছবি আঁকতে বসে যায় ৷ ছবি মনে আসে কিন্তু কলমে আসে না ৷ সে জানে শিল্পীরা যখন ছবি দাঁগাতে বসে তখন সাদা কাগজে নাকি ছবি ভেসে ওঠে ৷ এই অভিজ্ঞান থেকেই তার এ বৃথা পরিশ্রম ৷
একটা ভালো ছবির মতো ছবি আঁকাতে ভালো তুলি-কালি দরকার ৷ কলম দিয়ে কি ছবিতে প্রাণ আসে! রঙই তো আসল জিনিস যা ভিতরকে বাহিরে আর বাহিরটাকে ভিতরে আচ্ছন্ন রাখে ৷ সে ভাবল এক্ষুনি হয়ত মেহেরজান তুলি আর কালি নিয়ে চলে আসবে ৷ তার মনে হল যাবার আগে স্পষ্টভাবে তুলি আর কালি আনার কথা মেহেরজানকে সে বলেছে ৷
মেহেরজান আসলো ৷ এসেই তো রেগে অস্থির ৷ নওয়াজও ধৈর্য্যহারা হয়ে বলল,
‘মেহেরজান মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে ৷ শীঘ্রই তুলি আর কালি দাও তো ৷’
‘আমি কি কালি বানাবো ৷ বিকেলে বাজারে গিয়েছিলে?’
‘তোমাকে যাবার সময় বললাম তো তুলি কালির কথা ৷’
‘তোমাকে কি বাজারে যাবার কথা আমি বলি নি?’
‘রাখো তো বাজার,আসলেই শুধু বাজার,কালি থাকে দাও ৷’
মেহেরজান ধনী ঘরের মেয়ে তাই এই কথা তার সহ্য পেলনা ৷ রাগ করে বালিশে মুখ বুজে শুয়ে পড়ল ৷ বান্ধবীর বাড়িতে খেয়ে এসেছে কিন্তু নওয়াজ সে কথা জানে না ৷ রাত বারোটা বেজে আসলো তবু মেহেরজানের এতটুকু সাড়া নেই ৷ অবাক হল না নওয়াজ, হয়তো অভিমান করে এমনি শুয়ে আছে ৷ কাছে গিয়ে একটু আদর করলেই আবার আগের মতো হয়ে যাবে ৷
ক্ষুধা ক্রমে বাড়তে লাগল ৷ সেই দুপুরে তাড়াহুড়ো করে দুগ্রাস ভাত মুখে দিয়েছে ৷ দেহের ক্ষুধা আর পেটের ক্ষুধা যেন মানসিক ক্ষুধাতে পরিণত হলো ৷
রাত দুইটা বেজে আসলো,চলে গেল মাথা থেকে সকল আইডিয়া ৷ এখন তার একটাই ভাবনা সে কেন কিছু হতে পারে না? খুঁজতে লাগল তন্ন তন্ন করে খাবারের উৎস ৷ খাদ্য এর মূল কারণ যখন ক্ষুধা তার চরমে ৷
কিছু চাল ছিল ঘরে ৷ উনুন ধরায়ে সবটুকু ভাজতে লাগল কড়াই করে ৷ এই উপস্থিত বুদ্ধিটা তার তৎক্ষণাৎ এসেছিল তাই আর বিচারের অপেক্ষা রাখল না ৷ লবণ আর পোড়া মরিচে সবটুকু সাবার করে আবার বসে পড়ল কলম হাতেই ৷
রাত্রী শেষ নাগাদ একটা ছবির একটা চরম আইডিয়া মাথায় আসলো ৷ কয়েকটা কলম হাতে বসে পড়ল কাগজের সামনে ৷ আঁকালো একটা অদ্ভুত প্রাণী যার হাতে একটা খাঁচকাটা ছুড়ি আর এক হাতে বিষের শিশি,যার এক পায়ের নিচে সাগর আর এক পায়ের নিচে আগ্নেয়গিরি ৷ চেয়ে আছে আকাশের দিকে যেখানে উড়ছে শাদা শাদা আর রঙীন পাখি ৷ প্রাণীটির বুকে জড়িয়ে আছে এক সাপ যার ছোবল তার মুখের দিকে ৷ তার মাথাটা খর্বাকৃতি কচ্ছপের মতো ৷ ততক্ষণে সকল কলমের কালি শেষ ৷ তাই ইচ্ছে করলেও পারে না আর কিছু বিশেষণ যোগ করতে ৷ অতৃপ্তি রয়েই গেলো,কালকে এর ফিনিশিং টা দেবে কিন্তু তার কিছু টাকা দরকার আগে ৷ মেহেরজানকে বললে মনে হয় কিছু টাকা পাওয়া যাবে ৷ যে কিনা বান্ধবীর অনুষ্ঠানে দুইহাজার টাকার উপহার কিনতে পারে তার কাছে পঞ্চাশ টাকা মোটে কিছুই না ৷
দুই ঘণ্টার মত ঘুম পেড়ে বউ এর চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভাঙলো নওয়াজের ৷ উঠেই মাথায় হাত দিয়ে ঠায় বারান্দায় বসে পড়ল ৷ ততক্ষণে পাড়ার লোকেরা হাজির ৷ কি হয়েছে! নওয়াজ জানে না ৷ বউ এর চিৎকারেই সে জানলো তার মূল ঘটনা ৷ বলতে শুনল,‘এ ঘর-সংসারে আর একদিনও নয়,দুইকেজি চাল রাতে একলা সাবার করেছে খোক্কসের মতো ৷ সংসার কি আমার একার, নাকি আমার বাপে চালাবে ৷ কত ঢঙে হয়েছে কবি তাই জগত জোড়া সুখ্যাতি কিন্তু পেটে ভাত জোটে না, কই ভিক্ষে করার তো মুরৎ হয় না ৷ ঝোলা নিয়ে বেরোলেও তো কেউ দু পয়সা দয়া করত ৷ ’
নওয়াজ ফ্যালফ্যাল করে চারদিকে একবার চেয়ে দেখে, ঘরের বাসনকোসন আর আসবাব পত্রগুলো ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেলেছে, যেগুলো সে নিজে কিনেছিল ৷ চোখের পলকে মেহেরজান একটা মিনিট্রাকে সকল বাপের বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে রওয়ানা দিলো ৷ নওয়াজ সে দিকেই চেয়ে থাকে কিন্তু মেহেরজান একবারও একটু ফিরে তাকালো না ৷ নীরবে দু ফোঁটা চোখের জল কেবল গড়িয়ে পড়ল নওয়াজের,ততক্ষণে বাড়ি জনশূন্য হয়েছে ৷
ছোট একটা ছেলে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বলল,
‘কাক্কু ছবিটাতে যাকে দেখলাম,ওটা কি মানুষ?’
নওয়াজের হাসি পেল,তবু হাসি চেপে বলল,‘কাক্কু,মানুষের মতো দেখতে হলেও সবাই কি মানুষ ? হা,ওটাও একটা মানুষ,তবে দুইপায়া মানুষ ৷’
২| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭
সুফিয়া বলেছেন: কবিরা এভাবে ছবি অাঁকে বলে তো শুনিনি। হতে পারত গল্পের নায়কটি চিত্রশিল্পী।
তবু ভালো লাগল।
৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
এনামুল রেজা বলেছেন: চমৎকার লাগলো গল্পটা।
৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৩
হাবিব কবি বলেছেন: 'আজগুবি চিন্তায় রাত আটটা পেরিয়ে দশটায় পৌঁছল'
প্রকৃত কবির চিন্তা আজগুবি নয়!
৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২৫
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
গল্প ভাল লাগল।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কবিরা এরকম হয় বলে তো মনে হয় না| যাই হোক গল্প ভালো লেগেছে