![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
You must remember that, you fighting against destiny. You have to make your own future.
মাতৃত্বের স্বাদ কে না চায়? আর এই অমূল্য স্বাদ চাইতে গিয়েইতো হালিমা বেগম আর হযরত আলী দম্পতি একদিন বয়সী আয়েশাকে দত্তক নিয়েছিল।টানাটানির সংসার তাদের তবে সুখের কোন কমতি ছিলনা। মধ্যবয়সী হালিমা বেগম আর হযরত আলী আরো বেশিদিন বাঁচার উপায় পেল যেন।কারো আগে পিছে না গিয়েও যে কখনো কখনো শত্রু তৈরি করা যায় সেটা এই পরিবারকে দেখলেই বোঝা যায়। সেটা যদি নাই হত তবে এত আকাঙ্খিত আর আদরের সন্তানকে নিয়ে হযরত আলীকে হয়তো চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়তে হত না।
হ্যাঁ, বলছি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামের নিঃসন্তান হজরত আলী ও হালিমা বেগম দম্পতির কথা। ৮ বছর আগে শিশু আয়েশাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন এই নি:সন্তান দম্পতি। বাবা মায়ের আদর-যত্ন আর স্নেহ ভালোবাসায় বড় হচ্ছিল আয়েশা। পড়ছিল প্রথম শ্রেণীতে। কি-ই বা বয়স তার আর কি তার অপরাধ যে এই বয়সেই আত্মহত্যার মত কঠিন বিষয়টি অনুধাবনের আগেই তাকে সেই পথটি বেছে নিতে হল?
ঘটনার শুরু প্রায় দুই মাস আগে। একদিন হঠাৎ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে আয়েশাকে তুলে নিয়ে যায় এলাকার ফারুক হোসেন ও দুলাল মিয়াসহ তিন যুবক। রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটিকে ফেরত দেয় পাষন্ডগুলো। এই নির্যাতনের বিচার চেয়ে হজরত আলী থানায় অভিযোগ করেন। আলী স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছেও এর বিচার দেন। কিন্তু বিচারতো দূরের কথা বাংলাদেশের আর দশটা নারী নির্যাতনের ঘটনার মতো আয়েশার উপরে চালানো পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মাত্র এক হাজার টাকার বিনিময়ে এই পাশবিকতার ঘটনা ভুলে যাবার প্রস্তাব দেয় সে।
আর ঘৃণাভরে এই কু’প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় হজরত আলী ও হালিমার পরিবারের উপর নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন। গত ৪ এপ্রিল তাদের গরু চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গরু চুরি করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি বরং গরু চুরির বিচার চাওয়ায় আবারো আয়েশাকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয় তারা। বিষয়টি ’জোর যার মুল্লুক তার’ মত।
হয়ত হজরত আলী বুঝতে পেরেছিলেন এই ঘৃণ্য নোংরা সমাজের সর্বত্র এমন হাজারো নরপিশাচ ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর বাকিরা দেখেও না দেখার ভান করে আছে। তাইতো বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন হজরত আলী আর ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েই ভুলে যান বিচার না পাবার যন্ত্রণা ।
এতদিন হযরত আলী ও তার পরিবারের পাশে কেউ ছিলনা। কিন্তু এখন তার পাশে থানা পুলিশ, বড় বড় নেতা থেকে শুরু করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পর্য্ন্ত আছে। নেই কেবল হযরত আলী আর তার আদরে কন্যা আয়েশা। তাহলে পাশে এত লোকের এই থাকার কি কোন প্রয়োজন আছে হালিমার? সেটার উত্তর কেবল অভাগা হালিমাই দিতে পারবে।
বাংলাদেশে কি হারে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তার একটি নমূনা দেয়া যাক তাহলে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৩২৫টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই ৩২৫ শিশুর মধ্যে ৪৮ জন শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, ৩১ জন প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশু, ৫ জন গৃহকর্মী শিশু। এদের মধ্যে ১৫ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
২০১৫ সালে ৫২১ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে যাদের মধ্যে ৯৯ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়, ৩০ শিশুকে ধর্ষণের পরহত্যা করা হয় এবং ৪ জন শিশু ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। ২০১৪ তে ১৯৯টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে যাদের মধ্যে ২২টি শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, ২১টি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ২৩টি শিশু ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। ২০১৩ এবং ২০১২ সালেও একইভাবে ১৭০ এবং ৮৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
এতো কেবল যেগুলোর ক্ষেত্রে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে তার পরিসংখ্যাণ। আর যারা এমন ঘটনা নিজ ঘরেই খিল বন্ধ করে রাখেন তাদের পরিসংখ্যান দিতে গেলে হয়তো পৃষ্ঠার পরে পৃষ্ঠা ভরে যাবে।আবার এমন কেউ আছেন যারা কোন অভিযোগ না দিয়েই অভিমানে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। হয়ে যান আয়েশা কিংবা একজন হযরত আলী।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
হযরত আলী রাগ বশত: আত্মহত্যা করতে গিয়ে বাচ্ছাটার জীবন নাশ করেছে। গাজীপুর এলাকার মানুষ অমানুষে পরিণত হয়েছে।
সমাজের এই অবস্হা থেকে বের হওয়ার উপায় কি ?