নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিলনয়না নিলাঞ্জনা

নিজের ব্যাপারে অবগত নই

নিলনয়না নিলাঞ্জনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন জীবন

০৯ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:০৬

আজকেই, হ্যা আজকেই আমি আমার নতুন জীবন শুরু করব। তিন বছর আগে এই দিনে আমার অন্যরকম একটা স্বপ্নময় জীবন শুরু হয়েছিল। আজকে থেকে শুরু হবে আবার আমার আরেক নতুন জীবন। হয়ত এই জীবনটা স্বপ্নময় না, আফসোসময় একটা জীবন। তবুও নতুন জীবন বলে কথা !!
আজকে চাঁদরাত। আগামীকাল ঈদ। সবার মনে শুধু নতুন একটা দিনের খুশি।আমার মনে খুশি হলো নতুন জীবনের। আহ!! কত অপেক্ষার পর পেতে যাচ্ছি সেই জীবনের স্বাদ !! ভাবতেই শরীরে শিহরণ খেলে যাচ্ছে।
সবাই তো ঈদ এর জন্যে মেহেদী দিয়েছে।আমিও দু হাত ভরে মেহেদী দিয়েছি।আমারটা অন্যরকম। নতুন বউদের মত করে পুরো হাত লাল টুকটুকে হয়ে আছে। কি সুন্দর ই না লাগছে আমার হাতদুটো। এই হাত দিয়ে কতই না স্পর্শ করেছি তার হাত, মুখ আর তার চুলগুলো। ও হ্যা !! ও তো কাজল অনেক পছন্দ করত!! চোখে একটু করে কাজল দিয়ে নেই?

বাহ!! এইত কি সুন্দর লাগছে আমাকে। হাতে অনেকগুলো কাঁচের চুড়ি পরব। এই দিনটার জন্যে জমিয়ে রাখা আমার সবচেয়ে সুন্দর চুড়ি গুলো পরবো। দুহাত ভর্তি চুড়ি আমার টুং টাং শব্দ করবে। চুড়ির শব্দ আমার খুব প্রিয়। কিন্তু, এত চুড়ি!! কোনটা রেখে কোনটা পরবো? উমমম..... লাল চুড়িগুলো সবচেয়ে বেশি মানাবে। সেগুলোই পড়ি?

উফফফ হাত ভর্তি চুড়ি দেখতে এত সুন্দর!! আমার নুপূরগুলো কোথায় রাখলাম যেন কাল রাতে? ও হ্যা হ্যা!! আম্মুর ঘরে। ঈদ উপলক্ষে কেনা নুপুরগুলো আজই পরে ফেলবো। ও নুপুরও অনেক পছন্দ করত। আচমকা আমায় ঘিরে ওর সব পছন্দ আর স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেল কেন? ওর চলে যাবার কারণেই তো আমার আজকের এই নতুন জীবনের প্রস্তুতি!!

যাক, আমার সাজগোজ শেষ হয়ে এসেছে। সময় ও হয়ে এসেছে। চাঁদ দেখে আনন্দ-ফূর্তি করে বাসার সবাই এখন ঘুমে মগ্ন।আমি বরং শুরু করে দেই?
আমার প্রস্তুত করে রাখা দড়ি টা কোথায় যেন? ওহ ঐটা তো তো আবার ভুল করে রেখে এলাম বারান্দায়!! কি আজব দেখো তো!! সব কাজ ওলটপালট করে ফেলছি। আম্মুর ঘর পেরিয়ে বারান্দায় যেতে হবে। আম্মু যদি জেগে যায়? জোর করে ভাবনা টা মাথা থেকে সরিয়ে দিলাম।
নাহ!! জাগেনি আম্মু। ঘুমাচ্ছে। আম্মুর ঘুমন্ত মুখটা কি সুন্দর লাগছে....!! আম্মু, আমাকে মাফ করে দিও। তোমার ছোট্ট মেয়েটা জীবনের কাছে আজকে হার মেনে যাচ্ছে। আম্মুর মুখটা একটু ছুঁয়ে দেই? না থাক!! জেগে যাবে।

বারান্দাটা আজকে বড় বেশি অন্ধকার মনে হচ্ছে। আমার সাদা গোলাপের গাছটাতে একটা ফুল ফুটি ফুটি করছে। কাল সকালে হয়তো ফুটে যাবে। কলিটাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিলাম। গাছের পাতাগুলোয় হাত বুলিয়ে দিলাম। তুই মন খারাপ করিস না রে!! আমি আমার বিছানায় রাখা চিঠিটাতে বলে দিয়েছি, ওরা তোর্ যত্ন নেবে। আর নতুন জীবনে যদি এই জগতে ভ্রমন করা যায়, তবে আমি এসে অবশ্যই তোকে ছুঁয়ে যাব। এখন যাই?

যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। ঈদ এর দিন মামণি অনেক সকালে উঠে যায়। তার আগেই আমাকে চলে যেতে হবে না ফেরার দেশে।

ঘরে গিয়ে দড়িটা লাগিয়ে নিলাম ফ্যান এর মধ্যে। অনেক সময় লেগে গেল। প্রায় ভোর ৩ টা বাজে। ঘরের চারিদিকে একটুচোখ বুলিয়ে নিলাম। কত পরিচিত এই ঘর, ঘরের মানুষগুলো!!! আজ চলে যাব!! এখুনি? ভাবতেই অবাক লাগছে।

গলায় দড়িটা পরে নিলাম। এখন চেয়ারটা পায়ের ধাক্কায় সরিয়ে দিলেই হবে। কিন্তু..... এ কি হলো!! আমার পা ফসকে গেল?? গলায় দড়ির চাপ বেড়ে যাচ্ছে। উফফ কি ব্যাথা!!! না না, আমার মুখ বিকৃত হলে হবে না, ও তো আমার মুখে হাসি দেখতে খুব পছন্দ করতো। আমি মুখে হাসি নিয়ে মরতে চাই। বলা তো যায় না, যদি শেষ দেখা দেখতে ও আসে? আমার মুখে কষ্টের চিহ্ন দেখলে ওর তো খুব কষ্ট হবে!! চোখ বন্ধ করার আগে সবার শেষে চোখ পড়ল আমার ছোট্ট টেডি বিয়ারটার দিকে।মনে হলো যেন, বিষন্ন মুখে তাকিয়ে বলছে, যেওনা প্লিজ!!! কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে!! মামনি হয়ত জেগে গেছে।বাইরের ঘরে মামনির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

বিদায় মামনি, বিদায় আমার ছোট্ট পুতুল, বিদায় পৃথিবী!!
আমি এখন পা বাড়াব নতুন জীবনের অজানা পথে.....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.