নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসঙ্গ

সবচেয়ে কষ্ট হয় যখন একা থাকি আর একা থাকতেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।

ইমদাদুল হক সাব্বির

সত্য ও সুন্দর ভালো লাগে।

ইমদাদুল হক সাব্বির › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামকে রি-ইন্টারপ্রেট করার ধারণাটি একটি বিপজ্জনক ধারণা।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫

১৪০০ বছর ধরে ইসলাম আমাদের মাঝে আজো টিকে থাকার কারণ শুধু এটা নয় কুরআনকে আল্লাহ অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করেছেন, বরং এর আরো একটি কারণ হল আল্লাহ একটি হক্বপন্থী দলকে সবসময় বাঁচিয়ে রেখেছেন, কাজেই যখনই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এই ‘আলিমগণ উঠে দাঁড়িয়েছেন এবং জেল-জরিমানা ও জানের মূল্য দিয়ে হলেও সত্যকে তুলে ধরেছেন।



এটা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই সাহাবারা ইসলামের জ্ঞান সবচেয়ে বেশি রাখতেন। তাদের জ্ঞানের ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে তাদের জ্ঞান ছিল গভীর। এটা হতে পারে, তাদের পরবর্তী যমানায় এমন অনেক লোক এসেছেন যাদের জ্ঞানের পরিমাণ ছিল বেশি কিন্তু গভীরতা ছিল কম। যেমন আবু বকর (রাঃ) সর্বসাকুল্যে ১৫০-২০০ এর বেশি হাদীস বর্ণনা করেছেন, আর ইমাম বুখারি হয়তো লক্ষাধিক। কিন্তু আমরা জানি নবী-রাসূলদের পরে যার অবস্থান তিনি হলে আবু বকর (রাঃ), ইমাম বুখারি নন।



ইসলামকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ অবস্থায় পেয়েছেন সাহাবাগণ। এর পরে যত প্রজন্ম এসেছে, বিশুদ্ধতার পরিমাণ সেভাবে ধরে রাখা সম্ভব হয় নি। রাসূল (সাঃ) তিনটি প্রজন্মের ব্যাপারে আমাদেরকে বলে গেছেন যারা জ্ঞানের দিক থেকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ। এ তালিকায় সর্বপ্রথমে আছে সাহাবাগণ, তারপর আছে তাবেয়ীনগণ (সাহাবাদের পরের প্রজন্ম) এবং এরপর তাবে-তাবেয়ীন (তাবেয়ীনদের পরের প্রজন্ম)। এই তিনটি প্রজন্মের আলিমদের বলা হয় সালাফ, যাদের শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে খোদ রাসূল (সাঃ) লাইসেন্স দিয়ে গেছেন।



ইতিহাস থেকে আমরা দেখি, ইসলাম যখন আরবভূমি থেকে বিভিন্ন প্রান্তে ছাড়িয়ে নতুন দেশ জয় করেছে, তখন সেই নব জয়কৃত অঞ্চলের জাহিলিয়াতি কালচার এবং ত্রুটিপূর্ণ বিশ্বাস দ্বারা অনেক মুসলিম প্রভাবিত হয়ে পড়ে। কোন ক্ষেত্রে নও মুসলিমরা সঠিক শিক্ষার অভাবে জাহেলিয়াতের নাগপাশ থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেননি, যেটা সাহাবাদের ক্ষেত্রে হয়নি, তারা রাসূল (সাঃ) এর কাছ থেকে ফার্স্ট হ্যান্ড ‘ইলম লাভ করেছিলেন, একারণে তাদের মন-মনন, চেতনা ও ইসলামের বুঝ ছিল সবচেয়ে বিশুদ্ধ।



যেমন মুসলিমরা যখ্ন গ্রীক সভ্যতা দ্বারা প্রভাবিত হয় তখন মুতাযিলা নামের একটি দলের উদ্ভব হয় যারা ছিলেন অতিমাত্রায় যুক্তিনির্ভর, এমনকি কুরআন এবং সুন্নাহর উপরেও তারা যুক্তিকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। এই ফিতনার কারণে তারা তাক্বদীরের বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করেন। এছাড়াও তার আল্লাহর সিফাত (গুণাবলী) কেও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন। এটা ছাড়াও মুসলিমরা যখন পারস্য ও খ্রিষ্ট ধর্মের মূল কেন্দ্রগুলো দখল করে সেখানেও তারা কিছু ক্ষেত্রে খ্রিস্টান ও অগ্নি পূজারীদের ত্রুটিপূর্ণ আক্বীদা দ্বারা প্রভাবিত হন যার হাত ধরে পরবর্তীতে অত্যন্ত ভয়ংকর কিছু সুফী তরীক্বার জন্ম হয় যারা ছিল পরিষ্কার শিরকে লিপ্ত।



বলা বাহূল্য, আহলে সুন্নাহর স্কলাররা ইসলামের এ ধরণের আক্বীদা-বিধ্বংসী ভুল ব্যাখ্যাগুলোকে মেনে নেন নি, বরং তারা শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ১৮ বছর জেলে খেটেছেন কিন্তু গ্রীক সভ্যতা প্রভাবিত মুতাজিলা আক্বীদা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। একইভাবে এটি সত্য ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহর ক্ষেত্রে, তিনিও শিয়া এবং সুফীদের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার।



আমরা দেখি যে ইসলামকে মিস-ইন্টেরপ্রেট বা রি-ইন্টারপ্রেট করার এই সমস্যাটি হয় তখনই, যখন বিজাতীয় কোন আদর্শ, বা সভ্যতার আলোকে ইসলামকে বোঝার চেষ্টা করা হয়। সাহাবাদের ক্ষেত্রে সেটি একেবারেই হয় নি, কারণ তারা কুরআনের আলোয় বিশ্বকে দেখতেন এবং সবকিছুকে ব্যাখ্যা করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলামের বিশুদ্ধ আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ মরীচা পড়তে শুরু করে।



বর্তমান যুগ ইসলামের রি-ইন্টেরপ্রিটেশনের ফিতনা থেকে মোটেও মুক্ত নয়। আজকে আমাদেরকে যে চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলা করতে হচ্ছে তা হল পশ্চিমা সভ্যতার প্রভাববলয় থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামের একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ, যা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, দুঃখজনভাবে অনেক বড়মাপের ‘আলিমরাই।



আমরা দেখতে পাচ্ছি, গত ১৪০০ বছরের সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ইজমার ব্যাখ্যার বিপরীতে আজকে নতুন নতুন ব্যাখ্যার আগমন! যেমন দারুল ইসলাম এবং দারুল কুফর এর যে বুঝ সাহাবারে রাখতেন এবং ইমাম আবু হানিফাদের সময় থেকে এই দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরের সংজ্ঞা একটি প্রতিষ্ঠিত ফিক্বহী ধারণা, অথচ এই যুগে এসে ফট করে বলছেন, দারুল ইসলাম, দারুল কুফর এগুলা নাকি আইসোলেটেড টার্ম! ইসলামী রাষ্ট্র বলে কিছু নাই, সবই নাকি ফ্যান্টাসি!



শরীয়াহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন ব্যবস্থা দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করাকে যেখানে আহলে সুন্নাহর আলিমগণ কুফর বলেছেন, সেটিকে এই যুগে এসে অনেকেই নিছক মুবাহ বা অনুমোদিত এর পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন! জিহাদের কিছু ফিক্বহকে বিকৃত করার জন্য কনফারেন্সেরও আয়োজন করা হয়, অথচ গত ১৪০০ বছরে যেগুলো নিয়ে কেউ কখনো দ্বিমত করেন নি। খিলাফতের মত ওয়াজিব একটি well-established ধারণাকে review করার দাবি তুলছে আজকের কিছু “স্কলার”, অথচ সাহাবারা রাসূল (সাঃ) এর দাফন করা থেকেও খলিফা নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।



এভাবে একটির পর একটি ধারণার বিশ্লেষণ করা আমার আওতার বাইরে, তবে আমাদেরকে কিছু মূলনীতি মনে রাখতে হবে। এক নম্বরে আছে, কুরআন বা হাদীসের সবচেয় উত্তম ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন খোদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। এবং তার এই ব্যাখ্যাকে সবচেয়ে ভালোভাবে ধারণ করতে পেরেছিলেন সাহাবাগণ, তারপর তাবেয়ীনগণ এবং এরপর তাবে-তাবেয়ীনগণ। তারা একটা ব্যাপারকে যেভাবে বুঝেছেন, সেভাবেই আমাদেরকেও বুঝতে হবে। তারা যেসকল উসুল প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেগুলোর উপরে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। তাদের মত করে ইসলামকে বুঝতে হবে, নিজেদের মত করে নয়, কেননা আল্লাহ বলেছেন,



With clear signs and Books (We sent the Messengers). And We have also sent down unto you(O Muhammad SAW) the reminder and the advice (the Qur'ân), that you may explain clearly to men what is sent down to them, and that they may give thought.

[সূরা নাহলঃ৪৪]



আল্লাহ বলছেন, "লিতুবায়্যিনাহ" , অর্থাৎ আপনি তাদের কাছে পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করবেন। আমরা নিজেদের মত করে এই ব্যাখ্যা করলে হবে না। এই দ্বীনকে শিখতে হবে তাদের কাছ থেকে যারা এই দ্বীনকে সবচেয়ে ভাল বুঝতেন, তারা হলেন সাহাবা ও তাবেয়ীনগণ। ১৪০০ বছর পর এসে আমি-আপনি Tom-Dick-Harry এসে কিছু একটা বললেই সেটা হয়ে যাবে না।



আজ থেকে ১২০০ বছর আগে কিছু মুসলিম যেমন গ্রীক লিটারেচার এ মুগ্ধ হয়েছিল, তেমনি আজকে মুসলিমরা পশ্চিমা সভ্যতায় মুগ্ধ হয়ে ইসলামের westernized ভার্সন বের করছে, ইসলামের গণতন্ত্রায়ণ এবং সেকুলারাইজেশন করছে। অথচ এগুলোর কোনটির সাথে ইসলামের বিন্দুমাত্র সাদৃশ্য নেই। এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে আমাদের মূল সোর্স অর্থাৎ কুরআন এবং সুন্নাতে ফিরে যেতে হবে এবং সাহাবাদের মত করে মূল সোর্সকে বুঝতে ও ব্যাখ্যা করতে হবে। ইসলামকে রি-ইন্টারপ্রেট করার কোন দরকার নেই, ইসলামের মূলনীতিগুলো পূর্বেকাল আলিমরা তৈরি করে গেছেন, আর ইজতিহাদ করা ইসলামের রি-ইন্টারপ্রিটেশন নয়। যারা ইসলামের রি-ইন্টারপ্রিটেশনের ডাক দিচ্ছে তারা কেবল ফিক্বহ নয় বরং ইসলামের আদর্শকেও রি-ইন্টারপ্রেট করছে যেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই দ্বীন ভেজিটেবল স্যুপ নয় যে, যেভাবে খুশি সেটাকে রাঁধা যাবে! আল্লাহ আমাদেরকে এই ফিতনা থেকে রক্ষা করুন যেভাবে তিনি পূর্বেও করেছেন।



-Zim Tanvir

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৩

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: আজকে মুসলিমরা পশ্চিমা সভ্যতায় মুগ্ধ হয়ে ইসলামের westernized ভার্সন বের করছে, ইসলামের গণতন্ত্রায়ণ এবং সেকুলারাইজেশন করছে। এটা করছে তুর্কিরা, ফলো করছে সদ্য-স্বৈরাচার মুক্ত আরদ দেশগুলো।

মর্ডান ইসলাম বলতে বোঝায়, ছেলেরা পশ্চিমা পোষাক পরবে। মেয়েরা পরবে আঁটোসাটো বা স্কিন টাইট গাউন টাইপের পোষাক, মুখে থাকবে কড়া মেক-আপ, আর মাথায় থাকবে উচ্চ মূল্যের স্কার্ফ। Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.