![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেলিম মল্লিক তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন। এখন উচ্চ আদালতের বাঘা আইনজীবী। আইনবিশারদ হিসেবেও তাঁর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। তবে আইন পেশায় জড়িত রাজনৈতিক দলের বড় নেতারা তাঁকে সমীহ করে চলেন। রাজনৈতিক দলের সদস্য না হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, এসব দলের উচ্চপর্যায়ের নেতানেত্রীদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে তাঁর শ্রদ্ধাবোধের অভাব। রীতিমতো বীতশ্রদ্ধ বলা যেতে পারে। ছাত্রজীবন থেকে তিনি দেখেছেন যে ছাত্রনেতা কিংবা রাজনৈতিক নেতা কেউই কোনো বিষয়ের গভীরে যেতে চান না, যুক্তিবিদ্যার নিরিখে ইস্যুকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান না। তাঁরা আবেগ ও গতানুগতিক স্লোগানের টানে পরিচালিত হন। সেলিম মল্লিক তাঁদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র কিন্তু আপনজন নন। রাজনৈতিক নেতারা তাঁর বক্তব্য শুনে আনন্দ পান, কিছু কিছু অকাট্য যুক্তি চুপিসারে মেনে নেন কিন্তু নিজ দলের নির্দেশনা ও স্বার্থ প্রণোদিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। দলের কট্টর সমর্থকরা মল্লিক সাহেবের যুক্তি অনুযায়ী চলতে রাজি নয়। তারা মনে করে, মল্লিক সাহেবের যুক্তি মেনে চললে দল বাঁচানো যাবে না। তাঁর যুক্তি কোথায় ও কিভাবে ভুল তা তারা বলতে পারে না।
সেলিম মল্লিকের আড্ডার সঙ্গী সীমিত। তাঁর পরিচিতজন ও সাধারণ বন্ধুর অভাব নেই। শহরের প্রায় সব লোক তাঁকে একডাকে চেনে। ধারণা করা যায়, সারা দেশের হাজার হাজার মানুষও তাঁকে চেনে। আড্ডা দেওয়ার উপযোগী লোক তিনি খুঁজে পান না। মাত্র তিন-চারজন লোককে তিনি আড্ডা দেওয়ার উপযুক্ত মনে করেন। জ্ঞান-বুদ্ধিতে তাঁরা খুবই উঁচু মানের। সবচেয়ে বড় কথা তাঁরা যুক্তিবাদী, সংস্কারমুক্ত। কারো কথা তাঁরা অন্ধভাবে মেনে নেন না। যুক্তিবিদ্যার মূলনীতি তাঁরা জানেন ও মেনে চলেন। তাঁরা নিয়মিত পড়াশোনা করেন, দেশ-বিদেশের খবর নখদর্পণে, বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই পারদর্শী। কবিতা, গান ভালোবাসেন এবং সর্বোপরি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মানবতাবাদী। সাধারণ মানুষের ধারণাতীত বিষয়ে, উদ্ভাবনী চিন্তার রেশ বেয়ে, অনেক কল্পরূপ (Hypothetical Scenario) সাজিয়ে তাঁরা আলোচনা চালিয়ে যান। দু-একজন বন্ধু আড্ডার আলোচনার ওপর ভিত্তি করে পত্রিকায় কলাম লেখেন, গল্প লেখেন, এমনকি কবিতাও লেখেন। কিছু আলোচনা আছে, যা নির্দোষ কল্পকথা হলেও তাকে সম্পূর্ণরূপে অরাজনৈতিক বলা যাবে না। দেশের মানুষ, সরকার বা সমাজ এখনো তা গ্রহণ করতে পারবে না। এ আশঙ্কায় এসব আলোচনা আপাতত তাঁরা ‘একাডেমিক’ পর্যায়ে রাখতে পছন্দ করেন।
ইদানীং যে বিষয়টি মল্লিক সাহেবদের আড্ডায় প্রায়ই উঠে আসছে তা হচ্ছে, যুদ্ধ ও আন্দোলন-সংগ্রামে কৌশলের ভূমিকা। কেউ বলছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম-যুদ্ধজয়ে নীতি-আদর্শ ও এর প্রতি নিষ্ঠাই হচ্ছে মূলশক্তি। নীতি-আদর্শ ছাড়া কৌশল সম্পূর্ণরূপে অকেজো; এর কানাপয়সাও দাম নেই। আবার কেউ বলছেন, কৌশল ভুল হলে নীতি-আদর্শ কোনো সুফল বয়ে আনবে না, আন্দোলন-সংগ্রাম মুখ থুবড়ে পড়বে। অর্থ ও জনবল ক্ষয় হবে, নীতির সমর্থকদের দুঃখকষ্ট-বিড়ম্বনা বাড়বে। তাদের মধ্যে অনেকের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। দুর্বিষহ যন্ত্রণায় অনেকে সংগঠন ছেড়ে পালিয়ে যাবে। ক্ষীণবল হয়ে সংগঠনের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। সমর্থন ও সংগঠনকে বাঁচানোই তখন বড় সমস্যা হবে। নীতি-আদর্শে অন্ধবিশ্বাসী এক বন্ধুর ধারণা, নীতি-আদর্শ কখনো পরাস্ত হতে পারে না। ভুল কৌশলের কারণে মাঝেমধ্যে বিপত্তি আসতে পারে। হোঁচট খেলেও নীতি-আদর্শ শেষ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াবে। কার্যকর কৌশল নীতি-আদর্শকে ঠিকই বেছে নেবে। এর জন্য নীতি-আদর্শকে নতুন কিছু করতে হবে না। কৌশল যা-ই হোক না কেন, নীতি-আদর্শের শক্তিতে আন্দোলন-সংগ্রাম-যুদ্ধজয় অনিবার্য।
বিতর্ক চলতে থাকে। এ বিতর্ক তো এক দিনে শেষ হওয়ার নয়। একটি ঘটনা, একটি উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত নিয়ে একাধিক সন্ধ্যায় আলোচনা চলে। যেহেতু প্রতিদিন আলোচনা হয় না, তাই সপ্তাহখানেক, কোনো সময় সপ্তাহ দুয়েক ধরে এ আলোচনা চলে। আলোচনার প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের দৃষ্টান্ত ওঠে আসে। আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নীতি-আদর্শ অবিসংবাদিতভাবে সঠিক থাকলেও এবং এর প্রতি আমাদের অবিচল নিষ্ঠা থাকলেও যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত ও অভিজ্ঞতাশূন্য থাকার কারণে প্রথম কয়েক মাসে যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের আশঙ্কাজনক বিপর্যয় ঘটে। মওলানা ভাসানীর বক্তব্য (যদিও আমি তা শুনিনি বা কোথাও দেখিনি) হিসেবে এমনটি চাউর হয়েছিল যে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে ৬২ হাজার গ্রাম আছে আর পাকিস্তানি সৈন্য রয়েছে মাত্র ৬১ হাজার। হিসাব করলে এক গ্রামে একজন সৈন্যও পড়ে না। অতএব যুদ্ধ বাধলে আমরা পাকিস্তানি সৈন্যদের মেরেকেটে শেষ করে ফেলব। এ ছাড়া পূর্ব বাংলার মাটি এত নরম যে এখানে বোমা ফুটবে না। যুদ্ধে নেমে দেখলাম যুদ্ধের কৌশল সম্পর্কে আমাদের বা আমাদের মুরব্বিদের কারো কোনো ধারণাই নেই। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী একজন-দুজন সৈন্য নিয়ে গ্রাম আক্রমণ করে না। তারা প্লাটুন তথা কম্পানি হিসেবে সজ্জিত হয়ে পালাক্রমে গ্রাম আক্রমণ করে। পেছনে সর্মথনকারী শক্তি হিসেবে রেজিমেন্ট বা ব্যাটালিয়ন অপেক্ষা করতে থাকে। যে কম্পানি গ্রাম, ইউনিয়ন বা থানাপর্যায়ে আসে তারাও পর্যাপ্ত অস্ত্র ও সমরযানে বলীয়ান থাকে। তারা একটি গ্রামে হত্যা, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ত্রাস চালিয়ে পুরো গ্রাম বা ইউনিয়নকে কাবু করে অন্য জায়গায় যায়। এভাবে একে একে গঞ্জ, গ্রাম, শহর বিধ্বস্ত করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। একই সঙ্গে চলে উড়োজাহাজ থেকে বোমা নিক্ষেপ। বোমা নরম মাটিতে ঢুকে যায় না, এগুলো মাটির ওপরে ফোটে। এগুলো মানুষ মারে, বাড়িঘর তছনছ করে দেয়; ভয় বিহ্বল মানুষ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে জান বাঁচাতে চেষ্টা করে। হত্যা, অগ্নিসংযোগ, জখম ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হানাদার বাহিনী তাদের আধিপত্য কায়েম করে। এখানে নীতি-আদর্শের শক্তি নেই, অস্ত্রসম্ভার ও কৌশল জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে। বিজয়ীর হাতে তুলে দেয় আধিপত্য।
প্রশ্ন জাগে, প্রথম দিকে এত অপ্রতিরোধ্য শক্তি হওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর এত করুণ পরাজয় ঘটল কেন? এর উত্তরও কৌশলের মধ্যে নিহিত। জঘন্য লোভ ও ক্ষমতার অহমিকায় উন্মাদ হয়ে পাকিস্তানি শাসকরা ভুলে গিয়েছিল যে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হচ্ছে বিশাল ভারত। সে দেশ যদি মুক্তিকামী বাংলাদেশিদের খাদ্য, আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করে, তবে হাজার হাজার প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা ও কোটি কোটি দেশি সাহায্যকারী-সমর্থকদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ঠেকানো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে কখনো সম্ভব হবে না। এরপর যদি কোনো অজুহাতে ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে করুণ পরাজয় ও নিঃশর্ত সমর্পণ ছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর আর কোনো উপায় থাকবে না। বুদ্ধিমুক্ত বিকৃতমস্তিষ্ক পাকিস্তান সরকার বা তাদের নির্দয় বাহিনী এ সত্যটি বুঝতে পারেনি। যুদ্ধ চলাকালে তাদের এক স্থূল-মস্তিষ্ক ব্রিগেডিয়ার একটি বিদেশি ম্যাগাজিনের প্রতিবেদককে বলেছিল যে পাকিস্তান হকিতে ভারতকে হারিয়েছে। যুদ্ধেও হারাবে। ব্রিগেডিয়ার ভুলে গিয়েছিল যে হকিতে দুই দেশই ১১ জন করে খেলোয়াড় নামায়। যুদ্ধে তারা যদি ১১ জন সৈন্য নামায়, তবে প্রতিবেশী ভারত ৫৫ জন সৈন্য নামাবে, যাদের অস্ত্রসম্ভার থাকবে আরো কয়েক গুণ বেশি। সুতরাং এ যুদ্ধে পাকিস্তানের করুণ পরাজয় অবধারিত। কৌশলের ভুলে চরম মার খেল পাকিস্তান।
রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে কৌশল আরো গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলন-সংগ্রামের যথার্থতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নীতি-আদর্শের ভূমিকা রয়েছে সন্দেহ নেই। তবে আন্দোলন সফল হওয়ার পেছনে মূলশক্তি হিসেবে কাজ করে জনতার শক্তি। সুসজ্জিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোকাবিলা করার মতো মনোবল, শক্তি-সামর্থ্য, আন্দোলনের কার্যকর রূপরেখা ও সাংগঠনিক তত্পরতা না থাকলে আন্দোলন সফল হয় না। লাখো কোটি লোকের হৃদয় জয় করে, তাদের একটি বড় অংশকে সক্রিয় সমর্থকের ভূমিকায় মাঠে নামিয়ে অথবা সমর্থকদের একটি প্রশিক্ষিত অংশকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়ে শাসকগোষ্ঠীকে দাবি মানতে বাধ্য করা হয়। কখনো বা তারা পরাজয় মেনে আত্মসমর্পণ করে। এ জন্য আন্দোলনের কৌশল রচনার ক্ষেত্রে নিজ দলের শক্তি, প্রতিপক্ষের শক্তি, সামাজিক উন্নয়নের পর্যায়, গণমানুষের মনমানসিকতা, আবহাওয়া, ভূ-প্রকৃতি, সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস, শত্রু-মিত্রের বিভাজন, আন্তর্জাতিক শক্তির বিভাজন—সব কিছু বিবেচনায় আনতে হয়। অন্ধবিশ্বাস, রোমান্টিক ধ্যান-ধারণা, আগের সফল দৃষ্টান্তের অযৌক্তিক অনুকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করে আন্দোলন সফল করা যায় না। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি নতুন মুহূর্ত নতুন বৈশিষ্ট্যভরা। একজন লোক ৮৭ বছর ৩ মাস ১২ দিন বেঁচেছিলেন বলে পরের দিনও বেঁচে থাকবেন, এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। এসব ব্যাপারে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, you do not step on the same water in a flowing river.
প্রায় সব রাজনৈতিক দলে একটি কট্টর উপদল থাকে। এরা উগ্র বক্তব্য ও মারমুখী (অনেকটা সন্ত্রাসী) ভাবভঙ্গির মাধ্যমে সভা-সমিতিতে বাজিমাত করতে চেষ্টা করে। সফলও হয়। সুবিবেচক যুক্তিবাদী গোষ্ঠীকে নানা ধরনের অশোভনীয় অপবাদ দিয়ে, প্রচ্ছন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে কাবু করে ফেলে। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাদের খেপাতে চান না। কেউ কেউ আবার সস্তা বাহবা নেওয়ার লোভে তাদের অবিবেচক বক্তব্য সায় দিয়ে বসেন। তাদের বক্তব্যে বাস্তবতার লেশমাত্র না থাকলেও সে বক্তব্যের অনুসরণে দল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বসে। প্রায় ৭০ বছর আগে উপমহাদেশের এক বিপ্লবী নেতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, The country is ready for revolution। এ ঘোষণার অনুসরণে যে লড়াকু আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা দলের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং এর ফলে হাজার হাজার অপ্রস্তুত কর্মী দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন বড় রকমের হোঁচট খেয়েছিল। জনগণের নাড়ির আওয়াজ পুরোপুরি না বুঝে কয়েক বছর আগে নেপালের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাম দল লাগাতার হরতালের ডাক দিয়েছিল। তিন দিন সে হরতাল ভালোই চলেছিল। তারপর জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে চর্তুথ দিন কাঠমাণ্ডুতে পেশাজীবী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ হরতাল ভেঙে রাস্তাঘাট, হাটবাজারে বেরিয়ে এসেছিল। বাম দল তাড়াতাড়ি হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
সেলিম মল্লিকের সুচিন্তিত অভিমত হচ্ছে, আন্দোলনের প্রতিটি স্তর বিনির্মাণে কৌশলী হওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। জনমত সৃষ্টি না করে, অগ্নিঝরা টগবগে স্লোগান না তুলে শুধু আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে আন্দোলনের ডাক দিলেই জনতা সে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে না। বর্তমান যুগে প্রায় সব দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে যান্ত্রিক শক্তি রয়েছে, তার সামনে আন্দোলনরত দলীয় কর্মীরা দাঁড়াতে পারে না। একমাত্র গণ-উন্মাদনাতাড়িত উত্তাল আন্দোলনই সরকারের সুসজ্জিত শক্তিকে মোকাবিলা করতে পারে। জনমত সৃষ্টি না করে, জনতার সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা না করে, তাদের আবেগ-অনুভূতি-মূল্যবোধ অবজ্ঞা-অবহেলা করে যে দল হঠকারী রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে, তারা ব্যর্থ হতে বাধ্য। মল্লিক সাহেবের আড্ডায় এ অভিমত অবিসংবাদিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মেধাবী লোক ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে আড্ডা দিয়ে মল্লিক সাহেব তাই একটুও আনন্দ পান না।
সেলিম মল্লিক আশা করে বসে আছেন, রাজনীতিতে অসাধারণ মেধাবী লোক না এলেও বুদ্ধিদীপ্ত লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সামাজিক সচেতনতায় ঋদ্ধ হয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ধৈর্য ও একাগ্রতাসহকারে রাজনৈতিক ইস্যুগুলো পর্যালোচনা করবে, দেশের সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। যারা দুর্বল তারা শক্তির দাপট না দেখিয়ে, বাগাড়ম্বর না করে নিজেদের মজলুম হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে জনতার সহানুভূতি-সমর্থন আদায়করত শক্তি পরিগ্রহ করবে। সে শক্তিতে বলীয়ান হয়ে পর্যায়ক্রমে তারা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। যারা শক্তিশালী তারা শক্তি প্রয়োগ করবে। তবে এমনভাবে নয় যা নিষ্ঠুর, অত্যাচারী, অমানবিক ও ভয়ংকর প্রাণী হিসেবে তাদের প্রতিও জনরোষ উদ্রেক করবে। আসলে মল্লিক সাহেব ও তাঁর বন্ধুরা ভাবছেন, একসময় দেশে সত্যিকারের বিশুদ্ধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজনীতিবিদদের অন্তত একটি প্রভাবশালী অংশ তখন যুক্তিবাদী হবে। তাদের কারো কারোর অংশগ্রহণে মল্লিক সাহেবদের আড্ডা আরো জমে উঠবে।
লেখক : ড. সা’দত হুসাইন
সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান
১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
মার্কো পোলো বলেছেন:
যথার্থই বলেছেন। লেখাটা ভাল লাগলো।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।