নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয়? কি হবে আর এই পরিব্রাজকের পরিচয়ে?

তালুকদার নাজমুছ সাফিন

জীবন , সে তো এক অসংখ্য সাদাকালো কিংবা রঙিন পাতায় সাজানো গল্পের বই

তালুকদার নাজমুছ সাফিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অরু’দের গল্প...

০৩ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৪১


‘সন্ধ্যা ৭ টা ৩০, উত্তরমুখী এক বারান্দার তিন রুমের কোনো এক বাসায় থাকে অনিক আর অরু, ছিমছাম সাজানো-গোছানো একটা বাসা, সাথে তারা দুজনও...





-- অরু, কই গেলে? বাইরে যেতে হবে তো। এতো সময় লাগে তোমার রেডি হতে! জলদি করো তো, বাবু।
-- কি হলো, এমন করছো কেনো? শান্তি মতো রেডি হতেও দিবে না নাকি! সরো তো, চুলটা ঠিক করে নিই একটু । এই দেখো, কাজলটাও দেয়া হয়নি! সরো সরো, আর জ্বালিয়ো না তো!
-- একটা মানুষের যে রেডি হতে কতো সময় লাগে, আল্লাহ! দাওয়াত এ আর যাবো কি, সময় তো সব আপনার এখানেই গেলো।
-- হাহা! মেয়ে হলে বুঝতে সময় কেনো লাগে। বুঝেছো,অনিক?

**(দাওয়াত টা বিয়ের, তার চেয়ে বড় ব্যাপার, অনিকের খুব কাছের বন্ধু আবির বিয়ে করছে, মেয়েও অবশ্য অনিক আগে থেকেই চিনতো। অনিকের এক কলিগের কাজিন হয় মেয়েটা! ছয় বছরের ম্যারাথন প্রেমের ইতি টানতে যাচ্ছে আবির!)



____--___----___




অনিক আর অরু, ঝটপটে তরুণ-তরুণী দুইজন! ওদের আসলে এভাবে না বলে আরেকটু পরিষ্কার করে পরিচয় দিলেই বোধহয় ভালো হয়- সম্পর্কে ওরা ‘স্বামী-স্ত্রী’! বিয়েটা হয়েছে ৭ মাস হলো। সাত মাস কিন্তু অনেক সময়, তবে অনিকের কাছে মনে হয় এইতো সেদিন, বাসা থেকে একদম জোর করেই বিয়ে করিয়ে দিলো অনিককে। চেনা নেই, জানা নেই, এমন একজনকে নাকি বিয়ে করা লাগবে!
কি আর করা , বাবা-মায়ের মুখের উপর কিছু বলতেও পারছিলো না, আবার সহ্যও করতে পারছিলো না। শেষমেশ আর কোনো উপায় না পেয়ে এক বুধবারে মেয়ে দেখতে যায় অনিক। উচ্চ শিক্ষিত হলে কি হবে, বুধবারকে সে সবসময় অশুভ বার বলে বিশ্বাস করে এসেছে অনিক। তবু এই অশুভ বারেই তার বিয়ের জন্যে মেয়ে দেখতে যেতে হচ্ছে!
মেয়ে আসলো, দেখা হলো, কথাবার্তা হলো এবং সব জল্পনাকল্পনা শেষে বিয়েটাও হয়ে গেলো। আসলে তেমন কোনো পিছুটান ছিলো না বলে বিয়ের ডিসিশনটা নিতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি অনিককে। সেই স্কুল জীবনে একবার ভালোবেসেছিলো একজনকে,সময়ে-অসময়ে হারিয়েও গিয়েছে সেই ভালোবাসা। এতে অবশ্য তার আক্ষেপ হয়, হয়তো অন্য অনেক কিছুই সম্ভব ছিলো। তবে এই আফসোসটা এখন আর সেভাবে কাজ করে না অনিকের মধ্যে। ওই একবারই, এরপর আর কারো গলায় ঝুলে পড়া হয়নি। ও হ্যা, সেই ভালোবাসার কথা এখন মনে হলে অনিকের একাধারে মন খারাপ হয়, আবার হাসিও পায়! অরুকে দেখে অনিক মাঝে মাঝে অতীতে চলে যায়। কেমন ছিলো সে সময়টা, ভাবে আর হাসে! মাঝে মাঝে কষ্ট পায় অনিক এসব ভেবে! পুরোনো প্রেম বলে কথা, কষ্ট হওয়াটাই বোধহয় যুক্তিযুক্ত। অরুকে যদিও কিছু বলে না কখনোই এসব নিয়ে, ভাবে এসব জেনে গেলে ব্যাপারটা ভালো হবে না। অরু কষ্ট পেতে পারে, এটা নিয়ে তার বিরাট ভাবনা।
অনিক ভাবে, যা চলে যাওয়ার সেটা তো চলেই গেছে, তা নিয়ে আর কথা খরচ করেই বা কি হবে! এখন অনিকের ধ্যান-জ্ঞ্যান বলতে পুরোটাই অরু। বিয়ের সাত মাসে তারা অনেক জায়গা ঘুরেছে, অনেক আনন্দ করেছে । খুব অচেনা, হাল্কা রূপবতী , গাড় মায়াবী চোখের একটা মেয়ে অনিকের জীবনে এসে কেমন যেন খুব বেশিই, একদম জাদুর মতো পালটে দিয়েছে ওর পুরো দুনিয়া। হাসি-খুশিতে মাতিয়ে রাখছে পুরোটা সময়। অরু যেন ওর বউ কম বন্ধুই হয়েছে বেশি। অবশ্য অনিক চেয়েছিলো এমনই কাউকে, মনেমনে অবশ্যই। বন্ধু বলতে তেমন ঘনিষ্ঠ কেউ নেই অনিকের, যে কাউকে তার মনের কথা বলবে। যা আছে, সবাই যার যার লাইফ নিয়ে বিজি। এতে অবশ্য অনিক খুশিই হয়েছে মনে মনে । তার এই খুশির কারণ অবশ্য অনিক নিজেও জানে না।





এতো সব ভাবতে ভাবতে অনিক তাকিয়ে দেখে তার বউ চলে এসেছে, মেয়েটাকে কেনো জানি অনিন্দ্য সুন্দর লাগছে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে অনিক, হা করে দেখছে তার বউয়ের সৌন্দর্য । এই মুগ্ধ অবশ্য অনিক প্রায় সময়ই হয়, তবে বুঝতে দেয় না কখনোই অরুকে। লাজুকতা একটু বেশিই অনিকের মাঝে, আর গাম্ভীর্য মিলে বেশ একটা অবস্থা হয়েছে আর কি! মুখ ফুটে খুব কম সময়ই সে তার মুগ্ধতা প্রকাশ করেছে!
আকাশী-নীল শাড়ি অনিকের পছন্দ, তবে অরু আজ ইচ্ছে করেই লাল শাড়ি পড়েছে। সাথে গোটাকয়েক কাঁচের চুড়ি, ছোট্ট একটা টিপ, খোঁপায় বেলি ফুল। এমন সতেজ বেলি ফুল এই সন্ধ্যা বেলা কই পেলো অরু, তা অবশ্য মাথায় আসে না অনিকের। ছিপছিপে গড়নের, উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের একটা মেয়ে। চেহারায় মাধুর্জ্য আছে, তবে সেটা খুব বেশি বোঝা যায় না অরুর প্রকাশ ভঙিমার জন্য। বাইরের দুনিয়া থেকে আড়াল করে রাখে নিজেকে। এটা নিয়ে অবশ্য অনিকের কিঞ্চিত আপত্তি আছে , তবে অরু পাত্তা দেয় না অনিকের কথা!

____-------______------

অনিক এক ভাবে তাকিয়ে দেখছে অরুকে। সৃষ্টিকর্তার কি অপরূপ সৃষ্টি! অনিক সম্বিত ফিরে পেলো অরুর ডাকে,


-- অনিক , এই অনিক! কি দেখছো এভাবে? কই হারালো আমার জামাইটা? এই , এই...
(অরুর মুখে দুষ্টু হাসি, বুঝতে পারছে সে যে অনিক এভাবে এক পলকে ওকেই দেখছে)
-- হু, কি বলো অরু? নিজেকে ফিরে পেয়েই বুঝছে যে সে ধরা পড়ে গেছে। সব বাদ দিয়ে অনিক বলে উঠলো, এতো লেট! কই যে থাকো না তুমি। কত্তো সময় লাগে তোমার রেডি হতে! কখন যাবে দাওয়াতে , বলো তো, অরু!
-- আরেহ বাবা, রাগ করছো কেনো! একটু তো সময় লাগেই। রাগ করো না তো, তোমার পছন্দসই সাঁজতে গিয়েই তো লেট হলো আমার!
-- আমার পছন্দ? কই? কিভাবে? অনিক একটু দ্বন্দ্বে পড়ে গেছে লাল শাড়ি তার কবে থেকে প্রিয় হলো! অবশ্য এই মুহুর্তে তার খুব অপছন্দের লাল রঙকেও ভালো লাগতে শুরু করেছে। এ সবই ওই মেয়ের জন্য, হুট করে সব পাল্টিয়ে দিতে পারে মেয়েটা। অনিক ভাবে, কোন কপাল নিয়ে যে সে এসেছিলো দুনিয়ায়, হুট করে এমন লক্ষী এক মেয়ে এসে কপালে জুটে গেলো।
শেষে অনিকই তাড়া দিয়ে বলে, চলো আর বসে থেকে কাজ নেই। এখন বের না হলে শেষে বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে জামাই-বউও দেখা হবে না, খাবারও জুটবে না কপালে।
এসব বলে আর অনিক হাসতে থাকে...



অনিক গাড়ি কিনেছে কিছুদিন আগে। খুব শখ করেই অবশ্য কেনা, শুধুমাত্র বউকে নিয়ে যখন-তখন ঘুরতে পারবে বলে। নিজের বেতন-বোনাসের টাকায় কুলোয়নি বলে ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয়েছিলো। এখন সেই লোনের টাকা মাসে মাসে শোধ করছে । মাঝে মাঝেই অনিক আর অরু গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়, লং ড্রাইভটা আবার অরু-অনিক দুজনেরই পছন্দ। তাই দুজন ফ্রি থাকলেই হলো, লং ড্রাইভ মিস নেই এদের।
আজ ঠিক করেছে অরু ড্রাইভ করবে। অবশ্য অনিক একটু আপত্তি জানিয়েছে, অরু ড্রাইভার হিসেবেও মন্দ নয়, তাই শেষমেশ ওসব ধোপে টিকলো না অরুর দাবির কাছে । অনিকের উত্তরার বাসা থেকে কনভেনশন হলটা খুব দূর নয় অবশ্য, তবুও এই রাতের বেলা অরুকে ড্রাইভ করতে দিতে চাচ্ছিলো না অনিক।
ড্রাইভারের সিটে অরু, স্টিয়ারিং ধরে বসে আছে। ঢাকায় রাতের এই শুরুর সময়টায় বেশ ভীড় লেগে থাকে, সবার বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে, এ যেন ঘরের পাখি ঘরে ফিরে যাচ্ছে । মিডিয়াম গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছে অরু। লুকিং গ্লাসের দিকে বার বার তাকাচ্ছে, শাড়ির জন্য ব্রেকে পা দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে বটে, তবে অরু তা বুঝতেই দিচ্ছে না অনিককে। এর মধ্যে আবির দুইবার ফোন করেছে অনিককে, জানতে চেয়েছে কই তার বন্ধু! অনিককে অবশ্য বলেছে যে তারা আসছে। এদিকে অরুর অস্বস্তি রীতিমতো চরমে, কয়েকবার সময় মতো ব্রেক করতে করতে বেঁচে গেছে। এভাবে চালাতে চালাতে প্রায় এয়ারপোর্ট পর্যন্ত চলে এসেছে ওরা।
এয়ারপোর্টের সামনেই একটা বাই-রোড আছে হাইওয়ে থেকে বের হয়ে গেছে রেল স্টেশনের পাশ দিয়ে। দিনের বেলা অবশ্য ঢাকা শহরে ট্রাকের দেখা পাওয়া যায় না, তবে রাত গড়ালে যা দুইএকটা পাওয়া যায় রাস্তায়। ঢাকা মেট্রো -ট ৫৬৫৯, তেলবাহী ট্রাকটা ঠিক বিপরীত দিক থেকেই আসছে, পাশের লেন দিয়ে, বেশ খানিকটা গতিতে ......





(১ম পর্ব)

*****(চলবে)
--তালুকদার নাজমুছ সাফিন

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৩

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো লাগা রেখে গেলাম অরু'দের গল্পে।

শুভকামনা সবসময়।

২| ০৩ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৮

শরদিন্দু রূপক বলেছেন: , তারপর দুর্ঘটনা ঘটবে নিশ্চয়ই........

০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ১:৩৯

তালুকদার নাজমুছ সাফিন বলেছেন: দেখা যাক দ্বিতীয় পর্বে কি ঘটে.. :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.