নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ হাফিজুর রহমান সাগর

মোঃ হাফিজুর রহমান সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

“ একটি অপ্রেমের গল্প ”

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৭





কমলাপুর রেলস্টেশনের জমাট ভিড় । এমনিতে এখানে সারা বছর ভিড় লেগেই থাকে । ছুটি ছাটা, বিশেষ করে ঈদে তা মহামারীর আকার ধারন করে ।

ঈদের পর ঈদের আনন্দ নিয়ে মানুষ ঢাকা ফিরছে , এটাই হবার কথা । তবে তাদের মুখে আনন্দের ছটা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না । সেখানে দখল করে নিয়েছে আসন্ন ব্যাস্ততার উদ্বেগ, বিরক্তি আর দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি । সবাই ছুটছে ।

কিছু মানুষ ঢাকা ছাড়ার বিষাদে আক্রান্ত ।



তমাল শান্ত দৃষ্টিতে ভিড়ের মধ্যে দাড়িয়ে আছে । এই ভিড়, এতো এতো মানুষের ভয়ানক শব্দ দূষণ তাকে স্পর্শ করছে বলে মনে হচ্ছে না । এই মুহূর্তে তাকে প্লাটফর্মে বেমানান লাগছে ।

সে চট্টগ্রামগামী এই ট্রেনেই উঠবে, তবে তার এতো তাড়া নেই । ভিড় গলে ট্রেনে বা বাসে ওঠায় সে মোটামুটি বিশেষজ্ঞ । তাছাড়া হাতে এখনও ১০ মিনিট সময় আছে ।



দৃষ্টির আয়রন লেডি ভাবমূর্তি খানখান হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে । গত ৪৫ মিনিট যাবত সে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছে কিন্তু সবই পণ্ডশ্রম । প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কিতে সে ক্লান্ত, তার এখন দাড়িয়ে থাকাই দায় । তার উপর দুটি ভারী ব্যাগ আর একটা হ্যান্ড ব্যাগ । এখন তার প্রথম শ্রেণীতে কাটা টিকিটের মায়া ত্যাগ করে খালার বাসায় চলে যেতে ইচ্ছা করছে । অথচ সে কি কষ্ট করেই না বরিশাল থেকে ঢাকা এসেছে ।

দৃষ্টির কান্না পাচ্ছে । প্লাটফর্মের চায়ের দোকানে এতো মানুষের সামনে কেঁদে ফেলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না ।



তমাল ৩ মিনিট ধরে চা খেতে খেতে দৃষ্টিকে লক্ষ্য করছে । মেয়েটি চা সামনে নিয়ে মুখ নিচু করে বসে আছে, খাচ্ছে না । এর মাঝে মাত্র একবার মুখ তুলে তাকিয়েছে, তাতেই তমাল চোখে জলের আভাস দেখতে পেয়েছে । তার মানে মেয়েটি সমস্যায় পরেছে । মেয়েদের কোন সমস্যা সমাধানে একশ ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে; সুন্দরী হলে তো কথাই নেই । তমালের সেই একশ ছেলের মধ্যে থাকতে ইচ্ছা করছে না । এখানে তেমনটা ঘটছে না কেন !!!! ???? তমাল এগিয়ে যাবে কিনা ঠিক করতে পারছেনা । সে মেয়েদের সাথে ঠিক সপ্রতিভ না ।

তারপরও ...............



“আমি কি আপনার কোন কাজে আসতে পারি ?”



দৃষ্টি তমালকে আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করলো । এই যুবক তাকে সাহায্য করতে চায়, তার অন্য কোন মতলব নেই তো ????

“আমি ভিড়ের কারনে ট্রেনে উঠতে পারছিনা । এ ব্যাপারে আপনি কি আমাকে সাহায্য করতে পারেন ?”



“ট্রেনে উঠিয়ে দিতে পারবো কিন্তু আমাকে ২০০ টাকা দিতে হবে !!”



“মানে!! এই সামান্য ট্রেনে উঠিয়ে দেবার বিনিময়ে আপনাকে ২০০ টাকা দিতে হবে !!!! ফাজলামো করছেন ???”



“না, ফাজলামি করছিনা । আর এটা যদি এতই সামান্য কাজই হবে তবে আপনি এখানে মুখ নিচু করে কাঁদছেন কেন ??!!”



“আমি মোটেই কাঁদছি না !”



“তার মানে কাঁদার অভিনয় করছিলেন মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ??!!”



“প্লিজ, লিভ মি এলোন ।”



“হুম, এলোন তো আপনি হবেনই ; ট্রেন ছাড়তে আর ৪ মিনিট বাকি ।”



“প্লিজ, হেল্প মি ।”



“ঐ যে সেই কথা, ২০০ দিতে হবে ।”



“আচ্ছা... আচ্ছা... ঠিক আছে দিবো । একটা ব্যাগ তুলুন ।”



“সেক্ষেত্রে আরও ২০০ টাকা দিতে হবে !! ”



“এই! আপনি কি কূলি ??”



“ব্যাগই-তো টানছি ! কূলি না তো কি !!”



“সে জন্য কথায় কথায় টাকা !!”



“আর ২ মিনিট ।”



“আচ্ছা.........”

দৃষ্টি উপায় না পেয়ে হাঁটতে শুরু করলো । সে তমালকে মনে মনে তার শেখা সব গালি দিতে লাগলো । তার মধ্যে কিছু গালি ভয়াবহ ।





সেই পুরনো চায়ের দোকান ; দৃষ্টি ক্রুদ্ধ চোখে তমালের দিকে তাকিয়ে আছে । তমাল মুখ নিচু করে আছে । তমাল বুঝতে পারছেনা ঘটনা এমন কেন ঘটলো । তার এলোপাথাড়ি ভিড়ের মাঝেও ট্রেনে বা বাসে চড়তে অসুবিধা হয়নি কখনো । কিন্তু তখন তো তার সাথে ভারী ব্যাগ আর কোন সুন্দরী মেয়ে ছিল না ! এ পরিস্থিতি তার জন্য নতুন । তমাল কি বলবে বুঝতে পারছেনা । মেয়েটির রাগ করার যথেষ্ট কারন আছে ।



“আমাকে আপনার কোন টাকা দিতে হবেনা !!”



“আপনাকে টাকা দিচ্ছেটা কে, হুম !!?? আপনার জন্য আমার ট্রেন মিসড হয়েছে । আমি আপনাকে......।”



“আপনি তো এমনিতেই ট্রেন মিস করতেন । আমিই না আপনাকে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে গেলাম ! এখন আমাকেই দোষ দিচ্ছেন ??”



“এই চুপ !! সাহায্য না ছাই ; টাকা আয়ের ধান্দা ।”



তমাল চুপ করে থাকাই ভালো মনে করলো । তার কাজ শেষ, সে এখন কোন ঝামেলা ছাড়া কেটে পড়তে পারলেই বাঁচে ! কিন্তু হুট করে চলেই বা যাবে কিভাবে ।

তমাল এই প্রথম খোলাখুলি ভাবে দৃষ্টির দিকে তাকালো । তার বুকে একটা ধাক্কা লাগলো । মেয়েটিকে চমৎকার লাগছে ; তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে । । তার কোন মেয়ের সাথে পরিচয় নেই । তাই প্রায় সব মেয়েকেই তার কাছে চমৎকার লাগে ।

তবে এ অনুভূতি ভিন্ন । মনে হচ্ছে পুরো প্লাটফর্ম খালি, শুধু তারা দুজন আর এই চায়ের দোকান । প্রবল জ্বর হলে যেমন ঘোর তৈরি হয়, তেমন লাগছে । তমাল বুঝতে পারলনা, তার যে অনুভুতি হচ্ছে তা সব মেয়ের ক্ষেত্রে সব পুরুষের হয়না । প্রত্যেক পুরুষেরই একজন বিশেষ নারীর জন্য এমন সময় স্থির হয়ে যাওয়া ঘোরলাগা অনুভূতি হয় ।

তমালের আরও কিছুটা সময় মেয়েটির সাথে কাটাতে ইচ্ছা করছে । তার অস্থির লাগছে !!



প্লাটফর্মে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামছে । হালকা শীতের সাথে সাথে কুয়াশা স্টেশনটিকে ঢেকে দিচ্ছে । দৃষ্টি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছেনা । সে কিভাবে একা একা উত্তরা খালার বাসায় যাবে ??!! ঢাকার রাস্তাঘাট সে দিনের বেলাই তো ঠিক ভাবে চেনে না । তার পরিচিত সবাই তাকে একরোখা আর শক্ত মানসিকতার মেয়ে ভাবে ! কিন্তু তার জানেনা পুরোটাই দৃষ্টির অভিনয় । সে নিজেই আয়রন লেডির এই ভাবমূর্তিটা তৈরি করেছে ।

দৃষ্টি তমালের দিকে তাকালো । ছেলেটি চোরা দৃষ্টিতে তাকে দেখছে । দেখতে ভদ্র ভদ্রই লাগছে । দৃষ্টি ঠিক করলো এই ছেলেটিকেই বলবে তাকে তার খালার বাসায় পৌঁছে দিতে । তবে তেজ ছাড়া যাবেনা । এতে পরিস্থিতির লাগাম তার হাতে থাকবে । দৃষ্টি তার চেহারায় রাগি ভাবটা আবার নিয়ে আসলো !!



“আপনার জন্য ট্রেন মিসড হয়েছে ; সো, আপনি এখন পেনাল্টি দেবেন ।”



“কিভাবে ?”



“আপনাকে আমার কতো টাকা দেবার কথা ছিল ?”



“৪০০ টাকা । ট্রেনে উঠিয়ে দেবার জন্য ২০০ আর ব্যাগ টানার জন্য ২০০ ।”



“গুড । এখন আপনি আমাকে ৪০০ টাকার ডাবল মানে ৮০০ টাকা দিবেন আর আমাকে আমার খালার বাসায় পৌঁছে দিবেন ।”



তমাল মনে মনে খুশি হল । এখন এই মেয়ের সাথে থাকা যে ঝুঁকিপূর্ণ তা তার মাথায়ই আসলো না ।





পুরোটা রাস্তা দৃষ্টি ক্যাবে বসে বকবক করেই গেলো । সে নিজেও বুঝতে পারছেনা এতো কথা কেন বলছে ! এতো কথা সে তো তার বিশেষ মানুষটার সাথেও বলেনা !!

তমাল একাগ্রচিত্তে কথা শুনছে কিন্তু কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না । তার চেতনা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে !! এই ক্যাব কি সারা জীবন চলবে ??!! এমন লাগছে কেন তার ??

ক্যাবটা এসে উত্তরা ১০ নাম্বার সেক্টরের একটা মোটামুটি আলিশান বাড়ির সামনে থামল । তমাল ব্যাগ নামাচ্ছে, অথচ পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য তার কোন প্রস্তুতি নেই !!

ভাড়া দিতে গিয়ে দৃষ্টি চমকে উঠল !! হ্যান্ড ব্যাগে পার্সটা নেই !! সে অস্থির হয়ে আশেপাশে পার্সটা খুজতে লাগলো ।



“আপনি কি খোঁজেন ?”



“আমার পার্সটা পাচ্ছি না ।” দৃষ্টির চোখে জল ভরে গেছে ।



“ঠিক আছে, ভাড়া আমি দিচ্ছি ।”



“আপনার টাকা আমি নেবো কেন ??”



“আমার টাকা না, আপনারই টাকা !!”



“মানে?? আমার টাকা মানে ??”



তমাল অপ্রস্তুত হয়ে গেলো । থতমত খেয়ে বলল, “ না, মানে আমার কাছে আপনি কিছু টাকা পাবেননা; সেখান থেকে দিচ্ছি ।”



“ভাড়া তো আমি খালামনির কাছ থেকেই নিতে পারি! আপনি জানেন পার্সে প্রায় বাইশ হাজার টাকা ছিল !! আমার সারা মাসের থাকা-খাওয়া, হাত খরচ, বই কেনা......... সব কিছু ঐ টাকায় করার কথা ছিল । এখন বাবার কাছে আবার টাকা চাইতে আমার কি পরিমান লজ্জা লাগবে তা আপনি বুঝবেননা ।”



তমাল তার সামনের একজোড়া উদ্বিগ্ন, অশ্রু সজল চোখ দেখেই বুঝতে পারছে । এতক্ষণের ঘোর তাকে পুরোপুরি গ্রাস করলো । এবং সে এতক্ষণ পর সেই ভুলটি করলো ।

তার পকেট থেকে পার্সটি বের করে দৃষ্টিকে দিলো !!

পার্সটি পেয়ে দৃষ্টি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার কাছে এটা গেলো কিভাবে ??!!”

তমাল মিথ্যে কিছু একটা বলতে চাইল ; কিন্তু সে পুরোপুরি ভারসাম্যহীন এখন ।



“আপনাকে ট্রেনে উঠিয়ে দেবার সময় আপনার ব্যাগ থেকে সরিয়েছিলাম । আমার এটাই কাজ......।”



“আপনি.........”



“পকেটমার.........”



ঘটনাটা দৃষ্টি নিতে পারলনা । তার মনে হল, একটা দীর্ঘ সময় সে ক্যাবের ড্রাইভারকে অগ্রাহ্য করে এই নাম না জানা যুবকের সাথে দাড়িয়ে আছে ।



“আপনি চাইলে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে পারেন !!”



দৃষ্টি কোন কথা বলতে পারলনা । তার চাঁপা কষ্ট হচ্ছে ।

তমাল কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ফিরতি পথে হাঁটতে শুরু করলো । এটা সিনেমার শেষ দৃশ্য না যে, তার আকস্মিক সততায় মুগ্ধ হয়ে মেয়েটি তার প্রেমে পড়ে যাবে ।

তার মতো “ধলা তমালের” প্রেমে এমন সব মেয়েরা পড়েনা ।

শুধু অনিশ্চিত পথই তাদের প্রেমে পড়ে......।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.