নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সকল বিষয়ে শূন্য-তাই আমি অনন্য। জন্ম- ২৮।০২।১৯৮৭, জন্মস্থান- নোয়াখালী

সাইফুলসাইফসাই

আমি স্বাধীন বাংলা মা এর ছেলে। মা আমার বাংলায় কথা বলে। কিন্তু মা আমার আদৌ বর্ণমালা জানে না। তাই তো আমরা বাংলা ভাল ভাবে বলতে, লেখতে পারি না।

সাইফুলসাইফসাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের দিন পালিয়েছি

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৮

ঈদের দিন পালিয়েছি
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

পড়ালেখা বন্ধ! স্কুলে আর যাওয়া লাগে না ভীষণ খুশি! সবাই ব্যস্ত আমি শুধু মুক্ত। কোনো কাজ নেই ঘুরি ফিরে ঘরে। খাই দাই আর কেবল ঘুমাই। এভাবে দিন যাচ্ছিল কেটে। ২০০০ সাল তখন আমি ৫ম শ্রেণি পাস করি। বয়স অনুযায়ী ৭ম শ্রেণি বা ৮ম শ্রেণিতে থাকতাম। কারণ পড়ালেখা দুই-তিনবার পিছিয়েছি। যা শিখে ছিলাম প্রায় সব গেছি ভুলে। ভেবে ভেবে ঘুরেঘুরে বেকার দিন চলে যায় কয়েক বছর। বয়সটা ছিল কৈশোর কাল। বিভিন্ন কাজ-কর্ম করতে থাকি। দুই-তিন মাস হলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বাবা মারা যান শৈশবে। ভাইয়েরা ছোট থেকে কঠোর পরিশ্রম করে খাইয়েছে। বেকার থেকে কোনোকিছু ভালো লাগতো না! অশান্ত হয়ে ওঠে মন। দূরে কোথাও ঘুরতে বা বেড়াতে যেতে পারি নাই। তাই খুব খারাপ লাগতো। বাজে চিন্তা আসতো খুব। মার কাছ থেকে ১০ টাকা বা ২০ টাকা নিয়ে চলতাম। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে যাই। বোনদের বিয়ে হয়ে যায়। মেজো ভাই বিয়ে করার পর সেও আলাদ হয়ে যায়। সেজো ভাই বিদেশ চলে যায়। আমি আর আমার চেয়ে ২ বছরে বড় ভাই (টেজো মানে -৪ নম্বর) ও মা একসাথে থাকা শুরু করি। কিছু করার জন্য ঘর থেকে না বলে টাকা নিয়ে দুই বার কক্সবাজার চলে যাই। কোথায় থাকব কী করব ভেবে পাই না। কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে আবার ফিরে আসি। চট্টগ্রামও চলে যাই কিন্তু থাকতে পারি না। ঘরে সবার ছোট বিধায় আদরের ছিলাম। কিছুই করার জন্য আমায় দরকার হতো না। ভাইয়েরা-বোনেরা সব করতো। মা এবং ভাইয়েরা কোনোদিন কাজের জন্য চাপ দেইনি বা কাজ জোগাড় করেও দিয়নি।

একদিন হঠাৎ চিন্তা আসলো বিদেশ চলে যাবো। মাকে ও ভাইদের বললাম। তারা বিদেশের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করল। আমাকে এমব্রয়ডারি কাজ শেখার জন্য একটি এমব্রয়ডারির দোকানে ঠিক করে দিলো। বিদেশ যাওয়া আর হয় না। অপেক্ষা আর অপেক্ষা। কিছু দিন এমব্রয়ডারি কাজ শিখলাম। হালকা এমব্রয়ডারি শিখতে পারলাম। বিদেশে যাওয়া যখন হচ্ছে না। এলাকার এক মিজান ভাইয়ের ফার্মেসীতে সময় কাটাতাম ও তাকে কাজে সহযোগিতা করতাম। কিছু দিতো না। এই ফার্মেসীর পাশে একটা এমব্রয়ডারি দোকান হলো। তাদের সাথে পরিচয় হলো। যেহেতু আমি এমব্রয়ডারি কাজ শিখেছি তাদের সাথে সখ্যতা হলো। একদিন তারা এক অন্যের সাথে কথা বলা বলি করছিল। তারা নাকি ইন্ডিয়া থেকেছে। আমার মাথায় ভূত চাপলো আমিও চলে যাবো। তাদেরকে জানালাম একজন রাজি হলো। আমায় নিয়ে যাবে ঈদের সময়, কথা দিল। আমার চেয়ে ২ বছরের বড় ভাই (টেজো ৪ নম্বর) তখন লন্ড্রির ব্যবসা করতো এবং সাথে ৩ টাকা কল ও রিচার্জ কার্ড বিক্রয় করতো। আমিও তার সাথে সময় দিতে শুরু করলাম। চাঁন রাতে ক্যাশের টাকা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। ভাই টের পেলো না। ঈদের দিন সকালে মাকে বললাম গ্রামে বড় আপার কাছে যাবো এই বলে বের হলাম।

যার সাথ যাবো তার নাম বাদল। সে আমাদের বাসার কাছে থাকতো। বাদল ভাইয়ের কাছে গিয়ে একসাথে রওনা দিলাম ইন্ডিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাদল আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে তার বউকে দিল। তারপর গাবতলী গিয়ে বাসে করে বেনাপোল গিয়ে পৌঁছাই। বাস থেকে নেমে সে একটা গলির রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করল। কোনো কথা বলছে না। আমি তার পিছু পিছু চলতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর একটা কুঁড়ে ঘরে এসে থামলো। তারপর আমার কাছে কতো টাকা আছে বের করতে বলল। সব টাকা তাকে দিয়ে দেই। একটু পর এক ব্যক্তির নাম ধরে ডাকলো। তাকে কী করতে হবে বুঝিয়ে বলল। রাতে আর ঘুমাতে পারলাম না। সকালে ঐ ব্যক্তি সাইকেলে করে আমায় নিয়ে সীমান্তের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আরেক গ্রুপের সাথে কথা বলে ছেড়ে যায়। আমি শুধু চুপ করে আছি। দুপুরে-রাতে কোনো খাবার খাইনি। খুব ক্ষুধা। বাদলের কথা ছিল একটি এমব্রয়ডারি দোকানে কাজ ঠিক করে দিওয়ার। সে অনুযায়ী একটা ছোট কাগজে ঠিকানা লিখে দিল। একটি দোকানে চা-বিস্কুট খেতে দিল। খাওয়ার শেষে একটি জলাশয়ের কাছে নিয়ে ইন্ডিয়ান একটা লোক এসে ডোঙায় শুইয়ে পার করলো। মাঠ-ঘাট পেরিয়ে একটা কুঁড়ে ঘরে ডুকালো। সেখানে আমার ব্যাগ চেক করে কিছু টাকা পেলো তাও নিয়ে নিল। তারপর আবার হাঁটতে শুরু করলাম। তখন ছিল পুজার সময় ২০০৬ সালে দিকের কথা চারদিকে পটকা, বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজে খুব ভয় ভয় লাগছিল। আবার একটি ঘরে বিশ্রাম নিলাম ক্যালেন্ডরে বিভিন্ন দেব দেবির ছবি যা আমি প্রথম দেখলাম। এসব দেখে ভয় পেয়ে যাই।

এই ঘরে বিশ্রাম নিলাম অনেকক্ষণ। খুব পানি পিপাসা পেলো কী করব বুঝতে পারছিলাম না। যে ইন্ডিয়ার লোকটা আমায় নিয়ে এই পর্যন্ত আনলো সে আসলো। ঘর থেকে বের করে। তারপর বাহিরে এসে দেখি অনেক মানুষ। এক মহিলা দেখে বললাম বউদি পানি হবে কারণ তার মাথায় সিঁদুর ছিল। তখন সে একটা কাঁচের গ্লাসে পানি দিলো পানি খেলাম। পানি খাওয়া শেষে একটা সাইকেলে করে আমায় নিয়ে চলা শুরু করলো। আমাকে সাইকেলের সামনের দিকে বসালো। ভাঙ্গচুরা ইটের রাস্তা দিয়ে চলা সাইকেল চলছে। আমার ব্যথা লাগছিল। কিন্তু খুব ভালোও লাগছিল কারণ নতুন পরিবেশ সুন্দর গ্রাম, প্রকৃতির দৃশ্য এতো চমৎকার লাগছিল মন ভালো হয়ে যায় আবার ভয়ও লাগছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কী হবে অজানা! একটুপর একটা খাল পার হলাম নৌকায় করে। এক এক জনে ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ দেখতে পেলাম লেখা একটা দোকানে বনগাঁও। সেখানে কিছু খেলাম। তারপর একটি বাসে উঠে পড়লাম। বাস চলছে। আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে চলে এলাম সম্ভবত বসুরহাট। বাদল এই ঠিকানা দিয়ে ছিল ইন্ডিয়ার লোকটার কাছে। অনেককে জিজ্ঞাসা করে কাউকে এই ঠিকানা মতো পেলাম না। কারণ ঠিকানাটা ভুল ছিল। হঠাৎ এক ইন্ডিয়ান ছেলে বলল- বাদল নামে একজন কলকাতায় থাকে তার ভাই সুমন এখানে থাকে। ছেলেটা সুমন নামের ব্যক্তিকে ডেকে আনলো।

বাড়িতে কল দিতে বলল- তখন বাড়িতে মার কাছে ও ফার্মেসীর মিজান ভাইকে কল দেই। তাদের বলি যে আমি ইন্ডিয়ায় আছি, পাশের বাসার বাদল আমাকে ভুল ঠিকানা দিয়েছে এ কথা বলে কল কেটে দেই কারণ টাকা নাই। বসুরহাটের সুমন ভাই বলল চলে যেহেতু এসেছো তাহলে থেকে যাও। সুমন লোকটা বলল আমার ভাই বাদলে কাছে রেখে আসবো কাজ করে খাবে। যে ইন্ডিয়ার লোকটা আমাকে নিয়ে এপর্যন্ত নিয়ে এসেছে সে আমাকে কিছু রুপি দিয়ে ফিরে যায় তার বাড়িতে। তখন রাত হয়ে যায় সুমন ভাই তার বাড়িতে নিয়ে যায়। ঢেঁড়স ভাজি দিয়ে ভাত খেতে দেয়। রাতে তার বাড়িতেই থাকি। আশেপাশের বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কথা বলা বলি করছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রেল স্টেশনে নিয়ে যায়। টিকেট কাটে আর ট্রেনে উঠে যাওয়া যাত্রা শুরু করি তার সাথে সাথে। বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামে আর লোকজন উঠে আর নামে। একসময় আমরাও নেমে পড়ি। নামার পর দেখলাম ইংরেজি, বাংলা ও হিন্দিতে নাম লেখা শিয়ালদা স্টেশন। এরপর হাওরা ব্রিজ পায়ে হেঁটে পার হয়ে বাসে উঠে হাওড়া আমতলি পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় এসে নামি। এখানে সুমন ভাই এর ভাগনে থাকে। তখন ‍দুপুর বেলা তার বাসায় খাবার খাই এবং কথা ঠিক হয় এখানে তার কারখানায় কাজ করবো। সুমন ভাই এর ভাগনের তৈরি পোশাকের কারখানা।

সুমন ভাই এর ভাই বাদল এর সাথে দেখা করা জন্য আবার বাসে উঠে পড়ি। বাদল ভাই এর সাথে দেখা করে চলে আসি। সুমন ভাই বলে দিয়েছে তুমি আমতলা পুলিশ ফাঁড়িতে নেমে পড়বে আর আমি চলে যাবো। তার কথা মতো আমি বাস থেকে নেমে পড়ি, সে চলে যায়। ঈদ ও পূজার ছুটি তাই কারখানা বন্ধ। কোনো কাজ নেই। কারখানায় ঘুমাই আর খাই। আশেপাশের এলাকা ঘুরেঘুরে দেখি। দিন ভালো যাচ্ছিল। কিন্তু মা এর জন্য খুব পরান পড়তো। একা একা কাঁন্নাকাটি করতাম। ঈদের ছুটি শেষে কারখানায় স্টাফরা চলে আসে তাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করে চলে যাচ্ছিল দিন। হিন্দু এলাকায় প্রথম থাকলাম নানান রকমের মুর্তি দেখলাম। পূজার আনন্দ উৎসব দেখলাম। যা আগে কখনো দেখিনি। হঠাৎ ১৭ দিনের দিন কল আসলো বাংলাদেশ থেকে তোমার লোক আসছে তোমায় নিতে। সত্যি সত্যি আমায় নিতে দুই জন লোক আসছে। একজন হচ্ছে আমার ভাইয়ের বন্ধু আরেক জন ইন্ডিয়ান লোকটা যে আমাকে নিয়ে আসছে। দুপুরে খেয়ে আমরা তিন জন বাংলাদেশের উদ্দ্যেশে রওনা দেই। সুমন ভাই আমাকে দুইশত রুপি দিলো।

আমি যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছি মাকে দেখার জন্য। আমতলি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বাসে উঠে শিয়ালদা স্টেশনে নামি। তারপর ট্রেনে উঠে কোথায় যে নামলাম মনে নেই।বনগাঁ থেকে সাইকেলে করে সীমান্তের কাছে একটা বাড়িতে উঠলাম। পথে কিছু ইন্ডিয়ান ছেলে আমাদের আটকিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা যা ছিলো তা নিয়ে নিলো। সীমান্ত পার হয়ে একটি বাড়ি রাতে থাকি, শার্শা উপজেলায় অবস্থিত। আমার জন্য মেজো ভাই আর মেজো দুলাভাই অপেক্ষা করছিল। সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। মায়ের মন শান্ত হয় আমাকে পেয়ে। আমিও প্রশান্তি পাই। কিন্তু এই ব্যাপারে জানা জানি হলো যে আমাকে পাচার কারিরা ধরে নিয়ে গেছে। আমার সাথে দেখা হলে এগুলো বলতো আর আমি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তাম।

উত্তরা, ঢাকা।
২৩.০১.২০২৫

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমি ক্লাস ফোরে থাকতে একবার পাচার হয়ে যাচ্ছিলাম প্রায়। আপনার ব্লগ পড়ে সেদিনের কথা আজ আবার মনে পড়লো। :-B

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:১৫

সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: মন্তব্য করা জন্য জন্য ধন্যবাদ আপনাকে

২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:২০

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: মজা করে লিখেছেন । ভালো লাগলো ।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫০

সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩২

জটিল ভাই বলেছেন:
আপনার দেখি সেইরকমের অভিজ্ঞতা! ভালো।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:০০

সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: কবিতার চেয়ে আপনার এই ধরনের লেখা গুলো ভালো।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৩৮

সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.