নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

http://www.icchaghuri.blogspot.com

এ পথ যদি না শেষ হয়,তবে.........

বিভ্রান্ত_পথিক

বিভ্রান্ত_পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে সুদ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:০৮

সুদ, সুদি কায়কারবার এবং সুদের ভিত্তিতে ঋণদান ও ঋণ গ্রহণ সম্পূর্ণ হারাম। সুদকে আল কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে 'রিবা'। এর অর্থ বাড়তি বা বৃদ্ধি, অর্থাৎ মূল পরিমাণের ওপর বাড়তি গ্রহণ। এ বাড়তিটাকেই কোরআন মজিদ বলেছে 'রিবা', এবং এ পর্যায়ে কোরআন মজিদের ঘোষণা হচ্ছে_'তোমরা যে বাড়তি সম্পদ দিয়ে থাকো এই উদ্দেশ্যে যে তাতে লোকদের সামাজিক সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, আসলে আল্লাহর বিচারে তাতে সম্পদ বৃদ্ধি পায় না। বরং তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাকো, আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের ইচ্ছায়, তাই সম্পদ বৃদ্ধি হয়ে থাকে' (সুরা আর রুম, আয়াত ৩৯)।

তখনকার সময় সারা দুনিয়ায় সাধারণভাবে এবং আরবের আন্তর্জাতিক ব্যবসাকেন্দ্র মক্কায়ও সুদি কারবার ছিল ব্যাপক। বলতে গেলে তখনকার গোটা অর্থনীতিই ছিল সুদভিত্তিক। লোকেরা নির্দিষ্ট মেয়াদের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণ করত, কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ঋণ শোধ করা সম্ভব হতো না বিধায় সময় বাড়িয়ে দিতে বলত। এই সুযোগে মূল পরিশোধ্য ঋণের সঙ্গে বাড়তি সুদ যোগ করে পরিমাণ বাড়িয়ে ধরা হতো। কিন্তু তা মূলত ছিল একটা শোষণ। কেননা ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হলেও তাতে ঋণগ্রহীতা কোনো বাস্তব ফল পেত না। বাড়তি অর্থটা কোনো রকম বিনিময় ছাড়াই সে দিতে বাধ্য হতো। এটা যেমন নির্মমতা, পারস্পরিক সহানুভূতিহীন আচরণ, তেমনি কোনো রকম বস্তুগত বিনিময় ছাড়াই অতিরিক্ত অর্থ দিতে বাধ্য করা। আর এটাই শোষণ। আল কোরআন শোষণের সব পথ বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। মানুষ পরিশ্রমও করল আবার সুদ ও ঘুষের ব্যবস্থা রাখল, ইসলাম তা সমর্থন করে না। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সুদের বহুল প্রচলন রয়েছে। কিন্তু ইসলামী অর্থনীতিতে সুদের পরিবর্তে মুনাফার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে ব্যক্তি লাভ-লোকসানের সমান অংশীদার। সুদ হচ্ছে শ্রেণী-শোষণের এক ধরনের মারণাস্ত্র। তাই সুদ সম্পর্কে ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে_'জেনেশুনে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া ৩৬ বার জিনা করার চেয়েও অধিকতর পাপ' (আহ্মদ)। সুদের মতো ঘুষের ব্যাপারেও বলা হয়েছে, 'ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান দুই-ই দণ্ডনীয় অপরাধ।'

মানবতা ও নৈতিকতাবিরোধী আয়ের অন্যতম মাধ্যম সুদ। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৭৫ থেকে ২৮১ পর্যন্ত ছয়টি আয়াতে সুদের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে স্পষ্ট আলোচনা রয়েছে_'ওয়া আহ্লাল্লাহুল বাইয়া ওয়া হাররামার রিবা'_আল্লাহ্তায়ালা ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধ আর সুদকে হারাম করেছেন।'

'যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তিরই ন্যায় দাঁড়াবে, শয়তান তার স্পর্শ দ্বারা যাকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে' (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৫)।

সুদকে আল্লাহপাক হারাম করেছেন, কারণ সুদ অর্থনৈতিক কাঠামোকে ঘুণে খাওয়া কাঠের মতো বিধ্বস্ত করে, একদিকে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে সম্পদ জমা হয়, অন্যদিকে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী দিন দিন সর্বহারা হয়ে পড়ে। সুদের কারণে মানুষের মধ্যে ধনী-দরিদ্রের শ্রেণীভেদ শুরু হয়। শুরু হয় অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। অত্যাচার, জুলুম সীমা ছেড়ে যায়। চরিত্র ও সদ্ভাব-সম্প্রীতি, পারস্পরিক আস্থা, সহানুভূতি প্রভৃতি ধ্বংস হয়ে যায়। তাই আল্লাহ্তায়ালা বলেন, 'আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন' (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৬)।

অন্যদিকে যারা সুদমুক্ত হয়ে কাজ করে তাদের ওপর আল্লাহর নির্দেশ হলো, 'খুজমিন আমওয়ালিহিম সাদাক্কাহ্_হে নবী, তাদের কাছ থেকে জাকাত আদায় করে নিন।' 'ওয়া আতুজ্ জাকাতা_তোমরা জাকাত আদায় করো।' 'ওয়া আতু হাক্কুহু ইয়াওমা হাদদিহি_ফসল কাটার দিনই পাওনা হক দিয়ে দাও।'

'আল্লাহতায়ালা মূলধনের ওপর (বিনিময়হীন) বাড়তি সুদকে নির্মূল করেছেন এবং জাকাত বা দানকে উচ্চতা ও প্রবৃদ্ধি দান করেন। আর আল্লাহ তাঁর বিধান অমান্যকারী পাপী কোনো লোককেই পছন্দ করেন না, ভালোবাসেন না' (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৬)।

'মহান রাব্বুল আলামিন ব্যবসা তথা ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং হারাম করে দিয়েছেন সুদকে' (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৫) আল্লাহতায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং বর্ধিত করেন দানকে।

'আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন না অবিশ্বাসী পাপীকে' (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৬)। 'হে ইমানদারগণ! আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ইমানদার হয়ে থাকো' (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৮)। 'অতঃপর যদি তা না করো তাহলে আল্লাহ ও রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা রইল' (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৯)। মহান রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, 'হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ ভক্ষণ কোরো না' (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩০)। মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে যে সুদ খায়, যে হিসাব লেখে, যে সুদ দেয় এবং যে সুদের সাক্ষী থাকে, তারা সবাই সমান গুনাহ্গার (মুসলিম শরিফ, বর্ণনা সাহাবি হজরত জাবের (রা.)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত নবী করিম (সা.) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার ওপর লানত করেছেন (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্)। যে ব্যক্তি ঘুষ আদান-প্রদানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে, তার ওপরও আল্লাহপাক লানত বর্ষণ করেন (আহ্মদ, বাইহাকি)।

সুদি অর্থনীতির অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কর্জে হাসানা বা বিনা সুদে ঋণ প্রদানের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, 'এমন কে আছে যে আল্লাহকে কর্জ দেবে উত্তম কর্জ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৪৪)। মহানবী (সা.) বলেন, "আল্লাহর রাস্তায় 'সদকার' সওয়াব দশ গুণ আর বিনা সুদে কর্জ দেওয়ার সওয়াব আঠারো গুণ" (আল হাদিস)।

সুদ একটি হারাম ও অবৈধ উপার্জন। সুদ অত্যাচার ও শোষণের হাতিয়ার। ইসলাম সুদকে চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সুদের অনিষ্টতা সুদূরপ্রসারী। সুদের ব্যাপক অনিষ্টতার কারণে আল্লাহতায়ালা সুদ, সুদখোর এবং সুদের কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সুদের পরিণাম সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) বলেন_'সুদ ও ব্যভিচার যখন কোনো দেশে, শহরে, গ্রামে-গঞ্জে ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন তাদের ওপর আল্লাহর আজাব আসা অনিবার্য হয়ে পড়ে' (মুসনাদে হাকিম)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৭:৩৬

ইলুমিনাতি ইতআনিমুলি বলেছেন: মহানবী (সাঃ) এই ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করিয়া গিয়াছেন যে, এমন একটা সময় আসিবে যখন সমগ্র মানবজাতির মধ্যে একজন লোকও পাওয়া যাইবে না যে সুদ খায় না । যদি কেউ সরাসরি সুদ নাও খায়, তখাপি সুদের ধুলাবালি এবং ধোয়া তাহার শরীরে লাগিবেই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.