নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্বাক লেখক

নির্বাক লেখক

অতঃপর সৈকত

অতঃপর সৈকত › বিস্তারিত পোস্টঃ

থার্টি ফাস্ট নাইট

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৫

মাথার দুই সাইডের চুল খাড়া করে চুলের পিরামিড
বানালো আবির। আয়নায় নিজেকে দেখতে বেশ ভালোই
লাগছে তার! এমনিতেই সে অনেক সুন্দর। তারউপর আজ
আঁচল এর সাথে স্পেশাল দেখা হবে একটু পর, সো একটু
বেশি স্টাইল করাই যায়! প্রথমে অবশ্য দেখা করতে চায়
নি আঁচল। পরে অবশ্য আবিরের
জোরাজোরি তে মেনে নিল, হাজার হোক ভালোবাসার
আবদার!
ঢাকার এক স্বনামধন্য ভার্সিটির থার্ড
ইয়ারে পড়ে আবির। আঁচল সেকেন্ড ইয়ারে। গ্রামের
বাড়ি মফস্বলে হলে ও আবির রা শহরে অনেক আগে থেকেই
আছে। আবিরের ছোট বোন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
হোস্টেলে থাকে তার বোন।
২.
আঁচলের বাবা রাজি হন নি মেয়ের যাওয়ার ব্যাপারে।
উনি বড্ড সেকেলে! উনার কথা হলো "কি হবে এসব
থার্টি ফাস্ট নাইটে গিয়ে, বেহায়াপনা ছাড়া আর কিছু
তো হয়না এসবে! " আঁচলের আব্বু কে বাঁধা দেন আঁচলের
আম্মু। "আরে ধুর! তারা বান্ধবী রা মিলে একটু
মজা করবে এতেও তোমার বাঁধা!? তুমি এখনোও
ব্যাকডেটেড রয়ে গেলা "
সত্যিই # ব্যাকডেটেড রয়ে গেছেন আঁচলের বাবা আফতাব
সাহেব! মেয়ের নাম রোকেয়া খাতুনের জায়গায় আঁচল
হয়ে যাওয়া মানতে পারেন নি তিনি! মা মেয়ে সিরিয়াল
দেখে দেখে হঠাৎ একদিন মেয়েকে আঁচল ডাকা শুরু
করলেন তার আম্মু। ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হয়না আফতাব
সাহেবের! প্রথম প্রথম বেশ রাগ দেখালে ও এখন আর কিছু
বলেন না তিনি। তবে কষ্ট লাগে তখন, যখন
রোকেয়া বললে মেয়েকে আর কেউ চেনে না।
খানিক ভেবে আবার বাঁধা দেন আফতাব সাহেব। এইবার
আঁচলের মা রাগ দেখালেন " কি সব বল তুমি?
মেয়েতো চুরি করতে যাচ্ছে না, যাচ্ছে সামান্য
পার্টি তে, কেন যে মেয়ের সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কর
তুমি! মেয়ে বড় হয়েছে, তার ও
তো একটা চাওয়া থাকতে পারে! "
আফতাব সাহেব আর কিছুই বলেন না, শুধু মেয়ের মাথায়
হাত বুলিয়ে কি যেন পড়ে বললেন "সাবধানে থাকিস মা!
আর ড্রেসটা আরেকটু লং হলে পারতো না? "
এইখানেও বাগড়া দেন আঁচলের আম্মু "তুমি কি? সারাক্ষণ
মেয়ের পেছনে লেগে আছ কেন? যা তো মা? "
আঁচল বেরিয়ে আসে, পেছনে আফতাব সাহেব
কে ঝারতে থাকেন আঁচলের আম্মু। আফতাব সাহেব শুধু
বলেন "আমার মেয়ের কিছু হলে তুমি কাঁদতে পারবানা! "
আসলেই খুব সেকেলে আফতাব সাহেব! ছেলে মেয়ে বড়
হলে এসব পার্টিতে একটু যাবে, এটাই স্বাভাবিক! ইট ইজ
যুগের দাবী ম্যান!
৩.
রাত দুটো বাজে! আবির আর আঁচল অনেক
মজা করলো পার্টিতে। একটু ড্যান্স, একটু
চোখে চোখে চাওয়া, একটু হাত ধরা,
বুকে জড়ানো,চেহারা, ড্রেসের প্রশংসা, শরীরের
লুকিং নিয়ে কথা, এইতো ভালোবাসা!!! কি সুন্দর
সংজ্ঞা এ যুগের ভালোবাসার!
পার্টি রুমের উপরে অনেক গুলো খালি রুম, একটা রুম
আগে থেকেই বুক করে রেখেছে আবির। ইট ইজ থার্টি ফাস্ট
নাইট, বছরের লাস্ট নাইট টা যদি ভালো ভাবে ইনজয়
করা না যায়, তাইলে কেমনে হয়?
আঁচল ঘুমিয়ে পড়েছে, ঠিক ঘুমিয়ে পড়েছে বললে ভুল হবে!
তাকে ঘুম পাড়ানো হয়েছে বলা যায়! আবির এখন
নিশ্চিন্ত! একটু ড্রিংকসেই কাজ হয়ে গেছে! এখন
সে মজা করে এনজয় করতে পারবে তবে তার আগে আরেকটু
ড্রিংকস আনা লাগবে।
নিচে গিয়ে ড্রিংকসের একটা বোতল নিল আবির।
উপরে আসছে এমন সময় সিড়ির পাশের রুম থেকে একটু শব্দ
পেল আবির। এই শব্দ গুলোর প্রতি আলাদা ইন্টারেস্ট
থাকে! কান পাতলো আবির দরজায়
- না রিমন, প্লিজ এমন করনা
- বেশি না, মাত্র একবার, প্লিজ জান
- না কক্ষনো না! আমি এখনও ওসব করার মত বড় হইনি রিমন।
প্লিজ আমাকে আর রিকুয়েস্ট কর না।
- তুমি না আমাকে ভালোবাস? তাহলে আমার সাথে কিছু
তে তোমার বাঁধা কোথায়?
-হুম বাসি, ভালোবাসলেই যে এমন করতে হবে তা তো না?
তাছাড়া আমার ভাইয়া, আব্বু আম্মু
জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে
-উহু! কেউ জানবেনা এসব! কাম অন প্লিজ
এতটুকু শোনে আবির উঠে
দাড়ালো। মুখে হাসি তার! আরেহ বেটা! এভাবে জোর
করে কিছু হয়? একটু ঘুমের ঔষুধ খাওয়ালেই হতো!
বোকা ছেলে! আবার কান পাতলো আবির
- দেখ সীমা! তুমি আমাকে জোর করতে বাধ্য করছ কিন্তু,
মেনে নাও, নাইলে ফল ভালো হবেনা বলে দিলাম!
- ছি! তুমি এত খারাপ রিমন আমি আগে জানলে তোমার
থেকে অনেক দুরে থাকতাম।
এতক্ষনে নেশার ঘোর কেটে গেছে আবিরের!
ভেতরে কে আছে দেখার জন্য আকুল হয়ে উঠলো সে! এমন
সময় ভেতর থেকে কাপড় ছেড়ার আওয়াজ হলো!
ভেতরে যাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো আবির। দুর
থেকে দৌড়ে কাঠের দরজায় আঘাত করতেই
ভেঙে পড়লো দরজা।
ভেতরে ছেলেটা আর মেয়েটির ধস্তাধস্তি দেখা যাচ্ছে,
এসব দেখার সময় নেই আবিরের। হাতে থাকা ড্রিংকসের
বোতল ভেঙে পুরোটা ঢুকিয়ে দিলো সে ছেলেটার পিঠ
বরাবর। ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আবিরের
বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। শুধু "ভাইয়া" বলে একটা চিৎকার
দিলো মেয়েটা।
বোনের সম্ভ্রম হারাতে হারাতে বাঁচিয়ে আনার পর
একটা ভাই কখনোও আরেকটা মেয়ের সম্ভ্রম
নিয়ে খেলতে পারেনা। আবির ও খেলতে পারলোনা।
বাবার দোয়াতে বেঁচে গেলো আঁচল ও!
পরিশিষ্টঃ- রিমনের ফোনে বারবার
রিং করে যাচ্ছে তার বোন। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ
করছেনা। কাঁদতে কাঁদতে চোখের
পানি শুকিয়ে গেছে রিমনের বোনের। বয়ফ্রেন্ডের
সাথে পার্টিতে গিয়েছিল মেয়েটা, যা হবার
হয়ে গেছে তার! আবারও ফোন দিলো রিমনের
মোবাইলে তার বোন। শুধু রিং করেই যাচ্ছে, এবার ও কেউ
রিসিভ করছেনা। মেয়েটা এখনো ও জানে না যে তার
ভাইয়ের শরীরের রক্তে মোবাইলটাও লাল হয়ে আছে। যার
শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকেনা, সে ফোন রিসিভ
করবে কিভাবে??

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.