![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাচ্চু বাংলাদেশের একজন নাবিক। দুর্দান্ত সব কেমিক্যাল নিয়ে ট্যাংকারে করে ঘুরে বেড়ায় দেশ থেকে দেশান্তরে। টানে সবাইকে, কিন্তু বাধনে জড়ায় না। পদে পদে দুর্যোগ, বিপদ আর মৃত্যুর হাতছানি। আপনিও আমন্ত্রিত।
১.
আজকে সাদির বিশেষ দিন। আজকে সে তৃষাকে প্রপোজ করবে। তৃষা তার সাথে একই ক্লাসে পরে। ২ মাস আগে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যালে ভর্তি হয়েছে। তার তিন দিন পর ব্যাবহারিক ক্লাসে তৃষার সাথে পরিচয়। সাদি, তৃষা আর দুটো ছেলে, আর একটা মেয়ে এক গ্রুপে প্র্যাকটিকেল করে। অন্যদের মধ্যে মেয়েটার আর একটা ছেলের আগের রিলেশন আছে। অন্য ছেলেটি তৃষার জন্য সাদির সাথে কোন প্রতিযোগিতা করতে আসেনি। সাদি জানে প্রতিযোগিতা করতে আসলেও সব দিক থেকে সে এগিয়ে। সাদি তার চেহারা, স্বাস্থ্য, উচ্চতা, সেন্স অফ হিউমার, অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। সে সময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছে, তৃষার কোন বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা এবং নেই বলেই সে নিশ্চিত।
সকালবেলা অনেক যত্ন নিয়ে সে নিজেকে প্রস্তুত করে। কিভাবে চুল বিন্যাস করবে কিনবা কোন পোশাকগুলো পরবে, এসব খুঁটিনাটি সে অনেক দিন আগেই চিন্তা করে ঠিক করে রেখেছিল। সে তার ভাইয়ের বাসায় থাকে। বাড়ি থেকে তার বাবা যথেষ্ট টাকা পাঠায়, তবু সে তার ভাবি থেকে কিছু টাকা নিয়ে রেখেছে। তৃষাকে নিয়ে যেকোন রেস্টুরেন্টে সে যেতে পারবে, ব্যাপারটা তার জন্য স্বস্তিদায়ক।
নাস্তা শেষ করে সাদি তার ভাতিজিকে আদর করে ভার্সিটির উদ্দেশে রওনা হয়। আজকে রোদ কম, বাসের জানালা দিয়ে আসা চমৎকার বাতাস সে উপভোগ করতে পারত, কিন্তু সে দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। ইদানিং সে চুপচাপ থাকলে তৃষার সাথে কাল্পনিক কথপকথনে অংশগ্রহণ করে। কাল্পনিক কথপকথন একটি চমৎকার ব্যাপার, কারন এখানে অপরপক্ষ তাই বলবে যা আপনি শুনতে চাচ্ছেন।
২.
ক্লাস শেষ করে তৃষাকে সাদি পড়াশুনার কথা বলে লাইব্রেরীতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। দুই মাসে ওরা অনেকটাই ঘনিষ্ঠ এবং পড়ালেখার ব্যাপারে একজন অন্যজনের সাহায্যে অভ্যস্ত।
- কফি খাবা? প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে সাদি জিজ্ঞাসা করল।
- চল
- বাইরে কোথাও বসি আজকে, চল
- না, থাক। ক্যান্টিনেই চল আজকে।
ক্যান্টিনে দুই কাপ কফি নিয়ে তৃষার মুখোমুখি বসল সাদি। তৃষা দেখল তার কাপের টিস্যুটায় কিছু লিখা আছে। সে খুলে পড়ে দেখল,
Roses are red, violets are blue,
Your smile is sweet,
And I love you.
My heart is perfect, because you are in it. - Saadi.
সাদি তার ফোনে ব্যস্ত, এমন ভাব দেখাচ্ছে। সে ফেসবুকে পোস্ট দেখছিল, আর অপেক্ষা করছিল তৃষা কি বলে তার জন্য। সে ভাবছিল একটু পরই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করবে।
- সাদি, তোমাকে একটা কথা আগে বলা হয় নাই।
তৃষা কাপের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল। ওর হাতে টিস্যুতে লিখা পত্র।
- আমি স্কুলে থাকতেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। সে আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হয়। এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিল। এখন চট্টগ্রাম থাকে। আমার পড়ালেখা শেষ হলে তার সাথেই বিয়ে হবে।
তৃষা লিখাটা সাদির দিকে বাড়িয়ে দেয়। সাদির মনে হল তার মাথাটা শুন্য হয়ে গেছে। তার প্রচণ্ড চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হল, কিন্তু কেউ যেন গলাটা টিপে ধরে আছে। সে তার অবশ হাত বাড়িয়ে টিস্যুটা নিল।
- আসলে এইটা তোমার জন্য না। আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি। ওর সাথে কাল দেখা করব। এই লেখাটা কেমন হইছে সেটা তোমাকে জিজ্ঞাসা করব ভাবসিলাম। সরি, আমার আগে বলতে মনে নাই। তুমি মাইন্ড করিও না প্লিজ।
কথাগুলো বলে সাদি শব্দ করে হাসল। কথাগুলো কিভাবে তার মাথায় আসল সে তা বুঝতে পারল না। মস্তিস্কের ভিতরে ভোঁতা অনুভূতিটা এখনও আছে, নিউরনের সবগুলো সংযোগ যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তৃষা তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে, হয়তও বুঝতে চেষ্টা করছে সাদি সত্য কথা বলছে কিনা, চোখের কোনায় পানি চিকচিক করছে কিনা।
- তাই নাকি? আগে বলবা না। কে এই মেয়ে? কিসে পড়ে?
সহজ ভাবে বলার চেষ্টা করে তৃষা।
- আমাদের এলাকার মেয়ে। ইন্টারে পরতেছে। পরে তোমাকে বিস্তারিত জানাব।
- ঠিক আছে। ছবি দেখাবা কিন্তু।
- হুম, দেখাব। আজকে যাই তৃষা, কাল দেখা হবে।
- ওকে। চল উঠি।
বের হয়ে দুজন যার যার গন্তব্যে রিকশা নেয়।
৩.
সাদির প্রথম হৃদয়ভাঙ্গনের সূত্রপাত হয়েছিল, যখন সে ক্লাস সিক্সে পরে। একদিন স্কুল থেকে ফিরে সে বাড়ির পিছনের পুকুরে গেল। সন্ধ্যায় এক বাড়িতে গায়ে হলুদের দাওয়াত আছে, তাই ওর মা ধরে বেধে পাঠিয়েছে। ঘাটে তখন শুধু রুবা ছিল। রুবা সাদিদের পাশের বাড়িতে থাকে, সাদির তিন বছরের বড়। সেও সাদির সাথে হলুদের অনুষ্ঠানে যাবে। কাপড় রেখে সাদি ঝপ করে রুবাকে পার হয়ে পানিতে পড়ল। কিছুক্ষন দাপাদাপি করে মাথায় সাবান দিয়ে গোসল সেরে উঠে পড়ল। ঘাট থেকে যাবার সময় রুবা ওকে ডাক দিল।
- সাদি, একটু শোন তো
- কি রুবাপু?
- একটু এদিকে আয়
ঘাটের পাশে বেড়া দেয়া মেয়েদের কাপড় পাল্টানোর জায়গা। সাদি সেখানে উকি দিল। রুবাপু সেখানে দাড়িয়ে আছে, দুহাত বুকের কাছে জড়ো করে রাখা।
-আমার ব্লাউজের বোতামগুলা একটু লাগিয়ে দে। রুবাপুর ঠোঁটে দুষ্টমির হাসি।
সাদি কিছুক্ষনের জন্য হতভম্ব হয়ে যায়। তার মনে হল দৌড়ে পালানো উচিত। কিন্তু সে মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে যায়। একটা একটা করে ব্লাউজের টিপবোতাম বন্ধ করতে থাকে। চারপাশ অনেক বেশী নীরব মনে হয়। টিপবোতামের শব্দটা তার ভাল লাগে, রুবাপুর শ্যামল বর্ণের কণ্ঠা দেখতে তার ভাল লাগে, রুবাপুর বুক ছুয়ে আছে এই ব্যাপারটাও তার কাছে ভাল লাগে।
সাদি হটাৎ লক্ষ্য করে তার প্যান্টের চেইনের অংশটুকু অদ্ভুতভাবে ফুলে আছে। সে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, লজ্জায় তার কানের ভেতরটা গরম হয়ে যায়। শেষ বোতামটা বাকি থাকতেই সে দৌড়ে বের হয়ে যায়।
-রুবাপু আমি যাই, দেরি হয়ে যাইতেছে।
-এই শোন, কারো কাছে বললে কিন্তু মার খাবি। -পিছন থেকে সে রুবার গলা শুনতে পায়।
এরপর কিছুদিন সাদি লজ্জায় রুবাকে এড়িয়ে চলল, কিন্তু মনে মনে সে রুবাপুকে নিয়ে কল্পনার ঘুড়ি উড়াতো। আস্তে আস্তে ও রুবার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। সবাই রুবাকে সাদির বড়বোনের মত অভিভাবক হিসেবে মেনে নেয়। রুবা সাদির পড়ালেখাসহ সব বিষয়ে বড়বোনের মতই শাসন করত। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় সাদির প্রথম চুমুর অভিজ্ঞতা হয়। একবার বন্ধুর কাছ থেকে পর্ণের সিডি পাওয়ার পর দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল রুবাপুর সাথে বসে। ক্লাস নাইনে উঠার পর এক বৃষ্টির দিনে সাদি আর রুবা তাদের শারীরিক ভালবাসা ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। কলেজে উঠার পর সাদি ঢাকা চলে যায়। রুবা তখন এলাকার কলেজে ডিগ্রী পড়ত। একদিন সাদি তার মায়ের কাছে খবর পায়, রুবার বিয়ে ঠিক হয়ছে। রুবাপুর বিয়ে হবে, এটা সে মেনে নিতে পারেনি। সে বিয়েতে যায়নি এবং তখন থেকে রুবার কোনও ফোন কল সে ধরেনি।
ক্যাফেটেরিয়ার ঘটনার পর রাতে সে রুবাকে ফোন করে সে ঠিকানা নিল। পরদিন সকালে ভার্সিটি না গিয়ে সে রুবাপুর বাসায় গেল। বাসা খুজে পেতে সমস্যা হল না। রুবা সাদিকে সামনের ঘরে বসতে দিল, তার স্বামী অফিসে। রুবা নাস্তার আয়োজন করে রেখেছিল। সাদি যখন খাচ্ছিল তখন সে সাদির পড়ালেখা, বাবা মা, ভাই ভাবি সম্পর্কে খবর নেয়।
-চা খাবা? রুবা জিজ্ঞাসা করল।
-দাও।
রুবা রান্নাঘরে গেলে সাদি বাসাটা ঘুরে দেখে। তিন রুমের বাসা, সুন্দর করে সাজানো গোছান। সে রান্নাঘরে গিয়ে রুবার পিছনে দাড়ায়। রুবাপু আগের থেকে ফর্সা হয়েছে, তার গ্রীবা, খোঁপায় বাধা চুল, কানে হালকা দুল সাদি লক্ষ্য করল। তার কাধে সাদি হাত রাখল, রুবা ঘুরে তাকাল।
-রুবাপু, তুমি কি আমাকে আর ভালবাস না?
-বাসিতো। তোকে আমি সবসময় ভালবাসব।
-তাহলে আমাকে একবার আগের মত করে ভালোবাসো।
সাদি রুবার ঠোটে চুমু দেয়ার জন্য এগিয়ে যায়। রুবা তার মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
-এখন আর তা সম্ভব না সাদি। এখন সময় পাল্টে গেছে।
সাদি বুঝতে পারল না কি বলবে। একটু পর বলল, আমি যাই রুবাপু। দেরি হয়ে যাইতেছে।
দরজা খুলে সাদি জুতা পরতে থাকল। রুবা কয়েকবার চা খাওয়ার কথা বলল। সাদি কোনও জবাব দিল না। চুপচাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। -আবার আসিস, পেছন থেকে রুবাপু বলল।
৪.
সাদি এখন একটা কাঠের চৌকিতে শুয়ে আছে। সে পাশের মেয়েটার দিকে তাকাল। মেয়েটা দক্ষভাবে বুকের অন্তর্বাসের হুক আটকাচ্ছে। সাদি নিজেকে পরিস্কার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল। রুমের কোনায় একটা বেসিন আছে। কোন বাথরুম নেই। ব্যাগ থেকে খাতা বের করে দুটো পাতা ছিঁড়ল। নিজেকে পরিস্কার করে কাগজ রুমের কোনায় ছুরে মারল। সে এখন আছে ফার্মগেটের একটা হোটেলে। মেয়েটাকে ১০০ টাকা দিবে নাকি চিন্তা করল। দালালকে সে ৮০০ টাকা দিয়েছে, ১০০০ টাকা চেয়েছিল। মেয়েটার দিকে সে আবার তাকাল, ওর শ্যামলা গায়ের রঙ রুবাপুর সাথে মিলে। দালাল ওকে ফোনে আরও অনেক মেয়ের ছবি দেখিয়েছিল। আরেকটা মেয়ে পছন্দ হয়েছিল, কিন্তু রেট বেশি। পরেরবার ওই মেয়েটা নিবে সে। আচ্ছা, ভাবীর মত কারো রেট কত হতে পারে?, চিন্তাটা মাথায় আসতেই সে অপরাধভোগে আক্রান্ত হল। ভাবিকে সে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করে। কাপড় পরে সাদি রাস্তায় বের হয়ে আসল। আজকে আর বাসায় যাবে না, ভার্সিটির হলের দিকে রিকসা নিল। আজকে রাতে কোন ধরনের নেশা করতে হবে, ১০০ টাকা খরচ করলেই বড় পুটলি পাওয়া যাবে। প্রেম খুজে সে ক্লান্ত, তার থেকে মাসে মাসে দু তিন হাজার টাকায় ফার্মগেটে ভালবাসা কেনাই অনেক ভাল।
©somewhere in net ltd.