নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্যানভাস এর ছেড়া পাতা. . .

হৃদয়ের ক্যানভাস

জীবনের প্রতিটা মূহুর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি . . .

হৃদয়ের ক্যানভাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালো থাকিস বন্ধু . . .(রিপোস্ট)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:২৪

সবেমাত্র s.s.c পাশকরে কলেজে উঠেছি। প্রথম কলেজ, নতুন পরিবেশ অন্যরকম অনুভুতি।



সবাই বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এক হয়েছি। প্রথম দিনেই প্রায় সবার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। কয়েকদিনের মাঝেই অনেক বন্ধুও হয়ে যায়। বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেয়া, এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানো আর হইহুল্লর করাই হয়ে দাঁড়ায় আমাদের নিত্যদিনের কুকর্ম। অসীম কুকর্মের সাথে সাথে সুকর্মও(পড়াশুনা) যে করা হতনা তা নয়, তবে সেটা সিমিত। এই জন্য প্রান হজমক্যান্ডি দিয়ে অনেক বকাও হজম করতে হয়েছে। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের ১ম বর্ষের কর্ম।



অনেকের যেমন সব বন্ধুর মাঝে হাতেগোনা দু’একজন ভালোবন্ধু থাকে আমাদের তেমন ছিলনা। সবার সাথে সবার সম্পর্ক ছিল মাংস আর হাড়ের সম্পর্ক। কাজেই কাওকে আলাদা করে দেখার বা ভাবার কোন অবকাশ ছিলনা।



কলেজে পড়ি, মানে মোটামুটি বড় হয়েছি। এই বড় হওয়ার সার্থকতা প্রমান করতেই মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে অল্প সল্প সিগারেট খাওয়া হত। আবার এই সিগারেট নিয়ে আমরা একটা খেলাও খেলতাম।



সবাই গোলহয়ে বসে একটা সিগারেট জ্বালানো হতো, সেটা সবার হাতে পর্যায়ক্রমে ঘুরবে যার হায়ে সিগারেট এর ছাই পরবে সে সবাইকে খাওয়াবে। আমরা কেউ স্মোকার ছিলাম না। সিগারেটটা উপলক্ষমাত্র আসলে কারো মানিব্যাগ খালি করাই ছিল এই খেলার মুখ্য উদ্দেশ্য। মানিব্যাগ খালি না হওয়া পর্যন্ত চলত এটা সেটা খাওয়া। একারনেই আমরা কেও কখনো মানিবাগে বেশি টাকা নিয়ে বের হতামনা। কে জানে কোনদিন কার উপর সুনামি আসে। তবে অল্প থাকতো যাতে সবাই মিলে চা, সিঙ্গারা খাওয়া যায়।







আমার এক পাগলা টাইপ বন্ধুর নাম রায়হান। একটু পাগলা টাইপ হলেও ওর মনটা ছিল খুব ভালো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে ওর মন আমরা বুঝলেও কোন মেয়ে বুঝতনা। এনিয়ে রায়হানের অনেক আক্ষেপ ছিল। প্রায়ই বলত ২য় বর্ষে পড়ি অথচ একটা গার্লফ্রেন্ড নাই আপ্সুস। আমরা ওর এই আক্ষেপ দেখে হাসতাম আর আশ্বাস দিতাম তর গারল ফ্রেন্ডু আমরা বানায়া দিমু। যেই কথা সেই কাজ, সবাই মিলে শুরু করে দিলাম গার্লফ্রেন্ড খোঁজা কার্যক্রম। এই বন্ধু ওই মেয়ে দেখিয়ে বলে দেখ দোস্ত চলবো কিনা?? তো অন্য বন্ধু বলে, না ওই মেয়ের পাশের মেয়েটা চলে নাকি??



এভাবেই চলছে গার্লফ্রেন্ড খোঁজা কার্যক্রম কিন্তু কোন অগ্রগতি নাই। কারন- আজ এক মেয়েকে প্রপোজ করার প্রস্তুতি নিসে, তো কাল যেয়ে দেখে ওই মেয়ে অন্য ছেলের হাত ধরে গল্প করছে।



এটা দেখে রায়হান বলত- নাহ এই কালে সিঙ্গেল মেয়ে পাওয়া বিরাট দুস্কর।







একদিন কোন এক মেয়েকে দেখসে কলেজের আসে পাশের কোনো এক জায়গায়। আইসা আমাকে বলে চল দোস্ত বাইরে একটা মেয়ে দেখসি আমার মনে লাগসে। আমি গেলাম ক্লাস রেখে বাইরে। কিন্তু যাইয়া দেখি কেও নাই।



আমি বলি-



ধুর সালা কই?



মজা নেও আমার সাথে??



ওই বলে না- আমি মাত্র দেখসি, মনে হয় গেসে গা।



এই নিয়ে আমাকে কয়েকদিন ভীষণ জ্বালাইসে। একদিন মাঝ রাতে ফোন দিয়া ঘুম ভাঙ্গায়া বলে- দোস্ত সেই রকম একটা রোমান্টিক একটা গান শুনতাসি পুরাই আবেগি। কেমন লাগে??? মেজাজ পুড়াই চরমে তাই বললাম তর যদি আবেগ এতই বেশি থাকে তাইলে ডিব্বায় ভইরা রাখ সালা। আমার ঘুম ভাঙ্গাইলি কেন???



আমি জানতাম ওর রাতজাগার বাতিক আছে।



আবেগ টাবেগ কিচ্ছু না হুদাই আমারে ফোন দিসে আমার ঘুমের তেরটা বাজাবার জন্য। এই কারনে বেশিরভাগ রাতেই আমি মোবাইল অফ করে ঘুমাতাম। কিন্তু যেদিন অফ করতে ভুলে যেতাম সেইদিনই আমার ঘুমের তেরটা বাজত। কেনজানি ও আমাকে একটু বেশি জ্বালাত হয়ত বেশি ভালবাসত বলেই।



একবার আমি আর রায়হান রিক্সা করে যাচ্ছিলাম একটা বাসের ধাক্কায় আমি রিক্সা থেকে পরে গিয়ে পায়ে সামান্য ব্যাথা পাই। রায়হান বাস ড্রাইভারের উপর চড়াও হয়। আমি নিজেই অইদিন রায়হানের রাগত চেহারা দেখে ভয় পেয়েছিলাম। বাসের কয়েকজন মিলে ওকে সামলায়। তারপর ও বাসের ড্রাইভার এর কাছ থেকে রিক্সার ক্ষতিপূরণ ৫০০ টাকা আদায় করে রিক্সাওয়ালাকে দেয় বলা বাহুল্য যে রিক্সার তেমন কোন ক্ষতিই হয়নি।



রায়হান রিক্সাওয়ালাদের খুব মায়া করত। আমি কখনো ওকে কোন রিক্সাওয়ালাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি।



সবময় রিক্সাওয়ালাদের ন্যায্য ভারার চেয়ে দু’এক টাকা বেশি দেয়ার চেষ্টা করত।



বলত রিক্সাওয়ালারা সৎ উপার্জন করে। পরিশ্রম করে টাকা আয় করে। এদের কিছু বেশি দিলে ক্ষতি নাই।



আমাকে বলত- তোর কারনে যখন কারো মুখে একটু হাসি দেখবি তখন নিজের কাছেই খুব ভালো লাগবে।



আসলেই যখন কোন রিক্সাওয়ালাকে একটু বেশি ভারা দিলে তার ক্লান্ত মুখে এক চিলতে মলিন হাসি দেখি তখন খুব ভালো লাগে। তাই যখনই আমার মন খারাপ থাকে তখন সাধ্যমত এমন কাজ করার চেষ্টা করি আর ভাবী এদের কষ্টের সামনে আমার কষ্ট বড় নয়। পৃথিবীতে আমার চেয়ে অনেক কষ্ট নিয়ে মানুষ আছে এর তুলনায় আমার কষ্ট নগণ্য। নিমিষেই মনটা ভালো হয়ে যায়।







একদিন সকালে খবর পাই রায়হান অসুস্থ, হসপিটালে। গত সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরে। সবাই ছুটে গেলাম হসপিটালে। গিয়ে দেখি রায়হান শুয়ে আছে হসপিটালের বেডে। একদিনেই কেমন মলিন হয়ে গেছে ওর মুখটা । বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো। মোটামুটি সুস্থ হলে, সেদিন রাতেই ওকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে এমন অসুস্থ হওয়া সম্পর্কে ডাক্তার তেমন কিছুই বললেন না। কয়েকটা টেস্ট করতে দেয়া হয়েছে সেগুলু এলেই বলা যাবে। পরদিন রিপোর্ট আসে কিন্তু আমরা যেমন আসা করেছিলাম তেমন না, ডাক্তার যেটা সন্দেহ করেছিলো সেটাই- ব্লাড ক্যানসার। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওর বাবা মা ভীষণ ভেঙ্গে পরল। বার বার মনে হতে লাগলো কোথাও হয়ত ভুল হচ্ছে। সবাই মিলে অন্য জায়গা থেকে টেস্টগুলো কোরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আবার সবগুলো টেস্ট করানো হল কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ফলাফল অভিন্নই রয়ে গেল।







সাথে সাথেই চিকিৎসা শুরু করা হয়। ওর কাছথেকে লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু সম্ভব হয়নি, ওর কাছে লুকিয়ে কি আর চিকিৎসা করা যাবে???



নিজের ক্যানসার জানার পরও অসম্ভব রকমের স্বাভাবিক ছিল। আমাদের সবার সাথে আগের মত ঘুরত আড্ডা দিত আমরাও থাকতাম ওর সাথে কিন্তু ওর মত স্বাভাবিক থাকার মত প্রাণশক্তিটুকু আমাদের ছিল না। তবুও চেষ্টা করতাম আগের মতই হাসিখুশি থাকার কিন্তু হয়ে উঠত না।



রায়হানের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল না। বাবা-মা এর একমাত্র সন্তান ছিল রায়হান। সবাই মিলে শত চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারিনি তাকে মরনব্যাধির হাত থেকে। রায়হান আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেল না ফেরার দেশে।



ঘাতক ক্যানসার ছিনিয়ে নিল আরেকটি তাজা প্রান। ও মারা যাবার আগে আমায় শেষকথা বলেছিল ভালো থাকিস বন্ধু। চোখের জলে জামা ভিজিয়েও সেদিন ওকে আর কথা বলাতে পারিনি। বলতে পারিনি বন্ধু তোর যখন মনে চায় আমায় ফোন দিস আমি আর রাগ করব না।



শুধু আলতো করে ওর হাতটা ধরেছিলাম। অনেক শীতল ছিল সেই হাতের স্পর্শ। সেই শীতল স্পর্শ আমি এখনও অনুভব করি।



কত নির্ভাবনায় ঘুমাচ্ছিলো আমার বন্ধুটি। কিন্তু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলামনা আমাদের হাসিখুশি বন্ধুটি আমাদের মাঝে আর নেই, আমাদেরকে ফাঁকি পাড়ি জমিয়েছে অজানার দেশে। রায়হান আমাদের সবার মাঝে ছিল, আছে এবং থাকবে চিরকাল। আজ রায়হানের মৃত্যুবার্ষিকী। কিভাবে কিভাবে একটি বছর হয়ে গেল??? মনে হচ্ছে এইতো সেদিনই একসাথে বসে চা খেলাম, আড্ডা দিলাম।







এসবকথা ভাবতে ভাবতা কখন যে রায়হানের বাসার কাছাকাছি চলে এলাম, খেয়ালই করিনি। রিক্সাওয়ালার কোথায় আমার ভাবনায় ছেদ পরল- “মামা কোনদিকে যামু? ডাইনে না বাইয়ে?” রিক্সাওয়ালাগুলাও এমনভাবে মামা ডাকে যেন কতদিনের চেনা।



রায়হান মারা যাবার পর থেকে আমি আর ওর বাবা-মা এর সামনে দাঁড়াতে পাড়ি না। তাদের বিষণ্ণ মুখদুটো আমাকে শূন্যতার মত গ্রাস করে। আমি আর সহ্য করতে পাড়ি না। বুক ফেটে বেরিয়ে আসে অশ্রুহীন কান্না। রায়হানের বাড়িতে আর যাওয়া হয়না।







রিক্সাওয়ালা মামাকে ২০ টাকার ভারা ৩০ টাকা দিয়ে ওখানেই নেমে যাই। রিক্সাওয়ালার ক্লান্ত মুখে সেই মলিন হাসি দেখে মনটাকে ভালো করার ব্যার্থ চেষ্টা করতে করতে হাটতে থাকি ফিরতি পথেরদিকে। আর নিজেকে প্রশ্ন করি আসলেই কি সব কষ্ট ভোলা যায়???



মনে হয় কিছু কিছু কষ্ট কখনই ভোলার নয়।







যেখানেই থাকিসনা কেন ভালো থাকিস বন্ধু . . . . . . . . . . . . . . . .

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৩৯

সাইক চৌধুরী বলেছেন: আপনার মত আমারো মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আপনার মত আমিও আপনার বন্ধুর জন্য শুভ কামনা করছি। নিশ্চয়ই উনি অনেক ভালো থাকবেন।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৪৭

হৃদয়ের ক্যানভাস বলেছেন: এমন সকল রায়হানই ভালো থাকুক এই প্রার্থনা করি। যারা অসময়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে . . .

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৪০

শিশিরের শব্দ বলেছেন: :( :(

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৪৮

হৃদয়ের ক্যানভাস বলেছেন: :( :(

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৫৪

আমি তানভীর বলেছেন: সিগারেট দিয়ে আমরা নিম্মাই খেলতাম, যে নিয়ম ভাঙবে সে খাওয়াতে হবে ।
শেষে এসে খারাপ লাগলো । পোষ্টে প্লাস

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০১

হৃদয়ের ক্যানভাস বলেছেন: কিজানি ভাই খেলার নামটাম জানিনা। আমি ননস্মোকার শুধু বন্ধুরা মিলে দুষ্টামি করে খাইসিলাম কয়েকবার।

বাস্তবতা ক্যান জানি বেশিরভাগ সময় খারাপই হয় :(

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:১৪

আমি তানভীর বলেছেন: নিম্মাই মূলত গাঁজা দিয়ে খেলে । তবে আমরা গাঁজাখোর না । তাই সিগারেট দিয়ে খেলি । ১ম জন টান দিয়ে ধুয়া আটকে রাখবে, ২য় জনকে পাস করবে । তারপর সে টান দিয়ে ৩য় জনের হাতে দিলে ১ম জন ধুয়া ছাড়তে পারবে । এভাবে সিগারেট হাতে হাতে ঘুরবে । আগে আগে ধুয়া ছাড়লে, নাক দিয়ে ধুয়া ছাড়লে, কথা বললে বা কাশি দিলে শাস্তি ;)

ট্রাই মাইরেন, নরমাল সিগারেট ৪-৫ টা লাগে, একটার পর একটা । তবে আমরা গুদাংগ্রাম দিয়া বেশী খেলতাম ;)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২০

হৃদয়ের ক্যানভাস বলেছেন: :) :)

৫| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:০৮

ঈষাম বলেছেন: এইটা কতোবার যে পড়লাম !

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৪৩

হৃদয়ের ক্যানভাস বলেছেন: আমি একবারই পড়সি লিখার সময় আর পড়ি নাই

৬| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৪৪

আজমান আন্দালিব বলেছেন: প্রথম দিকে গল্পের মতোই মনে হচ্ছিল। শেষে এসে ধাক্কা খেলাম। রায়হানের আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২১

হৃদয়ের ক্যানভাস বলেছেন: রায়হানের আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক . . .

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.