নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন মুক্ত মনের লেখক। আমার যা ভালোলাগে আমি তাই লেখার চেষ্টা করি।

শেখ সাকিবুল ইসলাম

আসসালামু আলাইকুম, আমি সাকিব। আমি একজন ব্লগার ও ইউটিউবার। আশাকরি আমার লেখা আপনাদের ভাল লাগবে।

শেখ সাকিবুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীলের প্রেমাকে শেষ ছোয়া

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:১৩

নীল নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে। কলেজের নাম নন্দীপাড়া সরকারি কলেজ। ইছাপুরা থেকে উপজেলার ভিতরে। এই জাগাটাতে দোকান, ছোট বাজার, আর অল্প কিছু বাড়ি আছে। নতুন কলেজে ভর্তির পর অনুভূতিটাও একটু অন্য রকম ছিল। এস.এস.সি তে ভাল ফল করার কারণেও অনুভুতিটা হতে পারে। নবীন বরণ অনুষ্ঠানে নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিত হয়ে সবাই আনন্দিত। প্রথম ক্লাসের জন্য অপেক্ষাটা একটু দীর্ঘ হলেও সেই অপেক্ষাটা শেষ হল। প্রথম ক্লাসে সিলেবাস বিশ্লেষণ ছাড়া নতুন কোন পাঠ হয়নি। তবে নীল ক্লাসে মনোযগী ছিলোনা। তার চোখ আটকে ছিল ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার দিকে। যার চুল গুলি ছিল রেশমের মত। ফেনের বাতাশে সামনের কয়েকটি চুল উড়ছিল। চোখ দুটি ডাগর ডাগর, মনে হয় দুটি চোখ দুটি সমুদ্র। হাসিটাও অনেক সুন্দর মনে হয় কাঁচের অনেকগুলি টুকরো একসাথে শব্দ করছে। তার কণ্ঠ কোয়েল পাখির মত। সে যখন কথা বলে মনে হয় চারপাশে রিমঝিম বৃষ্টি পড়ছে। হেটে গেলে মনে হয় নুপুরের শব্দ করছে। নীল সেই মেয়েটির পাশেই বসেছে আজ। মেয়েটি নীলকে বলে কলম আছে? নীলের কাছে একটাই কলম ছিল সেটি সে মেয়েটিকে দিয়েছে আর নিজে নষ্ট কলম দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইন লেখার ভান করছে। ক্লাস শেষে মেয়েটি যখন চলে যাচ্ছিল নীল তখন মেয়েটির চলে যাওয়া দেখছিল। নতুন বন্ধুদের মধ্য থেকে একজন এসে একসাথে বাসায় যাবার জন্য অনুরোধ করে। নীল বাসায় যাবার পথে তার নতুন বন্ধুর সাথে কোন কথা বলেনা নতুন বন্ধু কি বলছিল তাও সেভাবে খেয়াল করেনা। সে শুধু সেই মেয়েটির কথাই চিন্তা করে। পরদিন ক্লাসে যাবার জন্য নীলের ব্যস্ততা অনেক বেশি। কিন্তু সেই মেয়েটি আজ আসেনি। ক্লাসের স্যার যখন প্রশ্ন করলেন প্রেমা আজ কেন আসেনি তখন নীল জানতে পারলো তার পছন্দের সেই মেয়েটির নাম প্রেমা। যদিও কেউ বলতে পারেনি কেন সে আজ ক্লাসে আসেনি। আজকে নীলের মন খারাপ। ৩য় দিন অবশ্য প্রেমা ক্লাসে এসেছিল কিন্তু নীলের সাথে কোন কথা হয়নি। ৪থ দিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে রাস্তাতে পানি জমে আছে। ক্লাস শেষে সবাই নিজের মত বাড়ি গেলেও নীল আর প্রেমা যেতে পারছে না কারণ কোন যানবাহন নাই রাস্তায়। অনেক অপেক্ষা করার পর একটা রিকশা পাওয়া গেল। নীল বলল তুমি বাড়ি যাও আমি কিছুক্ষন অপেক্ষা করে দেখি আর কোন রিকশা পাই কিনা। তখন প্রেমা বলল তুমি আমার সাথে যেতে পার নীল ও কোন কিছু চিন্তা না করে রিকশাতে উঠে পরে। কিছু দূর যাবার পর প্রেমা প্রশ্ন করে তুমি কোথায় নামবে? নীল বুদ্ধি কোরে জবাব দেয় তোমার বাসা ছাড়িয়ে একটু সামনে। নীল আর প্রেমা ভাটারাতে নেমে পরে। প্রেমার বাসাটা নীল চিনে নেয় বুদ্ধি করে। পরের দিন টিফিনে নীল চুপচাপ ক্লাসেই বসে থাকে। তখন প্রেমা প্রশ্ন করে তুমি টিফিন করবেনা? নীল উত্তর দেয় আজকে টিফিন করতে মনে চাচ্ছেনা। তখন প্রেমা বলে আমি বাসা থেকে নুডুলস বানিয়ে এনেছি তুমি খাবে? নীল মানা করেনা। প্রেমার টিফিন থেকে সে ও একটু নুডুলস ভাগ করে নেয়। বাসায় যাবার সময় আগের দিনের মত একই রিকশাতে উঠে। আজকে প্রেমা নিউ মার্কেট হয়ে বাসায় যাবে। কিছু কেনাকাটা করতে। নীল ও সঙ্গে গেল। এভাবেই যতদিন যাচ্ছে নীল আর প্রেমার বন্ধুত্ব আরো গভীর হচ্ছে। একদিন নীলের মনে হল প্রেমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে কলেজ থেকে মিথ্যে বাহানা করে দুজনেই আলাদা আলাদা করে বাহির হল। দুজন মিলে রাজ বাড়ি গেল বেড়াতে। পুরাতন রাজবাড়ীর দেয়াল, ভবন, আসবাবপত্র, দেয়ালের কারুকাজ এসব কিছু দেখে দুজনেই মুগদ্ধ। রাজবাড়ীর পাশের দোকান থেকে মিষ্টি আর কাবাব খাওয়ার সময় অনেক হাসিঠাট্টা হয়েছে। বাসায় যাবার পথে নীল মনে মনে দোয়া করছিল যদি আরেকটু সময় সে থাকতে পারতো প্রেমার সাথে। প্রেমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে হেটে হেটে কিছু দূর সামনে আসার পর খেয়াল করলো কে যেন পিছু ডাকছে। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে প্রেমা ডাকছে। নীল খুবই অবাক হয় আর মনে মনে খুশি হয়। প্রেমা বললো বাসায় তালা দেওয়া। নীলের দোয়া কাজে লেগেছে। প্রেমাদের বাসার পাশের হৃদ দিয়ে দুজনে অনেক্ষন হাঁটলো। সারা দিনের মত বিকালটাও কাটলো খুবি সুন্দর। একবার নীল, প্রেমা আর কলেজের কিচ্ছু বন্ধু মিলে কলেজ ছুটির পর রাস্তার ধার দিয়ে হাটছিল। এই সময় একটি বালু ভর্তি ট্রাকের টায়ার বাস্ট হওয়ায় ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নীল দৌড়ে গিয়ে প্রেমাকে সাইডে সরিয়ে নিয়ে আসে। নইলে হয়তো একটা দুর্ঘটনা হতে পারতো। পরের দিন প্রেমা ক্লাসে আসেনাই। নীল প্রেমাদের বাসায় গিয়ে খবর পেল প্রেমার খুব জ্বর। নীল ও সারা দিন প্রেমাদের বাসার আশেপাশে রইলো। পরের দিন ও নীল প্রেমাদের বাসার আশেপাশে ছিল। ৩য় দিন বিকেলে প্রেমাকে বাসার বারান্দায় দেখতে পেয়ে খুব খুশি হল। পরের দিন ক্লাসে গিয়ে জানতে পারলো সেদিনের ঘটনার কারণে ভয়ে প্রেমার জ্বর এসেছে। এভাবেই নীল আর প্রেমার সম্পর্ক একটু একটু করে গভীর হতে থাকল। দুজনেই পরস্পরের জন্য টান অনুভব করলেও কখন বলার প্রয়োজন হয়নি। কলেজ পরীক্ষার পর প্রেমার সাথে নিয়মিত দেখা হয়না আর নীলের। নীল প্রায় সময় প্রেমাদের বাসার আশেপাশে থাকে। বিকেলের দিকে প্রেমা বাসা থেকে বাহির হলে নীলের সাথে দেখা হয়। অনেক কথা হয় তখন। এরপর অনেক দিন হয়ে গেল প্রেমার সাথে দেখা নেই। বাসা থেকে বাহির হয়না। ২ সপ্তাহ হয়ে গেল কিন্তু প্রেমার দেখা নেই। নীল প্রেমাদের প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানতে পারলো প্রেমারা এখান থেকে চলে গেছে। নীলের মন ভেঙ্গে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে নীল বাসা থেকে বাহির হয়না। নীল শুধু ভাবে কেন প্রেমা এমন করলো। ওকে জানালোনা কেন? আগের মত সে আর বেশি মানুষের সাথে মিশে না। বন্ধুদের সাথেও দেখা করেনা। প্রেমার সাথে যে জায়গা গুলোতে ঘুরেছে সেখানে আর ঘুরতে মনে চায়না। সবসময় প্রেমার কথাই মনে পরে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে নীল। নতুন কোন বন্ধু বানায়নি। মাঝে মাঝে অনেক রাত করে বাহিরে হাটতে যায়। একা একা অনেক জাগায় ঘুরতে যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা নদীর পাড়ে বসে থাকে। দিন মাস বছর পার হলেও নীলের মন ভাল হয়না। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে নীল ঢাকাতে একটি চাকরি পায়। অফিস থেকে একটি বাইক দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই নীল বাইক চালানো শিখে নেয়। অফিসে কাজের চাপে নীল এখন আর বিষন্যতায় নেই। একদিন রাস্তা দিয়ে বাইক চালিয়ে যাবার সময় মনে হল প্রেমাকে দেখতে পেয়েছে। ভুল ভাবছে মনে করে সে পাত্তা দিলোনা। রাস্তায় যখন সিগন্যাল পড়লো হঠাৎ খেয়াল করলো তার পাশের গাড়িতে বসে থাকা মেয়েটি তার দিকে চেয়ে আছে। নীল তাকাতেই দেখে প্রেমা তারদিকে তাকিয়ে আছে গাড়ি চালাচ্ছেন একজন ভদ্রলোক। প্রেমা বামহাত দিয়ে গাড়ির জানালা ধরে আছে। নীল বিশ্বাস করতে পারেনা যে প্রেমা তার পাশের গাড়িতে। নীল তার ডানহাতের করি আংগুল দিয়ে প্রেমার হাত ছুঁয়ে দেয়। এমন সময় সিগন্যাল ছেড়ে দেয়। প্রেমাদের গাড়ি সামনে যেতে থাকে। প্রেমা পিছনে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। নীল বাইক চালাচ্ছে আর প্রেমার দিকে খেয়াল করছে। প্রেমাদের গাড়ির পিছনেই বাইক চালাচ্ছে নীল। তার পুরানো কথা মনে পরে যাচ্ছে। ঠিক এই সময় পিছন থেকে একটি বাস নীলের বাইকে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে লোক জড়ো হয়ে যায় সেখানে। প্রেমা ভিড় দেখে গাড়ি থামাতে বলে। ভিড় ঠেলে কাছে গিয়ে দেখল নীল মাটিতে পরে আছে। মাথা দিয়ে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। সবাই বলা বলি করছে লোকটি মারা গেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.