নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিবর্ন স্বপ্নাবলী নিয়ে অর্ধ জীবন্ত এক অস্তিত্ব আমি। খুব সতর্ক পায়ে হেটে চলি এই ভূমন্ডলে ও স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি শূন্য পানে নিজের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা খুঁজতে।

সাকিব শাহরিয়ার

আমি সাকিব শাহরিয়ার। যেহেতু পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করি সেহেতু আমি একজন মানুষ। তবে বিবেকের কাঠ গড়ায় দাড়ালে কতটা হতে পেরেছি তা বলতে পারি না। তবুও আমি একজন মানুষ বা মানুষ হওয়ার প্রত্যাশায় তপস্যা রত এক সত্তা বলে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতেই বেশি সম্মান বোধ করি।

সাকিব শাহরিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্তিত্বের অন্তরালে: ৭ (বাকি অংশ)

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪১

- বুঝলাম না, তুমি এত কঠিন করে কথা বলো কেন?
- আচ্ছা সহজ করে বলছি। তোমার মায়ের নাম কি? তোমার বাবার? প্রৃথিবীতে যে মেয়েটার ফোন ছাড়া তুমি একটাদিন ও কাটাতে পারতে না সে মেয়েটার নাম কি?
- উফ আমার মাথা যন্ত্রনা করছে আমি এইসব কিছুই চিন্তা করতে পারছি না। আমি এর আগে অনেকবার এই সব মনে করতে গিয়েছি কিন্তু মাথা যন্ত্রনা করে তাই মনে করতে পারি না। শুধু বিন্দু বিন্দু মুক্তার মত ঘাম জমে থাকা একটা নাক, একটা গজ দাঁতের টোল পড়া হাসি আবছা ভেসে উঠে আবার চলে যায় কোথায় যেন ঠিক বলতে পারি না। আমি ধরতে গেলে কেমন যেন জলের মত ঢেউ খেলতে থাকে সে হাসিটা। উফ তুমি এত বকবক কর কেন? আমি কিচ্ছু মনে করতে পারছি না।
- আচ্ছা তোমার কিছু মনে করতে হবে না আমি বলছি। মানুষের জীবনের মায়াজালের প্রথম গীটটা লাগায় পরমেশ্বর নিজের হাতে। মানুষের স্বাধীন আত্মাকে বন্দি করে মায়ের জরায়ুতে - সবার অলক্ষ্যে বেরে উঠা একটা ভ্রুন এ। ভ্রুনটা আস্তে আস্তে মানব আত্মাধারী একটা বাহকে পরিনত হয়, যাকে তো্মরা শরীর বলো। মায়ের জরায়ুতে তা পরম যত্নে পূর্ণতা পেতে থাকে। তারপর সে আত্মাবাহক পৃথিবীর জরায়ুতে প্রবেশ করে জড়িয়ে পরে তার জীবনের প্রথম গীট তার মায়ের সাথে। তারপর জড়ায় এক অচেনা পুরুষের সাথে। তাকে সে বাবা বলে ডাকতে থাকে। তারপর ভাই বোন আরো কত কি। বাড়তে থাকে জীবনের মায়াজালের গীটগুলো। নিজে ইচ্ছে করে লাগায় আরো কিছু গীট যেমন আভিজাত্যের গীট, বিত্ত আর প্রভাব প্রতিপত্তির গীট, জীবন-জীবিকার গীট, প্রেম-ভালোবাসার গীট, লোভ-লালসার গীট আরো কত কি! তবে একসময় তার জীবন জালের গীট গুলো খুলতে থাকে। আস্তে আস্তে কমতে থাকে জীবন জালের পরিথি। একসময় পরমেশ্বরই খুলে দেয় জীবন জালের সব গুলো গীট। তখন সে আবার যেমন শূন্য হাতে প্রবেশ করেছিলো প্ৃথিবীর জরায়ুতে তেমনি শূন্য হাতে প্রবেশ করে এক অনন্ত সময়ের জরায়ুতে। তখন প্ৃথিবী তার কাছে বিস্ম্রৃত অধ্যায়। মালিকানা পরিবর্তন হয় তার জীবনের গীট গুলোর।
- আচ্ছা আমি ও কি এসবে বন্দি ছিলাম?
- হ্যা
- তুমি এসব জানলে কিভাবে?
- তোমাকে দেখে। তোমার প্রৃথিবীতে জন্ম থেকে প্রতিটিদিনই আমি দেখেছি তুমি কি কর।
- কেন?
- কারন তোমার জন্যই তো আমার এত বছরের অপেক্ষা। তুমি আসলেই তো আমার মুক্তি।
- আচ্ছা আমি প্রৃথিবীর জীবনে কি ছিলাম?
- সময় হলে জানতে পারবে।
- কখন সময় হবে?
- যখন তুমি প্রবাল পাবে।
- আচ্ছা প্রবাল দিয়ে আমি কি করবো?
- সেটা যখন পাবে তখন জানতে পারবে।
- এখন জানলে সমস্যা কি?
- আমি কি জানি?
- তাইলে কে জানে?
- পরমেশ্বর।
- আচ্ছা প্রবাল শব্দটা শুনলে আমার এমন লাগে কেন? কেমন যেন একটা বিদ্যুত অনুভূতি খেলা করে ভিতরে।
- সেটা ও যখন পাবে তখন বুঝতে পারবে।
- আচ্ছা আমি কে? কোথা থেকে এসেছি এখানে? কেনই বা এসেছি?
- আচ্ছা তুমি প্রৃথিবীতে আসার সময় কে ছিলে? কোথা থেকে এসেছিলে আর কেনোই বা এসেছিলে? এইসব প্রশ্ন করেছিলে কখনো?
- জানি না, মনে নেই।
- তাহলে এখন কেন করছো?
- জানি না প্রৃথিবীর কিছু স্ম্রৃতি এখনো আবছা আবছা আমার মাথায় ঘুরে বেড়ায়, তাই হয়তো।
- তখনো রুহুর জগতের কিছু অনুভূতি তোমার মাথায় ঘুরে বেড়াতো কিন্তু তুমি পাত্তা দাও নি।
- তাই?
- হুম।
- আচ্ছা বাদ দাও তো এইসব কথা ভালো লাগছে না। আচ্ছা তুমি নাকি মূর্খ তাহলে তুমি এতো কিছু শিখলে কিভাবে?
- তোমার জীবন দেখে দেখে। আমাদের তো চুতিয়া পড়ে জ্ঞান নেয়ার সুযোগ নেই।
- আচ্ছা তুমি কি সত্যিই আমার জন্য অপেক্ষা করছো?
- হুম
- তোমার নাম কি?
- তুমি যা দাও তাই আমার নাম হবে। এখানে তো আর কোনো মানুষ নেই তাই এতোদিন আমার নামের দরকার হয়নি।
- আচ্ছা তোমার নামটা প্রানময়ী হোক কি বলো?
- কেন?
- মানে তোমার মধ্যে যেন কেমন একটা প্রান প্রান ব্যাপার আছে। তুমি সুন্দর করে কথা বললে আমি আমার ভিতরে কেমন যেন একটা প্রানের স্পর্শ পাই।
- তাই?
- হুম।
- আচ্ছা তোমার মা বাবা নাই?
- না।
- তার মানে তুমি জারজ? বাস্টার্ড!!
- না।
- তাইলে?
- তাইলে কি? মানুষ হতে মা বাবা লাগে নাকি?
- এমা মা বাবা ছাড়া আবার মানুষ হয় কি করে?
- কেন? তুমি এই পৃথিবীতে এসেছো তোমার মা বাবা কে, বলো তো?
- জানি না তো মনে নেই। তবে মা বলে কিছু একটা আবছা আবছা মনে হতে চায় আবার জলরং এ মিলিয়ে যায়।
- তোমাদের প্ৃথিবীর মানুষদের এই এক সমস্যা। সবকিছু নিজের মাথায় যা আছে তাই দিয়ে বিবেচনা কর। অথচ তোমরা মানতে চাও না যে তোমাদের পৃথিবীর সিস্টেমটাই সর্বময় না। এমন অনেক ব্যাপার আছে মহাবিশ্বে যা সম্বন্ধে তোমাদের মাথারকে চিন্তা করার সামর্থ্য ও দেয়া হয় নি।
- আমার কাছে সবকিছু কেমন আউলা আউলা লাগছে।
- হুম প্রথমে একটু লাগবেই। কারন আমারও লাগতো যখন প্রথম আমাকে পৃথিবীতে তোমাদের জীবন ধারা দেখার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। আমি খুব অবাক হতাম দেখে যে ধন দৌলত, বাড়ি গাড়ি, শৌর্য্য বীর্যের আর প্রভাব প্রতিপত্তির পিছনে তোমরা কি রকম পাগলা কুকুরের মত ছুট অথচ একবারো ভালো করে চিন্তা করতে পার না যে এগুলো নিয়ে তোমরা চিরদিন থাকবেনা। এমনকি তোমরা এগুলোর কথা মনে ও করতে পারবে না। তোমাদের একজন মানুষের পৃথিবীর পুরু জীবন পথ তো আমাদের এ অনন্ত সময়ের এক দিনের সমানো না। তুমি এখানে যতদিন ঘুমিয়েছো তাতেই পৃথিবীর কয়েক যুগ পেরিয়ে গিয়েছে। আর এই ছোট জীবনটাকে নিয়ে তোমাদের কত আশা কত হতাশা আর অনন্ত কালের ব্যাপারে কনো চিন্তাই নেই। তোমারা পৃথিবীর মানুষ গুলো অনেক বড় ক্ষতির মধ্যে আছো। তবে মনে রেখো তুমি এখন প্রৃথিবীর সিস্টেমের এক শত সত্তর কোটি আলোক বর্ষ দূরে ,সম্পূর্ন নতুন একটা সিস্টেমে। এ গ্রহটার কিছু অংশ প্রৃথিবীর মত করে রাখা হয়েছে যাতে তুমি সব কিছু বুঝতে পারো। কিন্তু আমাদের জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তুমি এক অনন্ত সময়ে বাস করছো। এখানে সময়ের কোনো শুরু বা শেষ নেই।
- কেন?
- কিভাবে থাকবে কারন এখানে সব কিছু আমার ইচ্ছে মত চলে। আমি চাইলে দিন আবার আমি চাইলেই রাত হয়। তুমি প্রৃথিবী থেকে তিনশত কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর আগে চলে এসেছো। হয়তো প্ৃথিবী এতদিন টিকবেই না। আমি প্রথমে আমাদের এই অংশটার সিস্টেম প্রৃথিবীর মতই করে রেখেছিলাম যাতে তুমি সহজে খাপ খায়িয়ে নিতে পারো। এখন আস্তে আস্তে পরিবর্তন করছি। কারন তুমি এখানে এসেছো তার শত বছর পূর্ণ হতে চললো আজ।
- তাই এতো তাড়াতাড়ি শত বছর পূর্ণ হয় কিভাবে?
- তোমাদের প্ৃথিবীর সময় অনুযায়ী বললাম। আমাদের তো কোনো সময় নেই। এটা অনন্ত কালের জগত।
- তার মানে আমার প্ৃথিবীর সব পরিচিত জনেরা মারা গিয়েছে?
- হুম মনে হয়।
- তাই? এত সময় কিভাবে কেটে গেলো?
- হ্যা, এখানে তুমি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দাও কয়েক বছর।
- তাই?
- হুম।
- আচ্ছা এতো মানুষ থাকতে আমাকে কেন নিয়ে আসা হলো?
- সেটা এখন বলা যাবে না।
- কেন?
- পরমেশ্বরের নিষেধ আছে।
- হুম উনার কাজ নাই তো বেকার, তাই নানান খেলা খেলতে ইচ্ছে হয়। এই একটা কাজ সৃষ্টি করে ব্যস্ত থাকা যাতে বেকার সময়টা আনন্দে কেটে যায়। আচ্ছা উনাকে একটা কম্পিউটার গেমস খেলতে দিতে পারো না? তাইলে তো আমরা দুনিয়ার মানুষ গুলো রেহাই পে্তাম আর উনার বেকার সময়টা শান্তিতে কেটে যেতো।
- ইশ্বর সম্বন্ধে তোমার ধারনা তাই?
- হুম, সবচেয়ে বেকার সত্বা। তেলবাজি পছন্দ করে। তিনি চান প্ৃথিবীর সব মানুষ যাতে দিনে রাতে তেল মেরে উনাকে পিচ্ছিল করে রাখেন।
- হা হা হা ইশ্বর সম্বন্ধে তোমার ধারনা পরিবর্তন হবে আশা করি।
- কখন?
- যখন তুমি প্রবাল পাবে।
- আচ্ছা সে দেখা যাবে। প্রানময়ী তুমি গান গাইতে পারো?
- হুম
- গাইবে?
- তুমি শুনবে?
- হুম যদি শুনাও।
- কিসের গান শুনবে কষ্টের গান না সুখের?
- না প্রানময়ী, প্রানের গান গাও। যে গানে প্রানের স্পর্শ আছে।
- চাঁদ কি আকাশে একটাই থাকবে না দুইটা?
- একটাই থাক, না দুইটাই রাখো একটা তোমার চাঁদ আর একটা আমার।
- না তুমি আমি কি আলাদা? চাদ একটাই থাক না সোনাবাবু। একই চাঁদের আলো গায়ে মাখব দুজনে।
- আচ্ছা প্রানময়ী চাঁদ একটাই থাক।
- গলা খারাপ হলে কিন্তু তুমি কিছু বলতে পারবে না আমি আগেই বলে দিচ্ছি।
- কি লজ্জা পাচ্ছো প্রানময়ী?
- হুম
- না, কিছু বলব না।
- কেমন গান গাইব?
- একটা পবিত্র প্রানের গান গাও যে গানের প্রতিটি শব্দে থাকবে প্রানময়ীর প্রানের ছোয়া।
- আচ্ছা তাহলে তাবুটা পেতে নেই?
- হুম পাতো। খেয়াল রাখবে জানালা দিয়ে যাতে চাঁদ দেখা যায়।
- হুম হয়ে গেছে এসো সোনাবাবু।
- না, লাল না- বেড কাভাব নীল হতে হবে।
- আচ্ছা।
- জানালা দিয়ে হাসনেহানা ফুলের গন্ধ আসতে হবে।
- আর
- ফুলের সৌরভ আর তোমার প্রানময় গানের প্রতিটি শব্দে শান্ত হয়ে আসবে আমার হ্রৃদ স্পন্দন।
- আর
- আর আমি তোমার কোলে শুয়ে থাকবো। জোছনা ধারায় ভিজবে আমার মন। সে আদ্রতায় ভিজে যাবে তোমার গানের সুর।
- তারপর
- তারপর তোমার নাক ঘামবে, আমি মুছে দিব, আবার ঘামবে আমি আবার মুছে দিব আবার ঘমাবে আমি আবার মুছে দিব তারপর ঘুমিয়ে পড়ব তোমার কোলে।
- আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে কে শুনি?
- আমি কি জানি?
- মানে?
- মানে আমি আসার আগে শত সহস্র বছর ধরে তোমাকে কে ঘুম পাড়িয়ে দিতো?
- আচ্ছা আমি নিজেই ঘুমাতে পারি। আস আমার কোলে মাথা রেখে চোখের দিকে মায়া দ্রৃষ্টিতে তাকাও আমি শুরু করি।
- আচ্ছা, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও প্রানময়ী।
একটা অপার্থিব সুরমালা ভেসে আসল অনিমেষের কানে। মূহুর্তেই অচেতন হয়ে পড়ল সে।
(চলবে)
আগের অংশ পড়ুন
অস্তিত্বের অন্তরালে: ১-২

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:১৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আচ্ছা!

তবে তা্ই হোক। অচেতনে চেতন আসুক;) ....


০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৫

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: হুম তবে তাই হোক।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০১

রাজু মাষ্টার বলেছেন: :-& :-&

ধুর মিয়া এইসব পড়লে,মাথা পুররাই ফাঁকা হইয়া যায়

নিজেকে আর নিজের মধ্যে খুজে পাইনা,কোথায় যেনো এক অচেনা সুরের টানে ভেসে যায় শূন্যতায়......

আমার ও মাঝে মাঝে এমন লেখা লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু ছাড়া ছাড়া
তাই আর লেখা হয়না,ভাবছি একদিন ধুপ করে বসে একটানে লিখেই ফেলবো।

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২২

সাকিব শাহরিয়ার বলেছেন: হুম একদিন ধুপ করে লিখে ফেলবেন নিশ্চই। এই শুভ কামনায় সাকিব শাহরিয়ার। আপনাকে স্বাগতম আমার ব্লগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.