![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন স্টুডেন্ট এবং বর্তমানে ইরানের পবিত্র কোম শহরে ইসলামী লাইনে পড়াশুনা করছি। আমি পৃথিবীর সকল মানুষকে ভালবাসি এবং শ্রদ্ধা করি আর সাম্মে বিশ্বাসী।
দুনিয়া প্রীতি বুদ্ধিবৃত্তি ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতেই অপছন্দনীয়
মৃত্যুকে ঘৃণা করা এবং আমোদ প্রমোদের জন্য দীর্ঘ দিন দুনিয়াতে থাকতে পছন্দ করা (যদিও অধিকাংশ মানুষের অবস্থা এরূপ ) বিবেক ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতেই অপছন্দনীয় ও অনর্থক।
বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিতেঃ
পরিপূর্ণ শান্তি দুনিয়াতে পাওয়া অসম্ভব। শত কষ্টের বিনিময়ে দু’মুঠো ভাত পেটে পড়ে। পৃথিবীতে এমন কোন আনন্দ রয়েছে কি যার পূর্বে ও পরে কোন অশান্তি নেই? যৌবন থাকলে তার পশ্চাতে বার্ধক্য অবশ্যই রয়েছে। সুস্থতা যা কিনা পৃথিবীর সকল প্রকার সুখ ভোগের মাধ্যম তাও সর্বদা হুমকির সম্মুখীন। অর্থ সম্পদ তাও অর্জন করা অতি কঠিন এবং অর্জন করার পর তা রক্ষা করা আরও কঠিন। ক্ষমতা এবং পদমর্যাদা অর্জন করার পথে সহস্র প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তারপরও তা চিরস্থায়ী নয়।
দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট হয়ো না, সে বিশ্বাস ঘাতক,
কারও সাথেই সে একটি রাতও ভালবাসার সাথে কাটায় নি।
দুনিয়া প্রীতি কাফেরদের বৈশিষ্ট্য এবং সকল গোনাহর উৎস
শরীয়তের দৃষ্টিতে:
পবিত্র কোরআনে দুনিয়া প্রীতিকে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে উল্লেখ করে বর্ণিত হয়েছেঃ
رضوا بالحيوة الدنيا واطمانوا بها
“তারা পার্থিব জীবনে সন্তুষ্ট এবং তাতেই পরিতৃপ্ত থাকে।”
আরও বর্ণিত হয়েছে:
ارضيتم بالحيوة الدنيا من الاخره
“তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট হয়েছ?”
ইহুদীদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে:
يود احدهم لو يعمر الف سنه
“তাদের প্রত্যেকে আকাঙ্খা করে যদি সহস্র বছর আয়ু দেওয়া হত।”
এসম্পর্কে রাসূল (সা.)-এর একটি প্রশিদ্ধ হাদীস হচ্ছে:
حب الدنيا رأس کل خطيئه
“ দুনিয়া প্রীতি সকল গোনাহের উৎস।”
মৃত্যুকে ঘৃণা করা এবং মৃতের শোকে ক্রন্দন
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, দুনিয়ার প্রতি বিশেষ আকর্ষণের ফলে মৃত্যুকে অপছন্দ করা এবং একারণে দীর্ঘায়ু কামনা করা বিবেক ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতেই অপছন্দনীয়। কিন্তু পরকালের জন্য অধিক পাথেয় সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে যদি কেউ দীর্ঘায়ু কামনা করে তা খুবই উত্তম।
আত্মীয়-স্বজনরা যদি পার্থিব কারণে মৃতের জন্য ক্রন্দন করে অথবা তার মৃত্যুকে অপছন্দ করে তাহলে তা ত্র“টিপূর্ণ এবং অনর্থক। যেমনঃ যদি কেউ এই বলে কাঁদে যে কেন সে (মৃতব্যক্তি) পৃথিবীর এই সুখ শান্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে অথবা তার মৃত্যুর কারণে নিজের সুখে ব্যাঘাত ঘটেছে এই কারণে ক্রন্দন করা। কিন্তু যদি কেবলমাত্র তার বিচ্ছেদের শোকে ক্রন্দন করে তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন যদি কয়েক জন বন্ধু একসাথে সফরে বের হয় এবং তাদের মধ্যে একজন গন্তব্যে পৌঁছে সবার কাছ থেকে বিদায় নেয় তখন অন্য বন্ধুরা তার বিচ্ছেদে কষ্ট পায়, তা কিন্তু অতি উত্তম। বরং এটা মুস্তাহাব যে এক মোমিন অপর মোমিনের সমস্যাতে বা বিচ্ছেদে ক্রন্দন করবে। বিশেষ করে যদি সে মোমিন ব্যক্তি তার পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ে তাকে সাহায্য করে থাকে।
অধৈর্য্য আখেরাত সম্পর্কে অসচেতনতার ফল
যেহেতু অধিকাংশ মানুষ বিশেষকরে মহিলারা দুনিয়াকে অধিক ভালবাসে তাই যখনই আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুর খবর শোনে এত বেশী দুঃখ পায় যে মৃতপ্রায় হয়ে যায়। এত বেশী আর্তনাদ করে ও অধৈর্য্য হয় যে মনে হবে সে চিরজীবন দুনিয়াতে থাকবে এবং যে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। যদি জানত যে সে একজন মুসাফির ছিল এবং তার বাসস্থানে পৌঁছে গেছে এবং নিজেকেও খুব শীঘ্রই তার কাছে যেতে হবে তাহলে কখনোই এত অধৈর্য্য হত না। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) একদা একজন লোককে দেখলেন যে মৃত ছেলের শোকে খুব বেশী আহাজারী করছে। ইমাম (আ.) তাকে বললেন, “এত ছোট মুছিবতে এত বেশী আর্তনাদ করছ আর আখেরাতের মুছিবত সম্পর্কে অসচেতন ও নিস্পৃহ রয়েছ?” যদি তুমি তোমরা আখেরাতের সফরের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং এ জন্য ব্যস্ত থাকতে তাহলে তোমার সন্তানের মৃত্যুতে এত বেশী আর্তনাদ করতে না। সুতরাং আখেরাতের চিন্তা না করে সন্তানের মৃত্যুর মুছিবতের চিন্তা করা তোমার জন্য আরো বড় মুছিবত।
মোমিন মৃত্যুকে পছন্দ করে কারণ তা হচ্ছে দারুছ ছাওয়াবে (সৎকর্মফল ও সওয়াব ভোগের স্থান)পৌঁছানোর মাধ্যম। কিন্তু দীর্ঘায়ুকে সে এজন্য পছন্দ করে যেন বেশী বেশী আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করতে পারে। এতদসত্বেও যখনই আল্লাহ তাকে মৃত্যুদান করেন, মহান আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের সান্নিধ্য লাভের আশায় হাসি মুখে তা মেনে নেয়।
মৃত্যুর সময় আহলে বাইত (আ.) উপস্থিত হন
বহু সংখ্যক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও হযরত আলী (আ.), কিছু সংখ্যক হাদীসে পাক পাঞ্জতান অর্থাৎ রাসূল(সা.), হযরত আলী(আ.)-সহ হযরত ফাতিমা, ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন (আ.) এবং আরও কিছু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে চৌদ্দ মাসূম (আ.) মৃত্যুর সময় মোমিনের কাছে উপস্থিত হন। তবে তাঁদের নূরানি রূপ তথা বাদানে মিছালি (যার বর্ণনা পরবর্তীতে আসছে)।
ইমাম রেজা (আ.)-এর একজন অনুসারী মৃত্যুমুখে ছিল। ইমাম তার মাথার কাছে আসলেন সে তখন চোখ বন্ধ করে ছিল ঐ অবস্থাতে বলল যে, আমি হযরত মুহাম্মাদ (সা.), হযরত আলী (আ.), ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.) থেকে শুরু করে ইমাম মুসা কাজেম (আ.) পর্যন্ত সবাইকে দেখতে পাচ্ছি এবং আপনার নূরের চেহারাও দেখতে পাচ্ছি।
মোটকথা এটা নিশ্চিত যে আহলে বাইত (আ.) মৃত্যুর সময়ে দেখা দেন এবং প্রত্যেকেই তাঁদের পরিচিতি ও ভালবাসা অনুযায়ী উপকৃত হয়ে থাকেন। হযরত আলী (আ.) হতে প্রশিদ্ধ হাদীস রয়েছে তিনি হারেছ হামাদানীকে বলেছিলেন,“প্রত্যেকেই মৃত্যুর মুহুর্তে আমাকে দেখতে পাবে চাই সে মোমিন হোক আর কাফেরই হোক। তবে কথা হচ্ছে এই সাক্ষাৎ মোমিনের জন্য নেয়ামতস্বরূপ কেননা তাঁর দৃষ্টিনন্দন চেহারার দর্শন খুবই সুখকর আর কাফের ও মুনাফিকদের জন্য এই দর্শন আল্লাহর গজবস্বরূপ।
মৃত্যুর পরবর্তী বিবরণ
জান কবজ হওয়ার পর রুহ শরীরের উপরে অবস্থান করে, মোমিনের রুহকে ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কাফেরের রুহকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন জানাযা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় মোমিন হলে বলে আমাকে তাড়াতাড়ি আমার স্থায়ী নিবাসে পৌঁছে দাও। কাফের হলে বলে তড়িঘড়ি করোনা আমাকে কবরে নিয়ে যেওনা। গোসল দেওয়ার সময়ে ফেরেশেতারা মোমিনকে বলে,“ তোমার কি আবার দুনিয়ায় ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে? মোমিন বলে,“ না, আমি আর দুনিয়ায় কষ্ট পেতে ও সেখানে ফিরে যেতে চাই না।”
গোসল দেওয়া এবং জানাযার নামাজ পড়ানোর সময়ে মৃতের রুহ উপস্থিত থাকে। যে গোসল দেয় তাকে দেখতে পায়, যারা জানাযায় অংশগ্রহণ করে তাদেরকে দেখতে পায় এবং তাদের কথাও শুনতে পায়। এজন্য বলা হয়েছে মৃতের আশে পাশে কোলাহল করা ও অতিরিক্ত কথা বলা ঠিক নয়, অতিরিক্ত চলাচলও ঠিক নয়। বরং বেশী বেশী যিকির ও কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে।
মৃতকে দাফন করার পরও রুহ শরীরের কাছা কাছি থাকে এবং জানাযায় অংশ গ্রহণকারীদেরকে তাকে অসহায় ও একা ফেলে চলে যেতে দেখে কষ্ট পায়।
মোমিনকে কবরে প্রথম যে সুসংবাদটি দেওয়া হয় তা হল আল্লাহ তোমাকে এবং তোমার জানাযায় অংশগ্রহণকারী সকলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
মোমিনদেরকে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হল মৃতের মুমূর্ষ অবস্থা থেকে শুরু করে গোসল, কাফন এবং দাফন সকল ক্ষেত্রে শরীয়তের নিয়ম মেনে চলতে হবে। বিশেষকরে মুস্তাহাব হচ্ছে দাফন করে সবাই ফিরে যাওয়ার পর মৃতের অভিভাবক তালকিন (তার মৌলিক বিশ্বাসের বিষয়গুলিকে স্মরণ করিয়ে দেয়া) পড়ে তবেই ফিরবে। এটা হচ্ছে মৃতের তৃতীয় ও শেষ তালকিন ইতিপূর্বে মুমূর্ষ অবস্থায় এবং দাফনের সময়ে দু’টি তালকিন হয়ে গেছে।
কবরে প্রশ্নোত্তর
শিয়া মাজহাবের অপর একটি মৌলিক বিষয় হল বিশ্বাস করতে হবে যে, কবরে মুনকির নাকির প্রশ্ন করবে। এটা নিশ্চিত যে কবরে প্রশ্ন করা হবে এবং একজন মুসলমানকে অবশ্যই এ বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কিন্তু তা কিভাবে? বস্তুগত শারীরে নাকি অবস্তুক ও অবয়বগত শরীরে? এই মাটির কবরে নাকি রুহকে অন্য কোন স্থানে প্রশ্ন করা হবে এবং এই শরীরের সাথে রুহের যে বন্ধন আছে সে কারণে শরীরও তা অনুভব করবে নাকি অন্য কোন ভাবে?
যদি মনে করি যে এসব জেনে আমাদের কাজ নেই, কেননা এগুলোর ব্যাখ্যা জানার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই এবং তা সঠিকভাবে জানার জন্য হাদীস ব্যতীত অন্য কোন পথও আমাদের সামনে নেই। আল্লামা মাজলিসী (রহঃ) হাক্কুল ইয়াকীন গ্রন্থে বলেছেন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রশ্ন এবং কবরের চাপ এই শরীরেই হবে এবং রুহ পুরো শরীরের অথবা কিছু অংশে ফিরে আসবে (বুক অথবা কোমর পর্যন্ত) যার ফলে মৃত ব্যক্তি কথা বলতে ও বুঝতে পারবে।
যা অবশ্যই জানতে হবে তা হল কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে? কবরে আকিদা (বিশ্বাস)ও আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। জিজ্ঞাসা করা হবে তোমার সৃষ্টিকর্তা কে? তোমার নবী (সা.)-কে? তোমার ইমাম কে? তোমার দ্বীন কি? (এ প্রশ্ন প্রত্যেককেই করা হবে চাই মোমিন হোক অথবা কাফের, তবে শিশু, পাগল এবং প্রতিবন্ধীদেরকে করা হবে না)। যদি তার আকিদা সঠিক হয় সেগুলোকে বলবে এবং কলেমা শাহাদত পাঠ করবে, রাসূল (সা.)-এর নবুয়্যতের সাক্ষ্য দিবে, ইমামগণের ইমামতের সাক্ষ্য দিবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গণ্য করবে। অন্যথায় সে বোবা হয়ে যাবে। অনেকে আবার ফেরেশতাদেরকে বলবে,‘তুমিই খোদা’। কেউ কেউ বলবে,‘লোকেরা বলাবলি করত যে মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর নবী এবং কোরআন আল্লাহর কিতাব’ মোটকথা তারা প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবে না।
যারা প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবে উপরে আসমানের দিকে একটি দরজা খুলে যাবে এবং যতদুর চোখ যাবে তার কবর প্রশস্ত হয়ে যাবে এবং এই বারযাখে (কবরে)কিয়ামত পর্যন্ত সে সাচ্ছন্দ্যে থাকবে। তাকে বলা হবে ঘুমাও, নব বধুর মত ঘুমাও। যারা জবাব দিতে পারবে না তাদের সামনে জাহান্নামের একটি দরজা খুলে যাবে এবং জাহান্নামের বিকট শব্দ তার কবরকে আগুনে ভরে তুলবে।
©somewhere in net ltd.