![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একাকী আনমনে বিষণ্নতার ছোঁয়ায় কেটে যায় ভোর।।স্বপ্নের পিছুটানে কোলাহলময় হয় দুপুর।।তাড়াহুড়ো যেন শান্ত হয়ে গড়িয়ে পড়ে বিকেলে।।পাওয়া না পাওয়ায় যেন স্বপ্নময়ী রাত কেটে যায় ঘুমে।।
একটি কালো মেয়ের জীবনী ।।
আমার নাম ফারিহা । আমি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি একটা সরকারী কলেজে । আমার দুই ভাই আছে আর আমি, এক ভাই আমার বড় আরেক ভাই আমার ছোট । বাবা একটা ব্যাংকে চাকরি করে আর মা আমাকে সারাক্ষণ বকাবাকি করে যদিও মন থেকে করে না । কোনটা মন থেকে বকা কোনটা আদর করে বকা আর কোনটা দুঃখের বকা এইটা আমি খুব ভাল করেই বুঝি আমি কেন সব মেয়েরা বুঝতে পারে ছেলেরা কি পারে মনে হয় বুজতে পারে না আমার মা আমার ছোট ভাইকে মাঝে মাঝে আদর করেও বকলে সে মন খারাপ করে ।।
.
আমার একটা সমস্যা আছে সেটা হল আমি দেখতে সুন্দর নই কালো ।। এইটা নিয়ে আমার যেত টুকু দুঃখ তার থেকে বেশি দুঃখ আমার মায়ের । অবশ্য আমার বাব আর ভাই কখন আমাকে এই বিষয় নিয়ে কথা বলে না ভুলেও বলে না ।। তবে আম্মা মাঝে মাঝে আমাকে খুব বকে অনেক আজে বাজে কথা বলে তখন আমার মরে জেতে ইচ্ছা করে।।। একদিন হাতে ব্লেড ও নিয়ে ছিলাম হাতে রগ কেটে আত্মহত্যা করব কিন্তু সাহস করতে পারি নাই ।। আমি জানি মার মনে আমাকে নিয়ে খুব দুঃখ । আমাকে মাঝে বলে আমি কেন বিষ খেয়ে মারা যাই না কত লোক কত ভাবে মারা যায় আমি কেন মরি না । আমার কোন বিয়ের প্রস্থাব আসে না কারন আমি কালো। যাও একটা দুয়েকটা আসে তাও যৌতুক চায় । বাবা সাফ না করে দেয় তার কথা হল যারা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে তারা মেয়ে নয় টাকা বিয়ে করে ।। তাই সেই সংসাররে শান্তি আসে না ।।
.
পাশের বাসার অ্যান্টি কয়দিন পর এসেই মাকে বলে জানেন ভাবি আমার মেয়ের জন্য একটা প্রস্তাব আসছে ছেলে লন্ডন না হয় অ্যামেরিকা থাকে মিলা কে বিয়ে করতে চায়।। আর ও মেয়ের নানা গুন কিত্তন শুরু করে । মিলা তার মেয়ের নাম । মেয়েটা এইচএসসি দেয় দেখতে অনেক সুন্দর তার উপর আবার জিন্স প্যান্ট পরে । আচ্ছা কিছু মহিলা এত খারাপ হয় কেন । এমন ভাবে মাকে কথা গুলা বলে যার প্রতিটা কথায় আমার মাকে মনে করিয়ে দেয় যে আপনার একটা কালো মেয়ে আছে ।। সে একজন মা হয়ে আরেকটা মায়ের দুঃখ বুঝবে না এটা হতে পারে না । এই সব জিনিস ভারতিয় সিরিয়াল গুলাতে দেখা যায় কিন্তু এই অ্যান্টি কে দেখে বুঝলাম বাস্তবেও আছে । আমি মনে প্রানে চাই অ্যান্টি আমাদের বাসায় না আসুক কোন দিন না আসুক । সেটা তো আর সম্ভব না তাকে তো আর মুখের উপর বলতে পারি না আপনি আমাদের বাসায় আসবেন না । শত হলে ও আমারা সামাজিক জীব । আমার মা কক্ষন তাদের বাসায় যায় না ভুলেও না ।।
.
মিলার মা যে দিন এই বাসায় আসে সে দিনই আম্মার মেজাজ বেশি গরম থাকে । সেদিনি আমি বেশি বকা খাই কোন কারণ ছাড়াই । বাবা-ভাইয়া থাকলে মাকে থামাতে চেষ্টা করে তবে কোন লাভ হয় না ।। তখন বাবা আমাকে তার পাশে নিয়ে বসে থাকে । আমি জানি আমি জার কাছে জাই হই না কেন আমার বাবার কাছে আমি সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে এই পৃথিবীর ।। মা যেদিন আমাকে বকা বাকি করে সেদিন রাতে আমি ঘুমিয়ে পরলে আমার মাথার পাশে বসে নিরবে কাঁদে আর বিড়বিড় করে বলে আমার মেয়ে সবচেয়ে ভাল সবচেয়ে ভাল । আমি ঘুমের ভান করে পরে থাকি আমি নিরবে কাদি সেটা জানে আমার বালিশ আর আমি আর কেউ না কেউ না ।।
.
আজকে একটা ঘটনা ঘটছে যেটা তে আমার অনেক খুশি লাগছে অথচ এই বিষয়টা তে আমার খুশি হয়ার কথা না আমার কেন কোন মেয়েরই না । কিন্তু আমার লাগছে তার মনে কি আমি খারাপ মেয়ে ?? আসলে খুশি লাগছে এই কারণে যে পাশের বাসার অ্যান্টি আর কোন দিন আমাদের বাসায় আসতে পারবে না । আসলেও অ্যান্টি আর মিলাকে নিয়ে গর্ব করে বলতে পারবে না কারণ মিলার নাকি ভিডিও ক্লিপ বের হইছে । প্রথমে আমি বুঝি নাই বিষয়টা পরে ওদের বাসার কাজের মেয়েটা বুঝিয়ে দিয়েছে একটা ছেলের সাথে নগ্ন ভিডিও বের হইছে মিলার । অ্যান্টি মিলাকে নিয়ে তার ভাইয়ের বাসায় চলে গেছে ।।
.
আচ্ছা ছেলে গুলা এই রকম করে কেন । একটা মেয়ে কত বিশ্বাস করলে একটা মেয়ে ঐসব করার সময় ভিডিও করতে দেয় । আর মেয়ে গুলার দোষ আছে এক হাতে তালি বাজে না । আমি অবশ্য ঐসব তো দূরের কথা কোন ছেলের সাথেই কথা বলি না । কারণ ছেলেরা সুন্দরের পাগল সাদা চামড়া দেখলে তাদের হুস থাকে না সেই চামড়ার নিচে যে কত কালো এটা মন থাকতে পারে তা তারা কল্পনা করে না ।। তবে ২ টা ছেলে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল প্রেমের আমি রাজি হই নাই । কারণ তাদের উদ্দেশ্য আলাদা প্রেমের নামে শরীর টাকে নিয়ে খেলা।মেয়েদের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা কেউ আপু বলে ডাক দিলেও মেয়েরা বুঝতে পারে তাতে আসলে কিসের উদ্দেশ্য আছে। তবে আমি একটা ছেলে অনেক পছন্দ করতাম কিন্তু সেটা তাকে বলা সম্ভব না কারণ একটা কালো মেয়ের কাউকে ভাল লাগতে হয় না । তাদের যদি কেউ বিয়ে করতে রাজি হয় সেটাই ভাগ্য । হোক সেই ছেলে বেকার, সেই ছেলে আগের একটা বিয়ের রেকর্ড থাকুক ।।
.
আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন মেয়েরা আমাকে নিয়ে টিটকারি মারে । আমি বুঝিনা তারা আমার সাথে এমন ব্যাবহার করে কেন অনেকেই বলে আমি নাকি বোরখা পড়ি আমার চেহারা আড়াল করতে । কই সাদিয়া দেখতে অনেক সুন্দর সে ও তো বোরখা পরে কেউ তাকে তো কিছু বলে না। সে অবশ্য আমার সাথে অনেক ভাল ব্যাবহার করে । আমি বোরখা পড়ি অন্য কোন কারণে না ধর্মীয় কারণে আমাদের ফ্যামিলি অনেক ধার্মিক আমি লাস্ট কবে নামাজ কাজা করেছি আমার মনে নেই। মা বলে বিয়ের সময় নাকি মানুষ বোরখা ওয়ালা মেয়ে খুজে বেরায় । কথাটা মনে হয় সত্যি না কারণ তাহলে অনেক আগেই আমার বিয়ে হয়ে যেত । আচ্চা আমি কই অনেক নির্লজ্জ কি ভাবে নিজের বিয়ের কথা বলি ।।
.
মাঝে মাঝে আমার নিজেকে নিজের কাছেই বোঝা মনে হয় কারণ আমাকে নিয়ে পুরা ফ্যামিলিটা কত টেনশন করে শুধু কালো দেখে । বাথরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমি মাঝে মাঝে কান্না করি কেউ সেই কান্না দেখে না শুনে না ।। মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন দেখে আমার অনেক খারাপ লাগে সেই বিজ্ঞাপন গুলাতেও কাল মেয়েদের হেয় করে উপস্থাপন করা হয়। তার পড়ও আমি কিছু প্রডাক্ট ব্যাবহার করে দেখেছি কোন লাভ হয় না সব মিথ্যা ।।
.
কিছু ন্যাকা টাইপের মেয়ে আছে দেখতে সুন্দর হওয়ার পড়েও বলে জানেন দেখতে আমি একটুও সুন্দর তখন আমার অনেক অনেক রাগ লাগে ।। আমার যদি ক্ষমতা থাকত আমি সত্যি সত্যি তাদের কালো করে দিতাম তাহলে বুঝতে পারত ।।
.
থাক আপনাদের আর দুঃখের কথা বলব না কারণ কার দুঃখের কথা শুনতে কার ভাললাগে না ।
৩ বছর পরের কথা .................
.
১ বছর হয় আমার বিয়ে হয়ে গেছে । কোন প্রকার যৌতুক ছাড়া । বাবার এক বন্ধুর ছেলে আমাকে বিয়ে করেছে । সে আমাকে দেখতে আসার পরে আমি নিশ্চিত ছিলাম পছন্দ করবে না কারণ আমার মত একটা মেয়েকে পছন্দ করার কোন কারণ নেই । ছেলেটার সাথে যখন আমাকে একা কথা বলতে দিয়েছিল তখন আমি খুব লজ্জায় পরে গিয়েছিলাম কারণ আমি এই প্রথম কোন অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলছি এবং বার বার মনে হচ্ছে আমি কালো ।।
ছেলেটা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল আমি জানি তুমি দেখতে একটু কালো কিন্তু তাতে আমার সমস্যা নেই আমার সুন্দরের দরকার নেই দরকার একটা চরিত্র বান মেয়ে ।। তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছ ।। প্রথমে কথাটা আমার বিশ্বাস হয় নি মনে করেছিলাম ভুল শুনছি । তারপর আমি শুধু মাথা নাড়লাম ।। আমি মনে করেছিলাম বিয়ের পরে আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু না আমার স্বামী আমাকে বলেছে আমি যতটুকু পড়তে চাই পড়াবে এবং সে তার কথা রেখেছে আমাকে প্রতিদিন কলেজে নামিয়ে দিয়ে সে অফিসে যায় । আমার স্বামী কি রকম সুন্দর সেটা বলব না তবে এটুকু বলি । সে যখন আমাকে অফিসে নামিয়ে দেয় সব মেয়েরা তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে ।।
.
মার কথাই সত্যি হল বিয়ে সময় মানুষ ভাল একটা চরিত্রের মেয়েই খুঁজে .........
©somewhere in net ltd.