নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

উল্টোঘড়ি হুজুর

১২ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২৭


ছোটবেলার একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে গেলো।আমাদের বাড়ীর পাশেই মসজিদ। সেই মসজিদের মুয়াজ্জিন অনেক পুরানো। মোটাসোটা মানুষ, গলার আওয়াজ বাজখাই। সাধারণ ভাবে কথা বললেই হয়, "মাইক আার লাগে না!"
আর হুজুর যখন মাইকে আযান দেন, তখন পুরো আকাশ-বাতাস যেন কাঁপিয়ে দেন...!
এলাকার কেউ মারা গেলে মাঝেমাঝে মাইকে বলেন, "মা ও বোনেরা, ভাই ও বাবারা....একটি শোক সংবাদ, একটি মৃত্যু সংবাদ, একটি দুঃখের সংবাদ।"
একই কথা তিন ভাবে বলতেন।
এক শীতের রাতে বাসার সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাচ্ছি, রাত প্রায় এগারোটা বাজে।
হঠাৎ বাইরের সকল নিস্তব্ধতা খানখান করে, আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে পাশের মসজিদের হুজুর আযান দিচ্ছে!!!
চোখ বুজতে বুজতেই কি ভোর হয়ে গেলো??? সাথে সাথে উঠে লাইটটা জ্বালিয়ে ঘড়ি দেখলাম, পৌনে এগারোটা বাজে। বাইরে প্রচণ্ড ঝড়ও বইছে না, ভূমিকম্পের কম্পনও অনুভব করছিনা। তাহলে কেন এই আযান!!!
ভয়াবহ কিছু না ঘটলেতো অসময়ে আযান দেয়ার কথা না। তবে কি মুয়াজ্জিনের স্ত্রী পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন?? যদি তাই হত, তাহলে তিনি নিশ্চয় মসজিদের মাইকে আযান দিবেন না।
তবে কি বাইরে কিয়ামতের আলামত দেখা দিয়েছে?? ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো......
মা 'সূরা ইউনুস' পড়ছেন আর বলছেন, "হে মাবুদ, আমাদের তুমি রক্ষা করো।"
ছোট ভাইটা বললো, "আপু আমি মসজিদে গিয়ে জেনে আসি কি হয়েছে??" মা বললো, "খবরদার! বাইরে যাবি না। মরতে হলে সবাই একসাথে ঘরে বসে মরবো।" মা'র কথা শেষ হবার আগেই ছোট ভাইটা দরজা খুলে ডৌড় দিলো।
বাইরে কেয়ামত শুরু হয়েছে কিনা জানি না, তবে ঘরের ভেতর শুরু হয়ে গেছে......
মা পানি খাওয়ার জন্য পানি! পানি! করে ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে জগ-গ্লাস রাখা টেবিলটা উল্টে ফেললেন। মেঝেতে জগ ও গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। আধ ইঞ্চির এক কাঁচের টুকরো মা'র পায়ে গিয়ে বিঁধলো। মা'র পা থেকে কাঁচ বের করতে গিয়ে আমি হাত কেটে ফেললাম। মা'র পা, আমার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে, সেদিকে কারও খেয়াল নেই। দুজনেই ভয়ে দোয়া-দরুদ পড়ছি।
কিছুক্ষণ পর ছোটভাইটা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।ওর মুখ থেকে যা শুনলাম তাতে আমি ও মা কাটা হাত-পা নিয়েই হাসতে শুরু করলাম।
সন্ধ্যা থেকেই নাকি মুয়াজ্জিন সাহেবের শরীর ভাল ছিলনা। কোনমতে এশার নামাজ পড়ে তিনি 'হুজরায়' গিয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলে, অভ্যাসবশত হাত উঁচিয়ে - হাতঘড়িতে দেখলেন কয়টা বাজে.....
এশার নামাজের ওজু সেরে, ভুলে তিনি উল্টো ঘড়ি পরেছিলেন। হুজুরে ঘড়িটা ছিল রোমান সংখ্যার ঘড়ি। উল্টো রোমান ঘড়ি পরাতে তিনি পৌনে এগারোটাকে দেখলেন সোয়া পাঁচটা।
কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকার রাতকে শীতের ভোর ভেবে আর দেরী করলেন না।কারণ, ফজরের নামাযের সময় ভোর পাঁচটা অথচ পনেরো মিনিট দেরী হয়ে গেছে ভেবে তাড়াহুড়া করে ওযু সেরে মাইকে আযান দেওয়া শুরু করলেন........
আমাদের হাসি থামার আগেই আবারও মাইকে মুয়াজ্জিন সাহেবের গলা শোনা গেলো। তবে এবার তিনি আযান দিচ্ছেন না।
বরং লজ্জিত গলায় বলছেন, "মুসুল্লি ভাই ও বোনেরা ভোর হইয়াছে ভাবিয়া, আমি ভুলে ফজরের আযান দিয়াছিলাম।" আমাকে আপনারা ক্ষমা করিবেন। নিবেদক, উক্ত মসজিদের মুয়াজ্জিন।"
পরদিন থেকে পাড়ার দুষ্ট ছেলেদের বদৌলতে মুয়াজ্জিন সাহেবের নাম হয়ে গেলো,"উল্টোঘড়ি হুজুর"।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৩৬

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: মুয়াজ্জিনের চেয়ে আপনাদের কান্ড কারখানা বেশী হাস্যকর। তাই খ্যাপানো দরকার ছিল আপনাকে।:P

১৩ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:০৭

সালমা রুহী বলেছেন: ঠিক বলেছেন ।

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৩৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি সত্যি দু:খজনক ঘটনা অবতারনায় কিন্তু রম্যও ভরপুর। ধন্যবাদ গল্পের জন্য।

১৩ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:০৯

সালমা রুহী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৩৮

মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: দারুণ !! :P এখনও বেচে আছে?

১৩ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১২

সালমা রুহী বলেছেন: সঠিক বলতে পারছি না ।

৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪০

সুমন কর বলেছেন: হাহাহা...........লেখা পড়ে মজা পেলাম। শুধুশুধু শীতের মধ্যে সবাই কষ্ট করলো।
+।

৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৪

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: বাস্তবতা অবলম্বনে লেখাটা হলেও বেশ রসাল। লেখাটা পড়ে মনে হলো মুয়াজ্জিন সাহেব বয়োজেষ্ঠ্য ব্যক্তি। আর বয়োজেষ্ঠ্য একজন মানুষের হঠাৎ একদিন বা মাঝে মধ্যে ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মুয়াজ্জিন সাহেব না হয় ভুল করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে মসজিদের মাইকে আযান দিয়েছে। তাই বলে আপনারা আশেপাশের খোঁজখবর না নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড করবেন এটা কেমন কথা??

যাই হোক, সবমিলিয়ে লেখাটা ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ।

৬| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০০

আবু তালেব শেখ বলেছেন: বেশ

৭| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৩৫

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: হাহাহা । দারুন মজার ছিলো ।

৮| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ ভোর ৫:৫৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বর্ণনা ও ঘটনা - দুটো্ই মজার হয়েছে...

৯| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: মজার।

১০| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:২৪

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: াহাহাহাহা আমাদের বাড়ির দরজার হুজুর লেপের তলা থেকে আজান দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়তেন :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.