নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমীর কুমার ঘোষ

লেখা এমন একটা বিষয় যেটা লেখার উদ্দ্যেশে চিন্তা করার থেকে যখন মনে যা আসে তখনই লিখে ফেলা উচিৎ

সমীর কুমার ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ বিজয়া.. সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা...

১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:১৯



আজ শুভ বিজয়া...সবাইকে শুভ বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

দূর্গা পূজার অাদ্যপ্রান্তঃ-
দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হল হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি ভারতের অসম,বিহার, ঝাড়খণ্ড,মণিপুর এবংওড়িশা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি উৎসব পালন করে। এমনকি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে কর্মসূত্রে বসবাসরত বাঙালিরাও দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন। ২০০৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হলে "ভয়েসেস অফ বেঙ্গল" মরসুম নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে স্থানীয় বাঙালি অভিবাসীরা ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক বিরাট দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন।

শুরু হয় মহালয়া দিয়ে আর শেষ হয় আজকের দিনে শুভ বিজয়া দশমীতে

মহালয়া বা পিতৃপক্ষ-
মহালয়ার দিন থেকে মূলত দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে এ দিনটির তাৎপর্য মূলত ভিন্ন। এ তিথিকে পিতৃপক্ষও বলা হয়ে থাকে। এ দিনে পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবী পক্ষের শুরু হয়। এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরণ করে, পূর্বপূরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন । সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্নাদের মত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্নার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয় । মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষের ও শেষদিন এটি । মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বদের আত্নার শান্তির জন্য , তাহারা শুধু পূর্বদের নয় , পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন । যাদের পুত্র নেই , যাদের কেউ নেই আজ স্মরণ করার তাদের জন্য ও অঞ্জলি প্রদান করতে হয় ।

এ সম্পর্কে মহাভারতে একটি কাহিনী বর্ণীত আছে যে: প্রসিদ্ধ দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করলে, তাঁকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণই দান করেছেন, তিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনোদিন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাঁকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তাঁর পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃগণকে স্বর্ণ প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়।এই কাহিনির কোনো কোনো পাঠান্তরে, ইন্দ্রের বদলে যমকে দেখা যায়।
এরপর
দুর্গাষষ্ঠী
কল্পারম্ভ
বোধন
আমন্ত্রণ ও অধিবাস
সপ্তমীপূজা
নবপত্রিকা
নবপত্রিকা বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নটি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নটি পাতা নয়, নটি উদ্ভিদ। এগুলি হল -

কদলী বা রম্ভা (কলা),
কচু,
হরিদ্রা (হলুদ),
জয়ন্তী,
বিল্ব (বেল),
দাড়িম্ব (দাড়িম),
অশোক,
মান
ধান

গণে্শের ডান পাশে স্থাপিত নবপত্রিকা
একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ।

নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়। এই নয় দেবী হলেন রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী। এই নয় দেবী একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পূজিতা হন।

মহাসপ্তমীর দিন সকালে নিকটস্থ নদী বা কোনো জলাশয়ে (নদী বা জলাশয়ে না থাকলে কোনো মন্দিরে) নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছন পিছন ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল, নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পূজা করা হয়। পত্রিকাস্থ অপর কোনো দেবীকে পৃথকভাবে পূজা করা হয় না।

মহাস্নান
দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হল মহাস্নান। মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা স্নানের পর মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয়। মহাষ্টমী ও মহানবমীর দিনও পূজার মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে স্নান করানো হয়। মহাস্নানের সময় শুদ্ধজল, নদীর জল, শঙ্খজল, গঙ্গাজল, উষ্ণ জল, সুগন্ধি জল, পঞ্চগব্য, কুশ ঘাসের দ্বারা ছেটানো জল, ফুলে দ্বারা ছেটানো জল, ফলের জল, মধু, দুধ, নারকেলের জল, আখের রস, তিল তেল, বিষ্ণু তেল, শিশিরের জল, রাজদ্বারের মাটি, চৌমাথার মাটি, বৃষশৃঙ্গমৃত্তিকা, গজদন্তমৃত্তিকা, বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকা, নদীর দুই তীরের মাটি, গঙ্গামাটি, সব তীর্থের মাটি, সাগরের জল, ঔষধি মেশানো জল, বৃষ্টিজল, সরস্বতী নদীর জল, পদ্মের রেণু মেশানো জল, ঝরনার জল ইত্যাদি দিয়ে দুর্গাকে স্নান করানো হয়। মহাস্নানের প্রতীকী তাৎপর্য সম্পর্কে স্বামী ত্যাগিবরানন্দ লিখেছেন,

এই সকল ক্রিয়ানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাজের কৃষিসম্পদ, খনিজসম্পদ, বনজসম্পদ, জলজসম্পদ, প্রাণীজসম্পদ, ভূমিসম্পদ প্রভৃতি রক্ষা করার জন্য সাধারণ মানসে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়। নৈতিকতা স্থাপনে সর্বভূতে দেবীরই অধিষ্ঠানস্বরূপ পতিতোধ্বারের ভাবটিও ফুটে ওঠে এই মহাস্নানে। এমনকী চাষা-ভূষা, মুচি-মেথর থেকে শুরু করে ব্রাহ্মণ, মালি, কুম্ভকার, তন্তুবায়, নরসুন্দর, ঋষি, দাস প্রভৃতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ বিশ্ব সংহতি ও বিশ্বের কাছে এক অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়ের সমন্বয়বার্তা প্রেরণ করে। এককথায় সার্বিক সমাজলক্যাণ চিন্তা ফুটে ওঠে এই মহাস্নানে।

কুমারী পূজা
কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেযে়র পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে এবং কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে।

বর্তমানে কুমারী পূজার প্রচলন কমে গেছে। বাংলাদেশে সূদূর অতীত থেকেই কুমারী পূজার প্রচলন ছিলো এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় কুমারীপূজাপ্রযে়াগ গ্রন্থের পুথি থেকে।বর্তমানে বাংলাদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, হবিগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত রামকৃ্ষ্ণ মিশনে কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজার শেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয় তবে মতান্তরে নবমী পূজার দিনও এ পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে।

সন্ধিপূজা

দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অধ্যায় হল সন্ধিপূজা । দূর্গাপূজার অষ্টমীর দিন হয় এই বিশেষ পূজা , এই পূজার সময়কাল ৪৮ মিনিট। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা। যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগ স্থলে এই পূজা হয় তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা অর্থ্যাৎ সন্ধি-কালিন পূজা। এই পূজা দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অঙ্গ, এইসময় দেবী দূর্গাকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়ে থাকে। এই পূজা সম্পন্ন হয় তান্ত্রিক মতে। এই পূজায় দেবীকে ষোলটি উপাচার নিবেদন করা হয়, হয় পশুবলি সেই বলিকৃত পশুর স্মাংস-রুধি (মাংস ও রক্ত) এবং কারণ (মদ) প্রদান করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে।

নবমীপূজা
দশমীপূজা
বিসর্জন ও বিজয়া দশমী কৃত্য

আজকে শুভ বিজয়ার দিনে সকলকে জানাই প্রীতি ও শুভেচ্ছা.... , আসছে বছর আবার হবে...। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সুস্থ ও সুন্দর রাখুন এটাই থাকল প্রার্থনা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:০৭

শরতের ছবি বলেছেন: আপনাকেও শুভেচ্ছা । আপনাদের বিজয়া শুভ হউক এ কামনা রইল।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৫২

সমীর কুমার ঘোষ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ..

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০১

আহমেদ জী এস বলেছেন:



মাত্র শেষ হওয়া বিজয়ার শুভেচ্ছা রইলো ।

পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান শুধু যেন শারদীয় বিজয়ায় আটকে না থাকে , তা যেন হয় সকল দিনের সঙ্গী ।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:২৫

সমীর কুমার ঘোষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.