নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমীর কুমার ঘোষ

লেখা এমন একটা বিষয় যেটা লেখার উদ্দ্যেশে চিন্তা করার থেকে যখন মনে যা আসে তখনই লিখে ফেলা উচিৎ

সমীর কুমার ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা অনন্য উদাহরণ যা অন্যদের সাহস যোগাবে!

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৪


ক’দিন পরেই ভাইয়ের বিয়ে।
মাকে নিয়ে গাউছিয়াতে শপিং করতে গিয়েছিল মেয়েটি। ওদিকে গেলে নূর ম্যানশনের কসমেটিকসের গলিতে সব মেয়েই একটু-আধটু ঢুঁ মারে। বাহারি ব্যাগ, ওয়ান টাইম জুতা, নতুন ডিজাইনের চুরি কিংবা স্কার্ফ নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে পছন্দ হলে এবং দর-দামে মিললে কিনেও ফেলে কেউ কেউ।
মেয়েটিও ঢুঁ মেরেছিল, উদ্দেশ্য যদি ভালো নকশার বালা বা চুড়ি মেলে! একটি দোকানে ইমিটেশনের একজোড়া চুড়ি খানিক পছন্দও হয় মা-মেয়ের। কিন্তু বাধ সাধে আকাশচুম্বি দাম। একদিকে খুব বেশি পছন্দ না হওয়া, অন্যদিকে অযৌক্তিক দাম- মিলে মিশে অন্য দোকানে যেতে চাইলে মা-মেয়েকে বাধা দেয় দোকানি। তার দাবী, না কিনলে, দাম শুনলো কেন?
মেয়েটি বললো, দাম শুনলেই কিনতে হবে, এটা কেমন নিয়ম?
দোকানি তখোন স্বগোক্তি করে, কই থেইকা যে উইঠা আসে, যত্তসব ফহিন্নির দল।
এমন বাজে কথার প্রতিবাদ করেন মেয়েটির মা। বলেন, এই ছেলে, তুমি এমন ভাষায় কথা বলছো কেন?
দোকানি তখোন চিৎকার করে ওঠে, মার্কেটে কি চেহারা দেখাইতে আসেন? ফালতু মাইয়ালোক কোথাকার!
ভয়ানক এমন ব্যবহারে স্কুল শিক্ষিকা মা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোলজীর মেয়েটি হবভম্ব হয়ে যায়। বিনা কারনে কেউ এই ভাবে কথা বলতে পারে তাদের বিশ্বাসই হয় না। মেয়েটি এবার নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, মুখ সামলে কথা বলবেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।
দোকানির দূর্ব্যবহার এবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মা-মেয়ের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে গালি দিতে শুরু করে লোকটা। প্রতিবাদ করতে গেলে মারতে উদ্যত হয়। ওই মার্কেটের ঐতিহ্য বজায় রেখে অভদ্র লোকটার পক্ষ নেয় অন্য দোকানিরাও। কোনঠাসা মা-মেয়েকে শুনতে হয়, ‘মাইয়া মানুষ হইয়া ঝগড়া করেন ক্যান? চুপচাপ মাথা নিচু কইরা কাইটা পড়েন!’
লজ্জায় অপমানে মুষড়ে গিয়ে শারীরিকভাবে প্রায় লাঞ্ছিত হতে হতে মাকে নিয়ে কোন রকম ঘরে ফেরে মেয়েটি। চোখ দিয়ে নামে জল। ভাবে, এই সমাজ মেয়েদের জন্য নয়। প্রতিটা ধূলিকনাও যেন সুযোগ পেলে হয়ে ওঠে নারীর প্রতিপক্ষ! ফের অন্য কোন মার্কেটে নতুন কোন অপমানের জন্য প্রস্তুত হতে হতে কেঁদে-কেটে ঘুমিয়ে পড়েই মা ও মেয়ের এই গল্পটা শেষ হতে পারতো! কিন্তু শেষটা সেভাবে হলো না। বরং ওখান থেকেই আসল গল্পটা শুরু হলো।
ভূক্তভোগি মেয়েটি চরম এই লাঞ্চনার প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু কিভাবে, কার কাছে সে প্রতিবাদ নিয়ে যাবে বুঝতে পারলো না সহসা। তারপর ফেসবুকের জনপ্রিয় গ্রুপ জাস্টিস ফর উইমেনে একটা পোষ্ট দিয়ে জানতে চাইলো, নিউমার্কেট এলাকায় কেউ যদি দূর্ব্যবহার করে, তাহলে কোথায়-কিভাবে অভিযোগ করতে হবে?
সামাজিক নানা বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কয়েক ছোট ভাই এই আপাত ক্ষুদ্র ঘটনাটি আমার নজরে আনে। আমি তখোন ওই পোস্টে জানতে চাই, সত্যিই কি অ্যাকশনে যেতে চান? - তবে প্রতিবাদের রাস্তাটা আমি দেখাতে পারি।
মেয়েটি তখোন আমাকে ইনবক্স করে। জানায়, সে ওই জানোয়ারের কৃতকর্মের বিচার চায়। তার যুক্তি, এই ঘটনার প্রতিবাদ যদি সে না করে, তাহলে ওই ছেলে আরো শত শত মেয়ের সঙ্গে একই কাজ করতে থাকবে। যদি একটা অপরাধিরও শাস্তি হয়, তবে প্রতিদিন ভূক্তভোগি অসংখ্য মেয়েও এসব ঘটনায় প্রতিবাদের সাহস পাবে। দুষ্টু লোকেরাও সতর্ক হবে।
মেয়েটির সাহস এবং প্রতিবাদ করার জোরালো মানসিকতা দেখে আমার নিউ মার্কেট সার্কেলের সিনিয়র সহকারি কমিশনার নাজমুন নাহার আপার কথা মনে পড়ে। ক’দিন আগে সিএনজিকেন্দ্রীক দূর্ভোগের শিকার হয়ে নাগরিক প্রতিবাদের একটা কার্যকরি উদাহরণ তৈরি করেছিলাম। ফেসবুকে শেয়ার করার পর সেই ঘটনা ভাইরাল হয়ে যায়। নজরে পড়ে আপার। ঘটনাস্থল হাতিরপুল তার এলাকা হওয়ায় তিনি আমাকে ইনবক্স করেন এবং নিজের নাম্বার দেন। বলেন, ভবিষ্যতে এই এলাকায় কোন অনিয়ম চোখে পড়লে যেন তাকে জানাই।
আমি আপ্লুত হই। এই দেশে চেয়েও যেখানে পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যায় না, সেখানে যেচে কোন পুলিশ কর্মকর্তা সাহায্য করবেন বলছেন- এ তো বিরল ঘটনা। তখনই মনে হয়েছিল মানুষটা আলাদা। মনে হওয়াটা বিশ্বাসে পরিণত হলো সাত দিনের মধ্যেই। আয়নাবাজির টিকিট ব্লাকে বিক্রি হচ্ছে জানালে ত্বরিৎ অ্যাকশনে গিয়ে গ্রেফতার করে এনেছিলেন চার জনকে।
আমি নাজমুন আপুকে ফোন করে মেয়েটির ঘটনা জানাই।
একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে তিনি আমাকে নিউমার্কেট থানায় তার কার্যালয়ে যেতে বলেন। ভূক্তভোগি মেয়েটিকে নিয়ে আজ দুপুরে আমি আপুর কাছে যাই। যেহেতু মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেহেতু থানায় যাওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য স্যারকে এবং ডিআইজি পদমর্যাদার ডিএমপির একজন অতিরিক্ত কমিশনারকেও ঘটনাটা জানিয়ে রাখি, যাতে মালিক সমিতি চাপ দিয়ে অপরাধীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে না পারে। ভিসি স্যার এবং ডিআইজি দু’জনই এসি নাজমুন আপুকে ফোন করে এই ঘটনায় দ্রুত অ্যাকশনে যেতে বলেন। তারপর?
তারপর রচিত হলো প্রতিবাদের দারুণ এক গল্প।
দুই নারীর সঙ্গে চরম অভদ্র আচরণকারি সেই কুলাঙ্গারটাকে ফোর্স পাঠিয়ে ধরে আনা হলো মুহুর্তেই। ঘটনাস্থলেই মেয়েটার পা ধরে মাফ চেয়ে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েও সফল হয়নি মালিক সমিতি। আপুর দৃঢ়তায় থানা থেকে অপরাধীকে হালকা উত্তম-মাধ্যম দিয়ে সোজা চালান করে দিয়েছে কোর্টে। দু’জন নারীকে একা পেয়ে বাহাদুরি দেখানো জানোয়ারটা থানার কাস্টডিতে এমন ভাবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো, যেন অবুঝ একটা শিশু। একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি!
নিউমার্কেট এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা ছোট-বড় মার্কেটগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল, ইডেন, বদরুন্নেসার মতো নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী প্রতিদিন কেনাকাটা করতে যান। মার্কেটের দোকানগুলোর বদমায়েশ কিছু কর্মচারির দ্বারা প্রতিনিয়তই সেসব নারীরা নানা ভাবে নিগৃহীত হন। দিনে দিনে ব্যাপারটিকে তারা নিয়মে পরিণত করে ফেলেছেন।
এসব ঘটনায় দু-একজন যদিও বা প্রতিবাদ করে, সদলবলে ওরা তখোন হামলে পড়ে। প্রায়শই সেইসব দু:খের কাহিনী ফেসবুকে শেয়ার করেন ভূক্তভোগি নারীরা। কিন্তু প্রতিবাদের সঠিক রাস্তাটা জানা না থাকায় অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্যেও প্রতিকার পাননা। প্রতিবাদী নারীদের জন্য আজকের ঘটনাটা আলোকজ্জ্বল একটা উদাহরণ তৈরি করলো।
[সংগৃহীত]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২২

ভ্রান্ত_পথিক বলেছেন: ভাই আপনি এক্ষেত্রে চরম একটা ফেভার পেয়েছিলেন পুলিশের কাছ থেকে। লাখে একটা পুলিশ এরকম কর্মতৎপরতা দেখায়। বাকিরা ঝামেলা জ্ঞান করে এড়িয়ে যায়। কোনভাবে দেখুন তো সৎ পুলিশ অফিসারদেরকে অরগানাইজ করা যায় কিনা! তাহলে সমাজের অর্ধেক সমস্যা কয়েক দিনেই সমাধান করে ফেলা যাবে। আমার পূর্ণ সহযোগিতা আপনি পাবেন এই কাজে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.