![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আর-রাহিকুল মাখতুম : শব্দের তুলিতে আঁকা নবিজীবন
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
সিরাতের কোনো বই পড়া শুরু করতে চাইলে, নিঃশঙ্কচিত্তে ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। একে বলা যায়, সিরাতের বিশাল জগতে প্রবেশের একটি খোলা জানালা। ইসলাম সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জন, কুরআন অনুধাবন ও নিজের আত্মিক উন্নতি সাধনের জন্য নবিজি সম্পর্কে জানা সকলের জন্য আবশ্যক। একটি আদর্শ জীবনের নিখুঁত মানদণ্ড হলো শেষ নবি মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহর ভাষায়⸺
ইহকাল ও পরকালে সকল সফলতা ও সৌভাগ্য কেবল রাসুলের পদাঙ্ক অনুসরণের মাঝেই নিহিত। তাই যে নিজের জীবনে কল্যাণ, সফলতা আর সৌভাগ্য কামনা করে, সে যেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সিরাত চর্চা করে। এতে করে সে রাসুলকে চিনতে এবং সত্যিকার অনুসারী হতে পারবে। (যাদুল মাআদ- ১/৩৬)
বস্তুত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুরো জীবনটাই ছিল কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। বিদগ্ধ লেখক আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরি রাহিমাহুল্লাহ সেই ছবিকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে তুলে ধরেছেন বইটাতে। এতে প্রচুর তত্ত্ব ও তথ্যের সমাহার ঘটেছে এবং অসংখ্য ঘটনার উপস্থিতি বইটিকে অনন্য মর্যাদায় উচ্চকিত করেছে।
বিশেষকরে এ বইটির ক্ষেত্রে, সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি শোনা যায়, তা হলো⸺‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ কোন প্রকাশনীর টা ভালো?
প্রকৃত বাস্তবতা হলো, বাজারে এই একটি বইয়ের অসংখ্য অনুবাদ রয়েছে। তাই একজন সাধারণ পাঠকের পক্ষে সম্ভব নয়, সবগুলো চেক করে নিজের পছন্দেরটা বেছে নেওয়া। এটা খুবই দুরূহ ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। নির্দিষ্ট কোনো একটাকে জোর দিয়ে ভুলশূন্য বলা যায় না; যেখানে মূল বইয়েই কিছু দুর্বল ও অস্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান। কারণ মানবসৃষ্ট কোনো গ্রন্থই নিখুঁত-নির্ভুল নয়।
তবে, যারা ব্যস্ততা, সময়ের অভাব, ধৈর্যচ্যুতি বা অন্য কোনো কারণে, পূর্বে ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ পড়া শুরু করেও শেষ করতে পারেননি, যারা একটু সহজ লেখা পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, এ বইটি নির্দ্বিধায় সংগ্রহ করা যেতে পারে। অন্তত ভালো বাঁধাই, রুচিশীল প্রচ্ছদ ও অলংকরণ, উন্নত মানের কাগজ, হৃদয়গ্রাহী ভাষা মাধুর্য, তথ্যসূত্র ও প্রোডাকশন কোয়ালিটি ভালো পাবেন⸺পড়তে গিয়ে কোথাও থেমে যেতে হবে না। অক্লেশে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়া যাবে।
◈ অনুবাদ ও সম্পাদনা :
কালজয়ী এ বইটি মূল আরবি থেকে বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে। বইয়ের প্রথম পাতা থেকে শেষব্দি রিডারকে গ্রিপ করে রাখার মতোই অনুবাদ। শব্দের বাহুল্য বর্জন করে ছোট ছোট শব্দে করা হয়েছে বাক্যবিন্যাস। সত্যি বলতে, অনুবাদ নিয়ে বেশি কিছু বলারও নেই, যেখানে উস্তায আবুল হাসানাত কাসিম ও আল-আমিন ফেরদৌস এর হাতের ছোঁয়া আছে। সাথে আছে আকরাম হোসাইনের দক্ষ সম্পাদনা। শাস্ত্রীয় সম্পাদনায় অবদান রেখেছেন সালমান মাসরুর। সবমিলিয়ে প্রায় ১৫-২০ জনের একটি টিম কাজ করেছে পুরো বইটির পেছনে।
বেস্ট সেলার, মাস্টারপিস, মাস্ট রিড বইগুলোর অনুবাদ ভালো হয় না⸺এই অভিযোগ আমাদের দেশে চিরকালের। একটি বইয়ের পেছনে মূল লেখক যতখানি মেহনত করেন; পরবর্তীতে অন্য ভাষায় যিনি রূপান্তর করেন, তাকেও ঠিক ততখানিই সময়, শ্রম ও যত্নের সহিত কাজটি করে যেতে হয়। অক্ষুণ্ন রাখতে হয় সাহিত্যমান। কিন্তু এই কাজটি যথাযথ হচ্ছে না বলেই, মানসম্মত অনুবাদকর্মের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় শতকরা ৯০% বইতে। আর পেশাগত দক্ষতা ও সম্পাদনার কথা নাই বা বললাম। তবে আশার কথা হলো, ইসলামি বইয়ের প্রকাশনা অঙ্গনে ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। সমকালীনের ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।
বইটিতে, আমার সবচেয়ে বেশি যা ভালো লেগেছে, তা হলো, কুরআনের আয়াতগুলোর অনুবাদ। খুবই সহজ ও সাবলীল। আর কাব্যিক দ্যোতনায় অনবদ্য কবিতাগুলোর বঙ্গানুবাদ এককথায় টপনচ। এই বিষয়ে অনুবাদকমণ্ডলী প্রশ্নাতীতভাবে প্রশংসার দাবিদার। বিভিন্ন প্রসঙ্গে উল্লিখিত দুর্বল হাদিসগুলোর মান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। গুরুতর কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি বা অসংগতি দেখতে পাইনি। বইয়ে সংযুক্ত টিকাগুলো নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পাদকদের নিকট থেকে পক্ষপাতমূলক কিছু প্রত্যক্ষ করিনি। কয়েক জায়গায় টাইপিং মিসটেক ছাড়া আর কোনো বানান ভুল পাওয়া যায়নি। তবে কিছু বানান প্রকাশনী নিজের মতো করে লিখেছে। যারা সমকালীনের নিয়মিত পাঠক তারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন। আর লেখক পরিচিতি বইয়ের শুরুতে দেওয়া উচিত ছিল। বইয়ে ব্যবহৃত ফন্ট সম্ভবত সমকালীনের নিজস্ব কাস্টমাইজ করা, যেজন্য লেখাগুলো ভালো করে ফুটে উঠেছে।
◈ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা :
সত্যি বলতে, আমার উড়ু-উড়ু মনাকাশে যখন হুড়মুড়িয়ে কালো কালো মেঘ এসে ভরে যায়, হৃদয় পোড়ার গন্ধ যখন নীল নীল ধূপছায়ায় মিশে যায়⸺তখন মগ্ন হতে ইচ্ছে করে সিরাতের সোনাঝরা পাতায়। ইচ্ছে করে, ক্ষত ডানায় জলরঙের ঢেউ তুলে⸺শত্রুশিবিরের আতঙ্ক, দুঃসাহসী বীরযোদ্ধা আবু দুজানা রাদিআল্লাহু আনহুর মতো লাল পাগড়ি মাথায় বেধে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ি। পরক্ষণেই চলমান বাস্তবতার কথা মনে হলে, বদলে যাই আমি। বদলে যায় সমাজ। তখন চোখের তারায় জ্বলজ্বল করে উঠে দ্বীনবিমুখ একটি প্রজন্মের ছবি।
৭০৪ চার পৃষ্ঠার ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ পড়ে শেষ করতে আমার খুব বেশি সময় লাগেনি। কারণ এর কলেবর খুব বেশি দীর্ঘও নয়, আবার একেবারে সংক্ষিপ্তও নয়। বইয়ের প্রারম্ভে প্রকাশক ও লেখকের কথার পরপরই আছে দীর্ঘ সূচিপত্র। এরপর শুরু করা হয় মূল আলোচনা। বইয়ের প্রথমাংশে মরুময় আরবের তৎকালীন অবস্থা, অবস্থান, গোত্র, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম ও সমাজব্যবস্থা নিয়ে একটি নাতিদীর্ঘ বিবরণ পেশ করা হয়। সেখানে আরও আলোচিত হয় নবিজির জন্মপূর্ব অবস্থা, বংশ পরিচয়, শৈশব, কৈশোর, বিবাহ, দাম্পত্য ও নবুয়ত পূর্বকালের পরিস্থিতি।
বইটার ইউনিক দিক হচ্ছে, এর কাহিনির ধারা বিন্যাস। পর্যায়ক্রমে বইয়ের মধ্য ভাগে উঠে এসেছে দাওয়াতি কাজের লক্ষ্যে ইসলামের প্রচার-প্রসার, কুরাইশ কর্তৃক নানাবিধ জুলুম-নির্যাতন, ইসরা-মিরাজ, মুজিজা ও হিজরতের আখ্যান। মুসলিমদের দাওয়াতি কার্যক্রম ও সামরিক তৎপরতা নিয়ে বিস্তর আলোকপাত করা হয় স্বতন্ত্র অধ্যায়ে। তুলে ধরা হয় নবিজির রাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধনীতি, সন্ধি-চুক্তি এবং রক্তস্নাত বদর, ওহুদ ও খন্দকসহ অন্যান্য যুদ্ধের জ্বলন্ত ইতিহাস। বইয়ের শেষ ধাপে মক্কা বিজয়, বিদায় হজসহ নবি জীবনের অন্তিম সময়টাকে নিখুঁত শব্দমালায় চিত্রায়ণ করা হয়। আলোকপাত করা হয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবার-পরিজন এবং তার শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক গুণাবলি নিয়ে।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন যেন এক বৃহৎ শিক্ষায়তন। জ্ঞানের গভীর উৎস। অন্তহীন বয়ে চলা শীতল ফল্গুধারা। একটি সাদামাটা জীবনের প্রতিচ্ছবি। বইটাতে প্রকাশ পেয়েছে তার দ্যুতিময় ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা। পাশাপাশি উঠে এসেছে, ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সাহাবিদের অবিস্মরণীয় ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা। আমৃত্যু ইসলামের জন্য লড়ে যাওয়ার প্রত্যয় দৃশ্যমান হতো তাদের চোখে-মুখে। তাদের কষ্টে ভরা জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতির দাগকে অম্লান করে রাখা হয়েছে সাদা পাতায়।
ঘটনা বর্ণনার পাশাপাশি লেখকের বিশ্লেষণ দক্ষতা স্রেফ মুগ্ধ করেছে আমাকে। তথ্যের বিশুদ্ধতা এবং চমৎকার বর্ণনাশৈলীর ফলে, বইটি প্রথমবার পড়লেই, সিরাতের একজন নবীন পাঠকেরও জানা হয়ে যাবে অনেককিছু। আরও জানা যাবে কিছু আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট ও তাফসির। প্রয়োজনানুসারে কয়েক জায়গায় মানচিত্র যুক্ত করা হয়েছে; এতেকরে পাঠসূচি বুঝতে সহজ হয়। মহাকালের মহান ব্যক্তিত্ব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অধিক বিবাহের প্রসঙ্গ নিয়ে লেখক অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন। এর ফলে, নবিজির বিবাহ-সংক্রান্ত বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুরো জীবনী কেবল একটি বই পড়লেই জানা হয়ে যাবে না। অনেক পাঠক, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ধারণা, ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ এ নবি জীবনের সার্বিক দিক উঠে এসেছে। ফলে, এই বইটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাদের সিরাত যাত্রা। প্রকৃতপক্ষে, সামান্য কয়েক পাতায় নবিজির ৬৩ বছরের জীবনটাকে কখনোই তুলে আনা সম্ভব নয়। বস্তুত সিরাতের ঘটনারাজি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন গ্রন্থে। তাই পাঠকমনে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের পরিপূর্ণ অবয়ব ফুটিয়ে তুলতে চাইলে, অধ্যয়ন করতে হবে একাধিক বই। আবার একনাগাড়ে শুধু পড়ে গেলেই হবে না, থাকতে হবে তার মতো জীবন গড়ার স্পৃহা। ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ পাঠককে আকৃষ্ট করে, নবিজীবনকে আরও বিস্তৃতভাবে খুঁটে খুঁটে দেখতে। মূলত, এখানেই গ্রন্থকার সার্থক। এটিই বইটার বৈশিষ্ট্য।
উহুদ যুদ্ধের বিষয়ে বিস্তারিত না জেনেই, অনেকে এর ফলাফল হিসেবে মুসলিমদের পরাজয় বলে গণ্য করে থাকে। এটা একপ্রকার ভুল বৈ আর কিছু নয়। বাস্তবতা হলো, তৎকালীন সময়ে একটি যুদ্ধে নিজেদের জয়ী ঘোষণা করতে হলে, বিজয়ী দলের বেশকিছু নিদর্শন থাকতে হতো।
✲ শত্রু শিবির দখল করা।
✲ যুদ্ধ শেষে ময়দানে তিন দিন অবস্থান।
✲ যুদ্ধবন্দি বা গনিমত লাভ ইত্যাদি।
কুরাইশরা যার কোনোটিই করতে সক্ষম হয়নি। উলটো তারা নিজেরাই আগেভাগে ধরেছিল মক্কার পথ। অথচ মুসলিমরা তখনও রণাঙ্গন ত্যাগ করেনি। তবে এ কথা সত্য যে, তুমুল লড়াইয়ের ফলে দু-দলই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল অমীমাংসিত যুদ্ধ। বিষয়টি দারুণভাবে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক।
মক্কা বিজয়ের প্রভাব, প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে বইটিতে। দিগ্বিজয়ী সামরিক শক্তি বা বৃহৎ কোনো জনগোষ্ঠীর সমর্থনে ইসলামের বিজয় অর্জিত হয়নি; সাফল্য এসেছে কেবলই আল্লাহর সাহায্যে। মুসলিম মানসে এই চেতনাবোধটুকু জাগিয়ে তোলার জন্য⸺লেখক কলম চালিয়েছেন শান্ত গতিতে। আফসোস, মুসলিমদের গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলি এখন কেবলই অতীতের ফ্রেমে বাঁধা। চলমান সংকট মোকাবেলায় মুসলিম উম্মাহর উচিত, একনিষ্ঠভাবে সালাফদের পথ অনুসরণ করা। নব্য আবিষ্কৃত পথ বা পদ্ধতি ইসলামকে শুধু পেছন দিকেই টেনে রাখবে।
সম্পূর্ণ বইটি পড়ে একটি বিষয় খেয়াল করেছি⸺নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো কাজে মদিনার বাইরে যেতেন, তখন তিনি একেক সময়ে একেক জনকে দ্বায়িত্ব দিয়ে যেতেন। একই ব্যক্তিকে দুইবার দায়িত্ব দিয়েছেন কি-না জানা নেই। কিন্তু নবিজির এমনটি করার কারণ কী ছিল! বিষয়টি নিয়ে ভেবেছি অনেকক্ষণ৷ ভেবে ভেবে কোনো কূলকিনারা পাইনি।
নবিজীবনের সাঁজবেলার অংশটুকু হৃদয়তন্ত্রীতে গভীর অনুরণন তুলে। অদ্ভুত ঘোরলাগা, ব্যথাতুর ও বিয়োগান্ত হয়ে ওঠে সমাপ্তির পাতাগুলো। চোখের কোটরে অশ্রুরা গড়ে তুলে দুঃখনদী। বিষণ্নতায় মোড়ানো প্রতিটি লাইন মানে বৃষ্টির মরসুম। চৈতালি বাতাসে নীরব বেদনার ঘ্রাণ।
এ এক অদৃশ্য সুতোর টান।
নবিপ্রেমের এমন মুগ্ধকর অমৃত স্বাদ ও তীব্র অনুভূতি সৃষ্টিকারী বলেই সিরাত প্রেমীদের পাঠস্মৃতিতে সবসময় সমুজ্জ্বল হয়ে থাকে ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’। মনে গেঁথে যায় দ্বীন ইসলামের বিশুদ্ধ চিন্তাধারা। হৃদয় চিড়ে বয়ে যায় প্রিয়তম রাসুলের প্রতি স্নিগ্ধ অনুরক্তির ঝরঝর নির্ঝরণী।
◈ সারকথা :
‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ এমনভাবে সংকলন করা হয়েছে যে, সব শ্রেণীর পাঠককেই নিশ্চিতরূপে উপকৃত, উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে। অভিনিবেশ সহকারে বইটা অধ্যয়ন করলে, ইসলামকে আতসকাঁচে দেখার অন্তর্চক্ষু তৈরি হয়। বেদনামথিত ঘটনাগুলো পড়লে, বুকের ভেতরে উথলে ওঠা কষ্ট নিমিষেই দূর হয়ে যায়। বিজয়ের ঘটনায় আছে, মন ভালো করার মতো সঞ্জীবনী শক্তি; কোমল হৃদয়কে স্পর্শ করার ক্ষমতা।
ছন্নছাড়া, গন্তব্যহীন, গতিহীন জীবনটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে সিরাত চর্চার বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো, সিরাতের এই স্মারক গ্রন্থটি প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া এবং নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার জন্য বেস্ট চয়েজ হতে পারে। দৈনিক পাঠ্যসূচির একটি অংশেও রাখা যেতে পারে বইটি।
একঝলকে শেষ নবি মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনদর্শন জানতে ও বুঝতে হলে, সমকালীনের ‘আর-রাহিকুল মাখতুম’ (মোহরাঙ্কিত সুধাময় জীবন) সবার পাঠ্য হওয়া উচিত।
.
.
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
.
.
◈ একপলকে বইটি⸺
◈ বইয়ের নাম : আর-রাহিকুল মাখতুম
◈ লেখকের নাম : শাইখ সফিউর রহমান মুবারকপুরি রাহিমাহুল্লাহ
◈ প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
◈ পৃষ্ঠা : ৭০৪
◈ কভার : হার্ড কভার
◈ সংস্করণ : প্রথম প্রকাশ, ডিসেম্বর ২০২৩
◈ মুদ্রিত মূল্য : ৮৫০ টাকা।
⸺অনুবাদক : উস্তায আবুল হাসানাত কাসিম, আল-আমিন ফেরদৌস, উস্তায রিফাত মাহমুদ, মুহাম্মাদ ফয়জুর রহমান
⸺সম্পাদক : উস্তায আকরাম হোসাইন, নেসার উদ্দিন রুম্মান, যাহিদ আহমাদ
⸺শারয়ি নিরীক্ষণ : মুফতি সারোয়ার হোসাইন, মুফতি সালমান মাসরুর, আবুল হাসানাত কাসিম, আসাদুল্লাহ ফুয়াদ
⸺বানান ও ভাষারীতি : ওমর আলফারুক, মাহবুবুর রহমান, মুজিব হাসান, নাহিদুজ্জামান শাকিল
.
©somewhere in net ltd.