নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১ টি। (৮টি কবিতার বই, ২টি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্পের বই।)

সানাউল্লাহ সাগর

সৃজনশীল লেখালেখি, গবেষণা ও সম্পাদনা

সানাউল্লাহ সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইরেন; ছয় নম্বর বিপদ সংকেত ।। হোসনে আরা মণি

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১

কবি সানাউল্লাহ সাগর উদীয়মান এক কবি। সম্ভাবনাময় এক প্রতিভা। সদা অপেক্ষমান এক প্রেমিকসত্তা। কবি মন মানেই প্রেমাকাঙ্খী, প্রেম পূজারী। সানাউল্লাহ সাগরের হৃদয়ও তার ব্যতিক্রম নয়।এক সাগরসম টল টলায়মান প্রেম হৃদয়ে ধারন করতে গিয়ে হৃদয় চাপে ভোগা বহু কবি যেমন কেবল প্রেমাবেগকেই তাদের কবিতার উপজীব্য করেন, সাগর কিন্তু তা করেন নি। হৃদয়াবেগের চেয়ে যেন তিনি বুদ্ধিকেই খেলাতে চেয়েছেন বেশি- তার সাইরেনে নজর বুলিয়ে আমার তাই মনে হয়েছে।

কবিতার বিদগ্ধ পাঠক আমি নই। কবিতার বই হাতে নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমার চোখ মুদে আসে। সাগরের বইটি হাতে নিয়ে কিন্তু দিব্যি চোখ বুলিয়ে গিয়েছি। টানাগদ্যে লেখা প্রতিটি কবিতা সত্যিই কবিতা হয়ে উঠতে পেরেছে কিনা সে চুলচেরা বিচারে না গিয়ে তার কোন কোন পংক্তিতে আমার চোখ ও মন এমনই আটকে গিয়েছে যে বারবার পড়ে গিয়ে আমার এ উপলব্দিই হয়েছে যে, হ্যা এই পংক্তিগুলোতো প্রতিটিই একেকটি কবিতা। সে বিষয়ে কিছু বলব -
‘ব্রলার হয়ে গেছে অদেখা স্বপ্ন।’ (যোগফল)
‘কমায় থেমেছি―তুলি হাতে ফলস্টপ আঁকবো এবার...’(যোগফল)
‘ বিশ্বাসের মলাটে ধুলো জমে গেছে বহুকাল।’(ভাতঘুম)
‘বড়শিগাঁথা টোপে ভাতঘুমের গ্রাম... নিজের মধ্যে স্লোগান তুলে স্বেচ্ছায় ঝুলে পড়ি বড়শিতে।’(ভাতঘুম)
‘পৌরুষ শাসিত যৌবন তাস খেলছে উচ্ছলতার খোলা চাতালে।’(বিকার)
‘জীবন আর প্রেম শুধুই বিকার।’(বিকার)
‘জানলাম―ভালোবাসা অসুখের নাম।’(অসুখ)
‘ভালোবাসলে ব্যথা পাওনা হয়ে যায়।’(ওয়ালম্যাট)
‘আল ধরে হাঁটার রীতি ভুলে গেছে সময়।’(রঙখেলা)
‘ঘুমের মধ্যে থাকি স্বপ্ন দেখার লোভে।’(লোভ)
‘প্রগতির রাজনীতি ভ-ামীর বীজতলা।’(খোলচিঠি)
‘বিশ্বাসের বাহুতে তাবিজ লটকালে সংস্কার বাাঁধাগ্রস্থ হয়।’(লিপটিজিং)

এসব অবিস্বরণীয় হয়ে উঠবার যোগ্য পংক্তিগুলো কি একেকটি পূর্ন কবিতাধর্মী নয়? সাগরের জীবনাভিজ্ঞতা ও জীবনোপলব্দির নমুনা প্রকাশ পেয়েছে তার ব্যবহৃত কিছু উপমা ও চিত্রকল্পে, কিছু আপাতনীরিহ পংক্তিতে।
‘ভাঙা কাঁচ তুলে আর কতো ক্ষতো বাড়াবো―নিঙড়ে দেবো রক্তের ফোঁটা। ’(অন্ধকার)
‘লুকানো রোগগুলো সম্মুখে এসে আরোগ্যের বায়না নিয়ে হাসছিল। ’(প্রদীপ)
‘ভুল করে হলেও সত্য শিখছি―পরাজিতের কোন ইতিহাস থাকে না। ’(ভুল)
‘কুড়োনো স্বপ্নের আসবাব নিয়ে ঘর-গেরস্থলি আমার। নিয়মিত অনভ্যাসে ক্ষয়ে যেতে বসেছে উদ্যমের বৃক্ষ।’(বৃষ্টি হলে কান্না পায়)
‘কোনো কোনো কথা কাউকেই বলা যায় না কখনোই না।’(অভ্যন্তরীণ)
‘অস্থির সন্ধ্যায় কিছু ভিটামিন খুইয়ে কিনে নিলাম বিনিময় অযোগ্য দীর্ঘশ্বাস―সাথে নোনাজল।’(ব্যবধান)‘লোভ জমলে সত্য ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’(বেদনার ব্যাসার্ধ)
‘সব পথ সতর্কতাকে সম্মান দেখায় না। ’(গুহা)
‘কারো কারো জীবনে ভুলগুলোই বড় সত্য। ’(মা)

এসব দার্শনিক উপলব্দির সাথেই ঠাঁই পেয়েছে কিছু দ্রোহত-স্পর্ধিত উচ্চারণ যা কেবল কবির কবিত্বকে নয়, তার ভেতরকার নিগুর দাহকেও প্রকাশ করে। যে অন্তদাহ ‘কোবিদ’ কবিচিত্তে অবশ্যবিরাজমান।
‘সূত্র হরোনো গনিতজ্ঞ যৌনতার অংকে বারবার ভুল।...আমি ভাই আর্টসের ছাত্র বোকচোদ নাবালক প্রেমিক।’ (আততায়ী)
‘চোখ খুলে বসে অঅছে একদল কুকুর...কালো নেকাবে ঢেকে আছে দূরদৃষ্টি। ’(ব্যবধান)
‘ধুলো সাঁতরে যে আগামি বেড়ে উঠছে সে কোন শৃঙ্খল প্রত্যাশা করে না। ’(দ্রোহ)
‘বিকলঙ্ক মানবতার ময়দানে তাবিজের খসড়ায় বুঁদ মৌ-লোভী রাষ্ট্রীয় পরকীয় তার সহজাত প্রবৃত্তি।’(লিপটিজিং)


তবে এসব জাগতিক কঠোর বাস্তবতার ভীড়েও কিন্তু সাগরের তপ্ত প্রেমিক মনের আকুতি চাপা পড়ে থাকেনি। আর হৃদয় মথিত আবেদন প্রায়শ প্রকাশ পেয়েছে রেকান কোন কবিতার কোন কোন ছত্রে-
‘নিবে যাচ্ছি- যদি একবার আসতে। ’(প্রদীপ)
‘একবার ডাকো না―সব ফেলে উড়ে আসবো।’(বৃষ্টি হলে কান্না পায়)

মোট চল্লিশটি কবিতা বুকে পুরে গ্রন্থবদ্ধ হয়েছে যে সাইরেন, তার মধ্যে যে কবিতাটি কবির নিখুঁত কবিত্ব শক্তির সাক্ষ্য দিচ্ছে তার নাম ‘নিষিদ্ধ চিরকুট’। শুধু কবিত্ব শক্তিই নয়। একজন সচেতন মানুষের সত্য উচ্চরনের যে সাহস তা তার বিভিন্ন কবিতায় ঝিলকে উঠলেও নিষিদ্ধ চিরকুট এ তার যে বিদ্রুপাত্মক আক্রোশের প্রকাশ দেখি তা পুরো বইটির সারমর্ম। এ কবিতায় আমরা যখন পাঠ করি, ‘আর আমাদের অভিভাবকরা পূজো দিতে যায় বিমাতার পদতলে-নিয়ে আসে বেঈমানীর প্রসাদ..’ তখন আমাদের পাঠক অন্তরে এ অক্ষেপ-ই জাগে, ‘ভুলে রথে কোথায় যাচ্ছি আমরা।’(মাতাল জোছনা)




দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.