নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১ টি। (৮টি কবিতার বই, ২টি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্পের বই।)

সানাউল্লাহ সাগর

সৃজনশীল লেখালেখি, গবেষণা ও সম্পাদনা

সানাউল্লাহ সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রহের বাগদত্তা

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৪


কথাটা শেষ হতেই উঠে দাঁড়ালো রেহমান। শেষ বিকেলে ডানা ঝাপটে ঘরে ফেরা পাখির মতোন সুখগুলো উড়ে যাচ্ছে নীল রাজ্যে। মুহূর্তেই ঝাপসা হয়ে আসলো স্মৃতির আয়নায় সুখকর দৃশ্যগুলো। তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো শূন্য পৃথিবীর অর্ধশূন্য জীবন। হ্যাঁ কি নেই রেহমানের- ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি লম্বা, সুন্দর চেহারা, হালকা-পাতলা গড়ন। আর এখনকার সময় সম্ভ্রান্ত স্মার্ট বলতে যা বুঝানো হয় তার সবই আছে। কিন্তু একটা জিনিসে তার ঘাটতি সে লুকোচুরি করতে পারেনা- সাদাকে সাদা- আর কালোকে কালো বলতেই অভ্যস্ত।
রেহমানের মাথায় ভবিষ্যৎ বলতে এখন যা ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো- সোজা বাসায় চলে যাবে। এখন ফ্লাট একেবারেই ফাঁকা। এ সময় কেউই বাসায় থাকে না। সিলিংফ্যানের সাথে ঝুলে জীবনকে গুডবাই জানানো। অথবা গেটা দশেক স্লিপিং পিল খেয়ে চিরদিনের মতো শুয়ে থাকবে। অথবা নেশা করে খানিক সময়ের জন্য নিজেকে পৃথিবী থেকে দূরে রাখা। কিন্তু মফস্বলে ব্রান্ডি মদও সহজলভ্য নয়- বড়োজোড় গাজা বা বাঙলা মদ সহজে পাওয়া যাবে। অনেক মহামানবরা আত্মহত্যা করেছেন। সিলভিয়া প্লাথ রেহমানের প্রিয় কবি কিন্তু তার পথ অনুসরন করা সম্ভব না। আগুনকে সে ভীষণ ভয় পায়। কিছুই করা হলো না রেহমানের- বাসায় গিয়ে গতো তিনদিনের না ঘুমানো শরীরটাকে ধরে রাখতে পারলো না। কিছুক্ষণ পর ঘুমটা ভেঙে গেল- একটা স্বপ্নের চরম মুহূর্তে এসে চোখ থেকে ঘুমটা উধাও হয়ে গেলো। দু’জন হাঁটছে- সাথের ছেলেটিকে চিনতে পারছেনা রেহমান। তবুও একসাথেই চলছে- কোথায় যাবে তাও জানে না। তার কোন কাজ নেই। কিন্তু সে কোথায় যাচ্ছে এই ছেলেটির সাথে! ছেলেটি রাস্তার পাশে সরুগলি দিয়ে সামনে এসে একটি মাঝ বয়সী বাড়ির সামনে থামলো। শরীরে পৌঢ়ত্বের চিহ্ন থাকলেও এখানে যে অনেক লোকের আনাগোনা তা সামনের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখেই বোঝা গেলো। বাড়ির মধ্যে যাওয়ার পর সাজগোজ করা মেয়েদেও দেখে রেহমানের কাছে বিষয়টি আর অস্পষ্ট থাকলো না। তিন স্তরের নিরাপত্তা পেরিয়ে ঢুকতে হলো বাড়ির মূল কামরার দিকে যেখানে রাতপরিরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। একবার চোখ বুলিয়ে ছেলেটি বেড়িয়ে আসলো। পিছনে রেহমান। ছেলেটির চোখ চুইয়ে জলের কণা বেরুচ্ছে। রেহমানকে বলে গেলো তার এখানে আসার কারন। ছেলেটির বয়স ১৪/১৫হবে। সে তার মাকে খুঁজতে এসেছে। ছেলেটি যার কাছে বড় হয়েছে সে বলেছে তার মা এখানে থাকে। কিন্তু তাকে এখানে খুঁজে পেল না। তার বাবাকে কখনো দেখেনি, মাকেও না।
তারপর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না- কুয়াশার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল রেহমান। ছেলেটিও কোথায় যেন হারিয়ে গেল। হঠাৎ দেখতে পেল ছেলেটি দৌড়াচ্ছে- পিছনে রেহমানও দৌড়াচ্ছে। ক্রমশ তার আর রেহমানের দূরত্ব বাড়ছে। তারপর দ্রুতগামী বাস-ট্রাক, ব্যস্ত রাস্তা, খোলা আকাশের নিচে ছড়ানো-ছিটানো কিশোরের রক্তাক্ত অসাড় অঙ্গ-প্রতঙ্গ। আর আকাশের শরীরে পয়ত্রিশ প্লাস এক নারীর মলিন মুখাকৃতি। মুখটাকে খুব চেনা মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিলো কাছের কেউ কিন্তু মনে করতে পারছিল না রেহমান।
ঘুম ভাঙার পর মুখটাকে খুব সহজেই মনে করতে পারলো। মুখটা অবিকল শীলার মতোন। রেহমান ভেবে পায় না এরকম একটা স্বপ্ন দেখলো কেনো। আর যাকে ভুলে থাকাটা বাঁচার জন্য এখন খুবই জরুরী সে স্বপ্নের মধ্যে এসে হাজির। কিন্তু স্বপ্নে আসা চরিত্রটা খুবই বিচিত্র। বাস্তবে হাসিখুশি শীলার সাথে তার কোন মিল নেই। ওরকম মলিন মুখে সে শীলাকে কখনই দেখেনি।
প্রচন্ড ক্ষুধায় শরীর খুবই দূর্বল হয়ে গেছে। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে দেখলো রাত ৮টা। কিছু খেয়ে- মন থেকে বাজে চিন্তা তাড়ানোর জন্য টিভি দেখলো কিছুক্ষণ। অনেক দূশ্চিন্তার সময় হুমায়ুন আহমদের বই নিয়ে বসে দেখেছে ভালো কাজ দেয়। আজ কোনটাতেই কাজ হলো না। কিছুতেই মন বসাতে পারলো না রেহমান। বিছানায় শুয়ে-শুয়ে অস্থির কিন্তু ঘুম আসছে না। অবশেষে স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমাতে হলো রেহমানের। একটু সকাল করেই ঘুম ভাঙলো। ভাবলো আজ আর অফিসে যাবে না। খুব ভোরেই হকার পত্রিকা দিয়ে যায়, দাতব্রাশ করতে করতে পত্রিকা দেখার অভ্যাস দীর্ঘ দিনের। রাজনীতির মাঠ গরমÑ হরতাল ঘোরতাল আর সহিসংতা , প্রতিশোধ পরায়ন নেতাদের যাঁতাকলে পড়ে দেশটা যে গোল্লায় যাচ্ছে তা এখন গ্রামের কৃষকও বলতে পারে। লিড নিউজ- ‘আগামী কাল থেকে বিরোধী দলের টানা ৩৬ ঘন্টার হরতাল।’ পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে চোখ আটকে গেলে রেহমানের। শিরোনাম - “নগরীতে গৃহবধুর আত্মহত্যা” উপড়ে শীলার সেই ছবিটা যেটা কাল স্বপ্নে আকাশে দেখেছিল। থ’ হয়ে যায় রেহমান কিছুই ভাবতে পারেনা। শীলা কেনো এমন করলো। একটা নাই মানুষ চিরতরে নাই হয়ে গেলো ! পৃথিবীটা এতো ছোট কেনো।
গতো তিনদিন আগে পাঠানো একটা ম্যাসেজ মাথায় ঘুড়ছে-“যদি কখনো তোমাকে না বলে চিরতরে চলে যাইÑতবে দাবী রেখো না। শুধু এক বার দেখে যেও।” কি করবে রেহমান - ভালোবাসার জন্য সব করতে পারে সে। আর এখন যে চলে যাওয়া মানুষটাকে সব দিতে হবে জীবন-যৌবন অথচ সে পাবে না একবিন্দুও। আর হয়তো জেল-জরিমানা অথবা এর থেকেও বড়ো কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য। কিন্তু এসব মাথায় আসছে না রেহমানের শুধু বিস্ময় নিয়ে নির্বাক চোখে খেলা করে স্বপ্নে দেখা মুখখানা।
সিনেমা কিংবা নাটকের মতো করে শীলার সাথে রেহমানের পরিচয় হয়নি। পিছন পিছন ঘুরে কিংবা চন্ডিদাসের মতো বারো বছর সাধনা করে প্রেম করা রেহমানকে দিয়ে হয়তো কখনই হতো না। যদি না এভাবে শীলার সাথে পরিচয় না হতো। বই কিনতে গিয়ে বছর তিনেক আগে তরুন লাইব্রেরীতে শীলার সাথে রেহমানের পরিচয়। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা বলতে রেহমান অজ্ঞান। একটা বের হলে আর একটার জন্য অপেক্ষা করে। শীলাও কম যায় না সাংসারিক কাজের অবসরে মাসুদ রানায় বুদ থাকে। তখন চাকুরী ছিল না রেহমানের। কাজ ছিলÑ চাকুরীর খবর উল্টানোÑআবেদন করা। এর ফাঁকে টুকটাক বই পড়া। পচিয়ের পর সকল স্বাভাবিক প্রেমের মতো চলছিল তাদের যোগাযোগ। তারপর প্রনয়- আর তারপর মহাপ্রনয়।
গতোকাল বিকেলে শেষ দেখা হয়েছিল শীলার সাথে। দীর্ঘ একমাস ৪ দিন পর। এক সাথে ছিল ঘন্টা খানেক। শীলা তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার জন্য বাববার বলছিল। কিন্তু রেহমান চাচ্ছিল বেস কিছুদিন পর্যন্ত চলা রাগারাগির একটা সমাধান করতে। বাবারবার প্রশ্ন করার পরও শীল এ ব্যাপারে কিছুই বলছিল না। রেহমান জিজ্ঞেস করেছিল - তুমি কি করতে চাও।
শীলার নিস্পৃহ জবাব -সম্পর্কটা এখানেই থামিয়ে দেও। আমি আর পারছি না।
রেহমান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল- কি বলছো !
মাথা নিচু করে শীলা বললো-“তোমার জন্য আমি আর কি করতে পারি”।
গতো তিনদিন ধরে রেহমান ঘুমায়নি। শীলা ফোন ধরছিল না। শেষে ফোনে পাওয়ার পর অনেক অনুরোধ করার পর দেখা হলো। কিন্তু কি বলছে শীলা। উত্তেজিত কন্ঠে বললো- তোমার আর কিছু করতে হবে না। তারপর সোজা চলে আসলো।
রেহমান শীলার পাঠানো সর্বশেষ এসএমএস টা দেখে। কি চেয়েছিলো শীলা রেহমানের কাছে। কি সমস্যা ছিল। রেহমানকে কখনো কিছুই বলেনি। বুঝতে পারে না বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে আছে। স্বপ্নে দেখা মুখটা তার চোখের সামনে ভাসছে...
- সানাউল্লাহ সাগর

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:১১

রাজীব নুর বলেছেন: ভালও লিখেছেন। তবে আর একটু গুছিয়ে লিখলে বেশি ভালও লাগতো।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৩

নীল আকাশ বলেছেন: শুভ অপরাহ্ন,
মানুষের জীবন মাত্র একটা আর এই মস্ত বড় পৃথিবীটা সামান্য একটা মেয়ের চাইতে অনেক অনেক বড়।
ধন্যবাদ।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:০০

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.