নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১ টি। (৮টি কবিতার বই, ২টি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্পের বই।)

সানাউল্লাহ সাগর

সৃজনশীল লেখালেখি, গবেষণা ও সম্পাদনা

সানাউল্লাহ সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সানাউল্লাহ সাগরের প্রকাশিতব্য উপন্যাস ‘সহবাস’ থেকে...

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৫

রাত পৌণে দুইটায় অন্তুর কাছে প্রথম ফোন এলো। চাচাতো ভাই রফিকের ফোন থেকে। অতো রাতে বের হয়ে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে পৌঁছার কোনো ব্যবস্থা নেই। সে জন্য তার কিছুই করার ছিলো না। ঘুমহীন চোখ নিয়ে ফজরের আজানের পর পরই বের হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে। বাড়িতে পৌঁছতে সোয়া তিনটা। ততক্ষণে মৃতদেহ গোসলের প্রস্তুতি চলছে। চারদিকে পরিচিত অপরিচিত মানুষের মুখ। অন্তুর আত্মীয় স্বজনরা কান্না করছে।
ছোট বোনটাকে বেশি ভালেবাসে অন্তু। বাড়িতে ঢুকতেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে কান্না শুরু করছে ছোট বোন সিমু। সারারাত না ঘুমানো আর কান্নায় তার মুখটা ফুলে আছে। চোখের নিচে পানির শুকানো দাগ। ছোট বোনের ফোঁপানো কান্না অন্তুকেও বিচলতি করে দেয়।
গত কয়েকবছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছিলো অনেকটাই। পরিবারের বড় হিসেবে সব আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। ঈদে-কোরবানিতে সবার বাড়ি গিয়ে দাওয়াত খাওয়া। খোঁজ-খবর রাখা। এসবে তেমন কোনো আগ্রহ নেই অন্তুর। তার নিজের একটা জগত তৈরি হয়েছিলো সেই ছোট্ট সময়ই। যখন আঠেরোও পার হয়নি। সেখানেই ডুবে থাকতে ভালোবাসে অন্তু। বাবার সাথে অন্তুর যোগাযোগটাও সামাজিকতায় গিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলো। এমন একটা অদৃশ্য দূরত্ব জমে উঠেছিলো। সে দূরত্বটা তারা দু’জন ছাড়া আর কেউই তেমন জানতো না। ছোট ভাই-বোন কিছুটা আন্তাজ করতে পারছিলো। ওদের একটা চেষ্টাও ছিলো। কিন্তু নিজে থেকে চেষ্টা করেও সেই দূরত্বটা ঘোচাতে পারেনি অন্তু। তারও ইচ্ছে করতো এই জমে ওঠা দূরত্বটাকে ভেঙে পারিবারে ছেলেবেলার সেই আবহটা ফিরিয়ে আনে।
ব্যাগ রাখতে রাখতে এসব ভাবছিলো অন্তু। এমন সময় অন্তুর ছোটমামা গফুর শেখ এসে জানালো, সমাজের মাতুব্বর করিম ডাকছে। একটু কথা বলতে চায়। ব্যাগ রেখে অন্তু উঠানের দিকে এগিয়ে গেলো।
চেয়ারে গোল হয়ে বসে আছে গ্রামের মাতুব্বররা। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও দেখা যাচ্ছে। শফিক মুন্সী বললো,‘ হ পরশু বিকালে করলেই ভালো হবে।’
অন্তু কিছুই বুঝতে পারছিলো না। কি হবে বিকেলে! ছোট মামা ওকে বুঝিয়ে বললো, ‘দোয়ার অনুষ্ঠানের কথা হচ্ছে। তুই তো বড় ছেলে। তোর মতামতটাও তো দরকার।’
অন্তু তার ছোট মামার মুখের দিকে তাকালো। তার চোখে অদ্ভুত কুয়াশা খেলা করছে। গতকাল রাত্রে মানুষটা মারা গছে। এখনো গোসল পর্যন্ত হয়নি। ছেলে-মেয়ে, আত্মীয় স্বজনরা কান্না করছে। এরই মধ্যে ভোজসভার আয়োজনের পরিকল্পনা সভায় ডেকে আনা হয়েছে অন্তুকে। অন্তুর মনের মধ্যে ধিক্ ওঠে। বিড়বিড় করে বলে, ‘হায়রে সমাজ! মৃতদের পরিবারের শোক যাপনটাও করতে দিবে না এরা। মিলাদ তো নয় এটা হলো একটা ভোজ উৎসব। কে কতো বড় আয়োজন করতে পারলো। কার মিলাদে কোন কোন রাজনৈতিক নেতা এলো এটাই মূখ্য।
এরই মধ্যে গ্রামের মাতুব্বর শ্রেণির লোক করিম তাকালো অন্তুর দিকে।
‘এই যে অন্তু এসে পড়েছে। সিরাজুল মাষ্টারের বড় ছেলে।’
সে কাছে ডেকে বসালো। মাথায় হাত বুলিয়ে মাতুব্বর সুলভ স্নেহে সান্তনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো, ‘ দেখো বাবা—মানুষ তো মরণশীল। জন্ম নিলে মরতে তো একদিন হবেই। কারো একদিন আগে, কারো একদিন পরে।’
মাথা চুলকে হয়তো আরো কোনো জ্ঞানগর্ব সান্তনার বাণী খুঁজতে ছিলো সে। না পেয়ে তাজা দীর্ঘশ^াস তৈরি করলো। একেবারেই মেকি দীর্ঘশ^াস। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে আবার বললো, ‘তুমি বুঝদার—লেখাপড়া জানা ছেলে। তোমাকে সান্তনা দেওয়ার কি আর আছে বলো। তুমি এসব আমাদের থেকে অনেক ভালো বোঝো। তারপরও গ্রামের বড় হিসেবে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আর তোমার বাবা একজন মুক্তযোদ্ধা ছিলেন। সৎ ইশকুল মাষ্টার। খুব ভালো লোক ছিলেন।’
তার কথার শেষের দিকে কেমন যেন কষ্টের আভাস পাওয়া গেলো। সেটাও কৃত্তিম কিনা বুঝতে পারলো না অন্তু। কারণ একটু আগে কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস দেখে অন্য দিকে ফিরে কথা শোনার ভান করছিলো সে।
বৈঠকে থাকা কয়েকজন আক্ষেপের সুর তাল মেলালো, ‘হ বড় ভালো লোক ছিলো।’
মালেক শিকদার বললো, ‘দেখো কি এমন বয়স হয়েছিলো তোমার বাবার। কিন্তু চলে গেলো। তোমার বাবা তো আমার থেকে ৫/৬ বছর ছোট হবে। কিন্তু আমরা এক সাথেই থাকতাম। এক সাথে চলতাম ছোট সময় থেকে...’
সবার দিকে তাকিয়ে থামানোর ভঙ্গি করে রহিম বয়াতী বললো, ‘দেখো বাবা, গ্রামের তো একটা নিয়ম আছে। কেউ মারা গেলে একটু দোয়ার অনুষ্ঠান করতে হয়। আমরা সবাই মিলে দোয়া করবো। এই একটু ডাল-ভাত খাওয়ানো আর কি। তোমার মামার সাথে কথা বলেছি। চাচাদের সাথেও সকালে আলোচনা হয়েছে।’
অন্তু তার ছোট মামার মুখের দিকে তাকায়। সে মনে হয় অন্তুর চোখের কথা যেনো পড়তে পারছিলো। সে বললো, ‘ তুই কিছু চিন্তা করবি না। আমরা তো আছি। কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া তোর বাবা তো মুক্তযোদ্ধা ছিলেন। একটু বড় করে দোয়ার অনুষ্ঠান না করলে কেমন দেখায়!’
গফুর শেখের কথা শুনে গেলো অন্তু। শোকের যে একটা ঘোর আছে তাতে বুঁদ হয়ে থাকার মধ্যেও এক ধরনের উদ্যাপনের ব্যাপার আছে। অন্তু না পারছে শোকের ঘোরে বুঁদ হতে না পারছে সাথে বৈঠকিতে মানসিক মনোযোগ দিতে। কেবল তার মনের মধ্যে খেলে যাচ্ছে চলে যাওয়া মানুষটার সাথে ছোট থেকে একটার পর একটা দৃশ্য। সে দৃশ্যরা এলোমেলো করে দিচ্ছে সব কিছু। ভেতরে ভেতরে ভেঙে—খুব ভেঙে পড়ছে অন্তু। সে ভাবছে হয়তো অনেক অপরাধ করে ফেলেছিলো অন্তু। কিন্তু বাবা তো তার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিলো অন্তুর। দূরত্বটা ঘুচিয়ে নেওয়া উচিত ছিলো। দূরত্বের ব্যাপারটা কেনো ঘটেছিলো সেটা অন্তুর বাবা জানতো আর কেউই জানতো না।
মামা-বাবাকে দেব-দেবতার মতো, অলি-আওলিয়াদের মতো দেখে তার সন্তানরা। সেখানে দেব-দেবতার যেমন কোনো ভুল সাধারন মানুষ প্রত্যাশা করে না। তেমন বাবা-মার কোনো ভুলও সন্তানরা মেনে নেয় না। দাগকেটে যায় সন্তানদের মনে। ভালোবাসার পরিবর্তে জন্ম নেয় ঘৃণা। ক্ষমার অযোগ্য হয়ে পড়ে সন্তানের কাছে করা অপরাধ। যে কারণে কাজের মেয়ের সাথে শোয়ার অপরাধটা অন্তু সারা জীবনেও ক্ষমা করতে পারেনি। হয়তো কখনোই পারবে না। এই বিষয়টাকে বারবার ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে অন্তু। কিন্তু কিছুতেই ভুলে যেতে পারেনি। বারবার নিজেকে তোলপার করে দিয়ে ধুলোয় শুইয়ে দিয়েছে অন্তুকে। হয়তো অন্তুর বাবাও জানতো না কি কারণে অন্তু আস্তে আস্তে দূরে চলে গিয়ে ছিলো।
অন্তুর দিকে তাকিয়ে করিম বয়াতী বললো, ‘কি অন্তু তোমার কিছু বলার আছে? ’
অন্তুর দৃশ্যকল্পে ছেদ পড়লো। ফিরে তাকালো বৈঠকীর দিকে। অন্তু মাথা নাড়লো। বললো, ‘না আপনারা বড়রা আছেন তো। আপনারা যা ভালো মনে করেন সেটাই করেন। ’
কথা শেষ করে অন্তু ঘরের দিতে হাঁটতে লাগলো।
তখন কেবল এসে পৌঁছেছে অন্তুর ফুফাতো বোনেরা। তারা আসায় কান্নার নৌকা পাল পেলো। গতি বাড়ছে আর বাড়ছে। আর বাড়বেই না কেনো। তাদের তো একজনই মামা। অন্তুর ফুফু মারা যাওয়ার পর কি না করেছে তাদের জন্য। অন্তুর বাবাও বলতো, ‘আমার তো আপন ভাই নেই। তিন বোন ছিলো, তারা সবাই তো আমাকে রেখে চলে গেছে। এখন তোরা আছিস যখন যা দরকার হবে আমাকে বলবি। আমার সাধ্য মতো তোদের জন্য করার চেষ্টা করেবা।’
ঝিম মেরে বসে আছে অন্তু। কান্না করতে পারছে না। চিৎকার করে ফাটিয়ে দিতে পারছে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে কি এক অপরাধবোধে পুড়ে যাচ্ছে তার মন। অন্তুর চাচাতো ভাই শামীম এসে জানালো ইমাম সাহেব বলেছে, ‘গোসল হয়ে গেছে। আছরের নামাজের পরই জানাজা হবে। আর মাত্র এক ঘন্টা বাকী যারা শেষ বারের মতো দেখতে চান দেখে আসেন। এরপর আর দেখানো হবে না।’
অন্তু মুখ তুলে তাকালো। স্বজনদের কান্নার সাথে সাথে স্থানীয় মাদরাসা থেকে আসা তালেবে এলেমদের সুর করে পড়া কোরআনের আওয়াজ আসছিলো।
অন্তুর আরেক চাচাতো ভাই শামীম। সে অন্তুকে খুঁজছে। অন্তুকে খুঁজতে খুঁজতে পিছনের বারান্দায় এসে পেলো। তার মুখেও সান্ত¡নার বয়ান, ‘শোন গুম হয়ে বসে থাকলে হবে না। তোকে চেয়ারম্যান সাহেব খুঁজতেছে। আর প্রেস ক্লাব থেকে সাংবাদিক শফিক এসেছে। কাকার একটা ছবি চাইতেছে।’
অন্তু উঠানের দিকে বের হলো। তার শরীরটা নিজের কাছেই কেমন আঠালো লাগছে। ঘামে ভেজা শরীরেই ঘাম মজে আছে। তাছাড়া গত রাতেও তো ঘুমাতে পারেনি। তার উপর সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। এখন চারটার বেশি বেজে গেছে। ভাবছে একবার গোসল করতে পারলে ভালো লাগতো। শফিক লোকটাকে অন্তু চেনে। স্বধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতাকারী একটি ধর্ম ভিত্তিক দলের সক্রিয় নেতা সে।
অন্তু উঠানে আসতে সাংবাদিক সালাম দিয়ে হ্যান্ডসেক করলো। সাংবাদিকের মুখের দিকে তাকালো সে। একজন মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর নিউজ কভার করেত এসেেেছ স্বধীনতাযুদ্ধে বিরোধীতাকারী একটি ধর্ম ভিত্তিক দলের সক্রিয় নেতা। কি অদ্ভুত এই দেশ! যেখানে এই স্বধীনতা যুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবী করা দলের আমলেও উপজেলা প্রেস ক্লাবে’র সেক্রেটারি হয় একজন স্বধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতাকারী একটি ধর্ম ভিত্তিক দলের সক্রিয় নেতা। শোকের মধ্যেও অন্তুর ভেতরে এক ঠাট্টার হাসি খেলে গেলো। আবার সাংবাদিক শফিকের মুখের দিকে তাকালো অন্তু। তার মুখে লেগে আছে অদ্ভুত হাসি। সে হাসির অনেক অনুবাদ হতে পারে।
সামনে এগিয়ে যেতেই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এলো। লোকটাকে এর আগে দু-চারবার দেখেছে অন্তু। গায়ের রঙ কালো তেলতেলে। পুরো শরীরটা এমন যে সে মটরসাইকেলে উঠলে আর কেউ উঠতে পারে না। চেয়ারম্যান হওয়ার পর আর এই লোকটাকে দেখেনি অন্তু। কথাও হয়নি কখনো। হাইব্রীট নেতা। দু বছর আগেও একে কেউ চিনতো না। হঠাৎ করে বিদেশ থেকে এসে টাকার গরমে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছের মানুষ হয়ে যায়। তার সাথে শেয়ারে ঠিকাদারি করছিলো। নির্বাচনের আগে ঠিক করা যে সব প্রার্থীরা ছিলো তাদের চোখে ধুলো দিয়ে টাকার গরমে দলীয় সমর্থন কিনে নিয়ে সোজা চেয়ারম্যান। এখন আবার দলের গুরুত্বপূর্ন নেতা! পদ-পদপীও আছে। এসব কথা অন্তু ছোট ভাই রাকিবের কাছে শুনেছে। চেয়রম্যান শাহ আলম এগিয়ে এলেন। সান্তনার ভাষায় কথা বলতে লাগলেন হাইব্রীট চেয়ারম্যান।
অন্তুর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এইসব মানুষ এই দেশের জনপ্রতিনিধি! হয়তো এই তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের তৃতীয় শ্রেণির গ্রামের জনগনের জন্য এরকম নেতাই প্রাপ্য! অন্তু মাথা নেরে সান্তনা গ্রহনের ভঙ্গি করে এগিয়ে গেলো ওসি সাহেবর দিকে। সেও নাকি অন্তুকে খুঁজতেছিলো।
বাড়ির রাস্তার দিকে যেতেই অন্তুর দিকে এগিয়ে আসে ওসি আব্দুর রহিম মন্ডল। হাইব্রীট চেয়ারম্যানই পরিচয় করিয়ে দেয় ওসির সাথে। ওসি সাহেব হরগর করে জানালো, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রোগাম থাকায় তার একটু ব্যস্ততা আছে। এমপি আসবে। তবুও তো আসতে হয়। এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। তাছাড়া তিনি শিক্ষক হিসেবেও খুব পরিচিত ছিলেন। ওসি সাহেব এসেই তার অনেক সুনাম শুনেছে। দু, চার বার একসাথে চাও খেয়েছে জানালো। রাষ্ট্রীয় মর্যাাদায় দাফনের জন্য পুলিশ সদস্যদের রেখে যাচ্ছে।

ওসি সাহেব চলে যাওয়ার পর অন্তুর মনে হলো মরে যাওয়ার পর মানুষের শত্রু কমে যায়। সবাই ভালো লোক ছিলেন বলে সনদ দিতে থাকে। কেউ কেউ আক্ষেপ করে উঁহু আহা করে। কান্নার চেষ্টাও করে। অথচ এদের কারণেই অন্তুর বাবা অনেকদিন থেকেই কারো সাথে তেমন মিশতেন না। তিনি রাষ্ট্রীয় কোনো ধরণের সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার পক্ষে ছিলেন না। একবার কি একটি কারণে থানা-পুলিশ হয়েছিলো। তখন সরকার দলীয় নেতারা তার বিপক্ষে গিয়ে কাজ করেছে। সেবার অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। খুব আক্ষেপ করে বলেছিলেন,‘ হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। অলরেডি চলে গেছে। আর কিচ্ছু বাকী নাই।’
অন্তু অবাক হয়েছিলো। হুমায়ুন আজাদের অনেক বিষয়ের সাথেই দ্বিমত পোষন করতেন সিরাজুল ইসলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। আবার কট্টরপন্থাও পছন্দ করতেন না। প্রগতি আর নাস্তিকতা এক বিষয় নয় এটা সে ভালো ভাবেই বুঝতেন। একজন গ্রামের স্কুল টিচার হয়েও তিনি চিন্তায় ও কাজে প্রগতিশীল হয়েও কখনো নাস্তিকতাকে সহ্য করতেন না।
অন্তুর চাচাতো ভাই ছায়েম এসে জানালো, চাচার লাশ জানাজার জন্য স্কুল মাঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অন্তু দেখবে কিনা। জানাজার পর তো আর দেখতে পারবে না।
অন্তু বললো,‘ একটু ওয়েট করতে বল। আমি ওজু করে আসতেছি।’
অন্তু জটপট বাথরুমে ঢুকে গোসল করে নিলো। তারপর জানাজায় অংশ গ্রহনের জন্য তৈরি হলো। পিতার মরা মুখটা দেখার জন্য চাচাতো ভাই ছায়েম বলে গেলো। বাড়িতে এসে পিতার মৃত দেহের কাছে গেছে অন্তু। কিন্তু সারা শরীর ঢাকা থাকায় মুখটা দেখা হয়নি। শেষ বারের মতো কি কথা বলা উচিত পিতার সাথে! অন্তুর মন বলছে সকল অপরাধবোধ ঝেড়ে, সকল পাহাড় ভেঙে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
অন্তু সিরাজুল ইসলামের মৃত দেহের কাছে গেলো। পাঞ্জবী পড়া। মাথায় শাদা টুপি। রহিম মাতুব্বর আতর লাগিয়ে দিলো অন্তুর পাঞ্জাবীতে। অন্তু খাটের কাছে যেতে একজন মুরব্বী গোছের লোক মুখের কাছের মুঠি খুলে দিলো। অন্তুর চোখ তার বাবার নিভে যাওয়া চোখের উপর। অন্তু নিজের মনে তার নিভে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। সমস্ত অভিমান ভেঙে বাবার প্রতি নিজেকে মেলে দিয়েছে। নিজেকে নত করেছে বাবার নিশ্চুপ মুখের দিকে। অন্তু স্পষ্ট দেখছে সিরাজুল ইসলাম হাসছে। আর বলছে, ‘আরে বোকা বাবার কাছে সন্তানের কোনো অপরাধ নেই। আমিও তো মানুষ আমারো তো অপরাধ হতে পারে। ভুলতো করতেই পারি। বাবা ভুল করলেই কি বাবা থেকে অন্য কিছু হয়ে যায়! বাবারাও তো মানুষ! তাদেরও সবার মতোই সব ধরনের রিপু আছে।’
অন্তুর অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বের হলো। অন্তু নিজের মধ্যে নিজেকে যেন ফিরে পাচ্ছে। নিজের কাছে সেই কিশোর অন্তু। যাকে কেউ বকা দিলে বাবার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো। সেই অন্তু আবার দৌড়ে এসে এই অন্তুর মধ্যে ঢুকে গেছে। অনেক বছর পর অন্তু হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। শিশু অন্তু চিৎকার করে কাঁদছে। কান্নার শব্দে আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠছে। সব পাখিরা চুপ হয়ে গেছে। পানির ছলছল তলিয়ে যাচ্ছে অন্তুর কান্নার শব্দে...

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি উদ্ধৃতির কিছু অংশ পাঠে ভাল লেগেছে যদিও কোথাও কোথাও টাইপো আছে। শুভ কামনা রইল।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫২

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৯

বলেছেন: আরেকটু ঘষামাজা দরকার মনে হলো।।।।
একটু ঝোল না দিলে শুকনো লাগে।।।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫১

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই উপন্যাসটা কি অনুপ্রানন থেকে বের হবে?

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫১

সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: না। হাওলাদার প্রকাশনী বের করবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.