নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৃজনশীল লেখালেখি, গবেষণা ও সম্পাদনা
বেশ কিছু দিন থেকে খুব সকালেই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। কেনো ঘুম ভেঙে যাচ্ছে! কেনোইবা স্বপ্ন দেখতে দেখতে বুক ধরফর করে বিছানায় হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে থাকছি! চোখের মধ্যে দেখছি আরো হাজার হাজার চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে! তখন আর ঘুম কীভাবে থাকবে? ঘুম তখন সিঁদেল চোরের মতোন দৌড়ে পালায়। আর আমি বিছানার পশম গুনতে গুনতে নিজের কাছে আত্মসমর্পন করি। স্বপ্ন শেষ হয় না। নিজের উপর বিরক্ত হই। স্বপ্নের উপর বিরক্ত হই। তারপর নির্বাক হয়ে থাকা অন্ধকারের মধ্যে হাজার-লক্ষ চোখ নিয়ে তলিয়ে যাই...যেতেই থাকি। বিরক্ত হওয়া এই স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করেও অনেক সময় ক্ষয় করেছি। কিন্তু ঠিক কারণটা আবিষ্কার করতে পারছি না। যদিও এই স্বপ্নটা আমি দেখতে চাই না। তারপরও মনে হয় স্বপ্নের শেষে আসলে কি আছে সেটা জানার জন্য মন উসখুস করে। আবার কখনো মনে হয় একদিন স্বপ্নটা পুরোপুরি দেখতে পারলে পরের দিন থেকে সে আর বিরক্ত করবে না। সে কারণে আমি পুরো স্বপ্নটা দেখার নিয়ত করে অপেক্ষায় থাকি। বলা যেতে পাওে এক ধরনের প্রস্তুতি। জানি না এই দুনিয়ায় আমার মতো কোনো মানুষ আছে কিনা যে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখার জন্য এতোটা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে। কিন্তু আমি অপেক্ষা করি। করতেই থাকি।
যথারীতি আজকেও খুব সকাল ছয়টা তিন মিনিটে ঘুম ভাঙলো। একজন সুস্থ মানুষের ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুমানো দরকার। কিন্তু আমার অন্তত আট ঘন্টা ঘুমাতে না পারলে শরীরের যন্ত্রগুলো ঠিকমতো কথা শোনে না। মাঝে মাঝে এমনও হয় যে—তিন দিনে আমার শরীরের যন্ত্রগুলো দশ ঘন্টাও চুপচাপ থাকার ফুসরত পায় না। তখন আমি প্রায় অকেজো হয়ে উঠি। আর কাজহীন মানুষেরও যে কতো রকম কাজ থাকতে পারে সেটা আমাকে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না।
কাজে-অকাজে বত্রিশ বছর পার করে দিলাম। কিন্তু ঠিক মতো কোনো কিছুই করতে পারলাম না। এমনকি এই চলমান প্রযুক্তির জোয়ারেও একজন প্রেমিকা জোটাতে পারলাম না।
এ জন্য বন্ধুদের অহ্লাদের গালি হজম করতে হয়। খোঁচা খেতে হয় বান্ধবীদের কাছ থেকেও। আর যেসব বান্ধবীরা উপরে উপরে ভালোবসার ঢঙ করে; ভেতরে ঘৃণা করে কিনা জানি না। তারা তো সোজা করে বলে দেয়—‘আরে বাল তুই হইলি এট্টা বাইদ্দা। হালা তোর কপালে না প্রেম আছে! না বউ আছে।’
আমি চুপ থাকি। মিটমিটিয়ে বোদ্ধা প্রেমিকের মতোন হাসি। ওই অর্থে আমার বান্ধবীও নেই। যা আছে তাদেরকে বান্ধবী না বলে পরিচিত কিংবা অর্ধ পরিচিত বলা যায়। তাদেও কথায় আমার কোনো বিকার না হলেও কেবল জবাব দেয়ার জন্যই মুখ হাসি হাসি করে বিজ্ঞ প্রেমিকের মতো তাকাই। তারপর গলা খকরি দিয়ে বলি— ‘আরে শোন ওস্তাদের মাইর শেষ রাত্তিরে। এমন একটা বউ নিয়ে আসবো যে তোরা তখন আমার পছন্দের প্রশংসা না করে পারবি না।’
এই কথা শুনে সবাই এক সাথে হো হো করে হাসে। আমিও তাদের সাথে হাসি। কেনো হাসি জানি না। তবুও হাসি। হাসি একটা ভাইরাস। যাকে পায় তার চরপাশের মানুষদেরও পায়!
হাসির রেশ কেটে গেলে নিজেকে প্রশ্ন করি। আসলেই কি এমন কিছু ঘটবে?
আমি কি সত্যিই ঘটাতে পারবো এমন ঘটনা! যাতে দূরে সরে যাওয়া পরিবার—আমার একটু একটু করে তলিয়ে যাওয়া বন্ধুরা আবার ফিরে আসবে। পিট চাপরে বলবে, ‘এতো দিন পর একটা ভালো কাজ করেছিস বেটা।’
আমি তখন চতুন মানুষের মতো হাসবো। আর আস্তে আস্তে বলবো, ‘ এটা আল্লা আমার জন্যই বানাইছে রে। নাইলে আমার কপালে এমন বউ তো জোটার কথা না।’
হয়তো আসবে না তেমন দিন। আমিও কিছুই করতে পারবো না।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এই সব কল্পনা মনকে বেশ জাগিয়ে দেয়। নিজে নিজেই তখন নিজের কল্পনার দৌড় দেখে হাসতে থাকি। মাত্র চার ঘন্টা ঘুম হলো আজ। এই চার ঘন্টার ফুয়েল দিয়ে সারাদিন চলতে হবে। লক্কর ঝক্কর বাসে করে চব্বিশ ঘন্টার মিনিমাম চার ঘন্টা বাস বাবার পায়ে উৎসর্গ করতে হবে। এই তো ঢাকার জীবন।
কিন্তু আমি ? এইসবের মধ্যে একজন আমি। অসহায় নিজেকে সবসময় বহন করে চলছি। কখনো ফুটপাতে—কখনো বাসের মধ্যে ফ্যানের বাতাস নিতে নিতে আয়েসি ভঙ্গিতে দেশের চলতি রাজনীতির ভাষ্যকার হিসেবে নিজেকে উজার করে দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারেরর চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করি।
আবার মনে মনে ভয়ও পাই। জায়গা বেজায়গায় সরকারের সমালোচনা করছি বলে। কি যে একদিন হয়ে যাবে! দেখা যাবে আমিও গুম হয়ে গেছি।
কেউ জানতেও পারবে না। একজন দালাল! হ্যাঁ একজন দালাল—দুনিয়া থেকে চিরতরে উধাও হয়ে গেছে! তাতে কারো কিছু আসবে যাবে না। কারো সেক্স করা বন্ধ হবে না। কারো ঘুষ খাওয়া বন্ধ হবে না। এমনকি একজন আঁতেল কবি যে কিনা বড়কর্তাদের পিছন পিছন ঘুরে বিটিভিতে কবিতা পড়ার সুযোগ অর্জন করে সগৌরবে ঝোলা কাঁধে শাহবাগে-টিএসসিতে ঘুরে বেড়ায়—সে শালাও কবিতা প্রসব করবে। যেন প্রসব না করতে পারলে বাংলাদেশ নামক একটা রাষ্ট্রের পতন হয়ে যাবে...
দালালী করি। সেটাকে গর্ব করে পরিচয় দেওয়ার কিছু নাই। দিতেও পারি না। শুনেছি বিদেশের মানুষ যে যার কাজ করে। কাজ নিয়ে, পেশা নিয়ে কেউ কোনো লজ্জাবোধ করে না। যে কাজই করুক না কেনো সেটা খুব সহজ করে পরিচয় দেয়। চারপাশের সবাই সহজ করেই সেটা গ্রহন করে। আর এখানে আমার মতো একজন থার্ডক্লাস ছাত্র যে কিনা টেনেটুনে বিএ পাস করেছে। গ্রামের একটা অখ্যাত ডিগ্রী কলেজ থেকে। তার আবার মান-সম্মান!
শুধু মান-সম্মান নয়। বলতে পারেন অনেক মান-সম্মান! সেকি যেই-সেই কাজ করতে পারে? না পারে না। তাতে তার বংশের ইজ্জত থাকে না।
দালালি করে দিনে সাত’শ-নয়’শ টাকা পাই। কোনোদিন এক হাজার টাকা পাই। তাও আবার শুক্র শনিবার অফিস বন্ধ তো ধান্দা বন্ধ।
এই খবির ওরফে হৃদয়। বাবার দেওয়া নাম খবির। খবির উদ্দিন হাওলাদার। টাকা উড়ার শহর ঢাকা এসেছে টাকার খোঁজ করতে। এসে দেখলো এখানে থাকতে হলে মর্ডান হতে হয়। সেজন্য মর্ডান হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে নিজের নাম পাল্টে ফেলেছি। খবির উদ্দিন হাওলাদার থেকে হয়ে গেছি হৃদয় চৌধুরী। আমার একটা ভিজিটিং কার্ড আছে। যেটা এলাকার কোনো লোকজনকে দিই না। ক্লাইন্ডদের দিই। সেখানে ইংরেজিতে লেখা হৃদয় চৌধুরী। সাথে অনেক পদবি। যার কোনোটাই আসলে আমার সাথে যায় না। কিংবা আমার কোনো যোগ্যতা নাই এইসব পদবি ব্যবহার করার। তারপরও করছি। করতে হচ্ছে। বাঁচতে হলে কতো কিছুই তো করতে হয়। আর টাকা ইনকাম করতে হলে আরো অনেক কিছু...
সত্য বলতে আমাদের ইউনিয়নের মধ্যেও কোনো চৌধুরী বংশ নাই। কিন্তু কী করবো! টাকা উপর্জনের লাইনটা তো একটু উপরের দিকেই থাকে। আর উপরে উঠতে হলে তো সিঁড়ি ধরে উঠতে হয়। সেজন্য পোশাক পাল্টে ফেলেছি। বংশ পরিচয় পাল্টে একটা অভিজাত অভিজাত ভাব আনার চেষ্টা করছি। নিজের নামের সাথে লাগিয়েছি চৌধুরী। নামের সাথে চৌধুরী লাগালেই তো হলো না। দেখতেও যেন চৌধুরীর মতো দেখায় সেজন্য আমাকে প্রতিদিন অনেক কষ্ট করতে হয়।
এই হৃদয় চৌধুরী হয়ে ওঠার অনেকটা অবদান আমার বন্ধু তসলিমের। সে দেশে থাকতে মাটি কাটতো। মানে কামলা খাটতো। এখন ঢাকায় এসে দেখি তার বিশাল বিজনেস! পান সিগারেটের দোকান। বিজনেস মানে আমার কাছে বিশাল। প্রতিদিন তার তিন চার হাজার টাকা লাভ থাকে।
গত দু বছর আগে তার বিজনেজটা আমার কাছে বিশালই ছিল। ঢাকার মতো জায়গায় যার একটা পান-বিড়ির দোকান আছে সেও একজন বড়লোক! তার পাওয়ারের অভাব নাই। যেন সিটি মেয়র!
এই শহরে সবাই চাপার জোরে চলে। এটা মনে হওয়ার পর আমিও চেষ্টা করলাম চাপাবাজি শেখার। কিন্তু চাপাবাজির তো কোনা স্কুল-কলেজ কিংবা ট্রেনিং সেন্টার নাই। মানুষের কাছ থেকে নিজ চেষ্টায় শিখতে হয়। আমিও শিখেছি। কিন্তু এই চাপাবাজিটা শিখতে শিখতেই আমার বছর খানেক সময় লেগেছে। এখনো ফার্স্টক্লাস চাপাবাজ হতে পারিনি। তবে অন্তত থার্ডক্লাস চাপাবাজ যে হয়েছি সেটা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি। সেজন্য এখনো দিনে শেষে যেখানে আমার মতো দালালরা তিন চার হাজার টাকা নিয়ে ঘরে যায়। কিংবা বাসায় যাওয়ার আগে মহাখালীর হোটেলগুলোতে শরীরের ঘ্রাণ নিতে যায়। তখন শরীরের প্রতি অন্যায় করে নিজেকে থামাতে হয়। আর সুনীলের কবিতার মতো ভাবি—দেখিস একদিন আমিও।
কিন্তু আমার স্বপ্নের মধ্যে কোনো নায়িকাকে আমি দেখতে চাই না। চাচাতো ভাই মোক্তারের প্রেমের করুণ অবস্থা দেখে পণ করেছি। মেয়ে মানুষের কাছে যাবো যখন শরীরের গরম উঠবে। কিন্তু ভালোবাসা? না মেয়ে মানুষ আসলে কোনো ভালোবাসার জিনিস না।
চলবে...
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৩০
সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৫১
ফয়সাল রকি বলেছেন: শুরুটা মন্দ না, চলুক।
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৯
সানাউল্লাহ সাগর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ করে লিখে গেছেন। ঝরঝরে লেখা। তবে মেয়েদের নিয়ে এত নীচু ভাবনা ভাবা ঠিক না। প্রথম পর্বেই এই অবস্থা। না জানি আর কি কি অপেক্ষা করছে।