নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

খেলা ও রাজনিতী একহয়ে মিশেছে যেখানে

১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:৩৩

আমরা ইতিহাস ভুলে যাই তারা ভোলে না,তারা সময় পেলে কথায় কথায় ঠুতোয় নাতায় তাদের পরাজয়ের ইতিহাস মনে করে তাদের গা জ্বলার কথা আমাদের নিয়ে ঘৃনার কথা বলে,অথচও আমরা তাদের বাবা বা ভাইয়ের মর্জাদা দি কে নিকৃষ্ট একটু ভাবুন?

রাত পৌনে চারটার দিকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট চার্লি কোম্পানীর ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা তিন ভাগে ভাগ হয়ে ঘোর অন্ধকারে গুটি গুটি পায়ে প্রায় ২০০ ফুট দূরের পাকবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ডান দিকে একটি প্লাটুন, বাম দিক থেকে এগিয়ে যেতে থাকে আরেকটি প্লাটুন, আর কেন্দ্রীয় আক্রমণ পরিচালনার জন্য মধ্যখানে অবস্থান নেয় ডেফথ প্লাটুন। পরিকল্পনা আগের রাতেই করা ছিলো, সেই ফর্মেশনেই তারা নি:শব্দে এগিয়ে যাচ্ছিলো। লক্ষ্য একেবারেই পরিষ্কার, যে কোন মূল্যেই হোক শ্রীমঙ্গলের এই ধলই বর্ডার আউটপোস্টটি দখল করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই পোস্টটিতে তখন অবস্থান করছিলো ভারী অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা সজ্জিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ৩০তম ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্ট।
.
কিন্তু হঠাৎই বিপত্তি ঘটে ... রাতের অন্ধকারে শত্রুপক্ষের পুতে রাখা মাইন অসাবধানে বিস্ফোরিত হয়। টের পেয়ে পাক বাহিনী পূর্ণ শক্তি নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। পরিকল্পনা পুরোপুরি ভেস্তে যায়। বিশেষ করে শত্রুপক্ষের তিনটি মেশিনগান পোস্ট থেকে এতো তীব্রভাবে গুলিবৃষ্টি হচ্ছে যে, এক পাও আগানোর উপায় নেই, এরই মধ্যে কয়েকজন হতাহত হয়। উপায় না দেখে কোম্পানী কমান্ডার ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নেয় এবং এক তরুণ সিপাহীকে মেশিনগানপোস্টে গ্রেনেড চার্জ করার সুইসাইডাল মিশনের দায়িত্ব তুলে দেয় এবং তাকে কাভার দেয়ার জন্য এল এমজি থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এদিকে গুলিবৃষ্টির মধ্যেই অসম সাহসী তরুণ সিপাহীটি গ্রেনেড হাতে নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে পাহাড়ী খাল বেয়ে টিকটিকির মতো হামাগুড়ি দিতে দিতে এগিয়ে যায় প্রায় ১৮০ ফুট দূরত্ব। প্রথম মেশিন গান পোস্টের ১০ ফুটের কাছাকাছি গিয়েই তিনি আচমকা প্রথম গ্রেনেডটি চার্জ করেন, এবং ওখান থেকেই দ্বিতীয় মেশিনগান পোস্টেও গ্রেনেড চার্জ করেন। অব্যর্থ নিশানায় দুটি পোস্টই উড়ে যায়, কিন্তু ইতোমধ্যে তৃতীয় মেশিন গানটি টের পেয়ে সিপাহীকে লক্ষ্য করে গুলি শুরু করে। দুর্ভাগ্য তার, সরে যাওয়ার আর সময় পাননি, তার আগেই কয়েকটা বুলেট এসে ঝাঝড়া করে দেয় এবং হাতের অবশিষ্ট গ্রেনেডটি অন্ধকারে ছিটকে দূরে কোথায় হারিয়ে যায়। এদিকে ঝাঝড়া ক্ষত-বিক্ষত শরীরে আহত সিপাহীটা ততক্ষণে যা বোঝার বুঝে যায় এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটিই নিয়ে নেয়। কোন মতে হাপটে-ঝাপটে খালি হাতেই বেয়নেট নিয়ে ঝাপিয়ে পরে গুলিবর্ষণরত তৃতীয় মেশিনগানের বাঙ্কারে। কয়েক মিনিট পরে যখন সমস্ত মেশিনগানের গুলিবর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়, তখন অপেক্ষারত মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারে তরুণ সিপাহীটির সুইসাইডাল মিশন সফল হয়েছে এবং উজ্জীবিত হয়ে তিন দিক থেকেই পুর্ণ দমে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে এবং স্বল্পতম সময়েই সম্পূর্ণ ক্যাম্পটি দখল করে নেয়। বিজয়ের পর সবাই মিলে সেই দুর্ধর্ষ তরুণ সিপাহীটিকে খুজতে থাকে। কারণ শুধুমাত্র তার একার বীরত্বেই বেচে যায় তার সহযোদ্ধারা, তার একার বীরত্বেই পরাজিত হয় পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ ৩০-তম ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্ট। খুজতে খুজতে সেই তৃতীয় মেশিনগান বাঙ্কারেই খুজে পাওয়া যায় তাকে, নিথর দেহ, চোখ মেলে আছে আকাশে। সহযোদ্ধারা বুঝতে পারে, তীব্র রক্তক্ষরণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরার আগে আগে শুধুমাত্র বেয়নেট দিয়েই তিনি ঘায়েল করেছিলেন তৃতীয় মেশিনগান বাঙ্কারের দুই পাকিস্তানী সৈন্যকে। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিলো মাত্র সাড়ে সতেরো বছর।
আরেকটি ঘটনা-
১৯৭১.... উত্তাল ঢাকা.... গোল টেবিল বৈঠক.... উপস্থিত আছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা সেনাবাহিনীর উর্ধতন অফিসাররা। মধ্যমণি ঈয়াহিয়া... পূর্ব পাকিস্তানের নাপাক আদমিগুলারে শায়েস্তা করতে হবে... ঘোষণা দিলো মধ্যমণি, "তিরিশ লক্ষ বাঙ্গালিকে হত্যা কর, তখন দেখবে তারা আমাদের হাত চেটে খাবে।"
২৫শে মার্চ....
দেশের অবস্থা ভালো নাহ। রোজগার পাতি তেমন হচ্ছে না রিকশাচালক কাশেমের। সারাদিনে তেমন আয় হয় নি আজ। সন্ধ্যায় বস্তির খুপড়ি ঘরে ফিরে আসলো। এটাই তার স্বর্গ। পাঁচ বছরের ছোট মেয়েটা গলা জড়িয়ে ধরলো কাশেমের। বৌ আর মেয়েরে নিয়ে ডালভাত খেয়ে ঘুম দিলো কাশেম....
নীলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এলাকায় মেধাবী ভদ্র মেয়ে বলেই পরিচিত। নীলার একটা বোন আছে। ষোল বছর বয়স। আপুর হল দেখতে যাবে। কি আর করা... আদরের বোনটাকে দুইদিনের জন্য হলে এনেছে নীলা। কাল সকালে আবার ওকে গ্রামে রেখে আসবে। অনেক মজা করলো মেয়েটা। কি সুন্দর মায়া ভরা মুখ নিয়ে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। আবার কতদিন দেখা হবে না নীলার সাথে। নীলা ঘুমন্ত ছোট বোনের মুখটা দেখে আর চোখ ফেটে পানি পড়ে....
অন্তর পোলাটা অনেক চঞ্চল। সারাদিন ভার্সিটিতে দৌড়াদৌড়ি করে রুমে এসেই ঘুম। অন্তরের রুমমেট সজল আবার ভীষন শান্ত। সারাদিন বইয়ের মধ্যে ঢুকে থাকে। সবদিক থেকে আলাদা হলেও দুজনেই মেধাবী। অন্তর ঘুমাচ্ছে আর সজল পড়ছে.....
হঠাৎ কাশেমের ঘুম ভেঙে গেল। মাটি যেন কেঁপে উঠছে। বাইরে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। উঠে বাইরে গিয়ে দেখলো আকাশে আলোর মিছিল হচ্ছে!!! হঠাৎ দূরে আগুনের শিখা ভেসে উঠলো। একটা কান্নার আওয়াজ... সবাই ছোটাছুটি করছে... হঠাৎ দুইটা জীপ এসে থামলো কাশেমের বস্তির সামনে। গুলির বৃষ্টি শুরু হলো... কান্না নয় এবার হাহাকার শুরু হলো। কাশেম পালাতে ভুলে গেলো... বুলেট এসে লাগলো বুকের বামপাশে!!! অন্ধকার চারিদিকে। মেয়ে মুখটা দেখবে সে। কিন্তু বেয়নেট এসে ঢুকে গেল বুকের হৃদপিন্ড বরাবর। দুইজন সেনা ঢুকে গেল কাশেমের ঘরে। কাশেমের বউ মেয়েকে পাজা করে কাঁপছে... সাচ্চা ইসলামের বীজ বুনতে হবে... বাচ্চা মেয়েটাকে কেড়ে নিয়ে খাটের পাশে আছাড় মারলো পাক আদমি... একটুখানি রক্ত ছিটকে এলো... এবার বউটা.... কান্নার ধ্বনি উঠলো, একটু পড়েই নিরব.... বেরিয়ে আসলো পাকি আদমি.... জীপার লাগাতে মনে নেই.... জীপারের পাশে একটু রক্ত....
ভয়ে কাপছে নীলা আর নীলার ছোট বোন। বাইরে মেয়েদের আহাজারি। দরজায় কড়াঘাত। খুলবে না নীলা। ভেঙে গেল দরজা। চারটা সাচ্চা পাক আদমি। যেন স্বর্গের দুইটা হূর সামনে। জিহ্বা দিয়ে ঠোট চেটে নিলো একজন। ঝাপিয়ে পড়লো দুইজন। আগে ঠিক করা হয়ে গেছে ছোটটার উপর ঝাপিয়ে পড়বে আকমল আর বড়টার উপরে সালমান। তরুণ সেনা আকমল। কচিমালই লাগবে তার... চোখবেয়ে পানি পড়ছে নীলার উপরে এক সেনা। ছোটবোনের চিৎকারে নিজের কথা মনে নেই তার......
সজল একটু বারান্দায় গিছিলো.... হঠাৎ দূরে কেমন একটা বোমা পড়ার মত আওয়াজ হল। তাদের বিল্ডিংকেঁপে উঠলো। কয়েকটা জিপের আওয়াজ। বুটের মেলানো শব্দ, ছপছপছপ.... অন্তরকে জাগাতে হবে। হামলা করেছে আর্মিরা। মেরে ফেলবে এখনি। হঠাৎ দশ বারোটা গুলি লাগলো সজলের পিঠে... পড়ে গেল মেঝেই... চশমাটা ভেঙে গেল....
মায়ের মুখটা খুব মনে পড়ছে সজলের... মায়ের হাতের আলুভর্তা কি স্বর্গে পাওয়া যায়??? স্বর্গে কি ছোট বোন সকালে ঘুম থেকে ডেকে দেয়??? স্বর্গে কি বাবা পাওয়া যায়??? আমার তন্বীর হাসিটা কি দেখা যাবে স্বর্গে......
বস্তির খুঁপড়ি ঘরের মুখে একটা লাশ পড়ে আছে...খাটের পাশে একতাল মাংসপিন্ড.... খাটের উপরে এক নারী... স্তনটা কেঁটে নেওয়া হয়েছে.... বুকে রক্ত... শেষ পর্যায়ে মনে হয় বেয়নেট গেথে দিছিলো....
হলের রুমটাতে মেঝেতে এক ষোড়শী বালিকা পড়ে আছে.... মুখ থেকে মাংস কাঁটা.... যৌনদ্বারে একটা পর্দার স্টান্ড ঢোকানো.... পাশে লাল রক্ত.... সুন্দর নকশা আঁকা যাবে রক্ত দিয়ে...খাটের উপরে একটা যুবতী। কোন পোশাক নেই গায়ে! স্তন দুটো নেই.... মুখে রক্ত... শেষ সময়ে বেয়নেট দিয়ে যৌনাঙ্গটা ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে....

এবার আসি বর্তমানে-
যে দেশের প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে ডজন ডজন স্পট ফিক্সিং এর অভিযোগ আছে।যাদের হাফ ডজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন আছে।যাদের কয়েক গণ্ডা প্লেয়ারের বিরুদ্ধে প্রফেশনাল ব্যান আছে।যাদের অন্তত এক হালি প্লেয়ারের বিরুদ্ধে খেলার সময় ইনটক্সিকেট হবার দায়ে বহিষ্কারের রেকর্ড আছে।যাদের এয়ারপোর্টে গাঁজাসহ ধরা খাওয়ার ইতিহাস আছে।যাদের অন্তত এক জোড়া প্লেয়ারের বিরুদ্ধে কোর্টে করাপশনের মামলা আছে।যে দলে কোর্টে প্রমাণিত জুয়াড়ু আছে।যাদের হোটেলে পতিতা নিয়ে ধরা পড়ার রেকর্ড আছে।যাদের ব্যাট দিয়ে বউ পিটিয়ে জেলে যাবার অভিজ্ঞতা আছে।যাদের বিরুদ্ধে বছরের আগা-মাথায় একাধিক নারীর একজনকে স্বামী দাবী করার মত হাস্যকর ঘটনা আছে।এই তারা যদি ক্রিকেটের সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দেয় তাহলে বুঝতে হবে তারা কতটা রসিক জাতি।এবং তাদের সমর্থন দেয়া হাফ বাংপাকি গুলো আরো বেশি রসিক।

এবং ২০১৭.....
এক আপু ঈদের মার্কেটে। পছন্দের পাকি লন কিনবে....
ভাইয়া লন আছে?
—আছে। কোনটা???
পাকিস্তানিটা।
—হুম। এইতো।
কি সুন্দর নকশা। একদম মনের মত।
—আপু, এই নকশাতে কি কি দেখছেন???
কেন!চুমকি আর সূতোর অসাধারণ কারুকাজ।
—আমি তো অন্য কিছু দেখি আপু।
আর কি!
— এই যে সুতো গুলো দেখছেন। এগুলো ৭১এ আমার মায়েদের গায়ের বস্ত্র থেকে খুলো নেওয়া। তাদের বিবস্ত্র করে এই সুতোগুলো এখানে দেওয়া....মানে কি!!!
— এই যে চুমকিগুলো দেখছেন এটা আমার মায়ের স্তন আর মাংসপিন্ডে তৈরি। এই যে নকশাগুলো ঠিক এমনই নকশা তৈরি হয়েছিলো আমার মায়ের যৌনাঙ্গে বেয়নেটের খোঁচায়। দেখুন। ভাল করে দেখুন... চোখ বন্ধ করে ফিরে যান পিছনে.... রক্তাক্ত হাতের ছাপ... ষোড়শীর চিৎকার... যুবতীর কান্না, মায়ের বীভৎস লাশ... একতাল মাংসপিন্ড.... এবার দেখুন লনটা।কি দেখতে পাচ্ছেন, এগুলোই তো???
নীরব অশ্রু। তাকাবে না সে লনের দিকে। কি বীভৎস নকশা। ষোড়শীর রক্ত... মায়ের ক্ষতবিক্ষত স্তন... বেয়নেটে খোচানো যুবতীর লজ্জাস্থান! তাকাবে না সে... ধরবে না ঐ রক্ত মাখা লন.... বমি পাচ্ছে তার... জোরে কাঁদতে ইচ্ছা করছে.আজ ঐসব মূর্খদের ইতিহাস শেখাতে চাই।

তবে সবজাতি এমন নয় খেলার সাথে রাজনিতী মিশে গেছে যে দেশে-

ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালের ৩১ মার্চ, সার্ব নিয়ন্ত্রিত যুগোস্লাভের সাথে। কিন্তু অনেক ক্রোয়েশিয়ান মনে করে আসলে যুদ্ধের শুরুটা হয়েছিল আরও এক বছর পূর্বে; স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাসের রক্তক্ষয়ী এই যাত্রা কোন প্রথাগত রণক্ষেত্র ছিল না, ছিল একটি ফুটবল মাঠ! ১৩ মার্চ ১৯৯০ সাল, ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় ইতিহাসের প্রারম্ভে বিশাল এক প্রতিক্রিয়ার সূচনা ঘটল একজন ক্রোয়েশিয়ান দেশপ্রেমী ফুটবল খেলোয়াড়ের উড়ন্ত লাথির মধ্য দিয়ে!

জ্বনিমির বোবান, মিলানের হয়ে খেলে জিতেছেন চারটি সিরি আ শিরোপা, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং প্রায় অখ্যাত ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য যারা ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে গোটা ফুটবল দুনিয়াকে অবাক করে দেয়।ক্রোয়েশিয়া ও মিলান কিংবদন্তিকে ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রতীক হিসেবে দেখে ক্রোটরা। সত্যি বলতে খুবই অসামঞ্জস্য লাগবে যদি বলা হয় পুলিশের মুখে বোবানের একটি উড়ন্ত লাথিই পুরো একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই একটি লাথির ঘটনা পুরো প্রক্রিয়াকে নিয়ে গেছে এমন এক পর্যায়ে যেখানে অনেক ক্রোটই মনে করে ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা এখান থেকেই!

ডায়নামো জাগরেবের মাকসিমির স্টেডিয়ামে আসলে কি হয়েছিল তা শুরু করার আগে ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের পিছনে ফিরতে হবে।
কম বেশি অন্য সব স্বাধীনতাকামী জাতিগোষ্টির মতো ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাস যথেষ্ট জটিল, ১১০২ সালের দিকে ক্রোয়েশিয়া যুক্ত হয় হাঙ্গেরির সাথে, এরপর নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে ১৫২৭ সালে ক্রোয়েশিয়ার জায়গা হয় হাপসবুর্গ রাজ্যে, যেখানে অস্ট্রিয়ান-হাঙ্গেরিয়ান ক্ষমতার দ্বন্দ ও সাথে রয়েছে বাইরের রাজ্যের (অটোমান) ক্রমাগত চাপ। ক্রোয়েশিয়া শুধু মাত্র তাদের ঐতিহাসিক অঞ্চল নিয়ে সচেতন ছিল না, তারা চেয়েছিল অস্ট্রিয়ান ও হাঙেরিয়ানদের পাশাপাশি সমান রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করতে। কিন্তু ১৫৩৩ সালে ঘটে ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ঘটনা; ক্রোয়েশিয়ার অসম্মতি সত্ত্বেও ক্রোয়েশিয়ান অঞ্চলে সার্বদের যুক্ত করতে থাকে অস্ট্রিয়ানরা যা শত বছরের উপরে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি।
মূলত গ্রেটার সার্বিয়া গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯১৮ সালে সার্ব নেতারা সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বহবোদিনা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও মন্ট্রেনেগ্রো নিয়ে গঠন করে যুগোস্লাভিয়া, যারা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন জাতিস্বত্ত্বা, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যুগোস্লাভ ভেঙ্গে গেলেও যুদ্ধ শেষে নানা জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একনায়ক টিটো দ্বিতীয়বারের মতো যুগোস্লাভিয়া গঠন করতে সক্ষম হয়। মূল কথা হলো প্রথম যুগোস্লাভিয়ার মত দ্বিতীয় যুগোস্লাভিয়াতেও ক্রোয়েশিয়ানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অন্য সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সার্ব নিয়ন্ত্রিত আক্রমনাত্মক সরকারের আচরণ ছিল খুবই নিষ্ঠুর ও অমানবিক। সার্বিয়ায় আয়কর ক্রোয়েশিয়া অঞ্চলের তুলনায় কম ছিল, বৈদেশিক লোনের বেশিরভাগ খরচ করা হতো সার্বদের জন্যে এবং ক্রোয়েশিয়া গুরুত্বপূর্ন প্রায় সব জায়গায় নিয়োগ পেত সার্বরা। প্রথম যুগোস্লাভে যে অমানবিক আচরণ ও নিপড়নের স্বীকার হয়ে এসেছে ক্রোয়েশিয়া তার ব্যতিক্রম পরের সমাজতান্ত্রিক যুগোস্লাভিয়াতেও ঘটেনি। ১৯৮০ সালে টি্টোর মৃত্যু ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের প্রাক্কালে যুগোস্লাভিয়ায় সোচ্চার হয়ে উঠে স্বাধীনতাকামী জাতিগোষ্ঠিরা। ক্রোয়েশিয়াযে স্বাধীনতা ঘোষণা করবে তা আন্দাজ করতে পেরেই সার্ব নিয়ন্ত্রিত যুগোস্লাভিয়ার সরকার ক্রোয়েশিয়ার সার্বদের মধ্যে ১৯৮৮ সালে অস্ত্র বিতরণ শুরু করে দেয়, পরের বছর বসনিয়া-হার্জেগোভিনাতেও একই কাজ করে সরকার; মূল পরিকল্পনাটি করা হয় যুগোস্লাভিয়ার রাজধানীই বেলগ্রেদে।

রাজনৈতিক কড়চার পর এখন ফুটবলে ফিরে আসি, খেলাধুলার সাথে অনেকেই রাজনীতির মিশেল মানতে চায়না। কিন্তু জাতিগত দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক অধিকারের প্রতিফলন খেলার মাঠে হরহামেশা গড়ায়, যা অস্বীকার করার উপায় নেই। যাই হোক যুগোস্লাভিয়াতে সত্তুরের দশকে জাতীয়তাবাদ প্রকাশের মূখ্য মাধ্যম হয়ে উঠে ফুটবল। রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের এক বিশাল ক্ষেত্র হয়ে উঠে ফুটবল মাঠ যেখানে ফুটবল ভক্তরা নানা রকম রাজনৈতিক স্লোগান, গান, ব্যানার-ফেস্টুনে মাতিয়ে তুলতেন গোটা স্টেডিয়াম যেখানে ফুটবল দলের চেয়ে প্রায়সময়ই জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক ভূমিকা মূখ্য হয়ে উঠে। ফুটবলের মাঠ রাজনৈতিক মাঠে পরিবর্তিত হওয়ার এমন মুহুর্তে যুগোস্লাভিয়ার লিগ ম্যাচে ১৩ মে ১৯৯০ সালে মুখোমুখি হয় ক্রোয়াশিয়ার ডায়নামো জাগরেব ও অখন্ড যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেদের ক্লাব রেড স্টার, রেড স্টার ক্লাব ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্লাব, যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধ সংগঠিত না হলে হয়ত ইউরোপে রেড স্টারের নাম অন্য মাত্রায় উচ্চারিত হতো। রবিবারের সেই ঐতিহাসিক দিনটিতে রেড স্টারের সবচেয়ে একনিষ্ঠ ও উগ্র সমর্থক গোষ্ঠী দেলিয়ে (Delije) প্রায় ৩০০০ সদস্য নিয়ে আরকানের নেতৃত্বে পা রাখে জাগরেবের স্টেডিয়ামে। আরকান বেলগ্রেদের একজন গ্যাংস্টার ছিল যে পরবর্তীতে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ক্রোয়েশিয়া ও বসনিয়ার যুদ্ধে আরকানের নিজস্ব বাহিনী দ্য টাইগার ব্যপক ধ্বংসজজ্ঞ চালায়, এই বাহিনীতে বেলিয়ের অনেক সমর্থক যোগ দিয়েছিল, হেগের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক ট্রাইবুন্যালে আরকানের বিচারও হয়।

অন্যদিকে জাগরেবের সমর্থকগোষ্ঠী ছিল স্বাধীনতাকামী ও ক্রোয়েশিয়ান জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ, এদের মধ্যে সবচেয়ে একনিষ্ঠ ও উগ্র সমর্থকদের একটি দল ছিল ব্যাড ব্লু বয়েজ, যাদের বেশিরভাগ পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই পুরো স্টেডিয়ামে বিরাজ করছে অন্যরকমের আবহ, স্টেডিয়াম ছেয়ে আছে একদল উগ্র ও ধ্বংসাত্মক মেজাজেররেড স্টার সমর্থক ও দেশপ্রেমী একনিষ্ঠ জাগরেব সমর্থকে। ম্যাচ শুরু হতেই মাঠের খেলার সাথে শুরু হয়ে যায় গ্যালারির উত্তাপ, দুই দলের সমর্থকরা একে অন্যকে তাতিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। রেড স্টারের সমর্থকেরা পুরো ব্যাপারটিকে “Zagreb is Yugoslav” ও“We will kill Tudjman.”স্লোগানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে যায়। Tudjman ছিলেন স্বাধীনতা প্রাক্কালের ক্রোয়েশিয়ার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ম্যাচটি যেন ছিল একটি যুদ্ধের আগমনী বার্তা, পুরো স্টেডিয়ামে তখন নরক ভেঙ্গে পরেছে যেন, মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। রেড স্টারের বেলিয়ারা স্টেডিয়ামের চেয়ার ভেঙ্গে ছুড়ে মারতে থাকে জাগরেব সমর্থকদের দিকে, ভেঙ্গে ফেলে দুই দলের সমর্থকদের আলাদা করে রাখা বেড়াটিও। রেড স্টার সমর্থকদের এমন আক্রমণাত্মক আচরণ স্বত্বেও শাসক গোষ্ঠীর পুলিশ বাহিনী ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল, দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তারা কোন ভূমিকাই পালন করছিল না। এরপর পাল্টা আক্রমন শুরু করে জাগরেবের সমর্থকগোষ্ঠী, উত্তর গ্যালারির বেড়া ভেঙ্গে নেমে আসে ব্যাড ব্লু বয়েজ। পুলিশ, দেলিয়ে ও ব্যাড ব্লু বয়েজের মাঝখানে ক্রোধের দেয়াল ব্যাতিত আর কোন কিছুই ছিল না তখন। ব্যাড ব্লু বয়েজরা দেলিয়ের আক্রমনের মুখে পরা জাগরেব সমর্থকদের সাহায্যে এগিয়ে আসলে পুলিশ তাদের উপরে চড়াও হয় তখন!



দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ও পুলিশের সাথে এই সংঘর্ষ চলে একটা লম্বা সময় পর্যন্ত, এর মধ্যে অবশ্য রেড স্টারের খেলোয়াড়েরা মাঠ ছাড়লেও কিছু জাগরেব খেলোয়াড় জাতীয়তাবাদের টানে মাঠে থেকে গিয়েছিল। এদের মধ্যে একজন ছিলেন বোবান এবং দাঙ্গার একসময় বোবান দেখলেন যে পুলিশ এক জাগরেব সমর্থককে রুলার দিয়ে মারছে, তখনই দৌড়ে গিয়ে উড়ে কষে এক লাত্থি মেরে পুলিশকে ধরাশায়ী করে ঐ সমর্থককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন তিনি! বোবানের উপর পুলিশ সেইভাবে চড়াও হওয়ার পূর্বেই কিছু ব্যাড বয়েস ব্লুর সহায়তা সেখান থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসেন তিনি। বোবানের অসাধারণ এই ভূমিকা গোটা ক্রোয়েশিয়ায় ব্যাপক জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবেজনপ্রিয়তা পায় যা পরবর্তী স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা রাখে বললে অত্যুক্তি করা হয়না।

স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার পর বোবানকে নিষিদ্ধ করে যুগোস্লাভ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, তিনি বাদ পরেন ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ দল থেকে। উড়ন্ত লাথির ঘটনার ব্যাপারে বোবান বলেন,

সেখানে আমি ছিলাম একজন জনপ্রিয় মুখ যে কিনা নিজের জীবন, ক্যারিয়ার এবং যা কিছু খ্যাতি আমাকে এনে দিতে পারত, সব কিছুর ঝুকি নিতে প্রস্তুত ছিলাম, শুধু মাত্র একটি আদর্শের জন্যে, একটি কারণে জন্যে- ক্রোয়েশিয়ার জন্য।

ফুটবলার হিসেবে বোবান ছিলেন অসাধারণ, ১৯৯১ সালে ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব এসি মিলান কিনে নেয় এই ক্রোটকে। মিলানের হয়ে বোবানের অর্জন তাকে পরিণত করেছে তাদের একজন ক্লাব কিংবদন্তীতে।

ইউরোপের ইতিহাসে ফুটবলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দাঙ্গার মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ একটি ছিল এটি, যা বদলে দিয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরেই ক্রোয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেয় তাদের অঞ্চলের পুলিশ বাহিনীতে ক্রোয়েশিয়ান নয় এমন পুলিশের সংখ্যা কমিয়ে আনার। যুগোস্লাভিয়ান লিগও মাত্র এক বছর কোনরকমে টিকে থাকে, ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্রোটই জাগরেবের সমর্থক ও বোবানের সাহসিকতাকে দেখেন সার্বদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হিসেবে এবং মনে করেন এটিই ছিল তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অলিখিত সূচনা। ১৩ মে’র ঘটনার স্মরণে ডায়নামো জাগরেবের স্টেডিয়ামের বাইরে একটি স্মৃতিস্তম্ভে লিখা রয়েছে,

সকল ডায়নামো সমর্থকদের জন্যে যারা ১৩ মে ১৯৯০ সালে যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং শেষ করেছিল তাদের জীবন দিয়ে ক্রোয়েশিয়ান জন্মভূমির জন্যে।

তথ্যসূত্র-
ও সহায়তা-

https://inavukic.com/2014/02/17/a-brief-history-of-the-war-in-croatia-background-battlefields-and-outcomes/
http://www.croatianhistory.net/etf/et112.html#jugo
http://www.balkaninsight.com/en/article/1990-football-riot-remains-croatia-s-national-myth-05-12-2016
http://thesefootballtimes.co/2015/09/28/zvonimir-boban-and-the-kick-that-started-a-war/
http://bleacherreport.com/articles/76141-a-real-football-war-the-croatian-patriotic-war
#Mohammad Asif
#ফাজলুল হালিম রানা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৩৬

Imtiaz Arnab বলেছেন: ক্রিয়েটিভ এবং তথ্যবহুল। ভাল লাগলো।

১৬ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৬:২৮

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.