নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংখ্যালঘুর আর্তনাদ ও একজন সুখিয়া রবিদাস

১৬ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০২

সুখিয়া রবিদাস, বয়স ৩০, বিধবা। ১২ বছরের ছোট ভাইকে নিয়ে হবিগঞ্জের সুতাং বাজার এলাকার এক বাড়িতে থাকতেন। সুখিয়া'কে ধর্ষণ করা হয়েছিল, ধর্ষণের পর প্রকাশ্য দিনের আলোয় রাস্তায় পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খুনীর নাম শাইলু মিয়া।
ধর্ষণ বাংলাদেশে নারীমাত্রই হোন। বাংলাদেশ তো ধর্ষণেরই দেশ! কিন্তু প্রথমেই যা লিখেছিলাম সুখিয়া রবিদাস বিধবা; উনার স্বামীর মৃত্যুটা স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো না। ৮ বছর আগে সুখিয়ার স্বামী মনি লাল দাসকে'ও একইভাবে বাড়ির পাশে রাতের আঁধারে খুন করা হয়। ২০১৩ সালে খুন করা হয় সুখিয়ার কাকা অর্জুন রবি দাসকে'ও। আর সেই মামলার প্রধান আসামী কে জানেন? একই ব্যক্তি শাইলু মিয়া।
উল্লেখ্য, এলাকাবাসীরা জানান ভূমি দখলের জন্য এলাকার প্রভাবশালীরা সুখিয়ার পরিবারের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো। ৮ বছর আগে খুন হওয়া স্বামীর খুনের বিচার পান নি সুখিয়া, তিন বছর আগে খুন করা হয় কাকাকে, আর শেষমেশ গত শনিবার খুন করা হলো সুখিয়াকেও। রাষ্ট্রীয় মদতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের এবং বিচারহীনতার চরম অমানবিক দৃষ্টান্ত।(লিংক-মন্তব্যে)
সুখিয়ার ধর্ষণ এবং খুনকে সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে সংজ্ঞায়িত করলে বঙ্গরাজ্যের যত জ্ঞানীগুণী আছেন সবাই একযোগে যুক্তির জাহাজ নিয়ে আমার লেখার মন্তব্যে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ধর্ষণের ব্যাপারটি বাদই দিলাম না হয়, কিন্তু একই পরিবারের তিন তিনজন মানুষ কীভাবে একই অপরাধীদের হাতে খুন হন?
এখন বাকি আছে শুধু ১২ বছরের ছোট ভাইটা। তাকে খুনটা করে ফেললেই তারপর সুখিয়াদের জায়গাজমির মালিক হয়ে যাবে কোনো আহম্মদ মোহাম্মদ বা করিম রহিম। আমি হলফ করে বলতে পারি, বাংলাদেশে থাকলে এই ছেলেকেও একদিন লাশ হতে হবে অপঘাতে। তারপর জায়গাসম্পত্তির মালিক হয়ে যাবে কোনো আহম্মদ মোহাম্মদ করি প্রশ্ন করতে পারেন কীভাবে? তারও উদাহরণ আছে।
ঘটনাটা ১৯৮৭ আর ১৯৮৯ সালের। ১৯৮৭ সালের ৬ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিদারাবাদের শশাঙ্ক দেবনাথকে ডেকে নিয়ে যায় একই গ্রামের পূর্বপরিচিত তাজুল ইসলাম। সেই যে ডেকে নিয়ে গেল তাজুল ইসলাম, শশাঙ্ক আর ফেরেন নি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, শশাঙ্ক দেবনাথের জায়গাসম্পত্তি জাল দলিলপত্র করে দখল করে নিতে চেয়েছিলো তাজুল গং। কিন্তু শুধু শশাঙ্ক দেবনাথকে সরিয়ে ফেললেই তো জায়গা দখল করা সম্ভব হয় না, পরিবারের অন্য সদস্যরা তো থেকে যায়।
তারপর ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাত। তাজুলের নেতৃত্বে তিরিশ চল্লিশ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল হানা দেয় এবং শশাঙ্ক দেবনাথের স্ত্রী ও ৫ সন্তানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর কুপিয়ে হত্যা করে টুকরা টুকরা করে। পরে ড্রামে ভরে ফেলে দেয় ধুপজুরি বিলে। ১০ দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর ছয় জনের লাশ পাওয়া যায়। একই পরিবারের ৭ জন মানুষকে খুন করা হয় যাদের মধ্যে দুইজন শিশু সুমন(৫) ও সুজন দুই বছর বয়সের।
যে উপায়ে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় সংখ্যালঘু অমুসলিমদের সংখ্যা কমিয়ে ২৮% থেকে ৮% এ নামিয়ে এনেছে সেটাকে হিটলারের হলোকাস্টের সাথে তুলনা করলে খুব একটা কম হয় না। এটা একটা পরিষ্কার নীরব গণহত্যা। হিটলারের গ্যাস চেম্বার তো তা-ও পুরা জার্মানি জুড়ে ছিল না। বাংলাদেশ সমগ্র রাষ্ট্রটাই সংখ্যালঘুদের জন্য গ্যাস চেম্বার।
লেখাটি ভূমি দখল এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন সংক্রান্ত হওয়াতে ভূমি দখলেরই একটি সাম্প্রতিক ঘটনা দিয়ে লেখাটি শেষ করি।
"ওগো পাও ধইরা মাফ চাইছি। বাড়িঘর ছাইড়া ভারত চইলা যামু কইছি। তা-ও ওরা আমারে পাড়াইয়া মাটিতে ফালাইয়া রাখে।"
সম্পত্তি দখলে বাধা দেওয়ায় কানন বালা নামের ৫০ বছরের এই বিধবাকে হাত-পা বেঁধে পেটানো হয়। পরে পুলিশ গিয়ে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় ওই মহিলাকে উদ্ধার করেন। ঘটনাটা এক মাস আগের, তারিখ ১২ মে।(খবরের লিংক মন্তব্যে)
পাপ-পূণ্যের হিসেব ভিত্তিহীন হলেও, যেহেতু আমার জন্মটাও সংখ্যালঘুর ঘরে হয়েছে তাই সেই হিসাবে জন্মের সাথে সাথেই একটা পাপ করে ফেলেছি। সেই পাপমোচনও করতেই হবে। বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কাছে হাতজোড় প্রার্থনা, আর্থিক অবস্থা যদি কোনো ভালো পর্যায়ে যায় তাহলে নিজেদের ভিটেমাটি সব ফ্রিতে আপনাদের দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাব। আপনাদের দেশে আপনারাই তো থাকবেন, শুধু একটু সময় দেন। আমার পরিবারের লোকজনদের অন্তত রাস্তায় পিটাইয়া মারবেন না। ভিটেমাটি ছেড়ে দিলে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে যে যা পাবেন সব বুঝে নেবেন। মিথ্যা আশ্বাস, দেশপ্রেমের বাণী, সৌহার্দ আর অসাম্প্রদায়িকতার বয়ান দিয়ে কিতাব রচনা করেন; ভালো সাহিত্য হতে হবে। আমার লেখাতে মন্তব্য করে বুঝাতে না আসলেও চলবে।
সুখিয়া রবিদাস জীবনে সুখী হয়েছিলো বলে মনে হয় না। তবে দাসী সে হয়েছিলো বটে। যৌনদাসী।
সুখিয়াদের অপরাধ তারা ভিটেমাটি কামড়ে বাংলাদেশেই পড়ে ছিলো। ইন্ডিয়ামুখো হওয়ার নাম নেই। ৩০ বছরের সুখিয়া বিধবা হয় আরো ৮ বছর আগে। স্বামী মণিলালকে হত্যা করা হয়। মণিলাল একটি হারামজাদা টাইপের হিন্দু ছিলো! সে ভিটেমাটি ছেড়ে ইন্ডিয়া তো যেতে চায়ই নি; বরং ২২ বছরের সুখিয়ার ভাগ দিতেও গড়িমসি করেছিলো।
মণিলালের হত্যার পর সুখিয়া অনেকটাই দখলে আসে। কিন্তু ভিটেমাটি? তখনো না। বাগড়া দেয় সুখিয়ার চাচা অর্জুন রবিদাস। সেই বেয়াড়া অর্জুনকেও ২০১৩ সালে হত্যা করা হয়।
এতো হত্যার বিচার? হে হে! দয়ার শরীর আদালত! তাছাড়া ঘাতক শাইলুরাতো আর আওয়ামী লীগ করে না যে, মিডিয়া আর সুশীল সমাজ একাট্টা হয়ে বিচার চাইবে। টেকাটুকা খরচ করে মামলা চালাইতে না পারলে আদালত আর কী করবে! আমরা তো জানিই, আইন অন্ধ!
তো, ঘটনার দিন ভোরবেলাই শাইলু মিয়ার তলপেটে কামজোয়ার আসে। সুখিয়ার বাড়ি যায় সে। যৌনদাসী সুখিয়াকে একবার ব্যবহার করে। রতিপাত ঘটে। কিন্তু পরিপূর্ণ তৃপ্তি পায় না। আবারো লাগাইতে চায়। সুখিয়া কোনোমতে ছুটে পালায়। তাকে ধাওয়া করে শাইলু। সকাল বেলার উদোম রাস্তায় গণসমক্ষে লাঠি দিয়ে পিটায়। সুখিয়া মরে। জনগণ শুধু সংখ্যার দায়িত্ব পালন করে। শাইলুকে কেউ থামায়ও না। থামাবেই বা কেন! সুখিয়া একটি যৌনদাসী। সুখিয়া একটি হিন্দু। সে মরলে পাবলিকের কী!
হিন্দু সুখিয়া মরলে আমারই বা কী!


তথ্য কৃতজ্ঞতা- জুলিয়াস সিজার ও চন্দ্রবিন্দু

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫

পাউডার বলেছেন:
সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘর দখল করা সোজা। আর বাংলাদেশের মত আইনহীন দেশে তা আরও সহজ।

২| ১৬ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


শাইলু মিয়াকে "ক্রস ফায়ারে" দেয়া হলো শেখ হাসিনার অন্যতম দায়িত্ব।

৩| ১৬ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪১

পুকু বলেছেন: কয়টা শাইলু মিয়াকে "ক্রস ফায়ারে" পাঠাবেন। ঠগ বাছতে যে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে!!!! বিচারের বাণী নিরবে নীভৃতে কাঁদে।এটা তবে হলফ করে বলতে পারি যে পাপ কিন্তু বাপ কেও ছাড়ে না।খুব তাড়াতাড়ি দেশ টি পাকিস্থানে পরিণত হতে যাচ্ছে।খুব তাড়াতাড়ি!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.