নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ব্লগের খাতা।

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience

সন্দীপন বসু মুন্না

অন্য সবার মতোই জীবনে স্বপ্ন ছিল অনেক। তবে আপাতত বাসা টু অফিস টু ক্লাস টু ঘুম। এক সময়ের স্বপ্ন গল্পকার হওয়া আজ গল্পের মতোই লাগে। বাংলার সাহিত্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা ! ;) ;) তারপরও ভাবি...এই বেশ ভালো আছি... সামু বা অন্যান্য ব্লগ সাইটগুলোতে প্রায়ই ঘোরঘুরি হয়। অনেক কিছুর পরও এই বিলাসিতাটুকু বাদ দিতে পারিনি। তবে শৌখিন ব্লগ লেখালেখি আপাতত বন্ধ। তবুও কাজের খাতিরে লেখাগুলো দিয়ে আপলোড চলছে-চলবে (একই সাথে পাঠকের বিরক্তি উৎপাদনও সম্ভবত!)। ছবিসত্ত্ব: গুগল ও ইন্টারনেটের অন্যান্য ইমেজ সাইটস। যোগাযোগ - ফেইসবুক: https://www.facebook.com/sandipan.Munna ইমেইল: sbasu.munna এট্ gmail.com

সন্দীপন বসু মুন্না › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রজাপতির রঙিন ডানায়

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:১১

ছোট্টবেলার সেই দিনগুলোর কথা মনে আছে ? ফড়িং ধরা, ফুল কুড়ানো, প্রজাপতির পেছনে ছোটাছুটি। বড়বেলায় এই ব্যাস্ত সময়ে এসে আক্ষেপ হয় আহ্া আবার যদি কুড়োতে পারতাম শিউলী ফুল, ছুটতাম রঙিন প্রজাপতির পেছনে !

ছোট্টবেলার সেই মজার দিনগুলোতে হয়ত আর ফিরে যাওয়া যাবে না কিন্তু আপনি চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন প্রজাপতির অভয়ারণ্যে। উপভোগ করতে পারেন সবুজ বনানী, নরম ঘাসের ডগায় দিনভর প্রজাপতিদের ওড়াউড়ি। এর জন্য বেশী দূর যাওয়া লাগবে না , ঢাকার অদূরে সাভারে প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে প্রজাপতি গার্ডেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নানা জীব বৈচিত্র্য৷ তবে সবকিছু ছাপিয়ে সম্প্রতি সবার দৃষ্টি কেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজাপতি গার্ডেন৷ প্রজাপতি গার্ডেন মুলত হরেক নাম আর রংয়ের প্রজাপতির এক পরিকল্পিত আবাস। সেখানে প্রজাপতিদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ঘর আর প্রজনন কেন্দ্র। এখানে প্রজাপতিরা আপন মনে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়, মধু খায়। সকাল , দুপুর , সাঁঝে তারা পাখনা মেলে। আকাশে ছড়ায় রং । সুর্য্যমিামা জাগার আগেই ঘুম ভাঙে তাদের। শরতের সকালের শিশিরভেজা শান্ত পরিবেশে একটু এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি, তারপর খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়া। প্রকৃতি রোদের ছোঁয়ায় তেতে ওঠার আগেই খাদ্য সংগ্রহ করা চাই। এ জন্য ছুটতে হয় এ-ডাল থেকে ও-ডালে। এ-বন থেকে অন্য বনে। চলে মধু সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল বর্ণের বৈচিত্র্যময় ডানায় ভর করে তারা ছুটে চলে। রঙের জাদুতে মোহিত করে দর্শকদের। দেখে ভ্রম হয়, ‘প্রজাপতি ও প্রজাপতি, কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখনা ?’



প্রজাপতির বাগানের প্রজাপতিদের রংয়ের বাহার যেমন, তেমই নামের বাহার। টাইগার গ্রুপ, শ্যালো টেল, গ্রাজ ইয়োলো, ইয়োলো পেনসি, লাইম বাটার ফ্লাই- আরও কত কি ! আমাদের দেশের মোট দু’শ জাতের প্রজাপতির ১১০ প্রজাতিই রয়েছে এখানে। আর এর মধ্যে আবার ৬১টি প্রজাতি নতুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩শ’ একর জমির ওপর এই প্রজাপতি বাগান। জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন ১৪ বছরের সাধনায় গড়ে তুলেছেন প্রজাপতিদের এই আবাস। তবে এটি সম্ভব হয়েছে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যলয়ের বন-বনানী আর জীববৈচিত্রের কারনেই । আর প্রজাপতিরাও আপন করে নিয়েছে বাগানটিকে । প্রজাপতির বাগানে প্রজাপতিদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ি রয়েছে আলাদা আলাদা ঘর। ঘর মানে বাশঝাড়, ফুলবাগান, জোপ-জঙ্গল, নাগেশ্বর গাছের সারি, ঘাসের মাঠ- এসবই বাটারফ্লাই হাউজ। এই বাগানে নেচে বেড়ায় রঙিন হাজারো প্রজাপতি।

বাংলাদেশে প্রজাপতি সন্ধান ও সংরক্ষণ নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাহমুদুল আমিন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শফিক হায়দার চৌধুরী ঢাকা শহরে গবেষণা চালিয়ে ২৭ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করেন। ১৯৮৩-৮৫ সালে দেশের বিভিন্ন বনে পরিচালিত এক গবেষণায় আরো ৩৩ প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়। ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবেষণা চালিয়ে ১২৬ প্রজাতির সন্ধান পান বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক এম এস আলম ও জি এম উল্লাহ।

১৯৯৬ সালে ড. ইসমাঈল চৌধুরী, ড. শফিক হায়দার ও সহযোগী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন গবেষণা চালিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১ প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান পান, যেগুলোর মধ্যে নতুন প্রজাতি ২১টি। ড. মনোয়ারের তত্ত্বাবধানে ছাত্র এম এ রাজ্জাক গবেষণা করে আরো ৩৯ প্রজাতির প্রজাপতি চিহ্নিত করেন ২০০৩ সালে, যার মধ্যে নতুন প্রজাতি ৩৬টি। সর্বশেষ ২০১০ সালে আরো চারটি নতুন প্রজাপতি শনাক্ত করেন ড. মনোয়ার। বিশ্ববিদ্যলয়ের বিশমাইল, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হলের বাগান, রেজিস্ট্রার ভবন, সুইমিং পুল, উদ্যান প্রভৃতি স্থানে গবেষণার মাধ্যমে এগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে।

২০০৩ সালে চিহ্নিত ৩৬ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে লিম্ফালিড পরিবারের 'কমন সার্জেন্ট' ও 'কমান্ডার', পাইরিডি পরিবারের 'ওয়ান্ডারার' ও 'ইন্ডিয়ান ক্যাবেজ'। লাইকানিডি পরিবারে রয়েছে ১৩টি প্রজাতি। এর মধ্যে পিব্লু, অ্যাংগ্লেট পিরোট, ক্লাব সিলভার লাইন, কমন ও ডার্ক সিরুপিলিন, অ্যাপে ফ্লাই, ম্যানগ্রোভ সানবিম ও ফরগেট মি নট উল্লেখযোগ্য। হেসপারিডি পরিবারের রয়েছে ১৪ প্রজাতি। সর্বশেষ সন্ধান পাওয়া চার প্রজাতি হলো ব্যামেবা ট্রি ব্রাউন, চেসনাট অ্যাঙ্গল, ব্লু প্যানসি এবং টিনি গ্যাস ব্লু।

ড. মনোয়ার জানালেন দেশে পাঁচ-ছয় শ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। প্রকৃতি ও জলবায়ুর বিপর্যয়ে অনেক প্রজাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে সব প্রজাতিই পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য নিজেদের পরিবর্তন করছে। তাই এখনই প্রজাপতির বংশ সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সচেতনতা তৈরির জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে রংবেরঙের প্রজাপতির ছবি নিয়ে সম্প্রতি একটি লিফলেট প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।



ছোট্ট হলেও প্রজাপতির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অসীম। জিন গবেষণা ও ফসলের ফলন বাড়াতে প্রজাপতি উপকারী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুস ছালাম নান্দনিক মূল্যের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে প্রজাপতির অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথাও মনে করিয়ে দিলেন, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৩০-৪০ মিলিয়ন ডলারের প্রজাপতি বিক্রি হয়।



প্রজাপতি গার্ডেনে যেমন প্রজাপতির প্রাকৃতিক প্রজনন যেমন হয়, তেমনি প্রাণী বিদ্যা বিভাগে মনোয়ার হোসেন গড়ে তুলেছেন কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র৷ সেই কেন্দ্রে জন্ম নেয়া প্রজাপতিও ছেড়ে দেয়া হয় বাগানে৷ এপর্যন্ত দুটি প্রজাতির শতাধিক প্রজাপতির জন্ম হয়েছে প্রজনন কেন্দ্রে৷ আর তা রক্ষা করছে বিলুপ্ত প্রায় অনেক প্রজাতিকে।৩০০ একর জায়গার ওপর গড়া এই বাগানে আছে প্রজাপতির উপযোগী বন-বনানী, ফুলের বাগান ও প্রজাতির ঘর৷ প্রাণী বিজ্ঞানী ড. মনোয়ার হোসেন জানালেন প্রজাপতির এই বাগানে খুব শিগগিরই আয়োজন করা হবে প্রজাপতি মেলা৷ আর প্রজাপতি বাগানটি পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে দর্শনার্থীদের জন্য৷ তাহলে আর দেরী কেন? ছোটবেলার দুরন্ত দিনগুলির কথা মনে করে নষ্টালজিক হতে চাইলে তাহলে আজই ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার কাছেই এই প্রজাপতির বাগানটিতে।







মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:৩০

তর্পন বলেছেন: +++

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৩৫

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:৩২

জিসান শা ইকরাম বলেছেন: এত্ত হালকা প্রজাপতি নিয়ে এত্ত কিছু ?
ছোটবেলা হতে এখন পর্যন্ত প্রজাপতি আমার খুব প্রিয়।
প্রজাপতির ছবি গুলো ভাল লাগলো। লেখা তো আগেই ভাল লেগেছে :)

শুভ কামনা :)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:২১

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:১৮

প্রজাপতি'র ডানা বলেছেন: প্রজাপতির ছবি গুলো ভাল লাগলো। লেখা তো আগেই ভাল লেগেছে.............


০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:১৯

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: অনেক সুন্দর হয়েছে ছবিগুলো।
ধন্যবাদ।

৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৩৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুন পোস্ট মুন্না।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৫১

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: থ্যাংকস হাসান ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.