নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সানোফি মহিন... বাংলাদেশী তরুন উঠতি প্রকৌশলী। চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ভালোবাসতাম সেই ছোটবেলা থেকে, ভাগ্যের অদৃষ্টের কারনে চিকিৎসক হয়ে উঠা হয়নি। কিন্তু নিজের প্রচেষ্টা আর আন্তরিকতায় পড়েছি 'জনস্বাস্থ্য এবং পুষ্টি' নিয়ে। ভালোবাসি পড়তে, সে যাই হোক। লেখার ব্যপারে খুবই আগ্রহ আর প্রবল আগ্রহ মুখোরোচক নানান রকমের খাবার আর ঘুড়ে বেড়ানোর প্রতি। উপস্থাপনা করতে ভালোবাসি। মানুষের সাথে মিশতে, তাদের সমস্যা শুনতে আর সমস্যা সমাধানে আগ্রহ রয়েছে অনেক।
আমার বন্ধুদের কেউ হতে চেয়েছিলো তাঁতি কিংবা দর্জি (টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার), কেউ মেকানিক্স (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার), কেউ বা ডাক্তার বৈমানিক বা আর্মি অফিসার...
আমরা সবাই সবার মত না হলেও কিছু না কিছু হতে পেরেছি। যে একেবারেই না হওয়ার সেও হয়েছে... যার কারনে পুলিশের তালিকায় তার নাম খুব সুন্দরভাবে প্রথমেই শোভা পায়!!!
এমন তো হবার কথা ছিলো না?
আমাদের নতুন বাড়ির একটু সামনে হাফ-ডান করা একটা কনস্ট্রাকশন সাইটে কিছু ছেলে আড্ডা দেয়। এদের মধ্যে একটা ছেলে আমার খুব বিশেষ পরিচিত। ধরি তার নাম আবদুল্লাহ...
আবদুল্লাহ আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো।
স্কুলে তার সাথে আমার খুব সল্প সময়ই কেটেছে, এই সময় সল্পতার মাঝেও সে আমার মনে দাগ কেটেছে। তেল দেয়া চপচপে চুল পাটি করে সিঁথি করে স্কুলে আসতো সে। সবসময় বসত আমার পাশেই।
আবদুল্লাহ প্রতি আমার এক ভালবাসা কাজ করত যার উৎস সম্পর্কে আমি আজও জানি না।
আমি যখন স্কুল ছেড়ে চলে আসি, আবদুল্লাহ সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি।
আর কখনই হয়নি। আমি নিজেও চেষ্টা করি নি, এত ভাল বন্ধু ছিলো আমার - খুব অবাক লাগে যখন ভাবি আমি কেন যোগাযোগ রাখিনি। যদি রাখতাম এমনটা হয়ত আমাকে আজ আর দেখতে হতো না।
আমার আম্মাকে বলছিলাম আবদুল্লাহ কথা।
আম্মা শুনে আমাকে বলল - একটা বাজে ছেলে কখনও তোমার বন্ধু হতে পারে না।
কিন্তু মা... একটা সন্তান যখন ভুল করে তার জন্য দায়ী হয় তার বাবা।
একটা বন্ধু যখন জীবনের পথে ভুল করে তার দায় তার বন্ধুর উপরই এসে পড়ে। অন্যদের কথা আমি জানি না, আমি নিজেকে এর জন্য দায়ী মনে করি। সে তো আমার বন্ধু ছিলো। আমি যদি তার খেয়াল রাখতাম, খোজ খবর রাখতাম... জীবনে চলার পথটা হয়ত এমন হতো না। আরো সুন্দর হতে পারতো।
আমারই মত হয়ত সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শ্রেনীর শিক্ষার্থী হতে পারত।
একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে কিংবা যে কোন জায়গায় ভাল বেতনের চাকরী করতে পারত। তার জীবনে ভালবাসা আসতো, সুখ তার জীবনে ছেয়ে যেত। কিন্তু কিছুই তার জীবনে আসেনি।
কেন আসেনি জানো?
তার জীবনে আসা সৌভাগ্যকে সে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছে। আর আমরা তাতে না দেখার ভান করে এসে পড়েছি। তার জীবনের পরিনতির জন্য সে যতটা না দায়ী অনেকটা দায়ী আমরাও।
পরিশিষ্টঃ আবদুল্লাহ কিন্তু আবদুল্লাহ ছিলো না। তার নাম ছিলো আবু সালেহ মুসা।
লম্বা চুল দুপাশে ছড়িয়ে মাঝখানে সিঁথি করা মুসা আর লজ্জায় আমার বাসার সামনে বসে না। হয়ত দূরে গিয়ে কোথাও বসে আড্ডা দেয়। একটা কারন হতে পারে তার ভেতরে একটা লজ্জা কাজ করে।
মুসা কি জনে তার জীবনের এই পরিনতির জন্য মনে মনে আমিও ভীষণ ভাবে লজ্জিত?
©somewhere in net ltd.